এন‌আর‌এসের পুনরাবৃত্তি বজবজে, কোভিড ওয়ার্ডের কর্মীকে বেধড়ক মারধর

0
658

বঙ্গদেশ ডেস্ক: ‘আমি এখানে কাজ করতে পারব না, আমি ভীত সন্ত্রস্ত,’ আহত হাসপাতাল কর্মী কাঁদতে কাঁদতে বললেন। আইসিইউ ওয়ার্ডে ঢুকে হাসপাতালের কর্মীদের উপর হামলা চালায় তাশিনারা বিবির আত্মীয়রা। তাতেই ওই হাসপাতাল কর্মী আহত হন৷ তার পরই তিনি এই কথা বলেন৷

এই ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ অঞ্চলে জগন্নাথ গুপ্ত ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে। হাসপাতাল কর্মীদের ওপর চড়াও হয় রোগীর পরিবারের লোকজন। একজন হাসাপাতাল কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাশিনারা বিবিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চিকিৎসকরা রোগীর পরিবারকে জানিয়েছিলেন যে তাকে অতি শীঘ্র ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করতে হবে। অথচ আইসিইউতে বেড খালি নেই। এই কথা শুনে রোগীর আত্মীয়স্বজন বিনা অনুমতিতে আইসিইউ ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন এবং মোবাইল বের করে একের পর এক ছবি তুলতে শুরু করেন। পরে তারা হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করে এবং ফ্রন্টলাইন কর্মী সৌম্যদীপ সেনকে বেধড়ক মারধর করে।

অভিযোগ, রোগীর পরিবারের আত্মীয়স্বজন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের ভয় দেখায়। পরিবারের আরও এক সদস্য অস্ত্র দেখিয়ে হাসপাতালের একজন সুরক্ষা কর্মীকে প্রাণের ভয় দেখান। সেই সুরক্ষা কর্মীর বয়ান অনুযায়ী, “ওরা রোগী নিয়ে জরুরি ওয়ার্ডে এসেছিল। রোগীর সাথে দুজন লোক ছিল। আমরা জরুরি ওয়ার্ডে একজনকে অনুমতি দিয়েছিলাম এবং অন্য ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বলেছিলাম।” তিনি আরও বলেছেন, “ডাক্তাররা ওদের বলেছিলেন যে আইসিইউতে অ্যাডমিশন প্রয়োজন কিন্তু পর্যাপ্ত বেড নেই‌। এরপর পরিবারের আরও বেশ কয়েকজন সদস্য এসে জোর করে আইসিইউতে ঢুকে পড়ে।”

বিজেপি বেঙ্গলের শেয়ার করা ভিডিওতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আক্রান্ত কর্মী সৌম্যদীপ সেন বলেছেন, “আমি COVID (পরীক্ষা) এর জন্য আইসিএমআর ফর্ম পূরণ করছিলাম। পরিবারের একজন সদস্য আমার কাছে এসে রোগীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। খোকন দা (হাসপাতালের আরেক কর্মচারী) আমাকে বলেছিলেন যে রোগীর আইসিইউ শয্যা প্রয়োজন। আমি পরিবারের সদস্যকে বিনীতভাবে বলেছিলাম আমরা রোগীর জন্য বেড ব্যবস্থা করতে পারছি না। রোগীর পরিবারের লোকজন আমাকে আইসিইউতে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য বলতে থাকে কিন্তু আমি সে কথায় পাত্তা না দিয়ে আমার নিজের কাজ করে যাচ্ছিলাম।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন, “আমি এখানে আর কাজ করতে পারব না। আমি এখন আট বছর ধরে বজবজ অঞ্চলে থাকছি…। আমি দুর্গা পুজোর সময় শেষ বাড়ি গিয়েছিলাম। আমার লিভারের সমস্যা আছে। আমি গত তিন দিন ধরে স্যালাইন নিচ্ছি।”

তিনি আরও বলেছেন, “কোনও হাসপাতালের কর্মীকেই আমার মতো মারধর করা উচিত নয়। আমি কষ্ট পাচ্ছি তারপরেও ডিউটি ​​করছি, তাও আবার কোভিড ওয়ার্ডে সবার জন্য। অমি ভালোভাবেই বলেছিলাম বেড নেই। তারপরেও তারা শুনল না…৷ অমি চাই যারা হাসপাতালে ডিউটি ​​করেন তাঁরা যেন আমার মতো মারধর না খান।”

বিজেপি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে‌‌। বিজেপির রাজ্য শাখা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টুইটে ট্যাগ করে জানিয়েছেন, “তাশিনারা বিবির আত্মীয়স্বজন বজবজের একটি হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডের একজন ফ্রন্ট-লাইনারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন। হাসপাতালের কর্মীরা এখনও আতঙ্কে রয়েছেন। প্রত্যাশিতভাবে, ২৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হলেও পুলিশি তৎপরতার খবর নেই। অথচ মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন।”

এর আগেও কলকাতার এনআরএস মেডিকেল কলেজে ২০১৯ সালে ভাঙচুর চালায়। কলকাতার ট্যাংরার বাসিন্দা মোহাম্মদ সায়েদদকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। যদিও তাঁকে অবিলম্বে জরুরি অবস্থার জন্য ভর্তি করা হয়েছিল, তবুও পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন যে কোনও সঠিক যত্ন নেওয়া হয়নি।

পরিবারের লোকজন জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। হঠাৎ করেই হাসপাতাল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। অবশেষে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করতে লাঠিচার্জ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরা নিজেদের সুরক্ষার দাবিতে অস্থায়ীভাবে গেটগুলি বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং “we want Justice” প্ল্যাকার্ড নিয়ে সুবিচারের আশায় ধর্নায় বসেন।

এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক এবং কর্মীরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান ছোটখাটো বিষয় নিয়েও এই হাসপাতালে কর্মীদের বারবারই হেনস্তার শিকার হতে হয় রোগীর আত্মীয় পরিজনের কাছে। সেই অর্থে নিরাপত্তা বলে এখানে কিছুই নেই।

বাস্তবে সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী যাদের নাম উঠে আসছে তাদের আদৌ গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে ওই হাসপাতালের কর্মী এবং ডাক্তারবাবুরা। প্রশাসন কতটা তৎপরতা দেখায় সেটাই এখন দেখার। তবে পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি দেখে বলা যায় সাধারণ মানুষকে এই হাসপাতালের জরুরী পরিষেবা থেকে বেশকিছুদিন বঞ্চিত থাকতে হবে।