৭১-এর গণহত্যাকে ‘বাংলাদেশ গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি, বাঙ্গালী হিন্দু গণহত্যাকে অস্বীকার করল আন্তর্জাতিক সংস্থা

0
615

বঙ্গদেশ ডেস্ক: গণহত্যা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জেনোসাইড ওয়াচ’ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ বা ‘গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের ওই বর্বরতার ৫০ বছর পূর্তিতে জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গ্রেগরী এইচ স্ট্যানটন গত বৃহম্পতিবার তাদের ওয়েবসাইটে এই বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।

পাকিস্তানিদের শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরে সেখানে বলা হয়েছে, জেনোসাইড ওয়াচ এই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালিদের ওপর যে অত্যাচার করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘জোনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’। জেনোসাইডের ঘটনাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকার করে নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব পাশের আহ্বান‌ও জানিয়েছে জেনোসাইড ওয়াচ।

৫০ বছর আগের সেসব ঘটনার জন্য বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান‌ও জানানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় নির্মম গণহত্যা।পাকিস্তানি বাহিনীর সেই হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছিল। তবে এই প্রথম নয়, এর আগে চলতি বছরের প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন’ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের গণহত্যায় বাঙ্গালী হিন্দুরাই নির্যাতনের প্রধান ও প্রকৃত শিকার হয়েছিল, যা প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্যারী জে বাস তার বই ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’-এ প্রমাণ করেছেন। কিন্তু জেনোসাইড ওয়াচের দীর্ঘ বিবৃতিতে সে বিষয়ে উল্লেখ নামমাত্র। সাম্প্রতিক অতীতে গ্রেগরী এইচ স্ট্যানটন বেশ কিছু ভারতবিরোধী বক্তব্য রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম হল, তিনি মনে করেন ভারতে মুসলিমদের ওপর আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই নেমে আসবে হত্যালীলা, যা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।

‘জেনোসাইড ওয়াচ’-র স্বীকৃতির বিষয়ে ড. মোহিত রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় জেনোসাইড ওয়াচ পশ্চিমি বিশ্বের ভারত বিরোধিতার সঙ্কীর্ণতা থেকে মুক্ত নয়। ফলে, কোন একটি প্রান্তিক হিন্দু সংগঠনের একটি সভার বক্তব্য়ের জন্য সমগ্র ভারতকে দায়ী করে, ভারতে মুসলমান গণহত্যার প্রস্তুতি চলছে এরকম হাস্যকর বিষয়ের অবতারণা করে গুরুতর অন্যায় করেছে। এদের গবেষণার মান সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ তা না হলে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম গণহত্যা বাঙ্গালী হিন্দু গণহত্যাকে তারা শুধু বাঙ্গালী গণহত্যা বলে অভিহিত করতে পারত না। হিন্দু বা সনাতন ধর্ম, ভারতের প্রাচীন সভ্যতা, ভারতীয় সমাজ, ভারতীয় ভাষাসমূহ ইত্যাদি সম্পর্কে পশ্চিমী বিশ্বের সার্বিক ধারণা এখনো অগভীর এবং অনেকটাই মূর্তিপূজা বিরোধী সেমিটিক ধর্মীয় মনোভাবে প্রভাবিত।