আইএমএ সভাপতি জয়লালের করোনা মহামারীকে ঢাল করে খ্রিস্টধর্মের প্রচার

0
776

ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় সভাপতি জনরোজ অস্টিন জয়লালের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং তিনি মহামারীর সময় নিজের পদের অবমাননা করেছেন এবং ধর্মান্তকরণের আশ্বাস দিয়েছেন -এই অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা হয়েছে।

একটি আইনি প্রতিবাদী সংস্থা- আইনি অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম কেন্দ্রের কাছে জনরোজ অস্টিন জয়লালের কোভিড-১৯ মহামারীর সময় রোগীদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টার অভিযোগে, তাঁর বিরুদ্ধে একটি বিস্তারিত চিঠি লিখে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এই অভিযোগে বলা হয় যে আইএমএ সভাপতি জন জয়লালের এলআরপিএফ কর্তৃক প্রাপ্ত ডাক্তারি করার ছাড়পত্র বাতিল করে দিতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে এই বিতর্কিত ডাক্তার প্রকাশ্যে মানুষের মধ্যে খ্রিস্টান ও অখ্রিস্টান বিভেদ করতে চেয়েছেন, এবং বর্তমান সকল সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অ-খ্রিস্টানদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করে চলেছেন।

আইনি প্রতিবাদী সংস্থাটি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যে যতক্ষণ না জন জয়লালকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আই এম এ-কে কোন অনুদান যেন না দেওয়া হয়। ডঃ  জনরোজ অস্টিন জয়লালকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ৯৮তম বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে ২০২০-২০২১ সালের জন্য ভারতীয় চিকিৎসা সমিতি (আই এম এর)র জাতীয় সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।

কমিউনিম্যাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলআরপিএফ অভিযোগ জানায় যে আইএমএর সভাপতি খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারের জন্য নিজের অবস্থানের অপব্যবহার করছেন। মানবিক আবেদন থেকে কোভিড-১৯ মহামারীর চিকিৎসা করার পরিবর্তে ডঃ জয়লাল ও তাঁর ধর্মপ্রচারকের দলটি আরো বেশি লোকের কাছে নতুন উপায়ে করমর্দন করে সুসমাচারকে ছড়িয়ে দেবার জন্য এই মহামারীকে সুযোক হিসেবে কাজে লাগিয়েছে- এমন অভিযোগ করা হয়।

এলআরপিএফ দ্বারা দায়ের করার অভিযোগ বলা হয়, “এটি মানুষের দুর্ভোগ, মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য শকুনের মতো প্রস্তাব ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁদের জীবনের দুর্বলতম মুহূর্তগুলিতে লাগাতার কষ্ট পাওয়া মানুষদের আরাম দেওয়ার বদলে, ডঃ জয়লাল ও তাঁর ধর্মপ্রচারকের দল সহনাগরিকদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করে তাঁদের কষ্টকে কাজে লাগানোর জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা করছেন। এটি আরও বেশি আশ্চর্যের যে, একজন ডাক্তার হওয়া সত্বেও তাঁর চিকিৎসা সম্বন্ধীয় দক্ষতাগুলিকে কাজে লাগানোর পরিবর্তে তিনি কোভিড-১৯ মহামারীর ‌সময় দুর্ভিক্ষক্লীষ্ট মানুষের মনে ঈশ্বরের ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছেন”।

জয়লাল দাবি করেন যে “হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার আধুনিক চিকিৎসার পরিপন্থী।”

এল আর পি এফ জয়লালের দেওয়া দুটি সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছেন, যেখানে তিনি ধর্মান্ধ হিন্দুদের সম্পর্কে তাঁর দৃঢ় মতামত জ্ঞাপন করেছেন। অভিযোগে যে হাজ্ঞাই ইন্টারন্যাশনালে দেওয়া সাক্ষাৎকারের উল্লেখ মেলে, যেখানে তিনি বলেছেন যে, “হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার আধুনিক চিকিৎসাকে ধ্বংস করে দিতে চায়।

এল আর পি এফ দ্বারা দায়ের করা অভিযোগের অনুযায়ী, তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “দয়া করে আন্তর্জাতিকভাবে আপনারা এর জন্য প্রার্থনা করুন। যদি সব কিছু তাঁদের পরিকল্পনা মাফিক চলে, তবে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে বিশুদ্ধ আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্র আর থাকবে না।”

তিনি সেই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “তাঁরা এটিকে এক দেশ, এক চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে চান। এর পরে, তাঁরা এটিকে এক ধর্ম করতে চাইবেন। এটিও সংস্কৃত ভাষার ওপর আধারিত, যা সর্বদা ঐতিহ্যগতভাবেই হিন্দু রীতি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এটির মাধ্যমে সরকার সূক্ষ্মভাবে জনগণের কাছে সংস্কৃতকে আনতে চাইছেন এবং জনগণের মনে হিন্দুত্বের ভাষাকে ঢুকিয়ে দিতে চাইছেন।”

গির্জা মানুষের যত্ন করে সরকারের নয় : ডক্টর জয়লাল

আজ অপর একটি সাক্ষাৎকারে জয়লাল বলেছেন যে গির্জাই একমাত্র দরিদ্র্যের সেবা করে, এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে সরকার তাঁদের জন্য কিছু করে না।

পরবর্তীতে জয়লাল দাবি করেছেন যে তাঁরা আ্যলোপ্যাথি ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অনশন ও প্রতিবাদ করছেন ‌এবং সাথে সাথে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়েও মামলা লড়ে চলছেন।

ধর্মান্ধ কার্যকলাপগুলির প্রচার করে জয়লাল বলেছিলেন যে খ্রিস্টান ডাক্তারদের ‘শারীরিক’ ও ‘মানসিক’ নিরাময় করা উচিত এবং আরও বেশিসংখ্যক খ্রিস্টান চিকিৎসকদের ধর্মনিরপেক্ষ সংস্থায়, মিশনগুলিতে এবং মেডিক্যাল কলেজ গুলিতে কাজে যোগ দেয়া উচিত।

“খ্রিস্টানিটি টুডে”-তে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমি একটি মেডিকেল কলেজের শল্যচিকিৎসার অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছি, তাই সেখানে খ্রিস্ট ধর্মের নীতির মাধ্যমে নিরাময়ের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে এটি আমার কাছে একটি দারুণ সুযোগ। আমার কাছে স্নাতক ও ইন্টানদের ও প্রশিক্ষিত করার সুযোগ আছে।”

জয়লালের মতে, ভারতে ধর্মান্তকরণ অত্যন্ত সহজ কারণ এখানে বহুদেববাদী সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে। জয়লাল উদ্ধৃতি আকারে বলেছেন, “একটা জিনিস যেটা আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে তা হল যে হিন্দুত্ব অন্যান্য সকল ধর্মের থেকে বহুদেববাদের কারণে পৃথক। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন দেবতাকে স্বীকার করে। তাঁদের এটা স্বীকার করে নিতে কোন বাঁধা নেই যে যীশু অনেক দেবতার মধ্যে একজন বা মহম্মদ অনেক ঈশ্বরের মধ্যে একজন। তাই অন্যান্য দেশের ব্যবস্থার তুলনায় এখানে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ অপেক্ষাকৃত অনেক কম। আমি বিশ্বাস করি এটি ভারতে খুবই স্বাস্থ্যকর।”

কোভিড-১৯ এর উজ্জ্বর উপস্থিতির কারণে খ্রিস্টধর্ম বৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছে : ডঃ জে এ জয়লাল

“খ্রিস্টানিটি টুডে” তে এক সাক্ষাৎকারে ডঃ জয়লাল আপাত বিষণ্ণ ও বিবর্ণ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ্য করেছিলেন। তাঁর মতে মহামারী শুরু হওয়ার কারণে যে সমস্ত দুর্ভোগ, যন্ত্রণা ও বিধি নিষেধগুলি ক্রমাগত আসছে, তা সত্ত্বেও এর কারণেই খ্রিস্ট ধর্ম প্রসার লাভ করছে।

তিনি “খ্রিস্টানিটি টুডে”-কে বলেছিলেন, “আমি দেখতে পাচ্ছি যে, সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকেও এবং তাঁরা প্রকাশ্যে ধর্মপ্রচারের বার্তা দেওয়ার সময় নানাভাবে যেসকল বাধার সম্মুখীন হয়ে যাচ্ছেন তা সত্ত্বেও খ্রিস্টধর্ম বৃদ্ধি লাভ করছে।”

জয়লালের মতে এটি কেবলমাত্র মানুষের যিশুখ্রিস্টের প্রতি অটল বিশ্বাসের কারণে হয়েছিল, সমাধির মত করোনা ভাইরাস মহামারীর মহামারী প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। তিনি বলেছিলেন, “কেবলমাত্র পরম শক্তিমানের অনুগ্রহেই আমরা বিপদ থেকে রেহাই পাই এবং নিরাপদে থাকি এবং তিনি নিজ অনুগ্রহেই আমাদের সকলকে রক্ষা করেন। নৈশকালীন প্রার্থনা, পারিবারিক প্রার্থনায় প্রভৃতিতে খ্রিস্টানরা ধীরে ধীরে ঈশ্বরের কাছে পার্থিব জিনিসের বদলে স্বর্গের আশীর্বাদের জন্য বেশি করে প্রার্থনা করেন। তাঁরা এতে বেশি করে মনোযোগ দিতে থাকেন।”

শুধু খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার এর জন্য নয়, ডঃ জয়লাল ক্ষমতাসীন শাসক দলের প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ করার জন্য‌ও পরিচিত, কারণ তিনি ক্রমাগত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষবর্ধন এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সহ ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃবৃন্দকে নানা ভ্রান্ত দাবি, কার্টুন এবং তাঁর মতাদর্শের পরিচায়ক হ্যাশট্যাগ গুলির মাধ্যমে নিশানা করে এসেছেন।

এখানে জয়লালের সামাজিক মাধ্যমের পোস্টগুলির এক ঝলক দেওয়া হল‌। যেখানে তিনি হিন্দুদের জন্য বিশেষত প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য তাঁর প্রবল ঘৃণা প্রকাশ্যে পেশ করেছেন।

শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী দিল্লীর একটি আদালত জন জয়লালকে আইএমএ’র মঞ্চকে ব্যবহার করে ধর্ম প্রচার করতে নিষেধ করেছে, এবং বলেছে যে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারকে ব্যবহার করে তার ধর্মপ্রচার নিয়ে বক্তব্য ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী। সাথে সাথে আয়ুর্বেদ নিয়ে তার বক্তব্যেরও তীব্র ভর্ৎসনা করে আদালত। অ্যালোপ্যাথিকে খ্রিস্টধর্মের সাথে একাত্ম করে দেখানোরও নিন্দা করে আদালত।

মূল লেখাটি অপইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত, অনুবাদ করেছেন অঙ্কুশা।