বিগত সত্তর বছরে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি : আত্মহননের এক অনন্য অধ্যায় – ১

আবীর রায়গাঙ্গুলী

১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট, শুক্রবারের নামাজের পর কলকাতার রাস্তায় শুরু হলো নারকীয় হত্যালীলা। হিন্দুদের রক্তে লেখা হলো ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। দেড় মাস পরে, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। এবার নোয়াখালি। এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বৃহত্তর চিত্রটা দেখলে বোঝা যায় যে, ভারতের বিভাজনের আগেই প্রস্তাবিত পশ্চিম পাকিস্তানের ‘লিয়াকাত আলি’ রা দায়িত্ব নিয়েছিল কিভাবে এবং কত দ্রুত পাকিস্তান গঠনের সাথে সাথে, হিন্দু-শূন্য করে ফেলা যায় বাংলাকে।

এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রুখে দাঁড়ান মেঘনাথ সাহা, যদুনাথ সরকারেরমতো একদল বাঙালি বুদ্ধিজীবী। বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলি-র ভোটাভুটিতে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানে গেলেও, ৫৮-২১ ভোটে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে। রক্ষিত হলো বাঙালির বাসভূমি, রক্ষিত হলো বাংলার হিন্দুদের বেঁচে থাকার অধিকার, রক্ষিত হলো বাঙালি নারীর সম্মান। যা অন্যথায় দানবের পৈশাচিক অত্যাচারের প্রমাদ গুনছিল। ১৯৪৭ সালের ২০শে জুন, পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করে ভারতকেশরী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রক্ষা করেছিলেন বাঙালিকে, রক্ষা করেছিলেন হিন্দুত্ব, ভারতীয়ত্ব ও মনুষ্যত্বকে।

এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়, কিভাবে, ১৯৪৭ সালের ২০ শে জুন পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে, যে আশা-আকাঙ্খা কে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের পুনরুদ্ধার হয়েছিল; তার সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে গিয়ে বাঙালি জাতি ও জাতিসত্ত্বার অবক্ষয় ঘটলো পরের সত্তর বছরে।

এর আগে অবশ্য সুরাবর্দী এবং শরৎ বসুর নেতৃত্বে চেষ্টা হয় গ্রেটার বাংলা গড়ে তোলার, যা ভারত ও পাকিস্তান থেকে আলাদা হবে বলে দাবি করেছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ যদিও সুরাবর্দীর সেই ‘গ্রেটার বেঙ্গল’-র ধারণার বাস্তবায়ন হিসেবে ধরে নেওয়াই যায় এবং পাঠকের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে কোন রাজনৈতিক কাঠামোটি বাঙালির জন্য যথোপযুক্ত?

অবশ্যই ভারতবর্ষ। পশ্চিম পাকিস্তান বা পরবর্তীকালের বাংলাদেশ—বাঙালির পক্ষে দুইই সমান। কেন? তার উত্তর অবশ্যই এই প্রবন্ধে খোঁজার চেষ্টা করবো। তবে, মূলত এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়— কিভাবে, ১৯৪৭ সালের ২০ শে জুন পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে, যে আশা-আকাঙ্খা কে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের পুনরুদ্ধার হয়েছিল; তার সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে গিয়ে বাঙালি জাতি ও জাতিসত্ত্বার অবক্ষয় ঘটলো পরের সত্তর বছরে।

অন্যভাবে বলতে গেলে, পশ্চিমবঙ্গ যদি ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গরাজ্য না হয়ে পাকিস্তানের অংশ হতো, তাহলে ‘হলেও হতে পারতো’ যে আশঙ্কা, তাকে কি আমরা সত্যিই প্রতিরোধ করতে পেরেছি? শ্যামাপ্রসাদের পশ্চিমবঙ্গ যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য সূচিত হয়েছিল, বাঙালি কি সমষ্টিগতভাবে বা জাতিগতভাবে, তাঁর অবর্তমানে সেই আদর্শ-পশ্চিমবঙ্গের মার্গ থেকে বিচ্যুত হয়নি?

প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার আগে ‘বাঙালি’-র অর্থ স্থির করা প্রয়োজন। আজকাল একটা মারাত্মক প্রবণতা দেখতে পাই, বাঙালিকে একটি ‘শুধুমাত্র’ ভাষাভিত্তিক জাতিগোষ্ঠী হিসেবে ব্যাখ্যা করার। অর্থাৎ, যে বাংলা ভাষায় কথা বলেন, সেই বাঙালি। তার নাম আরবী হলেও কিছু যায় আসেনা, তার বাংলায় আরবী শব্দের বাড়বাড়ন্ত থাকলেও কিছু যায় আসে না, তাও তিনি বাঙালি। এই প্রবণতার মূল লক্ষ্য, বাংলা ভাষা-ভাষী মুসলমানদের বাঙালি-র স্বীকৃতি দেওয়া। যুক্তি হলো—যারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন, তারা প্ৰত্যেকেই বাঙালি।

এবার আসা যাক, শ্যামাপ্রসাদ এই পশ্চিমবঙ্গকে কিভাবে কল্পনা করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গে। ভারতকেশরীর এই সময়ের কার্যকলাপ, বক্তৃতা নিয়ে গবেষণা করলে এবং সর্বোপরি কাশ্মীরে তাঁর আত্মবলিদানের অধ্যায় একটি বিষয় পরিস্কার করে দেয়ে যে, শ্যামাপ্রসাদ মনে করতেন, ভারতবর্ষ-ই প্রত্যেক হিন্দু এবং সেই সূত্রে প্রত্যেক বাঙালির দেশ।

এই যুক্তি মেনে নিলে, ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন যে অস্ট্রেলীয় বা আমেরিকান, এমনকি উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু জনজাতি তারা প্রত্যেকেই ইংরেজ। ওমান থেকে জর্ডন, প্যালেস্টাইন থেকে কুয়েত, বা সৌদি আরব থেকে কাতার, যারা একই ভাষায় মিথ্যাচার করেন এবং ঘৃণার বাণী ছড়িয়ে দেন, তারা প্রত্যেকেই তাহলে ‘আরবী’ হতেন, কিন্তু তা তো হয়নি। আমাদের বুঝতে হবে, বাঙালি আর বাংলা ভাষাভাষী দুটো আলাদা বিষয়। বাংলায় কথা বললে তিনি বাংলাভাষাভাষী হতে পারেন, যেমন বাংলাদেশের মানুষরা, তবে এর মানেই এই নয় যে তারা বাঙালি।

বাংলা ভাষাভাষী হওয়াটা বাঙালি হওয়ার শর্ত বটেই, তবে তার প্রাকশর্ত হিন্দু হওয়া। বাংলা ভাষাভাষী হিন্দু এবং বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানের পার্থক্যটা কতকটা আপেল ও কমলালেবুর পার্থক্যের মতন। বাংলাভাষাভাষী হিন্দু, অর্থাৎ বাঙালির শুধু জীবনচর্যা, চিন্তাধারা, রূপকথা, সামাজিক ও ব্যক্তিগত মূল্যবোধ আলাদা হয়না, দুজনের যে বাংলা ভাষা, তারও অনেক পার্থক্য।

এবার আসা যাক, শ্যামাপ্রসাদ এই পশ্চিমবঙ্গকে কিভাবে কল্পনা করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গে। ভারতকেশরীর এই সময়ের কার্যকলাপ, বক্তৃতা নিয়ে গবেষণা করলে এবং সর্বোপরি কাশ্মীরে তাঁর আত্মবলিদানের অধ্যায় একটি বিষয় পরিস্কার করে দেয়ে যে, শ্যামাপ্রসাদ মনে করতেন, ভারতবর্ষ-ই প্রত্যেক হিন্দু এবং সেই সূত্রে প্রত্যেক বাঙালির দেশ। ভারতের অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠী ও ভাষাভাষী মানুষের সাথে বাঙালির বিভিন্নতা থাকলেও, কোনো বৈরিতা নেই। বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়। বাঙালির স্বাজাত্যবোধে আত্মগৌরব আছে কিন্তু অস্মিতা বা শভিনিজম (chauvinism) নেই।

বাঙালি ইতিহাস-বিস্মৃত জাতি এবং স্বাধীনোত্তর ভারতের বা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস এমনভাবে রচনা করা হলো, যা শুধু শাসকের তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক সুবিধাকে চরিতার্থই করবে না, জনমানস থেকে সত্যকে চিরকালের জন্যে ভুলিয়ে দেবে। শাসক ভাবল, বাঙালি ভুলে যাবে শ্যামাপ্রসাদের আত্মত্যাগ, নতুন প্রজন্ম জানবে না ২০শে জুনের মাহাত্ম্য। এরপরের পশ্চিমবঙ্গের সাত দশকের ইতিহাস—জাতি হিসেবে বাঙালির অবক্ষয়ের ইতিহাস। আত্মবিস্মৃত বাঙালি ক্রমশ ভারতের মুলস্রোত থেকে বিরত থেকেছে এবং আত্মতুষ্টির অবাস্তব ও অলীক কল্পনায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করেছে।

বাস্তবে আমরা আজকে দেশের মধ্যে নারীপাচার ও রাজমিস্ত্রী যোগান দেওয়াতে প্রথমস্থানে। বাঙালি মনীষা ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের এই চরম পরিণতির কৃতিত্বের দাবিদার অবশ্যই চারু মজুমদার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন থেকে বিপ্লবের বুজরুকী দেওয়া বুদ্ধিজীবী প্রত্যেকেই। অবাঙালি ভারতীয়দের প্রতি প্রাদেশিকতার ঘৃণা উগরে দেওয়ার মধ্যেই বাঙালির আত্মম্ভরিতা।

গত সত্তর বছরে, বাঙালি নিজেকেও নানা খণ্ডে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাঙাল-ঘটি বিভাজন। একটি আপাত নিরামিষ বিভাজন, যা প্রতিপালন করতে করতে এমন পর্য্যায়ে গেছে, যেখানে ঘৃণা আর বিষোদ্গার ন্যূনতম সৌজন্যের বাঁধ ভেঙে দেয়। বিশ্বাস না হলে, যে কোনও ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ফুটবল ম্যাচের দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন বা তৎসংলগ্ন রাস্তায় গিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন, সত্যিটা ধরা পড়বে। খেলার পরিণাম যাই হোক, মাইক ভাড়া করে, একে অপরের প্রতি যে বিষ (গালাগাল বলা ভালো) উগরে দেওয়া হয়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ে জাতি হিসেবে আমরা এখনো এক হইনি—বরঞ্চ একে অপরের শত্রু।

একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হলো, “বাঙাল মনুষ্য নহে, উড়ে এক জন্তু…” অথবা “যারা দেশের জন্য প্রাণত্যাগ করে তারা সৈনিক আর যারা প্রাণের জন্য দেশত্যাগ করে, তারা বাঙাল।” —এই স্লোগান পরিচয় দেয়ে স্বাধীনোত্তর ভারতে বাঙালির ইতিহাস চেতনা ও স্বদেশ চেতনা কতটা সারবত্তা হীন।

কি কারণ? আমার জানা নেই। পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা যখন প্রাণ বাঁচিয়ে ‘এপারে’ এলেন, তখন বৃহত্তর এক সঙ্ঘবদ্ধ হিন্দুসমাজ গঠিত হতে পারত, কিন্তু বাস্তবে হলো ঠিক উল্টোটা। সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার জায়গায় এক তুলনায় নতুন বিভাজনরেখা সুদৃঢ় হল। জমির অভাবের কারণে এমনটা হয়েছিল, এইসব তত্ত্ব তথ্য-নির্ভর নয়। কারণ ওপার থেকে আসা হিন্দুদেরকে সরকার জনমানবহীন অঞ্চলগুলোতে স্থান দিয়েছিল।

অবশ্যই এই বিভাজনের জন্য কোনো দাঙ্গা হয়নি, কিন্তু এই বিভাজন নেহাত কৌতুক উদ্রেক করার স্বার্থে তৈরি নিরামিষ আড্ডার খোরাক নয়। বাঙাল ও ঘটি দুই পক্ষই একে অপরের প্রতি সমানভাবে অপমানসূচক। ঘটি-বাঙালের বিয়ে বিরল না হলেও, দুপক্ষের বিয়েতে কালচারাল ‘সুপিরিওরিটি/ইনফিরিওরিটি’ র প্রশ্ন চলে আসে। একে অপরের জীবনশৈলীর প্রতি কদর্য্য ও ঘৃণাভরা বাক্যবান নিক্ষেপের সময় আমরা ভাবিনা, এই অপমান যদি আমার মা-ভাই-বোনেদের অপমান হয়, তবে তা আমারও অপমান৷

এ বিষয়ে তর্কের অবকাশ কম যে ঘটিদের পক্ষ থেকে বাঙালদের উপহাস করার নিত্যনতুন চেষ্টা করা হয়, সেরকমই একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হলো, “বাঙাল মনুষ্য নহে, উড়ে এক জন্তু…” অথবা “যারা দেশের জন্য প্রাণত্যাগ করে তারা সৈনিক আর যারা প্রাণের জন্য দেশত্যাগ করে, তারা বাঙাল।”—এই স্লোগান পরিচয় দেয়ে স্বাধীনোত্তর ভারতে বাঙালির ইতিহাস চেতনা ও স্বদেশ চেতনা কতটা সারবত্তা হীন।

বাঙাল-ঘটি বিভাজন নিয়ে দুটি গবেষণা পত্র রয়েছে, the quint ও deccan herald পত্রিকার ওয়েবসাইটে। তাদের রাজনৈতিক আনুগত্য পাঠক জানেন। এই দুই গবেষণা পত্রের বক্তব্য, এই বিভাজনের সূত্রপাত বঙ্গভঙ্গের (১৯০৫) সময় থেকে। আবার, দুটি প্রবন্ধই দাবি করছে এটি একটি ‘কালচারাল’ বিভাজন। তাহলে প্রশ্ন হল, এই বিভাজন যদি কালচারাল ই হয়, তবে একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ফলে তার উন্মেষ হয় কি করে? ‘কালচার’ কি রাতারাতি তৈরি হয়, বা বদলায়? আর যদি হয়ও, এমন এক সিদ্ধান্তে কি করে হয়, যেখানে দু’বঙ্গের মানুষই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন? আসল উদ্দেশ্য হল, এই তথাকথিত বিভাজনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে হিন্দুদেরকে এক হতে না দেওয়া। তা না হলে, পূর্ববঙ্গের মোল্লাতন্ত্রের হিংস্ররূপ প্রত্যক্ষ করার পর, সেই ‘বাঙাল’রাই কি করে কলকাতার উপকণ্ঠ অঞ্চলগুলোতে বামপন্থীদের সুরক্ষিত ভোটব্যাংকে পরিণত হয়? সেই বামপন্থীরা যারা পশ্চিমবঙ্গের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করেছিল এবং আজও ভারতের ‘টুকড়ে’ করার স্বপ্ন দেখে।

আমাদের বুঝতে হবে, পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু-বাঙালি (অনেক ক্ষেত্রে হয়তো অনেক মুসলমানও) ভারতমায়ের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। নেতাজী সুভাষ বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, হেমচন্দ্র কানুনগোর বাঙাল-ঘটি হয়না। স্বাধীনতা আন্দোলনের যে বৃহত্তর লিগ্যাসি ভারতমাতা সম্পর্কে দুইবঙ্গে ছিল, তার মূর্তায়ন হয়েছিল স্বাধীন ভারতবর্ষে। ভারতবর্ষের ধারণার একটি ভৌগোলিক রূপ দেওয়া হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট।

দুর্ভাগ্যক্রমে, যার অস্থাবর সম্পত্তি পাকিস্তানে পড়েছিল, তাকে দয়া করে উপহাস করবেন না না, তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। তিনি হয়তো তাঁর পরিবারের সকলকে ধর্ষিতা হতে দেখেছেন, অনেককে হয়তো আর কখনো দেখতেই পাননি। পিতৃহারা/মাতৃহারা/ সন্তানহারা এই মানুষগুলোর পরিণতি আপনারও হতে পারতো। এই উপহাস কি তাহলে মানায়? হিন্দু হওয়ার সবচেয়ে বড় মূল্য এই মানুষগুলো দিয়েছেন, এদের সম্মান করুন।

বিশ্বের সব প্রান্তের ইহুদীদের জন্যে তৈরি হয়েছিল ইসরায়েল, ১৯৪৮ সালে। সেই ইসরায়েলে কিন্তু এইরকম কোনো বিভাজন নেই, একটা উল্টো প্রথা আছে। যে দেশে ইহুদীদের সবচেয়ে বেশি অত্যাচার করা হয়েছিল যেমন জার্মানী বা পোল্যান্ড, সেইসব জায়গা থেকে আসা মানুষগুলো কে সবচেয়ে বেশি সহানুভূতি ও সম্ভ্রমের নজরে দেখা হতো। বলতে দ্বিধা নেই, গত সত্তর বছরে, শ্যামাপ্রাসাদের পশ্চিমবঙ্গ সমস্ত হিন্দুবাঙালির বাসস্থান হয়ে উঠলেও, কোথাও একটা বিভাজন থেকে গেছে। সত্তরবছর ধরে যুঝতে থাকা বাঙালি জাতির এবার বাঙাল-ঘটি ভুলে বাঙালি হওয়ার খুব প্রয়োজন।

(ক্রমশঃ)

প্রতিবেদনটিতে প্রকাশিত হওয়া মতামত সম্পূর্ণ লেখকের৷ এর দায়ভার বহন করে না বঙ্গদেশ নিউজ পোর্টাল৷