লাক্ষাদ্বীপ বাঁচাও’র প্রকৃত চিত্র

0
893

লাক্ষাদ্বীপ বিতর্কটি কেবল ‘সাংস্কৃতিক আরোপণ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ সম্পর্কিত?

অথবা, এটি কি জাতীয় সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত? কারণ এই অঞ্চলের সঙ্গে আইএসআইএসের যোগসাজশ রয়েছে, পর্যটনশিল্পের ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রয়েছে এবং অন্যান্য বিষয়গুলির সাপেক্ষেও আইনকানুন রক্ষা করার চেষ্টা চলছে?

কী কী বলা হয়নি, তা এখানে উল্লেখ করা হল।

চ্যাগোস শৈলশিরা হল একটি দীর্ঘ আগ্নেয়গিরির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভূমিরূপ, যেটি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটি ভারত মহাসাগরকে দুটি স্পষ্ট ভাগে ভাগ করেছে।

এটি  অ্যাডাসের তীর ও দক্ষিণের দিয়েগো গার্সিয়া থেকে শুরু করে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি মালদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ থেকে উত্তরে পিজিয়ন দ্বীপ পর্যন্ত এবং মুড়ুদেশ্বরের কাছে কোঙ্কণ উপকূল পর্যন্ত একটি বিস্তৃত প্রবালের সারি রয়েছে।

শৈলশিরাটির ভূতাত্ত্বিক গুরুত্ব আছে। কারণ এটি পশ্চিমে বার-এল-মান্দেব প্রণালী (লোহিত ‌সাগরকে ইডেন উপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে) এবং পূর্বে মালাক্কা প্রণালীর (দক্ষিণ চীন সাগরের প্রবেশদ্বার) মত‌ই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু সারা বিশ্বের অর্ধেক বাণিজ্য‌ই এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

ভারতীয় নৌ-বাহিনী এইসকল দ্বীপপুঞ্জগুলিতে নানারকম সংবেদনশীল স্থাপনা বজায় রাখে। যেগুলি নিয়ে প্রকাশ্যে কখনো আলোচনা করা হয় না। এই কারণে, প্রতিটি ভারতীয় নাগরিককেও ছুটির দিনে কেন্দ্রীয় লাক্ষাদ্বীপের স্বর্গীয় বিলাসবহুল বঙ্গরাম দ্বীপে সময় কাটাতে হলে অনুমতি নিতে হয়।

যেসব পাঠকেরা পিজিয়ান দ্বীপে স্কুবা ডাইভিং করেছেন তাঁরা বিশেষ করে এই শৈলশিরা সংক্রান্ত গোপনীয়তা গুলোর সমাদর করবেন। মুরুদেশ্বরের থানায় স্কুবা ড্রাইভিং করার জন্য অনুমতি অনুমোদন করানো থেকে যে কঠোরতার সহিত স্থানীয় আধিকারিকরা ডুবুরিদের নির্দেশ দেন এবং পিজিয়ান দ্বীপে পা না রাখার নিদান দেন, প্রভৃতি সব কিছুই তাঁরা সমাদর করেন।

সুতরাং আমাদের শাসনতন্ত্রের একটি অংশ যখন হঠাৎ নতুন করে নতুন ধরনের বিবরণী প্রস্তুত করতে থাকে যাতে তেমন মনে হয় যে, লাক্ষাদ্বীপের মুসলমানরা কেন্দ্রীয় সরকারের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। আমাদের যুক্তিবোধ দাবি করে, যাতে আমরা পর্দা সরিয়ে ভেতরে আসো সত্যের অবগুণ্ঠন উন্মোচন করি।

এই অভিযোগটি আনার ক্ষেত্রে মূলত নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেরালার কংগ্রেস পার্টি এবং তাঁদের মিত্রপক্ষ এবং মূলস্রোতের মালায়লাম গণমাধ্যম। ২৬শে মে দিল্লিতে বিরোধীপক্ষের ব্যপক কৃষক আন্দোলনের জন্য আয়োজিত মিছিলটি পাথরের জলে পাথরের মত ডুবে যাওয়ার পরেই এটি জাতীয়ভাবে সাড়া পেয়েছে।

কৌতূহলজনকভাবে কেরালার কমিউনিস্টরা এই নতুন ব্যাখ্যানটিকে কেবল মৌখিক ভাবে তাঁদের রাজ্যসভার সংসদ এলামরাম করিমকে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘দুষ্ট, দুষ্ট উপায়’ বলে নিন্দা করেই চুপ ছিল।

তখন থেকেই যদিও আমাদের মার্কসবাদীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক গণতন্ত্র চলছে। রাজ্যসভায় এমন একটি সর্বদলীয় প্রস্তাব পাশ হওয়া এবং সংসদের লাক্ষাদ্বীপের ‘সত্যসন্ধানে’-র সফরটিতে যাওয়ার জন্য কথা উঠছে।

সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসক প্রফুল খোদা প্যাটেলের উপর বিশেষ করে নানা প্রকার অভিযোগ আনা হচ্ছে।

প্রথমত, লাক্ষাদ্বীপে গোমাংস নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, জেলেরা যে ঘরগুলি ব্যবহার করতেন সেগুলি নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার কারণে তাঁদের জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

তৃতীয়ত, শান্তিপূর্ণ মানুষের মধ্যে সন্ত্রাসের শাসন চালু করার জন্য গুণ্ডা আইন চালু করা হয়েছে।

চতুর্থত,  প্রত্যক্ষভাবে ঐসলামিক নীতির সম্পূর্ণ বিপক্ষে গিয়ে দ্বীপের মদের দোকান ও বার খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

পঞ্চমত, একটি আইনে বলা হয়েছে যে দুটির বেশি সন্তান আছে এমন কোন স্থানীয় পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এটি চালু করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যাতে মুসলিমদের পঞ্চায়েতের রাজনৈতিক থেকে দূরে রাখা যায়।

ষষ্ঠত, স্থানীয়রা ভয় পান যে, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তাবিত সংযুক্ত দ্বীপ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য তাঁরা তাঁদের নিজস্ব ভূমি হারিয়ে ফেলবেন।

এবং সপ্তমতঃ লাক্ষাদ্বীপ থেকে সরিয়ে মালাবার উপকূলের কোঝিকোড সংলগ্ন বাইপোর থেকে ম্যাঙ্গালোর বন্দরে তাঁদের মূল পণ্যবাহী জাহাজ পরিবহনের কেন্দ্রটি স্থাপন করার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হতে পারে।

প্রথমদিকে এই বিবরণীর তারকা প্রচার হয়েছিল ফেসবুক একটি সংবেদনশীল পোষ্টের মাধ্যমে। এটি করেছিলেন মালায়ালাম অভিনেতা পৃথ্বীরাজ সুকুমারন, যাঁর প্রফুল্ল মুখটি কোচিতে অ্যাস্টে গোষ্ঠীর দ্বারা নির্মিত ভারতের প্রথম হালাল অনুমোদিত, শারিয়াহ-সম্মতিপ্রাপ্ত আবাসিক প্রকল্পটিকেও সমর্থন করে।

ব্যাপকভাবে, বৃহত্তর প্রস্তাবের জন্য প্যাটেলকে রক্তপিপাসু দানব রূপে চিত্রিত করা হয়। যেন তিনি লাক্ষাদ্বীপের মুসলমানদের গ্রাস করতে উদ্যত, এই মর্মে একটি পোস্টার আন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু সত্যটা কোথায়?

প্রথমত, গোমাংস লাক্ষাদ্বীপে নিষিদ্ধ হয়নি ২৭শে মে সঞ্চালক সৃজিত পানিক্কার জনম টিভিতে একটি বিতর্কসভার দরুণ সরকারি তথ্যসূত্র দিয়ে এই চিত্রগুলি স্পষ্ট করে বুঝিয়েছিলেন। অন্য সকল মাংসের সহিত এটিকেও বিদ্যালয়ের মধ্যাহ্নভোজের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। আসলে ‘লাক্ষাদ্বীপ প্রাণী সংরক্ষণ বিল ২০২১’ নামক একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে, এটি গবাদি পশুর হত্যাকে নিষিদ্ধ করে। এটি আপাতত আদালতে গেছে এবং শুনানি পদ্ধতির মধ্যে আছে।

খসড়ার একটি দিক হল যে এটি একটি আমলাতান্ত্রিক অনুশীলন এবং সংবিধানের রাজ্যের নির্দেশমূলক নীতির মধ্যে ৪৮ নম্বর ধারার উপর আধারিত, যা সরকারকে গো-নিধনকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করতে উৎসাহ প্রদান করে। অথবা, মদ বিক্রির উদাহরণ সহ এটি লাক্ষাদ্বীপকে একটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উন্নয়নের প্রথম ধাপ।

অন্যদিকে গোমাংস ব্রাভাডো ব্রিগেডের আরও একবার কিছু করণীয় থাকবে। যদিও তাঁদের মনে রাখা উচিত যে, তাঁরা যত বেশি করে লাক্ষাদ্বীপে গোমাংসের জন্য এবং মদের বিরুদ্ধে চিৎকার করবে তত বেশি মূল্ ভূখণ্ডে গোরক্ষার মামলাটি শক্তিশালী হবে।

এবং যত বেশি আওয়াজ বাড়বে, সেই প্রতিটি ডেসিবেল পরের বছর উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিজেপির তালিকায় আরও একটি আসন বাড়াবে।

দ্বিতীয়ত, মনোরমা টিভি ২৭ শে মে জোয়ারের স্থানে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার বিশেষ খবর একচেটিয়াভাবে প্রচার করেছিল এবং স্থানীয়রা উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন যে, তাঁরা চায় প্রশাসন সেগুলির ধ্বংসের আগেই অবৈধ নির্মাণগুলির বিকল্প কিছু তাঁদের করে দেবে।

আবার পড়ুন যদি আপনি চান: কেউ আসলেই চাইছে যে সরকার অর্থ অনুমোদন করুক এবং অবৈধ অট্টালিকা গুলির বিকল্প কিছু গড়ে দিক। এখন লাক্ষাদ্বীপ এর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কিছু করার ক্ষমতা বিবেচনা করুন।

তৃতীয়তঃ গুণ্ডা আইনটি প্রকৃতপক্ষে দ্বীপপুঞ্জগুলিতে চালু করা হয়েছে এবং ইহা স্পষ্টত‌ই খুব দ্রুত নয়। ২৭শে মে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা প্রশাসক আস্কর আলী, আইএএস, বলেছিলেন যে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দুর্ভাগ্যবশত যৌন অপরাধ সহ ড্রাগ ব্যবহার, গার্হস্থ্য হিংসা বিভিন্ন ধরনের ঘটনার বৃদ্ধি ঘটেছে।

গুণ্ডা আইনের মতো আরো কিছু কঠোর আইন এবং পকসো আইন চালু করা হয়েছে ঘটনাগুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

এক জাতীয় মতাদর্শ অনুযায়ী পকসো আইন হলো অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিবাহ রোধ করার জন্য। যদিও এখনো নিশ্চিত হয়নি।

চতুর্থত, দ্বীপগুলিতে মদের দোকান খোলা প্রসঙ্গে, যেখানে এখনও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেই সঙ্গে ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রকাশিত একটি গেজেট বিজ্ঞাপনের স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, যদি সে রকম কোন ঘটনা যদি ঘটে সে ক্ষেত্রে, এটি সংযুক্ত দ্বীপপুঞ্জ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে চলে যাবে (যাতে লাক্ষাদ্বীপ একটি বিশ্বজনীন পর্যটন ক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে)।

বিজ্ঞাপনের (ক) বিভাগে (iii) স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে এ জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে স্থানীয় সংস্থাগুলির মতামত যুক্ত থাকতে হবে এবং ২০১১ সালের একটি পুরাতন দ্বীপসুরক্ষা পরিকল্পনাও সঙ্গে সঙ্গে মেনে চলতে হবে।

সুতরাং লাক্ষাদ্বীপের ঐসলামিক চরিত্রকে মদের দ্বারা ‘দুষ্ট কেন্দ্রীয় সরকার’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলবার জন্য ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ার আগে তাদের সঠিক তথ্য গুলি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার প্রয়োজন।

মজার বিষয় হল, এই একই ২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তিতে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের আদেশ এবং রবীন্দ্রান সুপারিশ কমিটির আনুষ্ঠানিক গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে, যার দ্বারা ঘোষণা করা হয়েছে যে উচ্চ জোয়ারের স্থানের ২০ মিটার এর মধ্যে লাক্ষাদ্বীপের সমস্ত অবৈধ অট্টালিকা ভেঙে দেওয়া উচিত।

এটিই উপরোক্ত দুটি পয়েন্টে আলোচিত বিষয়বস্তু অর্থাৎ ধ্বংসের বিষয়ের আসল আইনি ভিত্তি।

পঞ্চমত, রাষ্ট্রের একাধিক রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দুটি সন্তানের নিদানকে মেনে নিয়েছে, তাদের পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃহত্তর এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে। এটিকে বর্তমান উপাখ্যানে স্থান দেওয়ার লাক্ষাদ্বীপের সংস্কৃতির অবমাননার নামান্তর এবং এটি ভিক্ষুকদের কল্পনা। যাইহোক, লাক্ষাদ্বীপের নেপথ্যে মুসলিমবিরোধী ও হিন্দুত্বের কাজ করবার জন্য ২৭শে মে জনম টিভিতে একটি বিতর্ক চলাকালীন আইনজীবী পিএম নিয়াস এটি স্পষ্ট করে বলেছিলেন।

যেহেতু অন্যান্য সদস্যরা দ্রুত চিহ্নিত করেছিলেন, তাই কংগ্রেসের প্রতিনিধিকে দেখে মনে হলো যে তিনি হয় তর্ক করছেন যে পরিবারে পরিকল্পনাটি মুসলিমবিরোধী বা বলছেন যে মুসলিমরা স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়মের কারণে বঞ্চিত হয়েছে কারণ, তারা দুটি সন্তানের নিদান কখনো মেনে নিতে পারবে না।

এরকম সমর্থক থাকলে কারো শত্রুর দরকার হয়? আর সর্বশেষ যা‌ শোনা গেছে, নিয়াস এমন সমস্ত জটিল বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিচ্ছেন, যা তাঁকে জখম করতে পারে।

ষষ্ঠত, যদি পর্যটন শিল্পের পরিকাঠামোতে বড় পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ হয়, তাতে কিছু পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু ‘লাক্ষাদ্বীপ উন্নয়ন আধিকারিক আইন ২০২১ খসড়া’-র বিভাগ ৭(৩)(iii) অনুযায়ী স্পষ্ট বলা হয়েছে যে যাবতীয় যে এ জাতীয় কোন জমি অধিগ্রহণ কমিশন নিযুক্ত হবে আইন দ্বারা ও স্থানীয় সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের দ্বারা, তাই স্থানচ্যুত হবার কোন ভিত্তি নেই এবং এটি অপ্রয়োজনীয় ভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

এর পাশাপাশি যদি বড় বিনিয়োগের আশা করা হয়, তবে আরো বড় যুদ্ধ হবে এই নিয়ে যে কে বিক্রি করার অধিকার পাবে কারণ রিয়েল এস্টেট গুলির বর্ধনশীল দাম সমস্ত উৎপাদন বিক্ষোভকে চুপ করিয়ে দেবে।

সপ্তমত, বাইপোর থেকে ম্যাঙ্গালোর পর্যন্ত লাক্ষাদ্বীপের সুসজ্জিত মূল-ভূখণ্ডীয় পণ্য পরিবাহী বন্দরটি সমস্ত কিছুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। পাঠকেরা অবশ্যই ভালো করে খেয়াল করুন যে এটি দ্বীপের বন্দর ও পণ্যবহন দপ্তরের একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ নয়, এটি একটি আনুষ্ঠানিক পরামর্শ।

যদিও সবচেয়ে বেশি চিৎকার আসছে মূল ভূখণ্ড থেকে, কারণ এটি সরাসরি মালাবার থেকে লাক্ষাদ্বীপের গোমাংস রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু যা চোখে দেখা যায় তার থেকেও বেশি কিছু আছে:

২০১৩ সালের মার্চ মাসে লাক্ষাদ্বীপ সাগরের একটি যুগ্ম দলের ‌জন্য কয়েক হাজার কোটি মাদকদ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় প্রভাবিত হয়েছিল। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী একটি পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ থেকে নিজের পণ্য সংগ্রহ করে তার তানজানিয়া থেকে গাদারে, আমাদের জলসীমার দিকে আসছিল‌।

বাইপোরে এ জাতীয় নিত্য নতুন উত্তেজনা চলার কারণে পুরাতন চোরা-চালানের পথগুলি ক্রমশ‌ই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে ‘লাক্ষাদ্বীপ বাঁচাও’ অভিযানটি এর কোন কিছুকে স্পর্শ করে না।

এবার ব্যাখ্যান এর মূল বিষয়- “সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণের”- কথা বলতে গিয়ে পাঠকরা জানলে বিস্মিত হবেন যে একজন প্রশাসকের অনুমোদনে গান্ধীজীর একটি মূর্তি অনুমোদিত হয়েছিল। কিন্তু সেটি লাক্ষাদ্বীপের মানুষের মূর্তিপূজা সম্পর্কে স্থানীয় ধারণার কারণে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।

একইভাবে অবস্থিত সুবর্ণজয়ন্তী জাদুঘরে বুদ্ধের মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের ফলে পাওয়া গেছে; এর মুখগুলি বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তির মত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

এটি লাক্ষাদ্বীপের সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রবণতা, যা এখন নতুন উপাখ্যানগুলি দ্বারা পুষ্ট হচ্ছে।

এই‌ জাতীয় অস্বাস্থ্যকর প্রবণতা, অতিরিক্ত বৈধ কৌশলগত এবং উন্নয়নগত সমস্যা এবং অমূলক ভীতির উদ্রেক করা- জাতীয় সুরক্ষা বা প্রদেশ, কারোর জন্য‌ই সুখকর নয়।

প্রতিবাদীরা যত বেশি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হোক, তাদের সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রতার জন্য আসল হুমকি ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাবাদের মধ্যে পার্থক্য করতে জানতে হবে, যদি তাদের ক্ষোভকে একটি সুনির্দিষ্ট তাৎপর্য প্রদান করতে হয়, তো।

অন্যথায়, নিরপেক্ষ পর্যটকরা এটিকে ধোঁয়াটে পর্দা হিসেবেই দেখবেন এবং এর আসল সত্যতা জানতে পারবেন না- তথাপি এটি সেই নির্বাচনী লভ্যাংশ সমেত আদর্শগতভাবে আক্রান্ত বলেই প্রতিপন্ন করবে-এরই আরেকটি সংস্করণ।

অন্তিম কথা: জনমানসে কথা চলছে যে দীর্ঘদিন মুলতুবি থাকার কাজ এখন চলছে। পর্যটন বিভাগে অর্থ বিনিয়োগ করার পূর্বে এটি হল পরিষ্করণের ব্যবস্থা। সম্ভবত, আরব সাগরের এই দ্বীপপুঞ্জটি অবশেষে নিজের ভালোর জন্য নিজের কিছুটা আরবীয়করণ ঘটিয়েছে। এই পদ্ধতিতে বিশেষত কেরালার মূল ভূখণ্ডে অনেক ভাতের বাটি ভেঙে ফেলা হবে আশা করা যায় এবং তাই নতুন গল্প এসেছে “লাক্ষাদ্বীপ বাঁচাও”।

মূল লেখাটি স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত, লিখেছেন বেণুগোপাল নারায়ণন। অনুবাদ করেছেন অঙ্কুশা।