কক্সবাজারে প্রয়াত বাবার শ্রাদ্ধর আয়োজন করার সময় পাঁচ ভাইয়ের পূর্বপরিকল্পিত মৃত্যু !

0
656

বঙ্গদেশ ডেস্ক: বাংলাদেশের কক্সবাজারের চকোরিয়া উপজেলায় একটি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকা শোকগ্রস্ত। খুব ভোরবেলায় মৃত বাবার শ্রাদ্ধের প্রস্তুতি পূজা করে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন সাত ভাই ও দুই বোন। ঘটনাটি ঘটেছে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকায় আরাকান সড়ক নামে পরিচিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে।স্থানীয়রা বলেছেন, প্রথমে অনুপম শীলের (৪৮) শেষকৃ্ত্য সম্পন্ন হয়েছে। পরে একে একে নিরুপম শীল (৪৫), দীপক শীল (৪০), চম্পক শীল (৩৮) এবং সর্বকনিষ্ট সরণ শীলের (৩৬) শেষকৃত্য করা হয়। বিকেলে সাড়ে ৫টায় পাঁচ ভাইয়ের শেষকৃত্য শেষ হয়।‌

বাড়ির কাছাকাছি রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। সেসময় সবজি বহনকারী একটি দ্রুতগামী পিকআপ গাড়ি তাদের ধাক্কা দিয়েছে। চকোরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ ওসমান গনি বলেছেন,চার ভাইয়ের মরদেহ দাহ শেষ হওয়ার আগে হাসপাতালে আরও এক ভাইয়ের মৃত্যুর খবর আসে।দুর্ঘটনার পর দ্রুত পালিয়ে গেছে গাড়ির চালক।

তাদের বোন হীরা শীল বলেছেন, আমার ছয় ভাই এবং এক বোন দুর্ঘটনার দিন রাস্তা থেকে প্রায় দুই হাত দূরে ছিলাম। আমি এবং আমার অন্য ভাই রাস্তায় ছিলাম। পিকআপ ভ্যানটি আমাদের ধাক্কা দেওয়ার পরিবর্তে আমার ভাইদের লক্ষ্য করে পিষে ফেলে। এরপর গাড়িটি ফিরে এসে আমার ভাইদের হত্যার পর আমার আহত বোনকে পিষে ফেলে। তিনি আরও বলেছেন, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যা… তা না হলে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের দুজনকে হত্যার পরিবর্তে গাড়িটি রাস্তা থেকে দূরে থাকা আমার ভাইদের পিষে দিল কেন?

কেন তারা বিশ্বাস করে যে এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা ছিল তা ব্যাখ্যা করে, মুন্নি শীল বলেছেন, যে ৪০-৫০ জনের একদল উন্মত্ত জনতা ২৯ জানুয়ারী, ২০২২ সালে তার পরিবারকে আক্রমণ করেছিল। তিনি বলেছেন, যে জনতা তাদের বাবাকে হুমকি দিয়েছিল এবং সেই কারণে ৩০ জানুয়ারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একদিন পরে তাদের বাবা মারা যান।

হামলার কারণ বর্ণনা করে মুন্নি আরও জানান, তার বাবা পরিবার নিয়ে এলাকায় দুর্গাপূজার আয়োজন করছিলেন এবং জানুয়ারি মাসে, তার ভাই দীপক শীল, যিনি বিদেশে থাকেন, হাসিনাপাড়া এলাকায় একটি ছোট মন্দির নির্মাণের জন্য প্রায় ৪,০০০ ইট ও পাথর নিয়ে এসেছিলেন, যা ইসলামপন্থীদের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

মন্দির নির্মাণ শুরু হওয়ার পর মুন্নির বাবা হুমকি পেতে শুরু করেন। মৃত ভাইবোনের মা মৃণালিনী শীল বিলাপ করে বলেছেন, যে ২৯ জানুয়ারি হামলার সময় তিনি তার ২ সন্তানকে বিছানার নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তারা তাদের ওপর হামলা করেছে কারণ তারা একটি মন্দির তৈরি করতে চেয়েছিল। তারা হামলাকারীদের চিনতে পারেনি।

পুলিশ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় ওই পাঁচ ভাইকে চাপা দিয়ে ট্রাকটি ফেলে চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুল ও হেলপার পালায়। স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকা থেকে ট্রাকটিকে আটক করা হয়েছে এবং হাইওয়ে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে সহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, সহিদুল স্বীকার করেছে, যে সে ওই সময় গাড়িটি চালাচ্ছিল, তবে শীল পরিবারকে স্বেচ্ছায় ধাক্কা দেওয়ার‌ কথা অস্বীকার করেছে।যদিও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলি চালকের দেওয়া ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার সভাপতি দীপঙ্কর বড়ুয়া ও সেক্রেটারি প্রিয়তোষ শর্মা বলেন, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।