‘সে ঘন্টার পর ঘন্টা কাঁদত; আমাদের কোনোদিন জানায়নি কেন’: মৃত্যুর দুবছর পরেও একতা জয়সওয়ালের পরিবারের কাছে উত্তর নেই যে শাকিব কী করে তাকে ফাঁদে ফেলল

0
800
ঠাকুমা শারদা দেবীর হাঁতে একতার ছবি

২০২০ সালের মে মাসে, লুধিয়ানার হাইবোয়াল অঞ্চলের জয়সওয়াল পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যখন উত্তরপ্রদেশের একজন পুলিশ আধিকারিক তাদের ফোন করেন। সেই আধিকারিক তাদের জানান যে, একবছর আগে তাদের যে মেয়ে উত্তরপ্রদেশের এক ব্যক্তির সাথে পালিয়ে গিয়েছিল, সে খুন হয়েছে।

সেই পুলিশ আধিকারিক পরিবারকে একটি ছবি পাঠান- শুধু অন্তর্বাস পরিহিত অর্ধনগ্ন, মুণ্ডহীন, হাতকাটা এক মহিলার মৃতদেহের ছবি। আধিকারিক পরিবারকে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মিরাটে চলে আসার প্রস্তুতি নিতে বলেন। একতার মা বাবাকে সেই মৃতদেহ শনাক্ত করতে এবং যেই ব্যক্তির সাথে সে গৃহত্যাগ করেছিল তাকে শনাক্ত করতে আসতে হত। এই ব্যক্তির ওপরেই খুনের সন্দেহ এসে পড়ে।

পুলিশ সেই মৃতদেহকে একতা জয়সওয়াল হিসেবে শনাক্ত করেছে যার ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ২২ বছরে পদার্পণ করার কথা ছিল। পুলিশ প্রায় ১ বছর ধরে এই ঘটনার তদন্ত করছিল এবং অবশেষে তারা সাফল্য অর্জন করে।

২০২১ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি আমি যখন একতার বাড়িতে যাই, তার মা সীমা বলেন, ” আমাদের ধারণা ছিল একতা বেঁচে আছে। এখন পুলিশ বলছে যে ও আর নেই। তারা আমাদের এমন একটা মৃতদেহ শনাক্ত করতে বলেছে যার কোনো হাত নেই, মাথা নেই। আমাদের অনেক প্রশ্ন ছিল, কিন্তু সেই আধিকারিক খুবই ব্যস্ত ছিলেন। তিনি আমাদের মিরাটে পৌঁছোনোর সমস্ত ব্যবস্থা করে নেওয়ার তাড়া দিয়ে ফোন কেটে দেন।”

‘She Would Cry For Hours; Never Told Us Why’. Two Years After Her Murder, Ekta Jaswal’s Family Has No Answers To How Saqib Trapped Her

সারা দেশে তখন লকডাউন চলছে। সেই আধিকারিক জয়সওয়াল পরিবারকে লুধিয়ানার স্থানীয় পুলিশ থানায় সমস্ত ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। মে মাসের শেষ সপ্তাহে সীমা, তাঁর স্বামী সঞ্জীব এবং ভাই পবন ঠাকুর মীরাট যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করেন। পুলিশের ফোনের আগে পর্যন্ত তারা একতার পুরুষ বন্ধু মহম্মদ শাকিবকে আমান বলে চিনতেন।

২০২০ সালের ২রা জুন, জয়সওয়াল পরিবার পুলিশের এই কেস সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল। পুলিশ সংবাদ মাধ্যমকে জানায় যে, একতা লুধিয়ানায় এক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘তান্ত্রিক’ শাকিবের সংস্পর্শে আসে কারণ তার তখন ব্যক্তিগত জীবনে এবং শারীরিক নানা সমস্যা চলছিল। দুজনে ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই একতার পরিবার থেকে নানা আপত্তির সম্মুখীন হতে হয় শাকিবকে এবং সেই কারণেই মিরাটে নিজের গ্রামে নিয়ে গিয়েই সে একতাকে নৃশংসভাবে খুন করে।

একতার পরিবার পুলিশের দ্বারা উৎঘাটিত শাকিবের উদ্দেশ্যের এত সহজ সরল ব্যাখ্যা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে।যাইহোক, একতার পরিবার সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এই ব্যাখ্যার বিরোধিতা করেনি কারণ তাদের কাছে আর অন্য কোনো ব্যাখ্যা ছিল না। তারা মিরাট পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ কোনো এফআইআর ছাড়াই এই কেস নিয়ে এত তদন্ত করেছে।আজ অবধি, একতার পরিবার উত্তর পাওয়ার আশায় বসে রয়েছে।

‘She Would Cry For Hours; Never Told Us Why’. Two Years After Her Murder, Ekta Jaswal’s Family Has No Answers To How Saqib Trapped Her

আমার এই সম্প্রতি যাত্রায়, একতার ঠাকুমা সারদা দেবী এবং মা সীমা একতার গৃহত্যাগের আগের ঘটনাগুলো বর্ণনা করেছেন- যে ঘটনায় কোনো সংবাদ মাধ্যম এখনও কোনো আলোকপাত করেনি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে, একতার আচার ব্যবহারে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে তার পরিবার। লুধিয়ানার মেয়েদের খালসা কলেজের বাণিজ্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের স্নাতক ছাত্রী ছিল।

সবকিছুর সূত্রপাত হয় ত্বকের রোগ থেকে। তার পেটে একটি ছোপ খসখসে ও বিবর্ণ হতে থাকে। সারদা দেবী জানান, “কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার উরুতেও একই রকমের ছোপ দেখা যায়। সেই সমস্ত অংশে জ্বালা অনুভব করত। একতা আমায় ছাড়া আর কাউকে এগুলো দেখায়নি।”

তার পরিবার তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। সেই চিকিৎসক তাকে অ্যালার্জি প্রতিরোধের ওষুধ দেন। ত্বকের এই সমস্যা এতই গুরুতর হয়ে গিয়েছিল যে, ডিসেম্বরের ঠান্ডায়ও একতা সেই সমস্ত ছোপে বরফ লাগাত। তার ঠাকুমা জানিয়েছে যে, একতা দরজা বন্ধ করে ঘন্টার পর ঘন্টা খালি গায়ে বসে থাকত।

একতা কান্না ও শুরু করত। সে জানায়, ” ও কয়েক ঘন্টা একটানা কাঁদত। আমি ওকে জিজ্ঞেস করতাম কী হয়েছে? কিন্তু সে কোনোদিন আমায় কিছু জানায়নি। আমি নিজে বুঝে নিয়েছিলাম, তার ত্বকের এই সমস্যার কারণেই সে কাঁদছে।”

তার পরিবার তাকে হিমাচল প্রদেশের এক মন্দিরে নিয়ে যায় যেখানে কাঙরা জেলায় দেহরা তহশীলের চানৌর গ্রামে জয়সওয়াল পরিবারের আদিবাস। তাতে কোনো লাভ হয়নি। পরিবার তাকে পরে পাঞ্জাবের এক দরগায় নিয়ে যায়, যেখানে এক ফকির তাকে তাবিজ দেয়। তাতেও বিশেষ কোনো লাভ হয়নি।

এক আত্মীয়ের পরামর্শে, পরিবার একাতাকে হিমাচল প্রদেশের এক বৈদ্যের কাছে নিয়ে যায়। পরিবারের কথায় সেই বৈদ্য কোনো শংসাপত্র প্রাপ্ত চিকিৎসক না হলেও মানুষের চিকিৎসা করতেন। তিনি একতার এই ছোপগুলো দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেন সে মাংস খায় কিনা। উত্তরে একতা দুর্বল স্বরে হ্যাঁ বলে।

সারদা দেবী জানান, “আমরা হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। আমরা পাহাড়ি মানুষ। শুদ্ধ নিরামিষাশী। আমরা জানতামই না একতা মাংস খাচ্ছে।” সেই বৈদ্য একতাকে কঠোরভাবে পরিবারের আহারের ধরণকে অনুসরণ করতে বলে।

সীমা জানান যে, একতা আগামী সপ্তাহে একটু আরাম পেয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারির শেষের দিকে এই ছোপগুলোর জন্য একতার আবার সমস্যা দেখা দেয়। এর সঙ্গে আরও কিছু সমস্যা দেখা যায়- একতা সর্বক্ষণ খিটখিটে মেজাজে থাকত। সে বলত তার ঘনঘন মাথাব্যথা হচ্ছে। সে হাত খরচের টাকা এবং মুঠোফোনের দাবি করতে থাকে।”

একতার বাবা, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য বেসরকারি ট্যাক্সি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। একতা বাবা মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে বড়ো। একতার ভাই তার থেকে দু বছরের ছোটো। সীমা বলেন, “একতা বাবার থেকে সবসময়েই টাকা চাইত। আমি ওকে বারণ করলে, ও আমায় এড়িয়ে চলতে শুরু করে।”

সারদা দেবী বলেন, “ও আমার কাছে এসে পাশে বসে জিজ্ঞেস করত, দাদি (ঠাকুমা)আমার জন্য তুমি কত গয়না জমিয়ে রেখেছ? আমি ওকে বলতাম বিটিয়া( বাছাধন) সবই তো তোর। কিন্তু তোর এখন এগুলো লাগবে কেন?”

অবশেষে একতা একটি সাধারণ মুঠোফোন হাতে পায় যাতে হোয়াটস্অ্যাপ ছিল না। একতা, নিজের পুরো সময়টা ফোন নিয়ে কাটিয়ে দিতে থাকে। সীমা বলেন যে, তিনি একতার কোনো প্রেমিক থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেছিলেন। কিন্তু যখনই একতাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, একতা স্পষ্টভাবে না বলে দেয়।

ফেব্রুয়ারির দিকে, সমস্ত দিক থেকেই একতার সাথে তার পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে। সে তার মায়ের সাথে প্রায় কথা বন্ধ করে দেয়। সে তার বাবার সাথে কথা বলত শুধু যখন তার টাকার দরকার পড়ত। সে তার ঠাকুমার পাশে বসত শুধু ভবিষ্যতের জমাপুঞ্জি নিয়ে কথা বলার জন্য। তার ত্বকের অবস্থারও কোনো উন্নতি ঘটেনি। সে আরও বেশি করে কাঁদত।সারদা দেবীর মতে, “চার-পাঁচ ঘন্টা একটানা কাঁদত। সে দরজা বন্ধ করে কাঁদত। মাঝেমাঝে জোরে জোরে। বারবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও সে আমাদের কিছু জানায়নি। আমরা সবসময় ভেবে এসেছি, তার কান্নার কারণ তার ত্বকের সমস্যা।”

সীমা জানান যে একদিন তিনি একতার ব্যাগে আমান নামের এক তন্ত্রসাধকের বাণিজ্য কার্ড পান। এই বিষয়ে তিনি একতাকে প্রশ্ন করলে সে কোনো উত্তর দেয়নি। সীমার বক্তব্য অনুযায়ী, “সে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে। আমি ওর ওপর চিৎকার করতে থাকি। ওকে জিজ্ঞেস করি ওর উদ্দেশ্য কী? কেমন ধরণের মানুষের সাথে মেলামেশা করছে ও? কিন্তু ও চলে যায়।”

সেই সপ্তাহে একতার মামা পবন এ বাড়িতে এলে সীমা তাকে কার্ডে লেখা ঠিকানায় খোঁজ খবর নিতে পাঠান। সীমা বলেন, ” আমরা এই ঠিকানায় একজনের দেখা পাই। সে মুসলিম ছিল। আমাদের তার নাম এখন মনে নেই। সে প্রথমে আমাদের জানায় যে আমান বলে কেউ থাকে না সেখানে। তারপর সে জানায় যে, আমান তার গ্রামে চলে গেছে। আমরা সেদিন সেই মানুষের বিষয়ে কোনো তথ্য ছাড়াই বাড়ি ফিরি।” আমি বুঝতে পারছিলাম যে, একতা আমানকে আগে থেকেই সব জানিয়ে রেখেছিল এবং এই ছেলেটিকে আমানের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নিষেধ করেছিল।

সীমা বলেন, তিনি দুইয়ে দুইয়ে চার করতে পারছিলেন। তিনি খেয়াল করেন একতা বেশ কিছুদিন ধরে বাড়ির পুজোয় অংশগ্রহণ করত না। সীমার মতে, “আমি ধূপকাঠি জ্বালালেই ও অন্য ঘরে চলে যেত। আমি একদিন ওকে কালাম পড়তে দেখেছি। মুসলিমরা যেটা পড়ে। কিন্তু সেই সময়ে আমি বেশি কিছু বুঝে উঠতে পারিনি।” আমি জিজ্ঞেস করি, ” কালাম না কলমা?” সীমা উত্তরে বলেন, “ওটাকে কলমা বলে? আমি বেশি কিছু জানিনা এই ব্যাপারে।”

এরপর থেকে একতা বেপরোয়া হয়ে যায়। সে তার দুই হাতে ট্যাটু করিয়ে আসে- এক হাতে একতা, অপর হাতে আমান নাম লিখিয়ে আসে। সীমা তার কলেজ যাওয়ার সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞাজারি করেন। গৃহবন্দি থেকে একতা প্রায়ই তার ঠাকুমার কাছে হিমাচলে পিসির বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইত।

সারদা দেবী বলেন, “ও আমায় বলত ঠাকুমা, আমায় হিমাচলে পিসির বাড়ি যেতে দাও এবং পিসিকে এখানে নিয়ে আসতে দাও। আমার পিসির কথা খুব মনে পড়ে। আমি তাতে ওকে বাঁধা দিয়ে বলি, আমিও তোর সঙ্গে যাব। আমরা দুজন গিয়ে তোর পিসিকে লুধিয়ানায় নিয়ে আসব।”

দুজনে বাসে করে হিমাচলে যায়। প্রথম কিছুদিন নির্বিঘ্নে কাটে। এই কদিন একতা তার ফোনে বন্ধুদের সাথে কথা বলে এবং একা ঘরে কেঁদে কাটায়। ঠাকুমা বলেন, “এমনকি সেদিনও আমি ওকে জিজ্ঞেস করি বাছা তুই কাঁদছিস কেন? সে আমায় কিছু জানায়নি।” একদিন, সারদা দেবী  সেই গ্রামেই অন্য এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন রাত কাটানোর উদ্দেশ্যে। একতা তার পিসির বাড়িতেই ছিল। পরের দিন সকালে, চুপিসারে সে হিমাচল থেকে চলে যায়। সারদা দেবী বলেন, “যখন তার পিসি তাকে জিজ্ঞেস করে এই বিষয়ে, সে বলে লুধিয়ানায় তার কলেজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে।”

একতা সেদিন লুধিয়ানায় নিজের বাড়িতে পৌঁছায়নি। সে সারাদিনে শুধু একটা ফোন ধরেছিল। সীমা বলেন, সে এক বন্ধুর সাথে আছে বলে জানায় এবং এও বলে যে কাজ শেষ হলেই সে ফিরে আসবে।” সারদা দেবী তার পরের দিন লুধিয়ানায় ফিরে আসেন। দুদিন কেটে যায়, একতা বাড়ি আসেনি। সে কোনো ফোন ধরাও বন্ধ করে দেয়। একতার পিসি খুবই লজ্জিত হয় এই ভেবে যে তার বাড়ি এসেই একতা নিরুদ্দিষ্ট হয়। সে লুধিয়ানায় একতার মা বাবার সাথে দেখা করতে আসেন।

“আমরা সবাই আমাদের নিখোঁজ মেয়ের জন্য কান্নাকাটি করছি। তখন হঠাৎ আমি আমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করি তুই তোর সিন্দুক খুলে দেখেছিস?”- এই বলে সারদা দেবী তাঁর মেয়েকে হিমাচলে পাঠান। সবাইকে অবাক করে সে জানায় যে, সিন্দুকে সাবধানে রাখা গয়নাগুলো আর নেই।” সীমা বলেন, “ওর মধ্যে অর্ধেক গয়না আমার।” নিজের মেয়ের কাজে লজ্জিত হয়ে সীমা তাঁর ননদকে নিজের সঞ্চয়ের একটি বড়ো অংশ দিয়ে দেন গয়না চুরির ক্ষতিপূরণ হিসেবে।

সে বলেন, “আমার কাছে আর কোনো গয়না বা নগদ নেই। আমি নিজের মেয়ের সাথে সাথে সমস্ত সঞ্চয় হারিয়েছি।” পরের সপ্তাহে, একতা কেবল একটি ফোন ধরে। সে সীমাকে জানায় যে সে শুধু তার ঠাকুমার সাথে কথা বলতে চায়। সেই ফোন সঙ্গে সঙ্গে সারদা দেবীকে দেওয়া হয়।

তার ঠাকুমা তাকে বলেন, “আমি বললাম- বিটিয়া(বাছাধন) তুই নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিস। এখন বাঁচার আর কোনো রাস্তা নেই। একতা উত্তরে কিছু বলে না, কিছুক্ষণ বাদে সে ফোন কেটে দেয়।”

এই সময়ে একতার সাথে পরিবারের শেষ কথা হয়। তারা লুধিয়ানার স্থানীয় পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ তাদের বরং হিমাচলে যাওয়ার পরামর্শ দেয় কারণ হিমাচলেই এই ঘটনা ঘটে।

পবন যে হিমাচলে থাকেন, সে সেখানের পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ চিঠিটি নিলেও জানায় যে তার নির্বাচনের কাজে খুবই ব্যস্ত। তাই তারা এফআইআর নিতে পারবে না, তবে তারা সময় পেলেই বেসরকারীভাবে এই ঘটনার তদন্ত করবে।

২০১৯ সালের মে মাসে তখন সাধারণ নির্বাচনের কাজ চলছে। পরিবার আর পুলিশ কেসে জড়াতে চায়নি। সীমা বলেন, ” আমরা জানতাম যে আমাদের মেয়ে হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমার স্বামী বলেন, সে ভুলেই গেছে যে তাঁর কোনো মেয়ে ছিল।”

সীমা জানান যে সে পরে একাধিকবার একতাকে ফোন করেন। একতা বা একতার হয়ে অন্য কেউও কোনোদিন ফোন ধরেনি।তার নম্বর এখন হোয়াটস্অ্যাপে দেখা যায়। তার মানে, সে তার ফোন বদলেছে। কিন্তু সীমার কোনো বার্তার উত্তর একতা দেয়নি। একতার ডিসপ্লে ছবি ঘনঘন পরিবর্তিত হত। সীমা বলেন, “একটি ছবিতে, একতা পাশের দিকে তাকিয়ে ছিল এবং তার কানে বড়ো সোনার দুল দেখা যাচ্ছিল।”

এইভাবে একবছর কাটে যতদিন না উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ফোন আসে। মিরাটে পৌঁছে পরিবার জানতে পারে যে, আমানের আসল নাম মহম্মদ শাকিব এবং সে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। সংবাদ সম্মেলনে দিন তারা প্রথমবার শাকিবকে দেখে। সীমা বলেন, “একতা পালিয়ে যাওয়ার পর, একটি ছবি নম্বর থেকে আমাদের পাঠানো হয়, সেই ছবিতেই আমরা আমানকে দেখেছিলাম।” সেই ছবিতে আমান খুব সম্ভবত একটা রেস্টুরেন্টে দাঁড়িয়ে ছিল। সীমা বলেন, “ছবিতে আমানকে ভালোই দেখতে মনে হয়েছিল। কিন্তু ওকে সামনাসামনি দেখলে কেমন শ্রমিকের মত মনে হয়, শ্রমিকের চেয়েও খারাপ বলতে গেলে। আমি অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে, এই লোকটাকে একতা কী দেখে পছন্দ করেছিল?”

পরিবার আজ অবধি বলে, তারা একতার আসল গল্প জানে না। সংবাদ সম্মেলনে সংবাদ মাধ্যম ও পুলিশের সামনে শাকিবের সাথে একতার মায়ের এক মিনিট মত কথোপকথন ছাড়া একতার পরিবার শাকিব বা তার পরিবারের সাথে কথা বলার কোনো সুযোগ পায়নি।

সীমা জানান, ” আমি শাকিবকে জিজ্ঞেস করি- ‘আমার মেয়েকে খুন করলে কেন?’ সে উদাসীনভাবে উত্তর দেয় সে খুন করেনি। আমি বলি- ‘তুমি ওকে নিজের কথার জালে ফাঁসিয়েছিলে শুধু গয়না আর নগদ ওর থেকে আদায় করার জন্য?’ সে আবার উদাসীনভাবে উত্তর দেয় যে, একতা নিজের সঙ্গে সোনার একটা পাতলা চেন ছাড়া কিছুই আনেনি।”

সেই সংবাদ সম্মেলনেই সীমা খুনের অভিযোগে সহ অভিযুক্ত শাকিবের বৌদির সাথে এক মিনিট কথা বলার সুযোগ পান। পুলিশ এই তদন্তে মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করেন তার মধ্যে দুজন মহিলা। সবাই শাকিবের পরিবারের সদস্য। অভিযুক্তদের নাম হল- মুসারাত, মুসতাকিম, রেশমা, ইস্মাত, আয়ান। সীমা বলেন, “আমার তাকে কিছুই জিজ্ঞেস করার ছিল না। আমি তাকে সর্বসমক্ষে থাপ্পড় মারি এবং জিজ্ঞেস করি- ‘নিজে মেয়ে হয়ে তুমি আমার মেয়েকে খুন করলে কীভাবে?’ ”

শাকিব ও তার পরিবার মিরাটের লোহিয়া গ্রামের বাসিন্দা যা দৌরালা পুলিশের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। আজ পর্যন্ত একতার পরিবার সেই গ্রাম চোখে দেখেনি। তাদের যাতায়াত মিরাট শহরেই সীমাবদ্ধ ছিল।

সীমা জানিয়েছেন, সে দেশের এই অংশ কোনোদিন দেখেননি। তিনি বলেন, ” কর্নেল পেরোনোর পর, সবই অচেনা লাগছিল। আমি কোনোদিন দাঁড়িওয়ালা লোক বা বোরখা পরিহিত মহিলাদের দেখিনি। আমাদের খুব সাধারণ পাহাড়ি মানুষ।”

মিরাট পুলিশের অনুরোধে, সীমা, তাঁর ভাই এবং তাঁর স্বামী আরও তিনবার মিরাটে যান। দ্বিতীয়বারে, সীমা নিজের রক্তের নমুনা দেন একতার সাথে ডিএনএ মিলিয়ে দেখার পরীক্ষার জন্য। তৃতীয়বারের বেলায়, সীমার স্বামী রক্তের নমুনা দেন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। তৃতীয়বারে তাদের কিছু কাগজে স্বাক্ষর ও করতে হয়। এই সমস্ত প্রক্রিয়া বাদে, পুলিশি তদন্তে কোনোভাবেই পরিবার যুক্ত ছিল না।

সীমা বলেন, “আমার স্বামী বলেছেন হয় তিনি কাজ করে পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে পারবে নাহয় সে এই আইনি লড়াই লড়তে পারবে। তাই আমরা সবকিছু মিরাট পুলিশের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।”

সারদা দেবী আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ” খুনিদের ফাঁসি হবে?” আমি বললাম সেটি প্রায় অসম্ভব। ঠাকুমা হতাশ হলেন। তার গলার স্বর জড়িয়ে আসে। সে বলেন সে এখন উপলব্ধি করতে পারছেন যে, আমান হয়তো একতাকে হুমকি দিত টাকা পয়সা ও সোনার গয়না নিয়ে আসার জন্য। “এই কারণেই আমাদের মেয়েটা এত কাঁদত। আমরা তখন সেটা বুঝতে পারিনি।”

সীমা বলেন যে তিনি সন্দেহ করেন, এটা বশীকরণের দ্বারাই সম্ভব। সীমা বলেন, “আজ অবধি আমরা জানিনা একতার হঠাৎ কীভাবে ত্বকের রোগ হল। আমরা জানিনা সে কীভাবে আমানকে চিনল। আমরা জানিনা ও কীভাবে আমাদের থেকে এত দূরে চলে গেল। আমরা এমনকি এটাও জানি না, আমানের হুমকির ভয়ে সে তাকে সব টাকা, গয়না দিল, নাকি তাদের মধ্যে প্রেম সম্বন্ধ ছিল।”

“আমাদের মেয়ের গল্প এখনও আমাদের কাছে রহস্য হয়ে রইল।”

মূল লেখাটি স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত, লিখেছেন স্বাতী গোয়েল শর্মা। অনুবাদ করেছেন পিয়ালি। ছবি ঋণঃ স্বরাজ্য পত্রিকা।