“গান্ধী”দের চোখে চোখ রেখে কথা বলবার স্পর্ধা এবং তার ফলাফল

0
575

গত শুক্রবার রাতে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদের অধিবেশন কক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব-সম্পর্কিত বিতর্ক চলাকালীন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বালখিল্য আচরণ এবং মিথ্যা আরোপগুলির উচিত জবাবই যে শুধু দিয়েছেন তা-ই নয়, উপরন্তু নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি কংগ্রেস যে অন্যায় করেছিল সেই প্রায়-ভুলিয়ে-দেওয়া ঐতিহাসিক সত্যকে বহুদিন বাদে আবার একবার দেশবাসীর সামনে এনে উপস্থিত করেছেন। ভারতবর্ষের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এই ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে দেশবাসীর স্মৃতি থেকে চিরতরে ঘুচিয়ে দেবার জন্য কংগ্রেস নেতারা, বিশেষ ক’রে গান্ধী পরিবার এবং কংগ্রেসের দাক্ষিণ্যে লালিত শিক্ষাবিদ-ইতিহাসবিদেরা চেষ্টার অন্ত রাখেননি। এঁরা বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলিতে এবং তথাকথিত ‘পাণ্ডিত্যপূর্ণ ইতিহাসগ্রন্থ’গুলিতে এই ঘটনাটিকে চেপে গিয়ে, লঘু ক’রে দেখানোর চেষ্টা ক’রে, এমন কী মিথ্যার মোড়কে সাজিয়ে পেশ করতেও দ্বিধা করেননি। বর্তমান প্রজন্মের বঙ্গসন্তানের কাছে তো ঘটনাটির গুরুত্বই মিটে যেতে বসেছিল। প্রধানমন্ত্রী মহাশয় তাঁর জবাবী বক্তৃতায় কংগ্রেসের হাতে নেতাজীর চরম অপমান-অবমাননার তথ্যটির উল্লেখ ক’রে বাঙালির তমসাচ্ছন্ন স্মৃতিকে ফের তরতাজা ক’রে তুলেছেন। এজন্য তিনি বঙ্গবাসীর কাছে ধন্যবাদার্হ হয়ে থাকবেন।

বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি গৃহীত হবার আগে সরাসরি সম্প্রচারিত বিতর্ক চলাকালীন সংসদের অধিবেশন কক্ষে সমগ্র দেশবাসী এবং এমন কী বিশ্ববাসীর সম্মুখে প্রধান বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি কতকগুলি ডাহা মিথ্যা দিয়ে সাজানো বক্তব্য পেশ করবার পর যে আচরণের নজির রাখলেন, তা ন্যক্কারজনক বললেও কম বলা হয়। এই বক্তব্যের মধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমান বেচাকেনা সম্পর্কিত কয়েকটি এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মিথ্যাভাষণ ছিল, যে তাতে বিব্রত হয়ে স্বয়ং ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি বিবৃতি দিতে বাধ্য হন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রককেও বিবৃতি জারি করতে হয়। ভারতের বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারামন অবশ্য গান্ধীর মিথ্যা দাবীগুলির জবাব সংসদে তার কিছু পরপরই বেশ জোরের সঙ্গে দিয়ে দেন। সবার বক্তব্য শেষ হ’লে পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রত্যুত্তর সম্ভাষণ দিতে উঠে নাম না ক’রে গান্ধীর শিশুসুলভ আচরণের তীব্র নিন্দা করেন এবং দেশ ও বিশ্ববাসীর চোখের সামনে একেবারে সংসদের অধিবেশন কক্ষের মত গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি স্থানে এমন আচরণ করা অতীব দায়িত্বজ্ঞানহীন ব’লে ভর্ৎসনা করেন। এর কিছু পরেই প্রধানমন্ত্রী মহাশয় রাহুল গান্ধীর বক্তব্য থেকে একখানি কথা বেছে নিয়ে আক্রমণ শানাতে আরম্ভ করেন। কথাটি হচ্ছে এই – রাহুল গান্ধী নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী নাকি তাঁর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে ভয় পান। যদিও কথাটির কোনো সারবত্তা নেই, তবু এটুকু বলতে পারি যে আমরা শ্রী গান্ধীর কাছ থেকে এমন হাস্যকর অসত্য বচনের চেয়ে বেশি কিছু আশা ক’রে থাকি না। আখেরে কিছু মুষ্টিমেয় পদলেহনকারী কংগ্রেস ও অন্যান্য মোদী-বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এবং চাটুকারিতা করতে অভ্যস্ত কয়েকজন অসৎ সাংবাদিকদের বাদ দিলে সমগ্র ভারতবর্ষে (এমন কী বিদেশেও) সকলের কাছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এমন একজন হাস্যাস্পদ ব্যক্তি বলেই গণ্য হন, পারিবারিক প্রতিপত্তি এবং পিতৃদত্ত পদবীর জোর ছাড়া আর কোনো যোগ্যতাই যাঁর নেই। বর্তমান ভারতের রাজনৈতিক এবং লৌকিক সংস্কৃতির পরিসরে, বিশেষ ক’রে ওয়েব দুনিয়ার কল্যাণে জনমানসে রাহুল গান্ধী অধুনা ‘ইন্টারনেট মিম’-এর মাধ্যমে ছড়ানো মশকরার খোরাকের চাইতে বেশি কিছু নন। তাই অন্যান্য নানা সময়ে তাঁর মুখনিঃসৃত আলটপকা বালখিল্য কথাবার্তার মত “চোখে চোখ রেখে” উত্তর দেবার সাহসের কথাটিও আমাদের কাছে খুব বেশি প্রাধান্য পেত না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মহাশয় এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়েননি। একেই স্থান, কাল, পাত্র বুঝে শব্দ এবং বাক্যপ্রয়োগ করাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জুড়ি নেই, তদুপরি ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে নিজের এবং দলের প্রতিপত্তি খোদ লোকসভাতেই আরেকবার জাহির করবার সুযোগ পেয়ে তাঁর বাগ্মিতা যেন শতদল পুষ্পের মত সহসা বিকশিত হ’ল। গত কিছুকাল যাবৎ বিরোধীদের লাগাতার নানা আকথা-কুকথা, অভিযোগ, কুৎসার মুখে প্রধানমন্ত্রী মহোদয় যেন কিছুটা ম্রিয়মাণ ছিলেন। সেই পর্ব কাটিয়ে উঠে গত শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা আবার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হ’তে দেখতে পেলাম। দেখলাম যে তিনি বিশেষ উপলক্ষে প্রয়োজনে গর্জে উঠতে জানেন। কংগ্রেস সভাপতির অমন একটি ফালতু অভিযোগকেও সুনিপুণভাবে কাজে লাগিয়ে তিনি একেবারে মোহনদাস করমচন্দ গান্ধীর সময়কাল হ’তে চলে আসা কংগ্রেসের স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রের ইতিহাসটিকে টেনে এনে কংগ্রেসি পরিবারতন্ত্রকে তুলোধোনা করলেন। এই প্রসঙ্গেই তিনি কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নেতাজীর অবমাননা ও হেনস্থার কথাটির উল্লেখ করেন। মূলতঃ যাঁর আত্মত্যাগ এবং দেশবিদেশব্যাপী সশস্ত্র সেনা-অভিযানের ফলে ভারতবর্ষ হ’তে ব্রিটিশ শাসক সাততাড়াতাড়ি পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়েছিল, সেই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে ‘মহাত্মা’ গান্ধীর চোখে চোখ রাখবার স্পর্ধা দেখাবার কী মূল্য চোকাতে হয়েছিল সেকথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন। বাঙালির তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে এই উল্লেখ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কারণ আমাদের স্মরণশক্তি এবং ইতিহাসচেতনা দুই-ই খুব দুর্বল। এখানে একবার সংক্ষেপে সেই ইতিহাসটি ঝালিয়ে নেওয়া যাক্‌।

ইউরোপের নির্বাসন থেকে ফেরবার পরপরই ব্রিটিশ সরকার ফের নেতাজীকে গ্রেপ্তার করে, এবং এক বছর আটকে রাখবার পর মুক্তি দেয়। এর কিছু পরেই ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হরিপুরায় কংগ্রেসের বার্ষিক জাতীয় অধিবেশনে তিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন, এবং একটি জাতীয় প্ল্যানিং কমিটি গঠন করেন, যা দেশজুড়ে ব্যাপক শিল্পায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু নেতাজীর নেতৃত্বে এই পরিকল্পনা গান্ধীর মনঃপুত হয় না, কারণ গান্ধীর ‘স্বদেশী’ অর্থনৈতিক চিন্তা চরকা কাটা জাতীয় ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পের বাইরে কিছু ভাবতে রাজি ছিল না। গান্ধীর এই অবাস্তব এবং একগুঁয়ে মনোভাবের কারণে সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্রকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে পদে পদে গান্ধী ও তাঁর অন্ধ অনুগামীদের অসহযোগিতার সম্মুখীন হ’তে হয়। নেতাজীর প্রতি গান্ধীর ঈর্ষা-দ্বেষ এতদূর প্রবল হয়ে ওঠে যে তাঁকে সভাপতি পদ থেকে অপসারণ করতে গান্ধী বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠেন, এবং পরের বছর ত্রিপুরিতে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনে সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে তিনি নিজের বাছাই করা অনুগামী পট্টভি সীতারামাইয়াকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, আর তাই ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ত্রিপুরি কংগ্রেসেও সুভাষচন্দ্র সভাপতি নির্বাচিত হন। সীতারামাইয়ার পরাজয়কে গান্ধী তাঁর নিজের পরাজয় ব’লে বর্ণনা করেন, যে দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতি সদ্যনির্বাচিত সভাপতি এবং কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই নয় – নিজের বয়স এবং মর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে একরকমের ব্ল্যাকমেল। তবে ওই নির্বাচনী পরাজয়ের পরেও গান্ধীর ছেলেমানুষি একগুঁয়েমি এবং অন্ধ সুভাষ-বিরোধিতা না যাওয়াতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নামক রাজনৈতিক দলটির স্থাপনা করেন। বস্তুতঃ কংগ্রেস তথা সমগ্র দেশবাসীর মধ্যে তরুণ সুভাষচন্দ্রের অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা ও ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে এবং নিজের মান্ধাতার আমলের অচল একরোখা অহিংসপন্থার রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতা দ্রুত কমতে থাকার কারণেই হেরে গিয়েও শেষমেশ ব্ল্যাকমেলের পন্থা নেন এই তথাকথিত ‘মহাত্মা’ গান্ধী। সুভাষচন্দ্র যাতে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে মসৃণভাবে নিজের কাজ করতে না পারেন সেজন্য কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের ইস্তফা দিতে চাপ সৃষ্টি করবার জন্য নিজ অনুগামীদের মাধ্যমে কলকাঠি নাড়া থেকে শুরু ক’রে অসুস্থ সুভাষচন্দ্র অধিবেশনে স্ট্রেচারে চেপে বক্তৃতা দিতে পৌঁছলে গান্ধী-অনুগামীদের কটূক্তি – কোনোকিছুই গান্ধী ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা বাদ রাখেননি। অথচ গান্ধী যদি এই ছেলেমানুষি জেদ এবং আত্মকেন্দ্রিক ঈর্ষার ঊর্দ্ধে উঠে কংগ্রেসের গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতির ফলাফলটিকে খোলা মনে গ্রহণ করতে পারতেন, তাহ’লে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের হাতেই থাকত কংগ্রেসের রাশ; ফলতঃ নেহরু নয়, বরং সুভাষচন্দ্রই ব্রিটিশ সরকার এবং মুসলিম লীগের নেতাদের মোকাবিলা করতেন। দেশ তিন ভাগ হ’ত কি? বলা যায় না। তবে এটুকু বুঝতে আমাদের অসুবিধে হয় না যে সেরকমটা ঘটলে আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাস সম্পূর্ণ অন্য খাতে বইত।

‘জাতির জনক’-এর এই লজ্জাজনক ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে ছাপা হয় না, সরকারি প্রচারযন্ত্রে তুলে ধরা হয় না, কারণ সেখানে মোহনদাস-নেহরু-ইন্দিরা-রাজীবদের গান্ধী-রাজ এবং কংগ্রেসের গুণগান বাখানই একমাত্র দস্তুর, সেটাই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একমাত্র অনুমোদিত ইতিহাস। সেটাই স্বাভাবিক, কারণ ক্ষমতায় যে থাকে, ইতিহাস সে নিজের মত ক’রেই লেখে। দেশভাগের পরের সত্তর বছরের স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক শাসনক্ষমতায় কংগ্রেসই ছিল। যেসব বাঙালিরা কংগ্রেস ও কংগ্রেস হ’তে উদ্ভূত দলগুলির আদর্শহীন দেউলিয়া রাজনীতির মোহে আজো স্বেচ্ছায় অথবা অন্য কোনো স্বার্থগত কারণে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন তাঁরা আধুনিক ভারতের ইতিহাসে বাঙালির শ্রেষ্ঠ নেতা সুভাষচন্দ্রের অপমান-অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা-হেনস্থা-অবমাননার এই ইতিহাস মনে রাখেননি, মনে রাখতে চান না। তাই বাংলার রাজনীতি আজ বন্ধ্যা – একদা যা অরবিন্দ, বিপিনচন্দ্র পাল, বাঘা যতীন, চিত্তরঞ্জন দাশ, রাসবিহারী বসু, যতীন দাস, নেতাজী সুভাষচন্দ্র, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো কৃতী তেজস্বী এবং ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন বীর সন্তানদের প্রসব করেছিল, সেই ঐতিহ্যমণ্ডিত ক্ষেত্রে আজ মহামূর্খ এবং দুর্বৃত্তেরা দাপিয়ে বেড়ায়।

কাজেই নিজের প্রত্যুত্তরে এই কথাটি পেড়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাঙালির অশেষ উপকার করেছেন। বাঙালি হিসেবে এইজন্য আমরা তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করা যাক্‌ তাঁর বক্তৃতার অন্ততঃ এই অংশটুকু কানে গেলে বাঙালির স্মৃতির উপর জমে থাকা ধুলো অপসারিত হবে, বাঙালি ইতিহাস-সচেতন হবে, আত্মপরিচয় রক্ষায় যত্নশীল হবে এবং ভারতবর্ষের সভ্যতার ইতিহাসে নিজের সঠিক স্থানটি বুঝে নেবে।

বিগত শতাব্দীর তিরিশের দশকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে গান্ধীর অচল অবাস্তব রাজনীতির প্রবল প্রতিস্পর্ধী হিসেবে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের উত্থানকেই প্রধানমন্ত্রী মহাশয় কংগ্রেসি রাজনীতির মূল স্তম্ভ গান্ধী-নেহরু অক্ষের “চোখে চোখ রাখা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তামসিক দুর্বলতার বিপক্ষে কর্মের সবলতার এই ধূমকেতুসুলভ উত্থান এবং তার ফল হিসেবে একনায়কসুলভ মানসিকতার হাতে কর্মীর অবমাননা ও লাঞ্ছনার ইতিহাসকে নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজেকে “নামদার”-দের (নামজাদা) উল্টোদিকে “কামদার” (অর্থাৎ কর্মনিষ্ঠ) হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। গান্ধী পরিবারের এক বংশধর, যিনি ভারতবর্ষের মত দেশের নেতা হওয়া তো দূরে থাক্‌, কোনো ছোটোখাটো রাজনৈতিক দলেরও নেতা হবারও যোগ্য নন; তিনি তাঁর বংশের পরম্পরা রক্ষা ক’রে প্রত্যাশামতোই কংগ্রেস সভাপতি পদে ‘নির্বাচিত’ হয়েছেন, সেদিন সংসদে তাঁর অশালীন আচরণ এবং বক্তব্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দম্ভোক্তিগুলি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজর এড়ায়নি। গরীব, পিছিয়ে পড়া ওবিসি পরিবার থেকে উঠে এসে আপন কর্মকুশলতার জোরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদ শ্রী নরেন্দ্র মোদী অলঙ্কৃত করেছেন, এ ব্যাপারটি গান্ধীশাহী কংগ্রেস এবং লাটিয়েন্স দিল্লীর ক্ষমতার অলিন্দে চিরকাল বাস্তুঘুঘুর মতো ঘাঁটি গেড়ে থাকা রাজনৈতিক নেতানেত্রী তথা সাংবাদিকদের হজম হচ্ছে না। ক্ষমতা সবসময়েই অতি-রক্ষণশীল, তা আপন পরিচিত বৃত্তের বাইরে থেকে আসা কোনো ব্যক্তি বা ভাবকে সহ্য করতে পারে না। বহু দশক যাবৎ কংগ্রেস দল তথা ভারতের শাসনক্ষমতা দখল ক’রে থাকা গান্ধী পরিবার, এবং কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলে ঐ পরিবারটির বশংবদ নেতৃবৃন্দ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ঠিক একই কারণে নিজেদের আক্রমণের একমাত্র নিশানার কেন্দ্র করে তুলেছেন ব’লে প্রধানমন্ত্রী মহাশয়ের মত। আপাততঃ এই মতকে নেহাত অযৌক্তিক ব’লে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

Previous article২১ মানে উন্নয়নের বাঁচার লড়াই
Next articleভারত বিখণ্ডন যজ্ঞের পুরোহিত
শ্রীজিৎ দত্ত
শ্রীজিৎ দত্ত ভারতীয় অলঙ্কারশাস্ত্র বিষয়ে গবেষণারত। পড়াশোনা কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিছুদিন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতীতেও পড়াশোনা করেছেন। ইন্ডিয়াফ্যাক্টস, প্রাজ্ঞতা, স্বরাজ্য, মাইইন্ডমেকার্স, টপইয়াপ্স ইত্যাদি পত্রিকায় নিয়মিত ভারততত্ত্ব বিষয়ে লেখালেখি করেন। পেশা অধ্যাপনা, ধ্যানজ্ঞান সঙ্গীত। যোগাযোগ – sreejit.datta@gmail.com