কাশ্মীর ফাইলসের প্রতিটি কথা সত্যি, বললেন বাংলা টেলি অভিনেতা ভরত কল

0
3959

বঙ্গদেশ ডেস্ক:সদ্য মুক্তি পেয়েছে বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত দুর্দান্ত ছবি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ (The Kashmir Files)। বিদেশে এই ছবি মুক্তির সময় হুমকি দেওয়া হয়েছিল বিবেককে। এক‌ইভাবে ভারতে মুক্তির সময়ও তাঁকে খুনের হুমকি দিয়ে একাধিক ফোন করা হয়েছে। কিন্তু কেন হুমকি দেওয়া হয়েছে, কী এমন আছে এই ছবিতে? কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিতদের উপর দীর্ঘ বর্বরোচিত অত্যাচারের ইতিহাসের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে।

টলিপাড়ার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা ভরত কল (Bharat Kaul) একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, আমাদের মেয়ে আইরার এখন ৬ বছর বয়স। কাশ্মীরকে ওর মার্তৃভূমি বলা যাবে না। ও তো কাশ্মীরে বড়‌ও হয়নি, জন্মায়ওনি। কিন্তু চিরকালই কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ‘কল’ পদবী জুড়ে থাকবে ওর নামের পাশে। আমি আমার মেয়েকে কেবলমাত্র কাশ্মীরে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারব। দেখাতে পারব কোথায় আমাদের বাড়ি ছিল। ওর ঠাকুরদা কোথায় বড় হয়েছেন। কোথায় আমাদের কারখানা ছিল। কাশ্মীরে ওনাদের কিছু ভূসম্পত্তি দখল হয়েছে, এছাড়াও কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেছেন ওনার বাবা-কাকারা। তিনি বলেছেন, আমার খুব কষ্ট হয়, আমি কোনওদিন আমার ভিটেতে যেতে পারব না। মেয়ে আরিয়াকে কোনওদিনও ওর ঠাকুরদার বাড়ি দেখাতে পারবো না।

বাস্তব জীবনের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই সব ছবি। এমনটাই অভিমত প্রকাশ করেছেন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিটি দেখেছেন তিনিও। শেয়ার করেছেন তাঁর জীবনের ভয়াবহ সেই স্মৃতি। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর অত্যাচারের সেই গাঁথা, যার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি ও তাঁর পরিবার। ভরত জানিয়েছেন, ছবিতে যা দেখানো হয়েছে তা সর্বৈব সত্য। তিনি মনে করেছেন, এই ছবিকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।

কাশ্মীরি পণ্ডিত ভরত কল বলেছেন, তিনি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখেছেন। ছবি নিয়ে নানান জন বিভিন্ন রকম কথাই বলবে। কিন্তু ছবিতে যা দেখানো হয়েছে তার সবটাই সত্যি ঘটনা। ফলে একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত হিসেবে তিনি বলেছেন, তার এ বিষয়ে কিছু বলার থাকতে পারে না। ছবিতে কাশ্মীরের হিন্দু পণ্ডিতদের উপর বিভীষিকাময় অত্যাচারের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। সকলে একবাক্যে বলছেন পরিচালক অত্যন্ত সাহস দেখিয়েছেন।

তিনি আরও বলেছেন, এই ছবি তৈরিতে কোনও সাহসের পরিচয় নেই। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী অনেক পড়াশোনা, অনেক গবেষণার পর ভীষণ সৎভাবে ছবিটা তৈরি করেছেন। রিসার্চ করতে দীর্ঘ চার বছর সময় লেগেছে তাঁর। ফ্যাক্ট, ডেটা সংগ্রহ করে সততার সঙ্গে এই ছবি তৈরি করেছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, মানুষ জানতে পেরেছেন কী ধরনের বিভীষিকাময় দিনগুলো ছিল কাশ্মীরের আকাশে-বাতাসে। বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে রিফিউজি হয়ে এদেশে আসা আর নিজের দেশের মধ্যেই রিফিউজি হয়ে থাকা এর মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। ভরত কলের জন্ম কলকাতায় হয়েছে। তাঁর বাবা কলকাতায় মাইগ্রেট করেছেন ৬৬-তে। কিন্তু তিনি স্নাতক হয়েছেন কাশ্মীরেই। হোস্টেল থাকাকালীন টালামাটাল পরিস্থিতি তিনি চোখে দেখেছেন। কাশ্মীরে জঙ্গিবাদ শুরু হ‌ওয়ার পর তাদের কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯২ সালে তিনি পাকাপাকিভাবে কলকাতায় চলে আসেন।

ছবিতে জেনোসাইড বা গণহত্যা দেখানো হয়েছে।
ধরে ধরে কাশ্মীরের শান্তিপ্রিয় হিন্দু পণ্ডিতদের সেসময় মেরে ফেলা হয়েছিল। এই সত্যের সঙ্গে মিথ্যাচার করেননি পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। জেনোসাইড কাকে বলে? কারা আপনাকে আপনারই বাড়ি থেকে বের করতে পারে? কীভাবে পারে? এর জন্য প্রাণের ভয় দেখাতে হয়। সেই ভয়টাই দেখানো হয়েছিল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের। তিনি বলেছেন, এমনিতেই কাশ্মীরি পণ্ডিতরা সংখ্যালঘু। নিজেরই জন্মভূমিতে তাঁদের উপর কী ধরনের অত্যাচার হয়েছে সেটা জানা খুব দরকার। এরকম পরিস্থিতিতে আর কেউ যাতে না পড়ে সেটাই কাম্য।

তিনি বলেছেন, হিন্দু পণ্ডিতরা কিন্তু কোনওদিনও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ করেননি। এমনকি করতে পারবেনও না। সেখানে ৯৮ শতাংশ মুসলমান। বাকি ২-৩ শতাংশ কাশ্মীরি হিন্দু। যারা নিজেরা হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলেন তারা কিন্তু কেউই কাশ্মীরি পণ্ডিত ছিল না। তারা আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে এসেছিল। কাশ্মীরিরা চিরদিন শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সেসময় কাশ্মীর শাসন করতেন ফারুক আবদুল্লাহ, সৈদিই বলুন – কাশ্মীরের এই করুণ পরিণতির জন্য সকলেই দায়ী। খালি একটাই আক্ষেপ তাঁর, তিনি ভূস্বর্গকে হারিয়েছেন, কোনওদিন ফেরত পাবেন না।