অভাবের সংসারে সরকারি সাহায্য না পেলে আত্মহত্যাই পথ, দাবি অসহায় বৃদ্ধার

0
667

বঙ্গদেশ ডেস্ক: মালদার চাঁচল-১ ব্লকের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিয়া পাড়া গ্রাম। সেই গ্রামের বৃদ্ধা আকলিমা বেওয়া। পাঁচ ছেলে, ছেলেদের বউ এবং নাতি-নাতনি নিয়ে মোট ১৩ জন সদস্য পরিবারে। স্বামী মারা গিয়েছেব বহু বছর আগে।

যতটুকু সঞ্চয় ছিল স্বামীর চিকিৎসার পেছনে সেই সঞ্চয় পুরোটাই চলে যায়৷ তারপর থেকেই প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। পরিবারের ৫ জন প্রতিবন্ধী। দুই ছেলে, ছেলের বউ এবং এক নাতনি। একমাত্র রোজগার করে পরিবারের ছোট ছেলে। কিন্তু লকডাউনের ফলে সে রোজগারও প্রায় বন্ধ। এরকম অবস্থায় সরকারি সাহায্য না পেলে মৃত্যু ছাড়া তাদের কোনও পথ নেই বলে জানিয়েছেন সেই বৃদ্ধা।

মাটির ভাঙা ঘর। বৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে জল জমে যাচ্ছে। ঘরের আনাচে-কানাচে বাসা বেধেছে সাপ পোকামাকড়। উনুনে হাড়ি থাকলেও হাড়িতে দেওয়ার মতো চাল নেই। পরনের জন্য নেই ঠিকঠাক বস্ত্র।অর্ধাহারে-অনাহারে অপুষ্টিতে পরিবারের অনেকের শরীরের বিভিন্ন রোগ বাসা বেধেছে।

কিন্তু এরকম একটি পরিবারের কাছে চিকিৎসা করা স্বপ্নের ব্যাপার। কারণ, দু’বেলা তাদের ঠিক করে জুটছে না খাওয়া। রাতে সঠিকভাবে ঘুমানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। পাঁচজন প্রতিবন্ধী থাকলেও প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট রয়েছে মাত্র দুই জনের।

পরিবারের ১৩ জনের মধ্যে ৫ জনের নেই রেশন কার্ড। বিপিএল তালিকায় নাম নেই এই দরিদ্র পরিবারের। পাননি আবাস যোজনার ঘর। এমনকী, সেই অসহায় বিধবা বৃদ্ধা বিধবা ভাতা টুকু পাননি।পঞ্চায়েত ,ব্লক থেকে শুরু করে জেলাশাসকের দপ্তর পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করেছেন সাহায্যের জন্য। কিছু ক্ষেত্রে সামান্য সাহায্য পাওয়া গেলেও সমস্যার সঠিক সমাধান হয়নি। বারবার নিরাশ হয়ে ঘুরে আসতে হয়েছে তাদের।

পরিবারের ৫ জন প্রতিবন্ধী হলেন আকলিমা বেওয়া, তাঁর ছেলে আশরাফুল হক, আরেক ছেলে আমজাদ হোসেন, পুত্রবধূ আনোয়ারা বিবি এবং আশরাফুলের মেয়ে ফাতেমা খাতুন। এঁদের মধ্যে আশরাফুল জন্ম থেকেই চোখে দেখতে পান না। আমজাদ কানে শুনতে পান না এবং মানসিক ভারসাম্যহীন। আশরাফুলের বউ ও মেয়েরও দৃষ্টিশক্তি নেই। কিন্তু এদের মধ্যে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট রয়েছে শুধু আশরাফুল হকের এবং আনোয়ারা বিবির। বাকিদের এখনও প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট হয়নি।

অসহায়-দুঃস্থ বৃদ্ধা আকলিমা বলেন, “পরিবারের সকলের মুখে খাওয়ার তুলে দিতে পারছি না। ছেলে, ছেলের বউদের পরনের জামা কাপড় টুকু ঠিক নেই। কিন্তু তাও নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। ঘরে চাল নেই শুধু মোকোয় আছে। কিন্তু সেই মোকোয় ভেজে যে খাবো সেই জ্বালানি টুকুও নেই।’’

এই অভাবের জ্বালা, খিদের জ্বালা যে আর সহ্য করা আর সম্ভব হচ্ছে না, তা ওই বৃদ্ধার কথাতেই স্পষ্ট। তাই তিনি চান সরকারি সাহায্য৷ আর তা না পেলে স্বপরিবারে আত্মঘাতী হওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না বলেই তিনি অকপটে জানিয়েছেন৷

তবে তিনি সরকারি সাহায্যের আবেদন আগেই করেছেন৷ কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ৷ ওই বৃদ্ধার কথায়, ‘‘প্রধানের কাছে, বিডিওর কাছে সকলের কাছেই গিয়েছি। কিন্তু সেরকম ভাবে কোনও ফল হয়নি। জেলাশাসকের দপ্তরেও গিয়েছিলাম কিন্তু দেখা করতে পারিনি৷ মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার আমাদের বাড়িতে এসে সবকিছু দেখে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর আমরা কিছুই পেলাম না।’’

তিনি জানালেন, বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করেছিলেন৷ অন্যেরা পেয়ে গিয়েছে কিন্তু তিনি পাননি। আবাস যোজনার ঘর দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু তাও মেলেনি৷ বৃদ্ধা বলেন, ‘‘শুধু মাঝে পঞ্চায়েত প্রধান এসে একদিন আমাদের কিছু চাল ডাল এবং সবজি দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা দিয়ে ১৩ সদস্যের পরিবারের একদিনের বেশি চলে না। বাকিদের রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু তাও পাচ্ছি না। না, খেতে পেয়ে প্রতিবন্ধী ছেলে আরও দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা করাতে পারছি না। মা হয়ে এই জ্বালা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।”

ছেলে আশরাফুল হক বলেন, “জন্ম থেকেই আমি অন্ধ। আমার স্ত্রীও এবং মেয়েও চোখে দেখতে পাই না। তাদেরকে খাওয়াতে পারছি না বলে আমি স্ত্রী এবং মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। একবেলা খেয়ে এক বেলা না খেয়ে আমাদের দিন কাটছে। বর্ষায় ঘরে জল জমে যাচ্ছে ,ঘরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপ, পোকামাকড়। খাওয়া থাকা কোনও কিছুরই ঠিক নেই আমাদের। কিন্তু তাও এখনও পর্যন্ত সঠিক ভাবে কোনও সরকারি সাহায্য পাচ্ছি না।”

চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও সমিরন ভট্টাচার্য জানান, ওই মহিলা পূর্বে বহুবার ব্লকে এসেছেন। আমরা সমস্ত বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে দেখি। সবকিছু ব্লকের পক্ষে করা সম্ভব হয় না। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব করা হয়েছে। উনি ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট কোনও বিষয়ে অভিযোগ জানালে আমরা চেষ্টা করব সম্পূর্ণভাবে ওঁর পাশে থাকার।”