সুরের জগতে বাঙ্গালী নক্ষত্র পতন! গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পর প্রয়াত ‘গোল্ডেন ম্যান’ বাপ্পি লাহিড়ি

0
611

বঙ্গদেশ ডেস্ক:লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুর পর গতকাল অমৃতলোকে পাড়ি দিয়েছেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, তারপর আজ সকালে প্রয়াত হলেন সঙ্গীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ি। মুম্বইয়ের ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে মারা গিয়েছেন তিনি। ৬৯ বছর বয়সে মারা গেলেন জনপ্রিয় এই সঙ্গীত পরিচালক।

কয়েক মাস আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পুনরায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় ১ মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর বুধবার সকালে‌ ওই হাসপাতালেই মারা যান তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র জেরেই মৃত‍্যু হয়েছে সুরকারের। এ ঘটনা ধাক্কা দিয়েছে দেশ তথা বাংলার সঙ্গীত মহলে। পরপর দুদিনে সঙ্গীত জগতের দুই নক্ষত্রের পতন। এই পতন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল চলে গিয়েছেন বাংলার প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে ২৭ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। রক্তচাপের সমস্যার পাশাপাশি হার্ট ফেলিওর ছিল তাঁর। এরপর করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তিরত করা হয় বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে। কিছুদিনের মধ্যেই করোনামুক্ত হন তিনি। তাঁর কোমরের ভাঙা হাড়ের অস্ত্রোপচার হয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি। সোমবার রাত থেকে শুরু হয়ে যায় পেটে অসহ্য ব্যথা, ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে রক্তচাপ। মঙ্গলবার সকালে সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল আইসিইউতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

বাংলা গানের বিভিন্ন ধারায় মন জিতে নিয়েছেন তিনি । পেশাদারি সঙ্গীত জীবনের শুভারম্ভেই মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। গান গেয়েছিলেন ‘তারানা’ সিনেমায়। পরবর্তীতে একাধিক হিন্দি সিনেমায় গান গেয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে পান জাতীয় পুরস্কার। সঙ্গে বাংলা সঙ্গীত জগতও মুখর হয়ে ওঠে সন্ধ্যা যুগে। তাঁর গলায় ‘এই পথ যদি না শেষ হয়…’, ‘ঘুম ঘুম চাঁদ…’, ‘আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি…’-র মতো গান আজও বাঙ্গালীর মননে আলোড়ন তোলে। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। কলম্বিয়া থেকে তাঁর প্রথম রেকর্ড করা গান গিরীন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’। ১৯৪৮ সালে প্রথমবার রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনায় প্লেব্যাক করেন তিনি, ছবির নাম ‘অঞ্জনগড়’। ওই বছরেই আরও তিনটি আধুনিক গান রেকর্ড করে সঙ্গীতজগতে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেন ভবিষ্যতের এই কিংবদন্তী।

অন্যদিকে বাপ্পি লাহিড়ি একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিয়েছেন। ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘ডান্স ডান্স’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’, ‘সত্যমেব জয়তে’, ‘কম্যান্ডো’, ‘শোলা অউর শবনম’-এর মতো ছবিতে সুরকার ছিলেন তিনি। গেয়েছেন অজস্র গান। বাংলায় ‘অমর সঙ্গী’, ‘আশা ও ভালবাসা’, ‘আমার তুমি’, ‘অমর প্রেম’-সহ একাধিক ছবিতে সুর দিয়েছেন।সোনার গয়না পরার দিকে ঝোঁক ছিল বাপ্পি লাহিড়ির।সাতের দশকের শেষ থেকে আটের দশকের পুরোটা এবং তার পরেও বলিউড এবং টলিউড দুই জায়গাতেই সমানতালে রাজত্ব চলেছে বাপ্পি লাহিড়ির।