‘৫২ র ভাষা আন্দোলন – সদ্যপ্রাপ্ত তথ্যের আলোকে

ইতিহাস বিষয়টি বেশ জটিল। যদিও অনেকেই এটিকে অতীতের কিছু সন তারিখ, ভগ্ন অথবা ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা, স্থাপত্যকলার সমাহার হিসেবেই সাব্যস্ত করেন, আধুনিক মতে প্রকৃষ্টরূপেই ইতিহাস হল এক চলমান বিজ্ঞান, যা নিয়ে গবেষণা চলে নিরন্তর। একনিষ্ঠ অন্বেষণ ও শ্রম উপস্থাপিত করে এক নব তথ্যের যা ঠিক সেই সময়ে বা ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটার মুহূর্তে জনসাধারণের অজ্ঞাত ছিল। অথচ এই আকস্মিক আবিষ্কার বা উপস্থিতি সামগ্রিক মূল্যায়নে এক গভীর ছাপ ফেলে, মানুষকে নতুনভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে।  মানব ইতিহাসে এরকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে।  উদাহরণস্বরূপ – ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থিত ইউক্রেনের হলোডোমর – মানুষ দ্বারা সৃষ্ট এক ভয়াবহ মন্বন্তর যা একমাত্র ১৯৪৩ সালের অবিভক্ত বঙ্গের মন্বন্তরের সাথেই তুলনীয়। দীর্ঘদিন ধরে হলোডোমর অস্বীকার করা হয়েছিল; ২০০৬ সালে ইউক্রেন ও ১৫টি বিভিন্ন দেশ একত্রে হলোডোমরকে স্বীকৃতি দেয় সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা সৃষ্ট এক অমাবনবিক তান্ডবরূপে। ১৯৪০ সালে পোল্যান্ডে সোভিয়েত পিপল’স কমিশারিয়াট দ্বারা অনুষ্ঠিত ক্যাটিন গণহত্যা  (পোল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি ও বুদ্ধিজীবীদের) সম্বন্ধেও একই কথা প্রযোজ্য। যদিও এপ্রিল, ১৯৪৩ সালে নাজী জার্মানি এই গণহত্যার কথা প্রকাশ করে, ১৯৯০ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার অনুসারীরা দৃঢ়কণ্ঠে এটি অস্বীকার করে যায়। এবং এই দীর্ঘ সময় ধরে নাজীদেরই অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়!!  এই ভয়ঙ্কর অথচ অজানা তথ্যের স্বীকৃতি গণমানসে পুনর্জাগরিত করে ১৯৪৫ র রেপ অফ বার্লিন কে।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী সৃষ্টি করেছিল এক নয়া ইতিহাস। মাতৃভাষার সম্মান, বাংলা ভাষার গরিমা রক্ষার্থে গর্জে উঠেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। শাসকের নিষ্পেষণে রক্তস্নাত হয়েছিল ঢাকা শহর, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যত্রও। রক্তের পিচ্ছিল পথে ক্রমশ ভাষার, আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবী মহীয়ান হয়ে ওঠে, সৃষ্টি হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। এই অত্যুত্তম ইতিহাস প্রায় সকলেই জানেন কিন্তু আসন্ন ভাষা দিবসের আলোকে সেই স্মৃতি রোমন্থন করার প্রয়োজন প্রত্যেক সময়েই – চিরদিন।

অন্যদিকে, প্রদীপ জ্বালানোর আগে থাকে সলতে পাকানোর কাজ এবং এটি অমোঘ। দৃঢ়চিত্তে, নিষ্ঠা সহকারে এই কর্মটি সম্পাদন না করলে ইতিহাসেরও সৃষ্টি হয়না।

রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, হানাহানি ও ভয়ঙ্কর পারস্পরিক বিদ্বেষের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ১৪ই আগস্ট, মধ্য রাতে ভারত ভাগের মাধ্যমে পাকিস্তান গঠিত হল। প্রথম দিন থেকেই এক প্রকাশ্য হিন্দু-বিরোধী বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসকে মূলধন করে যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান। এই লগ্নেই অনুষ্ঠিত হয় প্রথম পাকিস্তান গণপরিষদ অধিবেশন – ২৩ শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৮।  এই ঐতিহাসিক অধিবেশনে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলী জিন্নার ঘোষণা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। গণপরিষদ সদস্য শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বজ্রকণ্ঠে প্রতিবাদ জানালেন। তাঁর বক্তব্য, “সমগ্র পাকিস্তানে ৬ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের বসবাস, তার মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের ভাষা বাংলা। সুতরাং, পাকিস্তান গণপরিষদে আলোচনায় বাংলাকে স্থান দিতেই হবে। বাংলাকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা রূপে স্বীকার করিয়া লওয়া উচিত।” এই বক্তব্যটি সমগ্র মুসলিম লীগকে প্ররোচিত করে এক তীব্র হিন্দু-বিরোধী প্রচার আরম্ভ করতে। লীগের বক্তব্য হয় – ধীরেন্দ্রনাথ হিন্দু, তাই ইসলামী ঐক্যে ফাটল ধরাতে চাইছে। এই জঘন্য অপপ্রচার টনিকের কাজ করল। গণপরিষদে সমস্ত মুসলিম সদস্যরাই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে সমর্থন জানালেন। ধীরেন্দ্রনাথের দাবি খারিজ হয়ে গেল। ধীরেন্দ্রনাথের প্রস্তাবকে সমর্থন জানালেন গণপরিষদের অন্যতম সদস্য শ্রী প্রেমহরি বর্মন।  এই আগ্নেয় পরিস্থিতিতেই ১১ মার্চ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।  ৬ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থাপক সভায় ইংরাজীর স্থলে বাংলাকে সরকারী ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম করার প্রস্তাব পেশ করলে, সরকারী প্রস্তাবের ওপর ধীরেন্দ্রনাথ সংশোধনী উত্থাপন করেন।

১। (ক) – বাংলা পূর্ববাংলা প্রদেশের সরকারী ভাষারূপে গৃহীত হইবে। (খ) – পূর্ববাংলা প্রদেশে ইংরাজীর স্থলে বাংলা প্রবর্তনের জন্য আশু ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে। (গ) – পূর্ববাংলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে শিক্ষার মাধ্যম হইবে বাংলা।

২। এই পরিষদ মনে করে যে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হাওয়া উচিত।

৩। এই পরিষদ পাকিস্তান সরকারের কাছে সুপারিশ করে যে, (ক) সর্বপ্রকার নোট ও টাকা – পয়সা, টেলিগ্ৰাফ, পোস্ট কার্ড, ফর্ম, বই ইত্যাদি ডাক সংক্রান্ত যাবতীয় জিনিস, রেলওয়ে টিকিট ওবং পাকিস্তান সরকারের অন্য সর্বপ্রকার সরকারী ও আধা-সরকারী ফর্মে অবিলম্বে বাংলা প্রচলন করা হউক। (খ) কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস এবং সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী যোগদানের জন্য সকল প্রকার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যম এবং অন্যতম বিষয় হিযাবে বাংলা প্রবর্তন করিতে হইবে।

৪। এই পরিষদ সংবিধান সভার সকল সদস্যকে অনুরোধ জানাইতেছে এবং পূর্ব বাংলার প্রতিনিধিদের নিকট বিশেষভাবে আবেদন করিতেছে যাহাতে তাঁহারা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করিবার জন্য সর্বপ্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। ধীরেন্দ্রনাথকে এই কাজে সহায়তা করেন এডভোকেট শ্রী গিরীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক শ্রী রাজকুমার চক্রবর্তী ও বিপ্লবী শ্রী ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত। সংশোধনী প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “পাকিস্তানের অধিবাসীদের মধ্যে বিরোধ বৃষ্টি করা হচ্ছে এবং একটি সাধারণ ভাষার দ্বারা ঐক্য স্থাপনের প্রচেষ্টা থেকে মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন করাই এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য।”

 

ধীরেন্দ্রনাথের ওপর ব্যক্তি আক্রমণের শঙ্কাও ঘনীভূত হয় ক্রমশ। বহু লোকের ধারণা হয়, ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর গুপ্ত ঘাতক দ্বারা ধীরেন্দ্রনাথকে হত্যা করবে ক্ষিপ্ত লীগ নেতৃত্ব। কিন্তু ফল হয় বিপরীত। ধীরেনবাবু ঢাকা শহরে পদার্পণ করলে তাঁকে ফুল-মালা সহকারে বরণ করে এক বিশাল জনতা যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ। জনতার কণ্ঠে শোনা যায় এক গর্জন, “আমার ভাষা মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা।” একটি ধীরেন্দ্রনাথের কণ্ঠধ্বনি তখন পরিণত হয়েছে লক্ষ লক্ষ ধীরেন্দ্রনাথে। ক্রমশ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান উত্তাল হয়ে ওঠে ভাষার অধিকারের দাবীতে। ১৯৫২ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে উত্তাল হল সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান। এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, শ্রীহট্ট, রংপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা সহ উত্তাল জনস্রোত শোভাযাত্রা, জনসভার মাধ্যমে পদ্মা, মেঘনার ঢেউয়ের ওপর আছড়ে পড়ে পূর্ববঙ্গের মাটিতে।  কায়েদ-ই-আজম জিন্নার গর্বোদ্ধত স্বরে ঘোষিত “Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan” র চক্রান্তকে পরাস্ত  করতে জনগণ আবির্ভূত হয় রণাঙ্গণে।

প্রকাশিত হল প্রতিবাদী পথ নাটিকা, কবিতা –

ওরা আমার মুখের কথা

কাইরা নিতে চায়।

তারা কথায় কথায় শিকল পড়ায়

আমার হাতে পায়।।

কইতো যাহা আমার দাদায়

কইছে তাহা আমার বাবায়

এখন, কও দেখি ভাই মোর মুখে কি

অন্য কথা শোভা পায়।।

সইমু না আর সইমু না

অন্য কথা কইমু না

যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান।

অবস্থা বেগতিক দেখে ১৫ ই মার্চ জনাব নাজিমউদ্দিন নিজেই উদ্যোগী হয়ে ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। সরকার চুক্তিবদ্ধ হয় – বাংলাকে প্রদেশের (পূর্ব পাকিস্তানের) সরকারী ভাষা করা হবে এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে স্বীকতি দেওয়ার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করা হবে। কিন্তু অচিরেই নবাবজাদা লিয়াকত আলীর মন্ত্রিসভার শাসনতন্ত্রের মূলনীতি নির্ধারক কমিটি সুপারিশ করে, উর্দুই হতে পারে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। মুসলিম লীগ নেতৃত্বের বক্তব্য অনুযায়ী, এই আন্দোলনের সাথে জনগণের কোন সংযোগ নেই ও যা হয়েছে তা ভারতের হিন্দুদের অশুভ যোগসাজসে। আন্দোলনের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক অচলাবস্থা সৃষ্ট হয়েছিল এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যই খাজা নাজিমউদ্দিন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু সমগ্র পাকিস্তানের জন্য এই চুক্তি হাস্যকর ও অবাস্তব। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত হয় শাসনতন্ত্রের মূলনীতি নির্ধারক কমিটির রিপোর্ট।  প্রারম্ভ হয় আর এক প্রস্থ আগ্নেয় সংগ্রামের। পাকিস্তানের তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব ফজলুর রহমান উপস্থিত করলেন এক অভিনব প্রস্তাব। বাংলা ভাষা লেখা হোক আরবী হরফে। এতে আঞ্চলিক বিরোধ দূর হবে, ভাষাও ঠিক থাকবে, তাতে কথা বলাও আর এটি নিঃসন্দেহ যে বাংলা হরফ হল হিন্দুদের। ইসলামী হরফ হল আরবী ও তাই এক ঈমানী মুসলমান কেবল আরবী হরফই ব্যবহার করতে পারে। ইতিমধ্যে মুসলিম লীগ নেতৃত্বে হয় পালাবদল। প্রধানমন্ত্রী হয়েই জনাব নাজিমউদ্দিন ২৬ শে জানুয়ারী, ১৯৫২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের অধিবেশনে ঘোষণা করলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা একটিই আর তা হল উর্দু।

১৯৫২ সালের ২৭ শে জানুয়ারী ডাকসুর নেতৃবৃন্দ মিলিত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুদার ক্যান্টিনে যা জন্ম দেয় ঐতিহাসিক ‘৫২ র ভাষা আন্দোলনের। ছাত্র সংগ্রাম-পরিষদ অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১১ ও ১৩ ই ফেব্রুযারী পতাকা দিবস ঘোষণা করে। ১৩ ই ফেব্রুয়ারী বন্ধ করা হয় পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকা; তার সম্পাদক আব্দুস আলেম সাহেব গ্রেপ্তার হন যা সংগ্রামী পরিবেশকে আরো উত্তপ্ত করে তোলে। ২১ শে ফেব্রুয়ারী পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক বাজেট অধিবেশনে দিন। সেই উপলক্ষে ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারী করা হয় যা ভাঙার জন্য তৈরী হয় ছাত্রসমাজ।

এবার মনোনিবেশ করা হোক কলহন দ্বারা রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ “বিক্ষুব্ধ পাকিস্তান” এ – “একজন পুলিশ অফিসার চিৎকার করে বললেন, “দুজন প্রতিনিধি গিয়ে আপনাদের বক্তব্য অ্যাসেম্বলিতে বলে আসুন। ছাত্ররা থমকে দাঁড়াল।  একে অন্যের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে, তারপর ফিস ফিস গুঞ্জন উঠল।

আতোয়ার চিৎকার করে বলল, “ভাইসব আন্দোলন বানচাল করার এটা একটা চাল।ওরা আমাদের নিষ্ক্রিয় করে রেখে নিজেরা তৈরী হয়ে নিতে চায়। প্রতারকদের কথায় ভুলবেন না। আওয়াজ তুলুন, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।

সঙ্গে সঙ্গে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটল অদূরে। ধোঁয়ায় সব কিছু অস্পষ্ট। ছুটো-ছুটি পড়ে গেল। চোখে রুমাল চেপেও আওয়াজ তুললাম – পুলিশী জুলুম চলবে না – রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। মুহূর্তে সেই কথা ছাপিয়ে বাজ পড়ার মতো এক গর্জন উঠল। এ কি! এ তো টিয়ারগ্যাস শেল ফাটার শব্দ নয়। কিসের আওয়াজ তবে!! কে যেন চিৎকার করে বলল: বেঈমানের দল গুলি চালিয়েছে। সাবধান। রাশি রাশি ইটের খোয়া এনে ছুড়ছি পুলিশের দিকে। পুলিশরা এবার ঢুকে পড়েছে হোস্টেলে।

…পরিষদকক্ষেও পৌঁছয় সে খবর। মনোরঞ্জন ধর ও গোবিন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম পরিষদকক্ষে ঢুকে খবর দিলেন, পুলিশের গুলিতে ছাত্র মারা গেছে। বিরোধীদলের সদস্যরা ফেটে পড়েন উত্তেজনা আর ক্রোধে। এই হত্যাকাণ্ডের জবাব চান নুরুল আমিনের কাছে। মুলতুবি প্রস্তাবের দাবি ওঠে।

নুরুল আমিন তো প্রথমে স্বীকারই করতে চাইলেন না যে পুলিশ ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে। বললেন, ‘ইটস এ ফ্যান্টাস্টিক স্টোরি।’ বিরোধীদের চাপে কথাটা শেষে স্বীকার করে নিলেও নির্লজ্জের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘পুলিশ ঠিকই করেছে। উশৃঙ্খলা দমানোর জন্যই তো পুলিশ। এর পিছনে কমিউনিস্টদের উস্কানি আছে। আমরা তাদের নির্মূল করবই।’ 

টেবিল চাপড়ে হৈ-হৈ করে উঠলেন বিরোধীদলের সদস্যরা। সরকার পক্ষের অনেক সদস্যও নুরুল আমিনের এই নির্লজ্জ্ব উক্তির নিন্দা করলেন। সরকারি দলের সদস্য মৌলানা তর্কবাগীশ ও ‘আজাদী’ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিনও খয়রাত হোসেনের মুলতুবি প্রস্তাব সমর্থন করলেন। তীব্র ভাষায় নিন্দা করলেন পুলিশের গুলি চালনার। ছাত্রদের ওপরে পুলিশী নির্যাতনের এবং মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের নির্লজ্জ উক্তির প্রতিবাদে মুসলিম লীগ পার্টি থেকে সেই মুহূর্তে পদত্যাগ করলেন তাঁরা। পরিষদকক্ষে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে মুসলিম লীগের মৌলানা তর্কবাগীশ বললেন, ‘আমাদের ছাত্ররা যখন শাহাদাত বরণ করছেন, আমরা তখন আরামে পাখার হাওয়া খেতে থাকব এ বরদাশত করা যায়না। চলুন, মেডিকেল কলেজে চলুন। মেডিকেল কলেজ আজ সাড়ে চার কোটি জনতার তীর্থস্থান। শহীদের রক্তে পবিত্র হয়েছে সেখানকার মাটি।'” ছাত্র? থমকে যেতে হয়।

প্রশ্ন ঠিক এখানেই উঠে আসে – যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন ৫২ র ২১শে ফেব্রুয়ারী তাঁরা কি সকলেই ছাত্র ছিলেন? নাকি অন্য কিছু ধামাচাপা দিতেই এঁদের ছাত্র শহীদ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। এও বলা প্রয়োজন, তাঁরা ওইদিনই শহীদ হয়েছিলেন এবং বাংলা ভাষা রক্ষার্থের সংগ্রামেই তা ঘটেছিল। কিন্তু – ছাত্র? কিছু সাম্প্রতিক গবেষণা ও সেহেতু প্রাপ্ত তথ্য এক অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে।

১। শহীদ জব্বার – ১০ই অক্টোবর, ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া (পাঁচাইর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা – হাছন আলী, মাতা – সাফাতুন নেছা। ১৯৪৯ সালে বন্ধুর বোন আমেনা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পুত্রের নাম নুরুল ইসলাম বাদল। ১৯৫২ আলে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত শাশুড়িকে ২০ শে জানুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। ২১শে ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টায় শাশুড়ির জন্য ফল ক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হন। সামনে ভাষা আন্দোলনের মিছিল ছিল। পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। শহীদ হওয়ার পর তার স্ত্রীর বিবাহ জব্বারের ভাই আব্দুল কাদেরের সাথে হয়। তাঁকে আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

২। শহীদ সালাম – ২৭শে নভেম্বর, ১৯২৫ সালে ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা – ফাজিল মিয়াঁ, মাতা – দৌলতের নেছা। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টর অফ ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের পিওনের পদে চাকুরী করতেন সালাম । ২১শে ফেব্রুয়ারী সকাল ১০.৩০ নাগাদ, তিনি অফিসে যাওয়ার পথে  পুলিশের গুলিতে আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হলে ২৫শে ফেব্রুয়ারী বেলা ১১.০০টা (৭ই এপ্রিল সরকারী গেজেটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী) তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর পিতার উপস্থিতিতে ২৬ই ফেব্রুয়ারী আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানে দাফন করা হয় সালামকে।

৩। শহীদ রফিক উদ্দিন রফিক – ১৯২৬ আলে ৩০শে অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুল লতিফ মিয়া, মাতা রাফিজা খাতুন। তাঁর নিজ গ্রামে রাহেলা খাতুন পানু নামে একজন মেয়ের সাথে বিবাহের দিন স্থির হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারী বিবাহের বাজার করার জন্য ঢাকা এসে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মাথার খুলিতে গুলি লাগে। ঘটনাস্থলে তিনি শহীদ হন। তাঁকে আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

৪।  শহীদ আবুল বরকত – ১৬ই জুন (মতান্তরে ১৩ই জুন) ১৯২৭ সালে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সামসুদ্দিন ও মাতা হাছিনা বেগম। তাঁর আত্মীয়র বাড়ী বেড়াতে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে তিনি পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ হন। ২১শে ফেব্রুয়ারী রাত ৮টায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাঁকেও আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

৫। শহীদ সফিউর রহমান – ২৪ শে জানুয়ারী, ১৯১৮ সালে কোন্নগর, জেলা হুগলী, ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হলেন প্রসিদ্ধ মৌলভী মাহবুবুর রহমান। ১৯৪৫ সালে ১৬ই মে কলকাতায় তমিজউদ্দিন আহমেদের মেয়ে আকিলা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন  পিতা ঢাকা পোস্ট এন্ড টেলিগ্রাম অফিসে, অফিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে চাকরী পেয়ে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। পিতার সাথে সফিউরও চলে আসেন। তিনি ঢাকা হাইকোর্টের হিসাব রক্ষণ শাখায় চাকরী করতেন। ২১শে ফেব্রুয়ারী সাইকেল যোগে অফিসে যাওয়ার সময়, খুশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁকে আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানে দাফন করা হয়। ওই সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন দরিদ্র রিকশা চালক আউয়াল। ২২শে ফেব্রুয়ারী তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁকেও আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

 

বিভিন্ন তৎকালীন সংবাদপত্র ও গবেষণালব্ধ গ্রন্থ অনুযায়ী, মোট আহত হয়েছিলেন ১৭ জন। আহতদের তালিকায় ছিলেন – আনোয়ারুল ইসলাম, ফৈয়াজ সিরাজুদ্দীন খান, আবদুস সালাম, এম এ মোত্তালেব, এলাহী বক্স, মনসুর আলী, মোঃ বশিউদ্দিন, এ রেজ্জাক, মোজাম্মেল হক, সুলতান আহমেদ সহ আরো অনেকে।

ইতিপূর্বে ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট ও বরিশালে ছাত্র বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল। এই সময় হিন্দু ছাত্র কানাই, সুনীল, সত্যেন ও বীরেন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। নিহতদের লাশ পুলিশ গুম করে দেয়। পরিকল্পিতভাবে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকার এই চার শহীদের নাম ইতিহাস থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। এটি অনস্বীকার্য, ক্রমান্বয়ে হিন্দু নাম নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রচেষ্টা কোন নব অধ্যায় নয়। বরঞ্চ তা এক দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা মাত্র। শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শ্রী শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শ্রী ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত, শ্রী চিত্তরঞ্জন সুতার – এই নামগুলিও হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে শ্রী গিরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (অ্যাডভোকেট), অধ্যাপক শ্রী রাজকুমার চক্রবর্তীর নামও যাঁরা পাকিস্তান গণ পরিষদে বাংলা ভাষার পক্ষে ১৯৪৮ সালে ধীরেনবাবুর ঐতিহাসিক ভাষণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রসঙ্গত, ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ছাত্র নেতা শ্রী স্বপন চৌধুরী পাকিস্তান ছাত্র লীগের কার্যকরী সভায় প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ প্রস্তাব লিখিতভাবে পেশ করেন। এই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীতও হয়। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানী বা খান সেনার হাতে নির্মমভাবে অত্যাচারিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর নামে চট্টগ্রাম শহরে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু শাসকের গোপন ইঙ্গিতে তা মুছে দেওয়া হয়। একইভাবে হারিয়ে গেছে প্রখ্যাত গীতিকার ও সুরকার শ্রী গোবিন্দ চন্দ্র হালদারও। তাঁর “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা” নামক গানটি একসময় প্রভূত খ্যাতি অর্জন করে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল সহস্র সহস্র স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষকে। শহীদ, চির-অবহেলিত কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা শ্রী জগৎজ্যোতি দাসের কথাও কি ভুলে যাওয়া যায়? যদিও অত্যুত্তম বীরত্বের জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদক প্রদানের ঘোষণা করে, তবুও তিনি ‘বীর বিক্রম’ ই রয়ে গেলেন।

পরিশেষে, প্রশ্ন ওঠে – কেন? ইতিহাসের এই বিকৃতি কেন ও কিসের স্বার্থে? বিগগ্ধমহলের ধারণায় তা আছে রাজনৈতিক স্বার্থ প্রতিষ্ঠার কূট চিন্তায়। কোন প্রকারেই যাতে হিন্দুদের শাসনক্ষমতার পার্শ্বে না দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়, ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আইন পরিষদ নির্বাচনের যাকে কেন্দ্র করে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুরা ক্ষমতার ভরকেন্দ্র প্রত্যাবর্তনের শেষ প্রচেষ্টা করে। এই একই সময় শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ পার্লামেন্টারী পার্টি গঠন করেন। একদিকে ধীরেনবাবু অন্যদিকে অধ্যাপক শ্রী পুলিন দে যথাক্রমে পার্টির সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন। পার্টির সদস্যদের মধ্যে বিপ্লবী নেতা মহারাজ ত্রৈলোক্য চক্রবর্তী, শ্রী প্রভাস চন্দ্র লাহিড়ী, শ্রী ফণী মজুমদার, শ্রী রমেশ দত্ত, শ্রী আশুতোষ সিংহ, শ্রী হারান ঘোষ চৌধুরী, শ্রী দেবেন ঘোষ, শ্রী কামিনী দত্ত সহ ১২ জন যুক্তফ্রন্টের টিকিটে  নির্বাচিত হন। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীসভায় শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত – স্বাস্থ্যমন্ত্রী; শ্রী মনোরঞ্জন ধরে – অর্থ মন্ত্রী; শ্রী শরৎ মজুমদার – মৎস মন্ত্রী; হশ্রী গৌরচন্দ্র বালা বনমন্ত্রী রূপে যোগদান করেন।

১৯৫৪ সালের ৩ রা এপ্রিল শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুক হক চার সদস্য বিশিষ্ট যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠন করেন। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয় ১৫ মে তারিখে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। কিন্তু কিছু সপ্তাহের মধ্যেই পাকিস্তানী নেতৃবৃন্দ এই প্রচেষ্টাকে সমূলে উৎপাটিত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ও অবশেষে, ১৯৫৪ সালের ৩১ মে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী পরিষদ বাতিল করে দিয়ে শাসনতন্ত্রের ৯৩ ধারা জারীর মাধ্যমে প্রদেশে গভর্ণরের শাসন প্রবর্তন করেন।

১৯৬৪ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিশিষ্ট বিপ্লবী ও কংগ্রেস নেতা শ্রী প্রভাস চন্দ্র লাহিড়ীর প্রখ্যাত গ্রন্থ “India Partitioned and Minorities in Pakistan” অনুযায়ী –

“The phenomenal victory in 1954 election was brought into being under the combined leadership of late Mr. Fazlul Huq, late Mr. Suhrawardy and Maulana Bhashani, who submerged their own political parties into a new one under the name of the ‘United Front’ and Mr. Fazlul Huq became the Chief Minister as the leader of the newly formed parliamentary party. His non-communal policy in the administration and approach to the problems of both the partitioned Bengals of the East and the West, ushered in a new short-lived era of confidence and security in the mind of the minorities. The Muslim League Party was still then the ruling party in the Central Government of Pakistan and Mr. Huq’s policies and approaches were too much for them to tolerate. They, therefore, took the aid of Article 93 of the Constitution and suspended the East Pakistan Legislature and dissolved the Ministry. Late Mr. Mahammad Ali of Bogra, the-then Prime Minister of Pakistan, had the unabashed audacity to declare from the seat of Prime Minister before the world that Mr. Huq was a traitor and an enemy to the state of Pakistan and he became, therefore, virtually interned in his own house in Dacca. A reign of terror then followed – many non-political members of the minority communities, even lawyers, doctors, businessmen and teachers, were put behind the prison bars. This undemocratic and reactionary step of the Muslim League Central Government again worsened the situation and exodus remarkably increased.

With the restoration of the parliamentary government again after almost a year, under the chief-ministership of Mr Abu Hossain Sarkar, an erstwhile Congressman of undivided Bengal and a faithful follower of Mr. Fazlul Huq in his ‘Krishak-Sramik Party’ of pre-independence days, the flow of exodus was checked.  With the advent of the ‘United Front’ coming into power, the Congressmen were also brought into the picture to play their legitimate role and take share in the administration of the country. Late Mr. Kamini Kumar Dutt of hallowed memory, a prominent Congress leader of undivided Bengal, and Sri Basanta Kumar Dass, the leader of the Congress Assembly Party of East Pakistan, found places in the Central and Provincial Cabinet as the Law Minister, and the Finance Minister respectively. When Mr. B. K. Dass was subsequently shifted to the Central Cabinet, the writer of this book was taken in the Cabinet of Mr. Abu Hossain Sarkar, as the minister-in-charge of Finance and Jails (Home), and there were two other Hindus of the scheduled caste in the Cabinet.

The funniest portion of the Pakistan politics was that Mr. Fazlul Huq, the once-declared traitor and enemy to the state by no less a person than the Prime Minister himself from his seat, was taken in the Central Cabinet as the Minister of Home Affairs (Interior) – the pivot of the administration! The leaders of Pakistan, excepting a few, follow no logic. They are apt to do whatever suits their nefarious purpose of serving themselves and their sinister motive and design of hate-India and communalism. This is the only philosophy they have been following till now. Mr. Fazlul Huq and his two successors, Mr. Abu Hossain Sarkar and Mr. Ataur Rehman Khan, did not subscribe to this philosophy of the Muslim League and therefore they were either branded as traitors and enemies to the state or were sought to be discredited in the public eye.

However, with the restoration of the parliamentary government in East Pakistan, the United Front Party disintegrated into three political parties of non-communal character under the leadership of the three stalwarts, viz., Messrs Fazlul Huq, Suhrawardy and Maulana Bhashani under the names of ‘Krishak-Sramik Party’, ‘Awami League’ and the ‘National Awami Party’. The ‘Awami League’ formed the last ministry under the parliamentary constitution with Mr. Ataur Rehman Khan as the Chief Minister and continued for some time. There were three Hindus in his cabinet of which two, Shri Dhirendra Nath Dutta and Shri Manoranjan Dhar, were prominent Congress leaders.

Since the birth of Pakistan till today there was only a very short period covering only a little over three years or so, during which the minorities could breath a sigh of relief under the chief-ministership of Mr. Fazlul Huq and his two successors but this was not allowed to go on for long. When Mr. Ataur Rehman Khan was in charge of the Government of East Pakistan, Mr. Iskandar Mirza, the President of Pakistan, unwittingly abrogated the constitution under pressure from the military generals headed by Mr. Ayub Khan, the Chief of the Army, only to be driven out of Pakistan in a few days and seek shelter in England! Mr. Ayub Khan and his ‘military junta’ came into power and Martial Law was proclaimed in Pakistan. According to the-then authorities of Pakistan, martial law was said to be proclaimed on the ground of a disturbance in the East Pakistan Assembly culminating the death of the Deputy Speaker but the general impression is otherwise. It would, of course, be a matter for the future historians to find out the real truth. If the-then legislators were unworthy of their duties and responsibilities, the people ought to have been given the opportunity to elect their representatives in the next general election which was about to come within three months but that was not done. The political experts in East Pakistan think that the real intention behind this move lay elsewhere – they see the secret sinister hands of the foreign powers behind the scene. The left-wing swing of the people was a foregone conclusion – they denounced the military pacts with the Western Powers under the SEATO and the CENTO unhesitatingly, and the general election, if allowed to be held, would have thrown the Pacts like pieces of waste-paper in the Bay of Bengal and the Arabian Sea. The major parties of the Pact know the fact of the people’s mind and they, therefore, found a very competent and convenient tool in Mr. Ayub Khan for withholding the election by capturing power by a coup, and that was faithfully done to their utter satisfaction.

I know it for certain that the reason of disturbance in the East Pakistan Assembly as given out by the authorities is only a cover to hide the real truth behind the move of proclamation of the Martial Law.  Even before the Assembly sat for its last session when the disturbances took place, the military generals had visited the Central Jails of East Pakistan only to ascertain the extent of accommodation there and instructed the jail authorities to prepare a list of short-term non-political prisoners for release to make room for the politicians to be brought in. The military authorities prepared and finalised their plan of ‘coup’ in all its thoroughness.

The ‘coup’ came and Martial Law was proclaimed in October, 1958. With the proclamation of the martial law, the short-lived halcyon days for the monitories also disappeared.

Mr. Ayub Khan came into power through the back-door and he is still holding power under the guise of a fake democracy known as ‘Basic Democracy’ and depriving the people of their fundamental rights of a democratic government. The politically conscious section of people of Pakistan believes that the Ayub regime was only a creation of the Pentagon of the U.S. and they are therefore trying hard to get rid of the foreign stooge by all means.”

এমতাবস্থায়, এই ঘৃণার বাতাবরণে কোন প্রকৃত ইতিহাস সযত্নে রক্ষা করা হবে?

 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: –

১) কলহন দ্বারা রচিত “বিক্ষুব্ধ পাকিস্তান”

২) শ্রী প্রভাস চন্দ্র লাহিড়ী দ্বারা রচিত “India Partitioned and Minorities in Pakistan”

৩) ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা

৪) শ্রী সুভাষ চক্রবর্তী – সাধারণ সম্পাদক, নিখিল বঙ্গ নাগরিক সঙ্ঘ