ঘরের দিকে ফেরা

শাহবাগ আন্দোলন চলার সময় অংশগ্রহণকারীরা গ্রামদেশী গিয়ে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল ৷ সিলেটে প্রকাশ্যে মারা হয় একজনকে ৷ এরকম ঘটনা চলছেই ৷ অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের নামকরা শিক্ষক ৷ বলতেন ছাত্রীদের, বুরকা পরে এলে পড়াতে অসুবিধা হয় ৷ মুখ না দেখলে বুঝছ কিনা বুঝতে পারি না ৷ গতবছর কাজলা মোড়ে দুপুরবেলায় তাঁকে ঘাড়ে কোপ মারা হয় ৷ মারা যান তিনি ! এইরকম চলছে ৷

তিনের দশকে কলকাতা কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে সেন ব্রাদার্স প্রকাশনীর মালিক ভদ্রলোক নিহত হন ৷ তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে মারা যান এক কর্মী আর একজন গুরুতর আহত হন ! ঘটনা ছিল একটি পাঠ্যপুস্তক হজরত মহম্মদের ছবি ছাপা হয় ৷ প্রকাশক বলেন, তিনি এটি পেয়েছিলেন ৷ তৈমুর লঙের আত্মজীবনীতে ! মধ্যপ্রাচ্যে আঁকা এই ছবি যে নিষিদ্ধ তাঁর জানা ছিল না ৷ দ্রুত তিনি সব বই তুলে নিয়ে নতুন করে ছাপাই করেন ৷ তবু নিস্তার পাননি ৷ ভদ্রলোকের আরেকটি যুক্তি ছিল, বইটি তো সরকার অনুমোদিত ৷ তখন সরকার চলছে মুসলিম লীগের ! বই অনুমোদনের কমিটিতে মুসলমান প্রতিনিধিরা ছিলেন ৷ তাঁরা আপত্তি জানাননি কেন ? কে কার কথা শোনে ৷ তখনকার পুলিশ পশ্চিমবঙ্গের সিভিক পুলিশ ছিল না ৷ আততয়ীরা ধরা পড়ল ৷ তারা দুই তরুণ কাবুলি পোষাক পেশোয়ার লোক ৷ একবর্ণ বাংলা জানত না ৷ কি কারণে এক প্রৌঢ়কে চাক্কু চালাল তারা ? জানা যায়নি ৷ বৃটিশ বিচারপতি দ্রুত বিচার করে এদের ফাঁসি দিয়েছিলেন ৷ ‘প্রবাসী’-পত্রিকায় এই ঘটনার সবিস্তার বিবরণ ছাপা হয়েছিল ৷

আজ যারা সকাল ক্যাপ পরে ইফতার পার্টিতে বিনা উপবাসেই সুবাসিত শরবত আর ভরপেট খানায় ঢেকুর তুলছেন, তারা এই ইতিহাস জানেন না ৷ সিরিয়ার শিশুদের রক্ত তাদের উচ্চ স্তরের মানবিক করে — তারা কষ্ট পান আর দোলে রং না খেলার শপথ নেন ! অভিজিত রায়ের হত্যাকাণ্ড ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-এস-সি অতিথিশালার সামনে ! তাঁকে বাঁচাতে তাঁর নামত মুসলিম স্ত্রীর শরীর রক্তে ভিজে যায় ! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামজাদা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের একমাত্র পুত্র ছিলেন প্রকাশক ৷ তাঁর দপ্তরে চড়াও হয়ে আততায়ীরা খতম করে যায় ৷ এভাবে বাংলাদশের বহু প্রগতিশীল মানুষ ইসলামি সন্ত্রাসের কবলে অত্যাচারিত, দেশছাড়া হয়েছেন ৷ তসলিমা নাসরিন কথা সুবিদিত ৷ বাংলাদেশের প্রতি আবেগে বিহ্বল আর সেদেশে দাওয়াত পাওয়া বহু বাঙালী চাতুর্যজীবী কলমবাজ আর গাল বাজানো শিল্পীদের মুগ্ধতার অবশ্য  শেষ নেই ৷ তাঁরা আজিজ মার্কেট, ‘বাবুল চত্বর’ আর ‘অপরাজেয় বাংলা’ দেখে মশগুল থাকেন ৷ জানেন না বাংলাদেশ কেমন করে হিন্দু-শূন্য হয়ে যাচ্ছে ? ১৯৯২-তে বাবরি সৌধ ভাঙার সঙ্গেসঙ্গে বাংলাদেশে মন্দিরগুলোর কি হল তা তাদের ভাবনার সীমায় পড়ে না ৷ কাশ্মীরের ‘হজরত বাল’ মসজিদে মহম্মদের চুল হারানোর গুজবে তখনকার পূর্বপাকিস্তানের কত হিন্দু নিকেশ হয়েছে সে হিসাব কে রাখে ?

এবার মৃত্যু ঘটল শাহজাহান বাচ্চুর ৷ তাঁর অপরাধ তিনি ততদূর ধার্মিক নন ! কে জানে ৷ দিকে দিকে এরকম ঘটনা আজ চোখে আঙ্গুল দিয়ে বোঝাচ্ছে, ওহাবী ফিদায়েঁ তালিবানি ভাবধারায় আজ মুসলমান বিশ্ব আচ্ছন্ন ৷ সকলের সঙ্গে চলার সুফিয়ান ধারা বলে কিছু অবশিষ্ট নেই ৷ পাকিস্তানে ‘লাল মসজিদ’-এ বিস্ফোরণ বা কাবুলের ইমাম-সম্মেলনে আত্মঘাতী হামলার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে না নিতে ঘটল আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ; বেশ ক’জন ইমামের ইন্তেকাল হল ! এই উন্মত্ত দুনিয়ায় কোন পবিত্র শান্তিলাভ করবে বাঙালী মুসলমানরা ? ভাবুন ৷ সাহস থাকলে পিতৃ পিতামহদের ধর্মে ফিরুন ৷ আধখানা প্রগতিশীল হবার অর্থ –আততায়ীর খঞ্জরের তলে পড়া ৷ স্বধর্মে নিধন ভালো পরধর্ম ভয়াবহ ! আর কবে  বুঝবেন ? মাঝামাঝি থেকে কোন লাভ নেই ৷ ঘরে ফিরুন ৷৷
কৃতজ্ঞতা: প্রাত্যহিক খবরে প্রকাশিত এবং অনুমতিক্রমে পুনঃপ্রকাশিত।