“ঘরের শত্রু বিভীষণ”, হ্যালের সুপারভাইজারের তথ্য পাচার আইএসআইয়ের হাতে

0
606

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- আইএসআইকে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য পাচার! গ্রেফতার করা হল হ্যালের সুপারভাইজারকে।
নাম দীপক শিরসাথ। বয়স ৪১ বছর। নাসিকে হ্যালের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন দীপক। গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য, ব্যক্তিগত এবং অফিসের কম্পিউটার থেকে আইএসআইকে তথ্য পাচারের একাধিক প্রমাণ মিলেছে। সেগুলি বাজেয়াপ্ত‌ও করা হয়েছে। তবে তাঁকে যৌন প্রলোভনে ফেলা হয়েছিল কি না, সেই বিষয়েও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

দেশের তৈরি আধুনিক ফাইটার জেটের প্রযুক্তি ও নকশা পাকিস্তানে পাচার হচ্ছে। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকে গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগে ভারতের যুদ্ধবিমান নির্মানকারী সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড তথা হ্যালের এক সুপারভাইজারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেনা গোয়েন্দা ও মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন শাখার অফিসাররা তল্লাশি অভিযান চালিয়ে নাসিক থেকে গ্রেফতার করেন হ্যালের ওই কর্মীকে।

ডিসিপি বিনয় রাথোড় বলেছেন, আমাদের কাছে খবর ছিল দীর্ঘদিন ধরেই আইএসআইকে তথ্য পাচারের কাজ করছিল দীপক। হোয়াটসঅ্যাপ ও সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে পাক গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ট যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, ফাইটার জেটের প্রোটোটাইপের নকশা ও প্রযুক্তিগত তথ্য হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আইএসআইয়ের কাছে পাঠিয়েছিল দীপক।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী,নাসিক থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরত্বে হ্যালের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট রয়েছে। মুম্বই থেকে যার দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এখানে মিগ ফাইটার জেট তৈরির কাজ করা হয়। মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন শাখার অফিসাররা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিমানের গোপন তথ্য পাচার হচ্ছে এমন খবর আগেই মিলেছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরেই দীপকের খোঁজ পাওয়া যায়। তার কাছ থেকে তিনটি মোবাইল, পাঁচটি সিম ও দুটি মেমরি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। গোয়েন্দা অফিসাররা বলছেন, দীপকের ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে অত্যন্ত মূল্যবান এবং স্পর্শকাতর তথ্য মিলেছে। পাকিস্তানের একাধিক ফেসবুক আইডি-র ব্যক্তিগত চ্যাটের‌ও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড জেট ইঞ্জিন, এয়ারক্রাফ্ট, হেলিকপ্টারের নকশা তৈরি করে থাকে। বেঙ্গালুরু, নাসিক, কানপুর, লখনৌ, হায়দরাবাদে হ্যালের ইউনিট রয়েছে। ১৯৬৪ সাল থেকে মিগ ফাইটার জেট তৈরির লাইসেন্স হাতে আসে হ্যালের। মিগ-২১-এফএল যুদ্ধবিমান ও কে-৩ মিসাইলের প্রযুক্তি হ্যাল‌ই তৈরি করেছে। বর্তমানে মিগের উন্নত ভ্যারিয়ান্ট‌ও তৈরি করছে হ্যাল। মিগ-২১এম, মিগ-২১ বাইসন জেট, মিগ-২৭ এম, সুখোই-৩০ এমকেআই ফাইটার জেটের প্রোটোটাইপ তৈরি হয়েছে হ্যালের হাত ধরে। পাশাপাশি, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস যুদ্ধবিমানের উন্নত ভ্যারিয়ান্টও তৈরি করছে হ্যালে। এইসব যুদ্ধবিমানের গোপন তথ্য‌ও পাকিস্তানে পাচার হয়ে গেছে কিনা সে নিয়েই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন গোয়েন্দারা।

২০১৮ সালে ব্রাহ্মস মিসাইলের তথ্য পাচারের অভিযোগে নাগপুরে ব্রাহ্মস মিসাইল প্রকল্পের এক ইঞ্জিনিয়ারকে যৌথভাবে পাকড়াও করেছিল উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখা। চলতি বছরই জুন মাসে, পাক হাইকমিশন থেকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ধরা পড়েছে আবিদ হুসেন ও তাহির খান। ভারতীয় রেলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। বিশেষত যে ট্রেনগুলিতে সেনা জওয়ানরা যাতায়াত করেন, তাঁদের গতিবিধির দিকে নজর রাখাই ছিল ওই দুই চরের কাজ। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, আবিদ ও তাহির আসলে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের চর। ভুয়ো পরিচয় দেখিয়ে দিল্লির পাক হাইকমিশনে ভিসা বিভাগের কর্মী সেজে গোপন নথি সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিল। ভারতীয় বাহিনীর গতিবিধি, তাঁদের প্রতিটা পদক্ষেপের তথ্য যোগাড় করাই ছিল দু’জনের প্রধান কাজ। গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ খবর হাতে এলেই সটান সেটা পৌঁছে যেত আইএসআইয়ের কাছে।