ভারতের সঙ্গে একজোটে রাশিয়া ও জাপান, চীনা আগ্রাসনের মোকাবিলায় চলছে বড় প্রস্তুতি

0
727

চলতি বছরের অক্টোবরের ৬ ও ৭ তারিখে টোকিওতে নির্ধারিত কোয়াড জোট সভার তীব্র বিরোধিতা করেছে চীন।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

স্বরাজ্যম্যাগে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারত ও চীনের মধ্যে বিগত কয়েক মাস ধরে সীমান্ত নিয়ে জোররকম দ্বন্দ্ব চলছে। ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সামরিকভাবে প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় চিনকে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি। আমেরিকার পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গেও জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে ভারত।

সংশ্লিষ্ট সম্মেলনটি ৬ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। জয়শঙ্কর জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিতসু মোতেগির সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও করবেন বলে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে দুই মন্ত্রী পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক বিষয়ে আলোচনা করবেন।

তবে, ‘চতুর্ভুজ সুরক্ষা সংলাপে জড়িত দেশগুলির মধ্যে আসন্ন আলোচনার সিদ্ধান্ত চীন ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।’ চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জোর দিয়ে বলেছেন যে, দেশগুলির একচেটিয়াভাবে চীনের বিরোধিতা করছে।

পশ্চিমা গণমাধ্যমের এক সাংবাদিকের জবাবে ওয়েনবিন বলেছেন, “বহুপাক্ষিক ও বহুমুখী সহযোগিতা সবার‌ জন্য‌ই উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্বচ্ছ হওয়া উচিত। কারও একচেটিয়া আধিপত্য করা উচিত নয়। ”

তিনি আরও যোগ করেছেন, “তৃতীয় পক্ষকে টার্গেট করে বা তৃতীয় পক্ষের স্বার্থের ক্ষতি করার পরিবর্তে আঞ্চলিক দেশগুলির পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে চীন আশা করেছিল যে এই চারটি দেশ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে
ত্বরান্বিত করবে।

চীনা মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা আশা করছি প্রাসঙ্গিক দেশগুলি আঞ্চলিক স্বার্থের জন্য অগ্রসর হবে এবং নিজেদের মধ্যে টানাপোড়েনের পরিবর্তে আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য আরও বেশি ভাবনাচিন্তা করবে।”

যদিও সূত্রের খবর অনুযায়ী, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতও কোয়াড-এর অংশ, যারা বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য সত্ত্বেও পূর্বদিকে জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চায়।

লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চীনের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব কিছুটা কমলেও পুরোপুরি থামেনি। ভারতের চোখে চোখ রেখে লালফৌজের সেনারা অপেক্ষা করছে কখন চোখের পলক পড়ে। তাই ভারতও সীমান্তে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য একদম প্রস্তুত। প্রচুর পরিমাণে মজুত রয়েছে ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনার জওয়ান। সামরিক এই প্রস্তুতির পাশাপাশি কূটনীতিক ক্ষেত্রেও চিনকে যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। ভারত একদিকে আমেরিকার সঙ্গে মিলে তৈরি করছে কোয়াড অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গেও হাত মিলিয়ে কোনঠাসা করতে চাইছে চিনকে।

দক্ষিণ চীন সাগরের সঙ্গে সঙ্গে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও আধিপত্য দখল করতে চাইছে বেজিং। এদিকে ভারত মনে করে, এই অঞ্চলটি কোনও নির্দিষ্ট দেশের আয়ত্বে থাকতে পারে না। সব দেশের এই জলপথ ব্যবহার করার সমানাধিকার রয়েছে। এই অবস্থা কায়েম রাখার লক্ষ্যেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নয়া জোট গড়ার কথা ভেবেছে নয়াদিল্লি।

রাশিয়ার সঙ্গে এই নয়া জোটের পাশাপাশি, ভারত এই মুহূর্তে ‘কোয়াড’ জোট-এর বিষয়টিকেও আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে বদ্ধপরিকর। ২০০৭ সালে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র উদ্যোগে চিনা আগ্রাসনের মোকাবিলার লক্ষ্যেই ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া-কে নিয়ে গঠিত হয়েছিল চতুর্দেশীয় জোট কোয়াড। সরকারিভাবে এই জোট গঠিত না হলেও সদস্য দেশগুলি একত্রিতভাবে সামরিক মহড়া, কৌশলগত আদান-প্রদান করে থাকে। ভারতে সরাসরি চীনা আগ্রাসনের পর এই জোট আরো বেশিমাত্রায় প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সামরিক ও কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ ছাড়াও চীন দক্ষিণ চীন সাগর এলাকার আরও অনেক দেশের সঙ্গেই আঞ্চলিক বাদানুবাদে জড়িয়ে আছে। পূর্ব চিন সাগরে, সেনকাকু দ্বীপ (যাকে চিন দিয়ায়ু দ্বীপ বলে) নিয়ে টোকিওর সঙ্গে বেজিংয়ের বিবাদ অব্যাহত। আর গত মাসে যখন চিনের নিরাপত্তীরক্ষীদের নৌকা ওই দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন সাগরে ঢুকে পড়েছিল, তখন তা নিয়ে কড়া সুরে জবাব দিয়েছিল জাপান।

চীন সম্পর্কে সমানভাবে চিন্তিত ভারত ও জাপান। ভারত ও জাপান যে দৃঢ় কৌশলগত সম্পর্কে আবদ্ধ তা বুঝেছে চীনও। এই অবস্থায় ভারত-জাপান যৌথ মহড়া চিনের জন্যে এক বড় বার্তা। এমনিতেই কোয়াড নিয়ে আলোচনায় এগিয়েছে ভারত, জাপান, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া। তাছাড়া মালাক্কা প্রণালীতে ভারতের আধিপত্য বিস্তার চীনের জন্যে যথেষ্ট মাথা ব্যথার কারণ।