রিমেক হচ্ছে – নারীরা হিন্দুত্বে নিরাপদ নয়

থমসন-রয়টারস্ একটি বিশিষ্ট পশ্চিমী সংস্থা। তারা এক সমীক্ষা করেছে শ’পাঁচেক “ বিশিষ্টজনের” মধ্যে। সেই বিশিষ্টজনেরা বলেছেন যে ভারত হচ্ছে মহিলাদের জন্য পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দুর্বিষহ দেশ। একবারও ভাববেন না যে সৌদি আরবে যেখানে নারীদের ভোটাধিকার বা গাড়ি চালানোর অধিকার কাল অবধি ছিল না, সেই জায়গা নারীদের জন্য সমস্যাপ্রদ। যেখানে মহিলারা ধর্ষিতা হলে তা প্রমাণ করার জন্য চারজন পুরুষ সাক্ষী লাগে, সেই জায়গা মহিলাদের জন্য অসুবিধাজনক। না না, মুসলিম দেশকে কিভাবে খারাপ কিছু বলা যায়? আজ্ঞে হ্যাঁ, জেনে রাখুন মুসলিম দেশগুলিতে খ্রীষ্টানরা ধর্মান্তরকরণ করতে পারে না। কাজেই তাদের নিয়ে খারাপ বললে তারা আমাদের এইসব পাশ্চাত্য সংস্থাকে স্রেফ গোবেড়েন দেবে।

এবার ধরুন, চীন। চীনে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর চীনের বিচারও অতি প্রসিদ্ধ। আমাদের দেশের মত আজমল কাসব টাইপের লোকেদের অত হ্যাপা করে বিরিয়ানি খাইয়ে উকিল দিয়ে বিচার হয় না। সোজা ফায়ারিং স্কোয়াড। আরে ভাই, ওখানে ওরা মুসলমানদেরও রোজা করতে দেয় না আর মসজিদে শি সিংফিঙের ছবি টাঙাতে হয়। এরকম জায়গাকে বদনাম করে আর লাভ কি, তাও করা যেত যদি চীনের শাসকের বিরুদ্ধে তিয়েনয়ান-মেন স্কোয়ার গোছের কোন বিদ্রোহ হত। এখন তো ওদেশের সিংহাসনে দাপটে আজীবনের জন্য রাজত্ব করছেন সেখানকার রাজা, থুড়ি কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক।

তাহলে ভারত কেন? কারণ খুব সোজা। আমরা পাশ্চত্যের শক্তিগুলি চাই যে আমাদের প্রতিনিধি রাজপরিবারটি ভারতের উপর ছড়ি ঘোরাক। কিন্তু ভারতের গাধা জনগণ কি না “সোনিয়া মাতা কি জয়” না বলে “ভারত মাতা কি জয়” বলার চেষ্টা করছে। কি স্পর্ধা! এই গাধার বাচ্চাগুলো মোদিকে লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে। আর এই চা-ওয়ালার স্পর্ধা দেখ। ও এফ সি আর এ অ্যাক্টটাকে প্রকৃতভাবে লাগু করেছে। খ্রীষ্টান মিশনারীদের জন্য আমরা পশ্চিম থেকে টাকা পাঠাই যাতে ওরা জমি কিনে, চার্চ বানিয়েই হোক বা যীশুর মহিমার জোরেই হোক, এই নির্বোধ হিন্দুগুলোকে যীশুর প্রেম উপলব্ধি করাতে পারে। আমাদের বেআইনী টাকা পাঠানোর দফা রফা। আমরা আমাদের পেটোয়া এন জি ও-গুলোকে টাকা পাঠাই যাতে ওরা জলকষ্টের নাম করে হোলি বন্ধ করতে পারে, পরিবেশ দূষণের নাম করে দিওয়ালি বন্ধ করতে পারে। সে সবের কি হবে? এই নির্বোধ পেগানগুলো তো যীশুর প্রেম নেবে না তাহলে।

আমাদের হাতে আছে আমাদের সব সংস্থা আর সংবাদ মাধ্যম। আরে সংবাদ মাধ্যমের মালিকদের তো সব একটা করে বাড়ি আছে আমেরিকা-বৃটেনে। আর তাদের ছেলেমেয়েগুলো এখানেই পড়াশুনো করে। নামটা ওরা হিন্দু অনেকে রেখেছে কিন্তু যীশুর প্রেমকে ওরা উপলব্ধি করতে পারে। ওরা আর আমাদের সংস্থাগুলো আমরা কেউই পরিসংখ্যান দেখি না। তাহলে তো আর আমাদের কথা চলবে না।

এই দেখুন। আমেরিকায় ভারতের চেয়ে পনেরোগুণ বেশি মহিলা ধর্ষিতা হয়। তাও আবার ভারতের চেয়ে এত বেশি পুলিশ পুষে আর বহু কৃষ্ণাঙ্গকে জেলে রেখে। জানেন কি, সবচেয়ে বেশি লোক জেলে থাকে আমেরিকাতেই। বাকি পশ্চিমী দেশের অবস্থাও এর চেয়ে আলাদা কিছু নয়। কি বলছেন? ভারতে বহু ধর্ষণের রিপোর্ট পুলিশের কাছে আসে না। আরে আরে হাসালেন ভাই। আমেরিকার নিজের রিপোর্টই বলছে যে আমেরিকায় যতজন মহিলা ধর্ষিতা হন, তাঁদের মাত্র এক-পঞ্চমাংশই পুলিশে রিপোর্ট লেখাতে আসেন, বাকিরা আসেন না। আমেরিকার কলেজের ক্যাম্পাসগুলিতে “ডেট-রেপ” সংস্কৃতি অতি প্রসিদ্ধ। কলেজে পড়ার সময় ডেটের সময় বা কলেজের পার্টিগুলোতে চার বছর কাটিয়ে যদি ধর্ষিতা না হয়ে কেউ থাকে, সে তার বাপের ভাগ্য।

যা বলছিলাম, এই মোদি লোকটা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এর আমলে ভারতে গরিবি কমছে, গরিব মানুষের জন্য গ্যাস, বিজলি, রাস্তা সব তৈরী হচ্ছে। এর সরকারে দুর্নীতির নামগন্ধ নেই। তাহলে ওকে বদনাম করব কি করে? আরে আরে, এ তো আমাদের কাছে কোন ব্যাপারই নয়। আমাদের গণমাধ্যমগুলোকে লেলিয়ে দিই। ওরা যে কোন ভাবে এটা করে দেবে। বছরে একশ কোটির দেশে দু-পাঁচটা লোক নিশ্চয়ই গরু নিয়ে ঝামেলায় মারা যায় বা ট্রেনে সীটের জন্য মারপিটে জড়িয়ে পড়ে মরে। এর মধ্যে বছরে একজন মুসলমানের শব কি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না? যেই পাওয়া যাবে, ওমনি আমরা সারা বছর, অসহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘুরা সমস্যায় আছে, এসব বলে গলা ফাটাবো। এই তো ভারতের একটি শিখ মেয়ে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য যীশুর প্রেমকে স্বীকার করে নিয়েছে, নতুবা আমরা তো ওকে আর রাজনীতিতে উঁচু পদে বসাতে পারি না। ওকে পাঠিয়ে দিই, ও ভারতে গিয়ে বলে আসুক যে ভারতে বলিউডের সব বড় বড় নামই মুসলমান। তোবা তোবা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। ও বলুক যে ভারত সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ নয়।

যাই হোক, সব সময় তো এক গীত লোকে খায় না, “বোর” হয়ে যায়। সংখ্যালঘু অনেকদিন চলল। নারীদের জন্য অনিরাপদ ব্যাপারটা অনেকদিন ওঠে নি। সেই নির্ভয়া-কাণ্ডের সময় লেসলিকে পাঠিয়েছিলাম। ও কি করেছিল, এই ধর্ষকটাকে একটা স্ক্রিপ্ট পড়িয়েছিল আমাদের ন্যারেটিভ অনুযায়ী। আরে তখন তো তিহার জেলের দরজা আমাদের জন্য যখন তখন খুলে যেত। যাই হোক, এই গল্পটা আবার আমদানি করা যাক। আমাদের ব্যাপারটা বুঝলেন কিনা হলিউডের মতনই – দু-দশ বছর পরে আগের সিনেমার রিমেক হয়।

নারীদের জন্য অনিরাপদ হলে আমাদের কি সুবিধা? হাসালেন ভাই। আমরা কি গুচ্ছের সমাজতত্ত্ববিদ্ এমনি এমনি পুষছি? আর প্রতিবছর ওদের এখানে জামাই আদর করে বক্তৃতা দেবার নেমতন্ন করছি? ওরা এখনই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করে দেবে, এ সব হিন্দুধর্মের জন্য হচ্ছে। আর আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলি সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে হেডলাইন করে দেবে। মনে পড়ছে কি, রাজপুত্তুর একবার বলতে গেছিলেন যে যারা মন্দিরে যায়, তারাই ধর্ষণ করে?

আসল কথাটা কি আর আমরা জানি না যে কুম্ভ মেলায় কোটি কোটি নারী-পুরুষ একসঙ্গে স্নান করলেও ধর্ষণ তো দূরের কথা, শ্লীলতাহানিও হয় না। বরং হ্যাপি নিউ ইয়ারের পার্টিতেই কুড়িটা লোক যখন নাচে, তখনই ধর্ষণ বেশি হয়। তা আমাদের যীশু তো সব সময় দেখবেন এমন কোন কথা নেই, মাঝে মাঝে ডেভিলও চলে আসে।

 

ফীচার: The Wall Street Journal