কাশ্মীরে হিন্দু গণহত্যার ইতিহাস

0
1343

📌১৯৫০ সাল। রচিত হলো সংবিধান।

অনেক গুণীজনের মতামত অগ্রাহ্য করেই অকারণে কাশ্মীরের জন্য প্রযুক্ত হলো ৩৭০ ধারার বিশেষ মর্যাদা। কাশ্মীরের পতাকা পৃথক, সংবিধান পৃথক, কাশ্মীরের প্রধানও পৃথক রইল।

বঙ্গসন্তান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রতিবাদ করায় শুধু যুক্ত হলো এই ধারা অস্থায়ী, অবিলম্বে তুলে দেওয়া হবে। বাস্তবিক পক্ষে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হলো।

📌২৬ শে জুলাই, ১৯৫১ কুখ্যাত জুলাই চুক্তির পর লোকসভা অধিবেশন,

শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীই প্রশ্ন তুলেছিলেন,

“পাক অধিকৃত কাশ্মীর কি আমরা ফিরে পাবাে? জাতিসংঘের চেষ্টায় আমরা তা ফিরে পাবো না। পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলাপ আলােচনায় আমরা তা ফিরে পাবােনা। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, বল প্রয়ােগ না করলে আমরা এই অঞ্চল হারাব। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলপ্রয়ােগ করতে অনিচ্ছুক। এই অবস্থায় বাস্তবের সম্মুখীন হয়ে আমাদের প্রশ্ন করতে হয় আমরা কি ওই অঞ্চল হারাতে প্রস্তুত?

আমি কি প্রশ্ন করতে পারি যে শেখ আবদুল্লা ভারতীয় সংবিধানের অংশীদার কিনা? তিনি ভারতের গণ-পরিষদের সদস্য ছিলেন, অথচ তিনি তাঁর নিজের রাজ্যের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা তুলছেন। 497 টি রাজ্য (পূর্বতন প্রভিন্স ও প্রিন্সলি স্টেট) নিয়ে গঠিত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এই সংবিধান যদি কল্যাণকর হয়, তা হলে কাশ্মীরের পক্ষে তা কল্যাণকর হবেনা কেন?”

এই প্রশ্ন তোলার মাশুল নিজের জীবনের বিনিময়ে চুকিয়েছিলেন তিনি। খুন হয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। কাশ্মীরেই…

******************

📌কাশ্মীরের পতাকা ছিল প্রায় মুসলিম লীগের মতোই। সংবিধানও সম্পূর্ণ আলাদা।

📌এখানেই শেষ হলো না। অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও কাশ্মীরে যেতে গেলে পাশপোর্টের মত পারমিট প্রথা চালু হল। যে কোনো কাশ্মীরী ভারতের যে কোনো রাজ্যে বিনা বাধায় জমি কিনতে পারবেন। কাশ্মীরে কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতিও এক ইঞ্চি জমি কেনার অধিকারী নন।

📌সেখানে উৎকৃষ্ট বাসমতী চাল দিতে হয় আটআনা কেজি, মোটা দানা চিনি একটাকা। এম-এ পর্য্যন্ত বিনাব্যয়ে শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক পর্য্যন্ত বিনামূল্যে সরবরাহ। সারা ভারতকে বঞ্চিত করে হাজার হাজর কোটি টাকা ভর্তুকি দেবার দায়িত্ব নিল কেন্দ্র।

📌কাশ্মীরে দলিত বাল্মিকী সম্প্রদায়,পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু দলিত, ডোগরা সম্প্রদায়, এদের কোন‌ও নাগরিক অধিকার ছিলো না৷ তারা যতই শিক্ষিত হোন না কেন, সুইপারের চাকরী ব্যাতীত অন্য কোন চাকরী জুটতো না স্রেফ, কাশ্মীরের স্পেশাল স্টেটাস ৩৭০ এর কারণে৷ এজাজ বুন্ড, একলব্য মিনা, রাধিকা গিলের মত তথাকথিত নিম্নবর্ণের শিক্ষিত মেধাবী যুবক যুবতীরা বঞ্চিত থেকে গেলেন গত সাত দশক৷ কথায় কথায় দলিতদের মানবাধিকারের ঢ্যাঁড়া পেটানো বামপন্থীরা এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শক থাকাই শ্রেয় মনে করলেন৷ কারণ তারা,’বুক পকেটে দিনার পুরে, গান ধরেছেন কন্ঠ ভরে’৷

জঙ্গী বুরহানকে সারা ভারত চেনে৷ এই দলিত যুবক যুবতীদের কজন চেনে?
কোথায় বামসেফ কোথায় দলিত মসিহা চন্দ্রশেখর আজাদ?

*******************

নেকড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে নেকড়ের হাতেই ক্ষমতা গেলে কি হয় তা সবাই জানে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না।

এর পরের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার দিকে নজর দিই আসুন:-

📌September 14, 1989

বিখ্যাত আইনজ্ঞ BJP national executive member টিকালাল টপলুর হত্যা দিয়েই জম্মু কাশ্মীরের হিন্দু গণহত্যার সূচনা হয়। খুন করে আরব্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠন JKLF

খুব কম দিনের মধ্যেই খুন করা হয় শ্রীনগর হাই কোর্টের জাস্টিস এন কে গন্জুকে।

📌শৌর্য মেডিকেল কলেজের এক হিন্দু নার্সকে গণধর্ষণ করা হয় এবং পিটিয়ে খুন করা হয়।

আর এক মহিলাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়। এবং কাঠ চেরা মেশিনে শরীরকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয়।

📌৮০ বছর বয়স্ক কবি পন্ডিত সর্বানন্দ প্রেমী ও তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে জঙ্গীরা। পরে প্রচন্ড অত্যাচার করে চোখ উপড়ে নিয়ে ফাঁসিকাঠে জুলিয়ে দেওয়া হয় তাদের।

📌 এই এক মাসেই প্রায় ৩০০ জন হিন্দু নরনারীকে খুন করে আরব্য নেকড়েরা।

📌 ‘আফতাব’ নামে একটি স্থানীয় উর্দু সংবাদপত্র সরাসরি জেহাদ ঘোষণা করে এবং হিন্দুদের কাশ্মীর ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়।

আরেকটি পত্রিকা ‘আল সাফা’ একই বক্তব্য রাখে।

📌অবিচ্ছিন্নভাবে কাশ্মীরি হিন্দু হত্যার খবর প্রকাশিত হতে শুরু হয়; আরব্য ধর্মস্থল থেকে উত্তেজক বক্তব্য প্রচারিত হতে শুরু করে।

📌নিয়মিতভাবে পণ্ডিতদের ঘরের দরজাগুলিতে নোটিশ আটকানো হয়, “দখলদাতাদের 24 ঘন্টার মধ্যে কাশ্মীর ছেড়ে চলে যেতে হবে নতুবা মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে”।

📌January 19, 1990

দিনব্যাপী জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট এবং হিযবুল মুজাহিদিন সন্ত্রাসীরা আরব্য ধর্মস্থল এবং গণপ্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে লোকদের কারফিউ অস্বীকার করার জন্য এবং রাস্তায় নামতে উৎসাহিত করে। মুখোশধারীরা কালাশনিকভ উঁচিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে শুরু করে। পণ্ডিতদের হুমকি দেওয়া শুরু হয়।

📌সন্ধ্যার পর থেকেই কয়েকটি স্লোগান প্রতিটি আরব্য ধর্মস্থান থেকে প্রচারিত হতে শুরু করে।

১) কাশ্মীর মে অগর রেহেনা হ্যায় তো, আল্লাহু আকবর কেহনা হ্যায়। (যদি তোমরা কাশ্মীরে থাকতে চাও তবে আল্লাহু আকবর বলতেই হবে।)

২) ইহা ক্যা চলেগা, নিজাম-এ-মুস্তফা (আমরা এখানে শরিয়া শাসনই চাই)

৩) আসি গচ্ছি পাকিস্তান, বাতাও রয়াল তে বতানেভ সান (We want Pak!stan along with H!ndu women but without their men)

৪)রালিভ, গালিভ ইয়া জালিভ (Convert, D!e, or leave Kashm!r)

📌১৯ শে জানুয়ারী, ১৯৯০-এর রাতটি সম্ভবত রাষ্ট্রের সবচেয়ে লজ্জাজনক রাত।

হাজার হাজার কাশ্মীরি পণ্ডিত তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে উদ্বাস্তুর জীবন বেছে নিতে বাধ্য হলেন।

একই সূত্রে মিলে গেল কাশ্মীর থেকে নোয়াখালী। হিন্দু গণহত্যার আরেকটি রক্তাক্ত পর্ব যুক্ত হলো ইতিহাসে।

📌📌৫-ই আগস্ট, ২০১৯। প্রবল বিতর্কের মধ্যেই ৩৭০ ‘উঠিয়ে’ দিয়েছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার। লক্ষাধিক কাশ্মীরি পণ্ডিত পেয়েছিল ভিটেমাটি ছুঁয়ে দেখার অধিকার। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অবশ্যই নিজেদের রক্তাক্ত ইতিহাস আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ আমরা, বাঙ্গালী হিন্দুরাও, একইভাবে ধর্মের কারণেই ভিটে হারিয়েছি।

সূত্র: https://m.rediff.com/news/2005/jan/19kanch.htm