বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদের উদ্যোগে সরস্বতী পুজোয় হাতেখড়িতে আঞ্জীর পুনঃপ্রচলন শুরু হল

0
1086

বঙ্গদেশ ডেস্ক: সরস্বতী পুজোয় ছোটদের হাতেখড়ি বাঙ্গালীর এক চিরন্তন ঐতিহ্য। বাঙ্গালীর জীবনে বিদ্যারম্ভের সূচনা হয় হাতেখড়ি দিয়েই। কালো স্লেটে সাদা চক দিয়ে বাচ্চাদের হতে ধরে অ আ ক খ লিখিয়ে দেন পুরোহিত মশাই। কিন্তু এই বছর অ আ ক খ লেখানোর আগে ইংরাজীর উল্টানো এস-এর মত একটি চিহ্ন আঁকিয়ে দিলেন পুরোহিত মশাই। তার পর লেখালেন অ আ ক খ। এমন দৃশ্যই দেখা গেল কলকাতার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সরস্বতী পুজোয়। 

বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে প্রবীর ভট্টাচার্য্য জানান, ইংরাজীর উল্টানো এস-এর মত দেখতে চিহ্নটি বাংলা বর্ণমালার প্রথম বর্ণ, যার নাম আঞ্জী। বিদ্যারম্ভের সময়ে অ আ ক খ লেখার আগে আঞ্জী লেখাই হল বাঙ্গালীর সনাতন পরম্পরা। হাতেখড়ির এই লুপ্তপ্রায় পরম্পরাকে তারা এভাবেই ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন। প্রবীরবাবু আরও বলেন, আত্মবিস্মৃত বাঙ্গালীকে পুনরায় তার ঐতিহ্য ও পরম্পরার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদের নানান উদ্যোগ রয়েছে সারা বছর। 

একই দৃশ্য দেখা গেল উত্তর চব্বিশ পরগনার দক্ষিণ চাতরার কালচারাল সেন্টারে। সেখানেও পুরোহিত মশাই বাচ্চাকে কোলে বসিয়ে স্লেটের উপর চক দিয়ে আঞ্জী অ আ লিখিয়ে দিলেন। এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক অচিন্ত্য বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে উনি বলেন, হাতেখড়িতে আঞ্জীর পুনঃপ্রচলন চিরায়ত ভারতীয় শিক্ষাপদ্ধতির মূলে ফেরার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারতীয় বিচারধারায় শিক্ষা বিক্রয়যোগ্য নয়। পরম্পরাগতভাবে গুরু শিষ্যকে শিক্ষা প্রদান করে থাকেন। তিনি আরও বলেন সরস্বতী তান্ত্রিক দেবী এবং আঞ্জী তন্ত্রসাধনার অন্তর্গত কুণ্ডলিনীর প্রতীক। 

প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে আঞ্জীর প্রচলন ছিল। মনে করা হয় সিদ্ধমাতৃকা লিপি থেকে এটি বাংলায় এসেছে।  আঞ্জীর অপর নাম সিদ্ধিরস্তু। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার লিখে গেছেন, “ছেলেরা আঞ্জী ক খ পড়ে।” বিপিনচন্দ্র পাল তার আত্মজীবনী ‘সত্তর বছর’-র লিখেছেন বিদ্যারম্ভের সময় তিনি পরিষ্কার মাটিতে শরের কলম দিয়ে আঞ্জী ক খ লিখেছিলেন। 

কামরূপশাসনাবলীর রচয়িতা পণ্ডিত পদ্মনাভ ভট্টাচার্য লিখেছেন, “আমরা বাল্যে বিদ্যারম্ভের সময় ‘౭ ক খ গ ঘ ঙ’ এইরূপ লিখিয়াছিলাম। তিনি বলেছেন পণ্ডিত পঞ্চানন তর্করত্ন মহাশয়ের মতে আঞ্জী হল সরপাকৃতি কুণ্ডলিনীর মধ্যমভাবাপন্না চিত্রপ্রকৃতি। আঞ্জী প্রণব বা ওঁ-কার চিহ্নর থেকে পৃথক, এবং অনুচ্চারণীয়।