কৃষক প্রেম নাকি কেন্দ্র বিরোধিতা, রাজ্যপালের ট্যুইটে কৃষি বিল নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

0
822

বঙ্গদেশ ডেস্ক: কৃষি বিলের বিরোধিতা করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে কৃষি বিল নিয়ে কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করেছেন তিনি। এই কৃষিবিল কৃষক বিরোধী সেই অভিযোগ নিয়ে আজ রাজ্যে আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কলকাতার মেয়ো রোডে ধরনায় বসেছে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস।

সোমবার রাজ্যসভা থেকে যে ৮ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের দুজন। এই কৃষি বিল কৃষক বিরোধী। তাই কৃষকদের জন্য আন্দোলন করছে তৃণমূল কংগ্রেস।

কিন্তু তৃণমূলের এই আন্দোলন নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ প্রশ্ন উঠছে যে এই আন্দোলন আদৌও কৃষকদের স্বার্থে৷ নাকি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতার উদ্দেশ্যে এটা করা হচ্ছে। এমনিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনও নীতির বিরোধিতাতে একধাপ এগিয়ে থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস। আর সামনে আসছে রাজ্যের বিধানসভা ভোট। সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিজেপি বিরোধিতার জন্যই কি কৃষি বিল নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস? রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের একটি টুইট এই প্রশ্নগুলিকে নতুন করে উসকে দিয়েছে৷

রাজ্যপালের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হয়েছে রাজ্যের কৃষকরা।আর তার জন্য দায়ী রাজ্য সরকার। ৮৪ হাজার কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৭০ লক্ষ কৃষক। না, হলে এত দিন প্রত্যেক কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১২ হাজার টাকা করে জমা পড়তো।

রাজ্যপাল এদিন তিনটি টুইট করেছেন। প্রথম দুটোতে অ্যাটাচ করেছেন একটি চিঠি। সেখানে তিনি লিখেছেন, রাজ্য সরকারের গরিমসি ও অকর্মণ্যতার জন্য ৭০ লক্ষ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই কঠিন সময়ে তারা প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির সুবিধা পাননি। রাজ্য সরকার যদি সঠিক সময়ে উদ্যোগ নিত তাহলে কৃষকদের জন্য আসত ৮৪ হাজার কোটি টাকা।

রাজ্যপাল প্রশ্ন তুলেছেন যে এই প্রকল্পের পুরো খরচ যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করে সেখানে রাজ্য সরকারের এই গড়িমসির কারণ কী? তিনি আরও বলেছেন ,অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধা থেকে রাজ্যের কৃষকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। করোনা মহামারীর সময় কেন্দ্রীয় সরকার ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল।যদি রাজ্য সঠিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির সুবিধা নিত তাহলে ওই প্যাকেজ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি পেতে পারতেন এরাজ্যের কৃষকেরা। তিনি এও বলেছেন রাজ্য সরকারের ভুলের জন্য যদি কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, সেটা নিয়ে সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করা উচিত।

আর এই টুইটের পর আবার নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে রাজ্য সরকারের এই বিরোধিতা সত্যিই কি কৃষকদের স্বার্থে? সত্যিই যদি মমতা কৃষক প্রেমী হতেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনা থেকে রাজ্যের কৃষকদের বঞ্চিত করতেন না। প্রত্যেক ক্ষেত্রে বিজেপির বিরোধিতা শুধু তাঁর লক্ষ্য। আজ মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের ধর্নাতেও এই ব্যাপার নিয়ে সঠিকভাবে কিছু বলা হচ্ছে না।

তৃণমূল বিরোধীদের অভিযোগ, প্রত্যেকেরই মুখে এক কথা এই কৃষি বিল কৃষক বিরোধী। কিন্তু ঠিক কী কারণে এই বিল কৃষক বিরোধী তা নিয়ে কেউই সঠিক ব্যাখ্যা করছে না তৃণমূলের। একদিকে যখন কেন্দ্র সরকার কৃষকদের জন্য প্রকল্প ঘোষণা করছেন সে প্রকল্প থেকে রাজ্যের কৃষকদের বঞ্চিত করছে রাজ্য সরকার। আবার অপরদিকে কেন্দ্রের কৃষি বিলকে কৃষক বিরোধী বলে আন্দোলন করছে তারা। তাই নেটিজেনদের অনেকেই রাজ্য সরকারের দ্বিচারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।