আর কত তথ্য চাই হে আনন্দবাজারীয় প্রোপাগাণ্ডাবিদ?

0
1254

আজ আনন্দবাজার বলেছে,

অভিযোগ, হনুমানগড়ির পাশের ওই জমি ‘রামলালার জন্মস্থান’ বলে চিহ্নিত ছিল। সেখানে থাকা রামলালার মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (এএসআই) রিপোর্টে মসজিদের তলায় দশম শতকে অ-ইসলামিক স্থাপত্যের কথা বলা হলেও মন্দিরের অস্তিত্ব স্পষ্ট ভাবে স্বীকার করা হয়নি। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, মুঘল আমলে একাধিক বার ওই জমি উদ্ধারের চেষ্টা হয়েছিল। যদিও সেই দাবির সমর্থনে ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণও মেলেনি।

আনন্দবাজার সত্য জানাতে চায় নি। তাই নীচের তথ্যপ্রমাণগুলি চেপে গেছে যে ঐ জমি রামলালার জন্মস্থান বলে জানা ছিল। এবং মন্দির উদ্ধারের প্রচেষ্টার কথাও ঐতিহাসিক সত্য। বঙ্গদেশ পত্রিকার প্রকাশিত পুস্তিকায় প্রতীক্ষা ও অর্ণবের লেখা থেকে জানা যায়। নীচে পেশ করা হল।

📌মসজিদের গাত্রে খোদিত বিবরণ থেকেও জানা যায়, বাবরের ইচ্ছানুসারে সেনাপতি মীর বাকী ১৫২৮-২৯ খ্রীষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন। ব্রিটিশ আমলে নথিভুক্ত হওয়া যত সরকারি দস্তাবেজ আছে যা U.P. District Gazetteers, Faizabad নামে পরিচিত; কংগ্রেস রাজ্য সরকারের দ্বারা পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল। ১৯৬০ সালে, পুনর্মুদ্রিত এই সকল দস্তাবেজগুলি থেকে জানা যায় যে, ৯৩৫ হিজরি সনে (১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে) জহির-উদ-দিন মহম্মদ বাবরের সেনাপতি মীর বাকী সেখানে রাম মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ গড়েছিলেন।

📌তবে, বাবরের জীবনীগ্রন্থ ‘বাবরনামা’য় মসজিদ বা মন্দির ধ্বংসের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। তুলসীদাসের ‘রামচরিতমানস'(১৫৭৪) বা আবুল ফজল ইবনে মুবারকের ‘আইন এ আকবরী’ (১৫৯৮)-তেও মসজিদের উল্লেখ নেই।

📌১৬১১ খ্রীষ্টাব্দে, একজন ইংরেজ পর্যটক উইলিয়াম ফিঞ্চ অযোধ্যা ভ্রমণে আসেন এবং তার বর্ণনায় ‘রামচন্দ্রের প্রাসাদ ও মহলের অবশিষ্টাংশ’ দেখেছেন, এই মর্মে নথিভুক্ত করেন। তিনি প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ স্থলে পাণ্ডাদের তীর্থযাত্রীদের বিবরণ লিখতে দেখেছিলেন। তাঁর বিবরণীতে মসজিদের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় নি।

📌১৬৩৪ খ্রীষ্টাব্দে, থমাস হারবার্ট ‘পুরনো একটি রামচন্দ্রের প্রাসাদ’ এর বর্ণনা দেন। যেখানে তিনি এই স্থানকে একটি ‘বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য’ প্রাচীন মনুমেণ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনিও লেখেন যে, তিনি ওই স্থানে ব্রাহ্মণদের তীর্থযাত্রীদের বিবরণ নথিভুক্ত করতে দেখেছিলেন।

📌’অযোধ্যা রিভিজিটেড’ এর লেখক ও গবেষক কিশোর কুনালের বক্তব্য, ঔরঙ্গজেবের গভর্ণর ফিদাই খান ১৬৬০ সাল নাগাদ মসজিদটি নির্মাণ করেন। ঔরঙ্গজেব অযোধ্যায় অনেকগুলি মন্দির ধ্বংস করেছিলেন।

📌১৬৭২ খ্রীষ্টাব্দ,নাগাদ এই স্থানে মন্দির ভেঙে মসজিদের উপস্থিতির অনুমান করা যায়। কারণ, লাল দাস রচিত ‘আওয়াধ বিলাসা’ (১৬৭২)-য়, তিনি জন্মস্থানের উল্লেখ করলেও সেই স্থানে কোনপ্রকার মন্দির বা প্রাসাদের উল্লেখ করেন নি।

📌১৭১৭ খ্রীষ্টাব্দে, মুঘল রাজপুত সোয়াই জয়সিংহ এই স্থানের পরিবেষ্টক ভূমি ক্রয় করেন এবং তাঁর নথিপত্রে মসজিদের উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে। জয়সিংহের নথিপত্র রাজস্থানের জয়পুরের সিটি প্যালেস মিউজিয়ামের কাপাড় দোয়ার সংগ্রহে জমা আছে। সাথে বাবরি মসজিদ স্থলের একটি স্কেচও আছে। এই স্কেচে একটি মুক্ত প্রাঙ্গণ, যেখানে মন্দিরের তিনটি শিখরের স্থাপত্য দেখা যায়, যেগুলি বর্তমানের বাবরির তিনটি গম্বুজের অনুরূপ। এই প্রাঙ্গণটিকে রামের জন্মস্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং একটি ‘রাম চবুতরা’ হিসাবে দেখানো যায়। স্থাপত্যের কেন্দ্রীয় অংশটিকে ‘চাঠি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যা জন্মস্থলের সাথে যুক্ত।

📌খ্রীষ্টান মিশনারী জোসেফ স্টিফেনথ্যালার যিনি ১৭৬৬-১৭৭১ এর মধ্যে ভ্রমণে আসেন, তিনি লিখেছেন, হয় ঔরঙ্গজেব নতুবা বাবর, রামকোট দুর্গ এবং ঘর যেখানে হিন্দুদের মতে, রামের জন্ম হয়েছিল, তা ধ্বংস করেন। তিনি আরো বলছেন, সেই স্থানে মসজিদ নির্মিত হলেও হিন্দুরা একটি কর্দমাক্ত স্থান, যেটিকে রামের জন্মস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেখানে প্রত্যহ পূজা-পাঠ করতেন।

বস্তুত, মুঘল সম্রাটরা জনরোষের ভয়ে মসজিদটি সম্পূর্ণ নির্মাণ করতে পারেন নি। ওজু করার স্থান এবং মিনারেট স্থানের নির্মাণকার্য অসমাপ্ত থেকে যায়।

হিন্দুদের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত করার জন্যে হানাদার বাবরের নাতি মুঘল সম্রাট আকবর ওই বিতর্কিত স্থানের ‘সীতা কি রসুই’ এবং ‘রামলালা বিরাজমানে’ হিন্দুদের পুজোর অনুমতি দেয়।

📌১৭৮৮ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসি ইতিহাসবিদ জোসেফ বারনউলির বই ‘ডেসক্রিপটো ইণ্ডিকা’ প্রকাশিত হয়। তার মতে, ঔরঙ্গজেব অযোধ্যার রামকোট নামক প্রাসাদ এবং সেই ঘরটি, যা রামের জন্মস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল, বিধ্বস্ত করে সেখানে বাবরি মসজিদ তৈরি করিয়েছিল। মন্দির ধ্বংস করার পর পাওয়া সামগ্রী দিয়েই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল, যার তিনটি গম্বুজ আজও দৃশ্যমান।

📌১৮১০ খ্রীষ্টাব্দে, ফ্রান্সিস বুকানন এই স্থান পরিদর্শন করেন এবং জানান, যে স্থাপত্য ধ্বংস করা হয়েছে তা কোন সাধারণ বাড়ি নয়, রামের মন্দির ছিল। অধিকাংশ সূত্রের মতে, এই মন্দির ধ্বংস করার পর উক্ত মসজিদটি নির্মিত হয়।

📌১৮৩৮ খ্রীষ্টাব্দে, ব্রিটিশ সমীক্ষক মণ্টেগোমারি মার্টিন লিখেছেন, উক্ত মসজিদের গম্বুজগুলি মন্দির থেকে নেওয়া হয়েছে। ঐতিহাসিকদের একাংশ যেমন বামপন্থী ঐতিহাসিক আর এস শর্মা, যা মানতে অস্বীকার করেন এবং বিবৃতি দিয়ে জানান যে, মন্দির ধ্বংসের দাবী নাকি অষ্টাদশ শতাব্দীর পরে উত্থাপিত হয়েছে! যাই হোক, ওনার যুক্তিটি, প্রাপ্ত তথ্যসমুহের নিরিখে একান্ত অকেজোই বলা চলে।

📌১৮৫৮ তে ব্রিটিশ আমলে অযোধ্যার কোতয়ালীর দস্তাবেজে, ইন্সপেক্টর শীতলা প্রসাদ দুবে, ওই স্থানকে ‘মসজিদ – এ – জন্মস্থান’ বলে উল্লেখ করেন। ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর বাবরি মসজিদের মুয়াজ্জিন মুহম্মদ আসগরও একটি প্রার্থনাপত্রে বাবরি মসজিদকে ‘মসজিদ –এ – জন্মস্থান’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৪০ পর্যন্ত এই শব্দবন্ধটিই ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে কায়েমী স্বার্থের কারণে শব্দটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে শুধু বাবরি মসজিদ শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়।

📌 ব্রিটিশ শল্য চিকিৎসক এডওয়ার্ড ব্যালফোর ১৮৫৮ সালে প্রকাশিত Encyclopedia of India and of Eastem and Southern Asia লিখেছেন যে, “অযোধ্যায় অন্তত তিনটি মসজিদ আছে, যেগুলি তিন হিন্দু মন্দির ভেঙ্গে তার ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে রাম জন্মস্থান সবচেয়ে বিখ্যাত, কিংবদন্তী অনুসারে সেখানে রামচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল।”

📌ব্রিটিশ সার্ভেয়ার P. Carnegie ১৮৭০ সালে প্রকাশিত A Historical Sketch of Tehsil Fyzabad with old capitals Ayodhya and Faizabad, Lucknow গ্রন্থে লিখেছেন যে, ‘রাম জন্মভূমির অত্যন্ত সুন্দর একটি মন্দির ভেঙ্গে বাবর সেখানে মসজিদ গড়েছিলেন। সেই মন্দিরের অনেক কিছুই মসজিদের ভেতরে এখনও অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে।’

📌 ভাই মণি সিংহ ১৭৩০ সালে ‘পথি জনম সাক্ষী’ শীর্ষক রচনায় লিখেছেন নানক পায়ে হেঁটে অযোধ্যায় আসেন এবং শিষ্য মর্দানাকে বলেন – “হে মর্দানা! এহ আজুধিয়া নগরী শ্রী রামচন্দ্র জি কী হ্যায়, সো চল, ইসকা দর্শন করিয়ে!” আবার শিখ সাহিত্যিক ভাই বালা ‘ওয়ালা জনম সাক্ষী’ উল্লেখ করেছেন, গুরু নানক নাকি তার শিষ্যকে বলছেন, “ভাই বালা! ইহ নগরী শ্রী রামচন্দ্র জি কী হ্যায়, এথে শ্রী রামচন্দ্র জি নে অবতার ধার কে চরিত্র কিতে হায়, সো দেখ কে হি চলিয়ে”। এই রচনা ১৮৮৩ সালে পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল।

📌 অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ঔরঙ্গজেবের পৌত্র প্রথম বাহাদুর শাহের কন্যা দ্বারা রচিত,’সাহিফা ই চিহিল নাসিহা বাহাদুর শাহী’ বইটি থেকে জানা যায়, মথুরা, অযোধ্যা, বেনারসের হিন্দু স্থাপত্যকীর্তি এবং উপাসনাস্থল ভেঙে বহু মসজিদ নির্মিত হয়। হিন্দুরা অযোধ্যার এই ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলিকে ‘সীতা রসুই’, ‘হনুমানের গৃহ’ বলে অভিহিত করতেন।

আর কত তথ্য চাই হে আনন্দবাজারীয় প্রোপাগাণ্ডাবিদ?