বাঙালীর খণ্ডিত জাতীয়তা: দেশভাগ ও প্রাদেশিক পেক্ষাপট

শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়

ভূমিকা

১৯০৫, ১৯১১, ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৫৬, ১৯৬১, ১৯৭১, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৭। কোনও সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় এই বছরগুলোর মধ্যে? বঙ্গভঙ্গ, বঙ্গভঙ্গ রদ, স্বাধীনতা, পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা আন্দোলন, পুরুলিয়ার বঙ্গভুক্তি, আসামের বরাক-কাছাড়ে বাংলাভাষীর সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, শাহবাগ আন্দোলন, খাগরাগড় বিস্ফোরণ, বসিরহাট দাঙ্গা। সেই পরাধীনকাল থেকে ঔপনিবেশিক রাজশক্তির কোপে পড়া, স্বাধীনতার নামে রক্তে আগুনে ছারখার হয়ে যাওয়া, পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের মতো মৌলিক অধিকারের জন্য উর্দুপন্থী মৌলবাদের হাতে রক্তাক্ত হওয়া, ভাষার ভিত্তিতে পুরুলিয়ার পশ্চিমবঙ্গে ফেরার আংশিক সাফল্য, আসামে হীন প্রাদেশিকতার শিকার হয়ে প্রাণ হারানো, লাগাতার রক্তপাতের বিনিময়ে বাংলাদেশের ভাষাগত পরিচয়ে জাতীয়তা লাভ, ‘দেশদ্রোহী রাজাকার’ চিহ্নিতদের চরম শাস্তি প্রদানের দাবিতে গণ-আন্দোলন, পশ্চিমবঙ্গে বৃহত্তর বাংলা গড়ার লক্ষ্যে নাশকতার পরিকল্পনা আবিষ্কার, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতির খবর। ঘটনাগুলো সবকটারই পেছনে রয়েছে একটি বুদ্ধিমান, সাহসী কিন্তু অতিমাত্রায় শহনশীল আবেগপ্রবণ ভারত উপমহাদেশীয় জাতির ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার ইতিহাস। উপনিবেশ স্থাপনকারীদের উদ্দেশ্য সাধু না হওয়াই স্বাভাবিক, কিন্তু স্বাধীনতার পরেও ভিন্ন ভাষাভাষীদের দ্বারা বারবার আক্রান্ত হয়েছে দেশ কাল ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালী জাতি, বলি হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার। রাজনৈতিক, ধর্মনৈতিক, সাংস্কৃতিক অস্থিরতায় বারবার বিধ্বস্ত হতে হতে জাতটার চরিত্রেও কেমন বিচিত্র বিবর্তন ঘটে চলেছে যাকে ইতিবাচক বলা মুশকিল।

পরাধীন দেশে বাংলাকে ভাগ করার সাম্রাজ্যবাদী অভিসন্ধিটি শেষমেষ ব্যর্থ করা গিয়েছিল। ১৯০৫ থেকে ১৯১১ পর্যন্ত ছ’বছর লেগেছিল এই সাফল্য পেতে। কিন্তু সেই বঙ্গভঙ্গ রদ বাঙালীর সত্যিই সাফল্য কিনা ভেবে দেখার বিষয়। কারণ বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহারের সময় মানভূম, ধলভূম সহ বিস্তির্ণ অঞ্চলকে বাংলা নয়, নব নির্মিত বিহার-উড়িষ্যা রাজ্যে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল যার অতি ক্ষুদ্র অংশ বাংলায় ফিরেছে দীর্ঘ ৪৪ বছর আন্দোলনের পর। আর শেষরক্ষাই বা হল কৈ? ১৯৪৭-এ একটি অভিন্ন রাষ্ট্রের বদলে দুটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা নামক প্রাপ্তিটি এই উপনিবেশে আর যাই হোক শান্তি স্থাপন করতে পারেনি। স্বাধীনতার চরম মূল্য দিতে হয়েছে পাঞ্জাবকেও। কিন্তু ১৯৪৭-এর ভারত ভাগের কাঁটাতার শুধু অখণ্ড বাংলার মানচিত্র নয়, পুরো জাতিটাকেই ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানি বাঙালীরা তবু পাকিস্তানি সামরিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটা সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে সংঘবদ্ধ হতে পেরেছিল; ছিনিয়ে নিয়েছিল মাতৃভাষা ব্যবহারের অধিকার এবং পরবর্তীকালে সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার রাষ্ট্রভাষা ও মাতৃভাষা অভিন্ন। কিন্তু বিপদ ঘনিয়ে থাকল ভারতীয় বাঙালীদের ওপর। ওপার বাংলা থেকে সর্বস্ব খুইয়ে আসা ছিন্নমূল বাঙালীদের চেয়ে কিছু কম করুণ নয় আসামের বরাক উপত্যকার আদি বাসিন্দা বাঙালীদের কাহিনী, যারা মানচিত্রের ওলট-পালটে নিজেদের জাতিগত ও ভাষাগত পরিচয়টুকু বজায় রাখার অধিকারও পেল না। স্বাধীন ভারতে জায়গাটার অন্তর্ভূক্তি ঘটল আসাম রাজ্যে। ত্রিপুরাও মুক্তি পায়নি অনুপ্রবেশের সমস্যা থেকে। তীব্র আদিবাসী বিদ্রোহের কবলে পড়তে হয়েছে পূর্ববঙ্গ থেকে বহিরাগত বাঙালীদের যা সমধানের বদলে জটিলতর হতে চলেছে।

ওদিকে ইংরেজ আমল থেকেই মানভূমের বাঙালীদের হতে হয় নিজ ভূমে পরবাসী, যেখানে মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ থেকে সংযোগ রক্ষা কোনওটার অধিকারই স্বীকৃত হয় না কারণ বঙ্গবাসী অধ্যূষিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিহারের অঙ্গ হিসাবে গণ্য হয়। বিতর্ক সত্ত্বেও স্বাধীনতার পরেও মানভূম, ধলভূম সহ অধুনা ঝাড়খণ্ডের ঐ অঞ্চলগুলো বিহারেই থেকে যায়, যার মধ্যে পরবর্তীকালে লাগাতার আন্দোলনের জেরে কেবল পুরুলিয়া মহকুমা একটি জেলা হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। হিসাব মতো ভারত ভাগ পাঞ্জাবিদের দু-টুকরো করলেও বাঙালীকে পাঁচ টুকরো করে দেয় – পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী, আসামের বাঙালী, ত্রিপুরার বাঙালী, ঝাড়খণ্ডের বাঙালী যারা পশ্চিমবঙ্গবাসীদের কাছে ‘প্রবাসী’ এবং অবশ্যই প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তান বা অধুনা বাংলাদেশের বাঙালী। ঝাড়খণ্ডি বাঙালীদের সঙ্গে যে অবিচার তা ঠিক দেশভাগের অভিঘাত না হলেও ঔপনিবেশিক কুপ্রভাব তো বটেই। এর মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙালীদের জাতীয়তা সুসংহত হতে পেরেছে, কারণ জাতিগত, ভাষাগত ও রাষ্ট্রীয় পরিচয় তাদের অভিন্ন। কিন্তু ভারতীয় বাঙালীরা উচ্চাঙ্গের ভাষা সংস্কৃতির ধারক হয়েও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে ‘হিন্দুস্তানী’। ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে হিন্দীকে প্রতিষ্ঠা করার পেছনে বাঙালী মণীষা, উদারতা ও সহনশীলতার অবদান কম নয়। তবু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা – এই সত্য বাংলাদেশীদের সাথে সাথে এদেশীয় বাঙালীদেরও শ্লাঘার বিষয়। তাই বৃহত্তর বাংলার সাম্প্রদায়িক স্বপ্ন যা ভারতের অখণ্ডতার পরিপন্থী, সাংস্কৃতিক সেতু বজায় রাখার আবডালে অজানতেই আমাদের মধ্যে পরিপুষ্ট হয়।

১ম অধ্যায়

দেশভাগের দাবি থেকে বাংলা ভাগ

দেশভাগ দ্বারা ভারতের যে দু’টি রাজ্য সরাসরি ও সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত, তারা হল পাঞ্জাব ও বাংলা। তবে দেশের পশ্চিম প্রান্তে ও পূর্ব দিকে ঘটনাটা ঠিক এক রকম নয়। র‍্যাডক্লিফ লাইন ঘোষণার পর পাঞ্জাবে হিংসার বিস্ফোরণ ঘটলেও জন বিনিময় ও শরণাথী পুনর্বাসনে কেন্দ্রীয় তৎপরতার দরুণ অঙ্গহানির সেই ঘা কিছুটা শুকোকে পেরেছে। কিন্তু নতুন মানচিত্রে বিস্তীর্ণ বঙ্গভাষী বা বাঙালী অধ্যুষিত ভূমি শুধু যে খাপছাড়া ভাবে ভিন্ন রাষ্ট্রে চলে গেছে তাই নয়, শরণার্থী পুনর্বাসন ও জনবিনিময়ের ক্ষেত্রটিও বোঁটোয়ারার পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত কেন্দ্র সরকারের যথাযথ গুরুত্ব না পাওয়ায় এবং ভারত অভিমুখে বিপন্ন বা জীবিকা সন্ধানী মানুষের আগমণ অব্যাহত থাকায় পশ্চিম বাংলা, আসাম ও ত্রিপুরায় আজও দেশভাগের ক্ষত দগদগে করছে।
প্রসঙ্গত, বৃটিশ ভারত থেকে বার্মা ও শ্রীলঙ্কার পৃথক হয়ে যাওয়া বা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া আলোচ্য দেশভাগের পরিসরে পড়ছে না। বার্মাকে ১৮২৬ থেকে ১৮৮৬-র মধ্যে খেপে খেপে ব্রিটিশ ভারতে যুক্ত করা হয় এবং ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রশাসন থেকে আলাদা করে সরাসরি ব্রিটেনের শাসনে আনা হয়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮-এ বার্মা (অধুনা মায়ানমার) ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পায়। আর সিলোন (অধুনা শ্রীলঙ্কা) ১৭৭৫ থেকে ছিল মাদ্রাজ রাজ্যের (Madras Presidency ) অধীনে, যা ১৭৯৮ সালের পর পৃথক ব্রিটিশ ‘মুকুট উপনিবেশে’ (Crown Colony) পরিণত হয়।[1] এই অঞ্চলগুলির ভারতীয় মানচিত্র থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার মধ্যে অঙ্গহানির অনুভূতি নেই। উপমহাদেশে ভূমি বাঁটোয়ারা (Partition) বিষয়টা মূলত ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাক সংঘাতের নিরীখেই তাৎপর্যপূর্ণ।[2]

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন বনাম মুসলিম লীগের জন্ম
দক্ষ প্রশাসনিক ও ভূততাত্বিক হিসাবে পরিচিত লর্ড কার্জন ১৯০৫-এ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি (Bengal Presidency)-কে ভাঙলেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ ও আসাম রাজ্য (East Bengal and Assam) এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা রাজ্যে ( Province of Bengal) যা অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উড়িষ্যায় বিভক্ত। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমল থেকেই এমন একটা প্রস্তাব নাকি ছিল।[3].
পশ্চিমবঙ্গ স্থিত হিন্দু অভিজাত শ্রেণীর অধিকংশের জমিদারি পূর্ববঙ্গেহিন্দু বাঙালীরা বিশেষত মধ্যবিত্ত শ্রেণী একদিকে পূর্ববঙ্গে সংখ্যাগুরু মুসলমানদের দ্বারা বিপন্ন বোধ করল; অন্যদিকে বিহারী, ওড়িয়াভাষীদের মোট সংখ্যাগুরুত্বের কাছে অস্তিত্বহীনতার সংকটে ভুগতে লাগল।[3] স্পষ্টত সেই বঙ্গভঙ্গের প্রবল প্রতিবাদ ধ্বণিত হয় হিন্দু বাঙালীদের মধ্যে, যার সাথে কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ‘স্বদেশী’ ও ‘বয়কট’ আন্দোলন জুড়ে গিয়েছিল;[3][4][5][6] জুড়ে গিয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের কল্পিত দেশমাতৃকার সম্মানে রচিত ‘বন্দে মাতরম’ গানটির আবেগ, রবীন্দ্রনাথের ‘রাখি’ সখ্য।[7] কিন্তু ভবি যতদিনে ভুলল, ততদিনে মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবাবেগ যথেষ্ট উস্কে গেছে। তাদের আশঙ্কা, সংস্কারমূলক যাই হোক তা হবে হিন্দুদের আনুকূল্যে। সম্ভবত সমগ্র বাংলায় বিশেষ করে পূর্ববঙ্গে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পর্কে সচেতনতা এবং আধিপত্যের উচ্চাশার জন্ম তখন থেকেই।[7] বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে মূলত হিন্দুদের প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখে মুসলমানরা তাদের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী (separate electorates) ও পূর্ববর্তী শাসক হিসাবে শাসনকার্যে যথোপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের দাবি নিয়ে ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর সঙ্গে দেখা করে। তাদের তখন ইংরেজের কাছে একদা ক্ষমতা হারানোর ক্ষতিপূরণ এবং তদ্‌-পরবর্তী ব্রিটিশ আনুগত্যের দাম চাই। এরই পরিণামে ১৯০৬ সালে তৈরি হয় ‘মুসলিম লীগ’।[8] সুতরাং অখণ্ড বাংলার ধারণাটা মুসলমানদের কাছে বহুদিন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক স্বার্থের পরিপন্থী ছিল।

১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহ বা ‘অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধ’র পর থেকে ইংরেজের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী কর্মকাণ্ডে মুসলিম সমাজের অংশগ্রহণ বিশেষ পরিলক্ষিত হয় না।[8] ভারতীয় মুসলিমদের পাশ্চাত্য শিক্ষালাভে অনীহা থাকলেও ইংরেজ আনুগত্য ও স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে নিস্পৃহতা বজায় থাকায় ভারতীয় জাতীয়তাবাদ মূলত ‘দয়ানন্দ সরস্বতীর ‘আর্য সমাজ’, লোকমান্য তিলকের ‘শিবাজী’ ও ‘গণপতি উৎসব’, বঙ্কিমের ‘আনন্দমঠ’ ইত্যাদি হিন্দু ভাবাবেগ কেন্দ্রিক রূপ পেতে থাকে।[8] বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দাদাভাই নৌরজি, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল, লালা লাজপত রাই, অরবিন্দ ঘোষ, গোপালকৃষ্ণ গোখলে প্রমুখের নেতৃত্বে দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বাংলা-মহারাষ্ট্র-পাঞ্জাব এই ত্রিকোণে যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল, বলা যায় তার ভরকেন্দ্র ছিল কিন্তু এই বাংলার মাটি। তাই বাঙালীর বিভাজন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের জন্য খুব আবশ্যক ছিল এবং সেই কাজে তারা সম্পূর্ণ সফল হয়েছিল।

১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গে যখন হিন্দু বাঙালীরা তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে, ঠিক সেই সময় ঢাকায় প্রতিষ্ঠত হল ‘মুসলিম লীগ’, মুসলিম সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় দাবি দাওয়া নিয়ে। ঢাকার নবাব খ়াজা সেলিমুল্লা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য গঠন দ্বারা সম্প্রদায়টির রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে শাহবাগে নিজের প্রাসাদে আয়োজন করেন ‘মুসলিম লীগ’-এর প্রথম অধিবেশন।[9] এই ইতিহাস স্মরণে রাখলে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজাকার বিরোধী অভ্যূত্থানে শাহবাগ শহরটির চয়ন যথেষ্ট তাৎপর্যময়! যাই হোক, মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার পর পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। এই বিদ্বেষের বীজ বাংলা তথা ভারতের মাটিতে বহদিন যাবত রোপিত। তাই বিদ্বেষ সৃষ্টির কৃতিত্ব পুরোপুরি ব্রিটিশ সরকারকে দেওয়া যায় না, তবে তারা সদ্ব্যবহার অবশ্যই করেছিল।
পৃথক সাম্প্রদায়িক সত্ত্বা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তার আগেই, যখন ১৮৭৫ সালে স্যার সৈয়দ আহমেদ মহামেডান অ্যাংলো ওরিন্টাল কলেজ (The Muhammadan Anglo-Oriental College) গড়ে তোলেন১। পরে ১৯২০ সালে এর নাম হয় আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (Aligarh Muslim University – AMU)।[10] ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রস্তাবিত স্বতন্ত্র মুসলমান নির্বাচকমণ্ডলী (Seperate Muslim Electorate) গড়ার দাবিতে ব্রিটিশ সরকার সায় নেওয়ায় তাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আরও গতি পেয়ে যায়।

চলবে