সরস্বতী পূজোকে কেন্দ্র করে ঘৃণা অব্যাহত, নিহত সনাতন ধর্মাবলম্বী নাবালক

0
626

বঙ্গদেশ ডেস্ক:সরস্বতী পূজোকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এ কিছু না কিছু ঘটনা সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে। কোথাও বা পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয় কোথাও আবার পুলিশি পাহারায় পুজো হয় কিন্তু গত ৬ই ফেব্রুয়ারি মা সরস্বতীর মূর্তি বিসর্জন করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে এক তরতাজা হিন্দু যুবককে, নাম রূপেশ পান্ডে। যার ফলে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন অংশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে হাজারীবাগের নাইতান্দ গ্রামে। মৌলবাদীদের আক্রমণে মোট আটজন আহত হয়েছে। উগ্রপন্থীরা দলবেঁধে সরস্বতী মূর্তি বিসর্জনের মিছিলে থামিয়ে দিয়েছে যা শুধুমাত্র পুলিশের হস্তক্ষেপের পরে অনুমোদিত হয়েছিল।

রূপেশ পান্ডে নামের ১৭ বছর বয়সী ওই ছেলেটি সরস্বতী পূজোর পরে মূর্তি বিসর্জনের শোভাযাত্রায় যোগদান করতে গিয়েছিল। মৌলবাদীরা চড়াও হতেই ধস্তাধস্তি শুরু হয়, গুরুতর আহত হয় রমেশ, তারপরে তাকে বারহি অঞ্চলের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মেডিকেল অফিসার তাকে মৃত ঘোষণা করে। স্থানীয়রা তার মৃত্যুর খবর জানতে পেরে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সরস্বতী পুজোর বিসর্জন মিছিলের সময় কোডারমাতে হিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মিছিল চলাকালীন মৌলবাদীরা খুব জোরে ডিজে বাজানোর বিষয়ে আপত্তি জানালে ঝামেলা শুরু হয়। সংঘর্ষে শিশুসহ আটজন আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।


জামতারায় সরস্বতী পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা থামিয়ে বিক্ষোভকারীরা ফিরকোরিয়া গ্রামে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় পুলিশকে অবহিত করা হয়। SHO রওশন কুমার পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের মিছিলের জন্য একই পথ ব্যবহার করা হচ্ছে, তবে এর আগে এই ধরণের কিছুই ঘটেনি। মোহাম্মদ গুলজার আঞ্জুম, সিও, করমাতান্ড, পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন এবং যুক্তি দিয়েছিলেন যে রাস্তা এবং লেক সরকারি সম্পত্তি হওয়ায় কেউ শোভাযাত্রা থামাতে পারে না। তবে উগ্রপন্থী জনতা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে অস্বীকার করে। হাজারিবাগ, কোডারমা এবং গিরিডিহ এই তিনটি জেলায় প্রশাসন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আসামের করিমগঞ্জ জেলার রামকৃষ্ণনগরের সাতিরসাঙ্গন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবছর বাগদেবীর আরাধনা করা হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল হুসেইন বলেছেন, এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীর সংখ্যা হিন্দুদের তুলনায় বেশি তাই সরস্বতী পুজোর দরকার নেই।

শুধুমাত্র তাই নয়, স্বরস্বতী পুজোর দিন মোহাম্মদ সামি তার মেয়ে আয়রার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতেই ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন ও তার চিন্তাধারার মানুষ সামির উপর আক্রমণ করে। কারণ এতে কট্টরপন্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং এটাকে ইসলামের বিরুদ্ধে আখ্যায়িত করে তারা শামিকে ও তার মেয়েকে মূর্তি পূজা না করতে বলেছেন। তবে শুধুমাত্র সামি নয়, বাংলাদেশী অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস‌ও তার ছেলে জয়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতেই কটাক্ষের শিকার হয়েছেন।

তবে উল্টোচিত্র‌ও দেখা গিয়েছে, সরস্বতী পুজো না করায় স্কুলের প্রধান শিক্ষককে স্কুল ঘরে বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে গ্রামবাসীরা।ঘটনাটি ঘটেছে নদীয়ার শান্তিপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের খুদের কালিতলা বিভূতিভূষণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।‌ ইচ্ছা হয়নি পূজো করিনি প্রতিক্রিয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের।ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কিংবা স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি কারোর সঙ্গেই এই বিষয়ে আলোচনা করেনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। সোমবার বিদ্যালয় খুললে ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লব বর্মন কে ঘরে দরজা বন্ধ করে রেখে বিক্ষোভ দেখায়। প্রধান শিক্ষক লব বর্মন এ বিষয়ে জানান, ‘আমার ইচ্ছে হয়নি তাই পুজো করিনি।’