দোলযাত্রার প্রাক্কালে বাংলাদেশে ফের আক্রান্ত ইসকন, মৌলবাদী হামলায় জখম ৩ ভক্ত

0
628

বঙ্গদেশ ডেস্ক:ফের একবার বাংলাদেশে আক্রান্ত সংখ্যালঘু হিন্দুরা। পুনরায় আক্রমণের শিকার ঢাকার ইসকন (ISKCON) মন্দির। বৃহস্পতিবার রাতের দিকে ঢাকার রাধাকান্ত মন্দিরে আচমকা হামলা চালানো হয়। মন্দিরের পুরোহিতদের ব্যাপক মারধর করা হয়, সঙ্গে চলে লুটপাট। আক্রান্ত হয় প্রায় ২০০ জন। সূত্রের খবর, হাজি শফিউল্লা নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে বিশাল দলবল মন্দিরে হামলা চালায়। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

২২২, লালমোহন স্ট্রিট, ওয়াড়ি, ঢাকা (Dhaka)। এখানেই রয়েছে ইসকনের রাধাকান্ত মন্দির। বৃহস্পতিবার রাতে এখানেই মৌলবাদীরা হামলা চালিয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, গতরাতে ঢাকার ইসকন মন্দিরে দোলের প্রস্তুতি চলছিল, ভক্তরা সেখানে পুজো-পাঠ করছিলেন, সেই সময় হঠাৎ করেই প্রায় ২০০ জনের একটি দল হামলা চালায় মন্দিরে। অভিযোগ, হামলাকারীরা প্রত্যেকেই মৌলবাদী। তারা সেখানে ভাঙচুর শুরু করে এবং ইসকনের দাবি,‌সুমন্ত্রচন্দ্র শ্রবণ, নীহার হালদার, রাজীব ভদ্র নামে মন্দিরের তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া মৌলবাদীদের হামলায় জখম হয়েছে আরও অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, হাজির শফিউল্লার নেতৃত্বে দুষ্কতীদের একটি দল হামলা চালায় রাধাকান্ত মন্দিরে। এই ঘটনায় ফের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ইসকন কর্তৃপক্ষের মনে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দোষীদের যথাযথ শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। এই বর্বরোচিত ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে ওই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। দোলের আগের রাতে এমন বীভৎস ঘটনা হিন্দুদের ওপর সুপরিকল্পিত আঘাত বলেই মনে করছেন অনেকে।

গত বছর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর পর ধারাবাহিকভাবে হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। গত বছর দুর্গাপুজোয় কুমিল্লার একটি মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমার পায়ের কাছে কোরান রাখা নিয়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তি দাঙ্গার রূপ ধারণ করে। পরে জানা গিয়েছে, এক মুসলিম যুবক সেখানে কোরান (Quran)রেখে এসেছিল। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার পরপরই ইসকন মন্দিরেও হামলা চালানো হয়। তারও আগে ঢাকার টিপু সুলতান রোড এবং চট্টগ্রামের কোতওয়ালি এরকম ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তবে এবার রাধাকান্ত মন্দিরে হামলার ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু কেন বারবার ঘটে হামলা? পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের বক্তব্য, বাংলাদেশে একাধিক ইসলামিক জঙ্গী‌ সংগঠন অতীতে বিভিন্ন সময়ে ইসকনকে আক্রমণের হুমকি দিয়েছিল। বিশেষত, জেএমবি বা আনসারুল বাংলা টিমের মতো দলগুলির তরফে এই হুমকি এসেছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলো ইসকনকে টার্গেট করেছে। ফলে, এই হামলার পিছনে এই সংগঠনগুলির কোনও যোগসূত্র নেই বা কোনও মদত নেই, তা পুরোপুরি নিশ্চিত বলা যায় না। তবে ইসকন যে আক্রমণের নিশানা হতে পারে, তা অবশ্য‌ আগেই ভারতীয় গোয়েন্দারা বাংলাদেশকে জানিয়েছিল‌। গতবার দুর্গোপুজোর বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘ পর্যন্তও পৌঁছায়।

কলকাতা ইসকনের মুখপাত্র রাধারমন দাস বলেছেন, ঢাকায় শ্রী রাধাকান্ত মন্দিরে গতকাল সন্ধ্যায়, প্রায় ২০০ লোকের হামলায় আমাদের তিন জন ভক্ত জখম হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কড়াকড়ি করা দরকার। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু‌দের মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত।তিনি একথাও বলেছেন, রাষ্ট্রসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকানো বন্ধ করতে হবে হিন্দুদের, যারা সবসময় হিন্দুদের কান্নায় নীরব থেকেছে। তিনি টুইটারে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে লিখেছেন, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যা দোল যাত্রা এবং হোলি উদযাপনের সময় ঘটেছে। মাত্র দিন কয়েক আগে, রাষ্ট্রসংঘ ১৫ মার্চ ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে ঘোষণা করে প্রস্তাব পাশ করেছে।এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, আমরা অবাক ও বিস্মিত যে একই রাষ্ট্রসংঘ হাজার হাজার অসহায় বাংলাদেশী ও পাকিস্তানি সংখ্যালঘু হিন্দু দের দুঃখ-কষ্টে নীরব!বাংলাদেশে এত এত হিন্দু তাদের জীবন, সম্পত্তি হারিয়েছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছে, কিন্তু আফসোস এ বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে রাষ্ট্রসংঘ। তারা শুধুমাত্র ইসলামফোবিয়া নিয়েই চিন্তিত।