প্রফেসর থেকে পানওয়ালা–কিভাবে জেএনইউতে বামপন্থীরা বিরোধীদের দাবিয়ে রাখছে

0
405

এক ঝলকে, খুব পরিষ্কার বার্তা– বামেদের বিরোধিতা করলেই আঘাত ও অপমানের শিকার হতে হচ্ছে।

 জে এন ইউ-এর এক ছাত্র তার সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে চেয়েছিল, এই মর্মার্থে সে দিল্লি হাই কোর্টে বিচার চায়। তার বক্তব্য, বামপন্থী ছাত্রদের সংগঠন হরতালে বসেছে, এই অজুহাতে তারা তাকে পরীক্ষা দিতে দেবে না। এমনকি এইজন্য ছাত্রটিকে আর এস এসের দালাল বলে দাগিয়ে দেন এক বামপন্থী অধ্যাপক। সুরজ কুমার নামে এই ছাত্রকে গত ৫ই জানুয়ারি, ক্যাম্পাসে ঝামেলায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
যারা বামেদের সাথে হাত মেলাবে না, বেছে বেছে তাদের আক্রমণ ও লাঞ্ছিত করার স্বভাবটা বামেদের একান্তই পুরোনো। গত ৫ তারিখের পর থেকে অবস্থা আরোই খারাপ হতে দেখা যাচ্ছে। গোটা ক্যাম্পাসে বাম বিরোধী অধ্যাপকদের ছবি ও পোস্টার টাঙিয়ে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের “বেঈমান” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমনকি এক পানওয়ালা,যার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোই সম্পর্ক নেই, তাকেও “সঙ্ঘি” কিংবা  এবিভিপির কট্টর সমর্থক বলে দাগানো চলেছে। বামেরা বিশেষ ভাবে তাদের বিরোধীদের আঘাত করেই চলছে।
সেন্টার ফর দা স্টাডি অফ সোশ্যাল সিস্টেম এর সহযোগী অধ্যাপক শ্রী প্রকাশ চন্দর সাহুর সম্পর্কে বলা হচ্ছে, যে তিনি ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর আঘাত করেন, এবং মুখ ঢাকা সমাজবিরোধীদের ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। প্রফেসর সাহু এই ব্যাপারে বলেন, জিনিসটা একেবারে হাস্যকর।
“আমি নিজেই ওইদিন কোনোমতে গুন্ডাদের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচেছি। আর আমার সম্পর্কে বলা হয়েছে আমি নিজেই নাকি ছাত্রদের মেরেছি।এগুলো ভুলভাল এবং হাস্যকর। ওরা যদি কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারে যে আমি দুষ্কৃতী, তাহলে আমি পদত্যাগ করবো। দিল্লি পুলিশ আর ক্রাইম ব্রাঞ্চ এখানেই আছে। বামপন্থীদের কাছে যদি কোন প্রমাণ থাকে, তারা সোজাসুজি গিয়ে এফ আই আর করলেই পারে, তা না করে, কেন আমাকে বাজে বদনাম করতে চাইছে?”
তিনি আরো বলেন,
“আমি যবে থেকে এখানে এসেছি, তবে থেকেই আমাকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। আমাকে যে টার্গেট করা হচ্ছে, তার পিছনে শুধুই মতবাদের পার্থক্য কাজ করছে। যখন এখানে এসেছি, আমার অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। মনে হয় আমার পিছনে লাগার কারণ হলো, ওরা আমার পিছিয়ে পড়া সমাজ থেকে উঠে আসা সহ্য করতে পারে না।”
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সাহু সবরমতী হোস্টেলের ওয়ার্ডেন। ওই হোস্টেলে সেদিন দুবার আক্রমণ হয়েছে। একবার বামেদের আক্রমণ, ও তার পাল্টা বিরোধীদের প্রত্যঘাত।
“যখন গোলমালের খবর পাই, তখন আমি আরেক ওয়ার্ডেনের সঙ্গে খাবার খাচ্ছিলাম। খবর পেতেই আমরা তাড়াতাড়ি হোস্টেলের দিকে যাই। বেলা 4:15 তে ওখানে পৌছাই। মুখঢাকা দুষ্কৃতীরা ততক্ষণে পালিয়ে গেছে। ছাত্ররা আমাকে বলে যে, কিভাবে বেছে বেছে বিরোধীদের আক্রমণ করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা 3 জন ওয়ার্ডেনের জরুরী বৈঠকে সমস্ত ঘটনার রিপোর্ট তৈরি করি, এবং চিফ সিকিউরিটিকে জানাই। আমরা আরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দাবি রাখি। 6-45 এর মধ্যে কাজ শেষ করে অফিস বন্ধ করে আমরা চা খেতে বেরিয়ে যাই। ততক্ষণে শান্তি কামনা মিছিল শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা সাতটার সময় ওরা দ্বিতীয়বার আক্রমণ করে। আমরা কোনমতে পালিয়ে যাই নর্মদা হোস্টেলের দিকে। বারবার আমরা নিরাপত্তার দাবি তুললেও কেউ সাহায্য করতে আসেনি।”
 স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ এর ফ্যাকাল্টি শ্রী অমিত মিশ্র বলেন,
“9 জানুয়ারি একটি মিটিং থেকে বেরোনোর সময় তাঁকে ঘেরাও করে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ডিন আমাদের একটা মিটিংয়ে ডেকেছিলেন। আমরা মোট আটজন ওখান থেকে বেরোনোর সময় কিছু ছাত্র আমাদের ঘিরে ধরে নানারকম খারাপ মন্তব্য করে,আর স্লোগান দিতে থাকে। তারা আমাদের দাল্লা দাললু ইত্যাদি বলে অপমান করে।
ডিন আমাকে বলেন ওই ঘটনার পুরোটা ভিডিও করে রাখতে। ব্যস, যেই ভিডিও করতে যাই, ওরা বলে-“তোমার ব্যবস্থা করতে হবে”…. মানেটা বুঝে নিন। এই ছাত্ররা আমাদের আগেও বলেছে– বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও একটা দুনিয়া আছে। সেখানে দেখে নেবো। সারা জীবন কোর্টের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
এরা আরো বলে, SLS এ কি হয়েছিল মনে আছে তো? ব্যাপারটা হলো ওরা এর আগে কিছু বিরোধীদের নারীঘটিত কেচ্ছায় জড়িয়ে বদনাম করেছিল।”
প্রফেসর মিশ্র পুরো বিষয়টি ডিনকে লিখিতভাবে জানান।

শ্রীরাম কলেজের বাণিজ্য শাখার প্রফেসর অভিনব প্রকাশ সিং বলেন,
“আমি অবাক। ক্যাম্পাসে আমি দীর্ঘদিন আসিনি, তবু আমার নামের পোস্টার টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। আমাকে বেঈমান বলা হয়েছে। আমি জানিনা, আমায় কেন বদনাম করা হয়েছে। কিসের জন্য সেটা পরিষ্কার নয় আমার কাছে। আমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কাজে নাক গলাইনি, তবুও আমার নামে সারা ক্যাম্পাসে বদনাম করার পোস্টার ঝুলিয়ে রেখেছে। প্রায় এক মাসের উপর হয়ে গেছে ক্যাম্পাসে আসিনি। তবুও এরা আমার পিছনে লেগে আছে, তার কারণ হলো, যে, আমি চিরকাল বামেদের বিরোধিতা করেছি। সেইজন্য তারা বদলা নেওয়ার চেষ্টা করে।”
অভিনববাবু আরো বলেন,
“চেষ্টা করছি এইসব জিনিসগুলো মিডিয়াতে তুলে ধরতে। কারণ মিডিয়াতে শুধুই বামপন্থী দালাল বসে আছে, তারা সবটা দেখায়না, বলেওনা।”
ওনার করা টুইট ভাইরাল হয়ে যায়। একটা, যাতে বামপন্থী কিভাবে আক্রমণ শুরু করে, আর আরেকটা হোল ওদের মারপিটের দৃশ্য, যাতে পরিস্কার হয়ে যায় বামপন্থীরাই ঝামেলা করেছিলো। কিন্তু কি জানেন তো? এসব JNU তে নতুন কিছু নয়। যারা যারা ভুলেও বামেদের বিরোধিতা করেন, তাদের সবাইকে ক্যাম্পাসে লাঞ্ছিত ও অত্যাচারিত হতে হয়।”
অরিহন্তা পাওয়ারিয়ার লেখা স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত মূল প্রবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন ডঃ শান্তনু বাগচী।