বামপন্থীরাই সামন্ততন্ত্রের শেষ রক্ষক, নতুন কৃষিবিল হাতে আঙ্গুল দিয়ে দেখালো

0
3097

 

অদ্বৈত সেনগুপ্ত

 

কেন্দ্রীয় সরকার কিছুদিন আগে যে তিনটি কৃষি আইন পাস্ করেছে তা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক চলছে। সরকারের এই পদক্ষেপ যুগান্তকারী। এই দৃঢ় এবং বলিষ্ঠ পদক্ষেপের যুগান্তকারী সম্ভাবনাকে উদ্ঘাটন করতে হলে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকে এই কৃষি আইনগুলিকে বিশ্লেষণ করলে হবে না। বিষয়ের গভীরে প্রবে করে এই আইনি উদ্যোগের সামাজিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্যকে অনুধাবন করতে হবে।

স্বাধীন ভারতে কৃষি রাজনীতির ইতিহাস সুদীর্ঘ। ভারতে কৃষি রাজনীতির একটি বৈশিষ্ট্য হলো এই যে তা মূলত ধনী কৃষকদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং যার ফলে ক্ষুদ্র, গরিব চাষীর স্বার্থ অবহেলিত হয়েছে। বর্তমানে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছে তা মূলত সীমাবদ্ধ রয়েছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে, যেখানে ভারপ্তের সবচেয়ে ধনী ও সমৃদ্ধশালী কৃষকদের বাস। উত্তর ভারতের রাজনীতিতে এই ধনী কৃষক শ্রেণীর প্রভাব সর্বজনবিদিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর ভারতের কৃষি আন্দোলনের মূল চরিত্র একটু সংক্ষেপে আলোচনা করা প্রয়োজন।

 

কৃষি রাজনীতির চরিত্র

স্বাধীনতার পরবর্তী দশকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলি নিজেদের মতো করে ভূমিসংস্কার আইন প্রবর্তন করে। ভূমিসংস্কারের সাফল্য বেশিরভাগ রাজ্যেই অত্যন্ত সীমিত ছিল। তবে জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি সাধন ঘটে। জমিদারি বিলোপের ফলে জমিদারদের জমিতে যারা লিজ নিয়ে চাষ করতো তাদের অনেকেই জমির স্বত্বাধিকার লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে উত্তরপ্রদেশে দুধরণের জমিমালিকানা সৃষ্টি করা হয়- ভূমিদার আর শিড়দার। পরবর্তীকালে সবুজ বিপ্লবের ফলে এই শ্রেণী দারুনভাবে উপকৃত হয়, কারণ সবুজ বিপ্লবের ফলে চালু হওয়া নতুন বীজ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করবার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ তাদের ছিল। মার্কিন বিশেষজ্ঞ লয়েড আই রুডল্ফ এবং সুসান হোবার রুডল্ফ এই উদীয়মান কৃষক শ্রেণীকে ‘বুলক ক্যাপিটালিস্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ তারা খুব ধনী না হলেও সবুজ বিপ্লবের প্রযুক্তি ও একজোড়া বলদ চাষের কাজে ব্যবহার করার মতো অর্থনৈতিক প্রতিপত্তির অধিকারী ছিলেন। সবুজ বিপ্লবের পর খাদ্যশষ্যের বিপুল উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে তারা ধনী চাষীতে পরিণত হন।

অল্পসময়ের মধ্যেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানা (যেখানে সবুজ বিপ্লব সর্বাধিক সাফল্য লাভ করে মূলত গম চাষের ক্ষেত্রে) দেশের শস্য ভাণ্ডারে পরিণত হয়। ১৯৬০এর দশকের শেষভাগে ও ১৯৭০এর দশকে উত্তর ভারতে ধনী চাষীদের উত্থান ভারতের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। সমৃদ্ধ ভূমিসম্পন্ন কৃষকদের প্রতিনিধি হিসেবে চরণ সিং ও দেবী লালের মতো রাজনীতিবিদদের আবির্ভাব ঘটে। চরণ সিং ১৯৭০ এর দশকে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম মুখ্য চরিত্র হয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি কংগ্রেস পরিত্যাগ করে ভারতীয় ক্রান্তি দল গঠন করেন যা পরবর্তীকালে ভারতীয় লোক দলে পরিণত হয়। চরণ সিং ১৯৬৭ সালে ও ১৯৭০ সালে দুবার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। জনতা সরকারে (১৯৭৭-১৯৮০) তিনি ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং ২৩ দিনের জন্য জনতা সরকারের প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। এখন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে উত্তর ভারতে যে প্রতিবাদ চলছে তার নেতৃত্বের মুখ্যভাগে রয়েছে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (বিকেইউ)। এই বিকেইউ- এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চরণ সিং। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই সংগঠন তৈরি হয়েছিল। সবুজ বিপ্লবের পরে যখন কৃষি উৎপাদনের ব্যাপক বৃদ্ধি হয় তখন উদীয়মান ধনী চাষী শ্রেণী স্বভাবতই বাজারমুখী ও মূল্য সচেতন হয় ওঠে। সরকারের দ্বারা শস্য ক্রয়ের পরিমাণ ও দাম বৃদ্ধি কৃষক সংগঠনগুলোর মূল লক্ষ্য ও দাবি হয়ে ওঠে। তবে এর ফলে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয় এবং উত্তর ভারতের কৃষি আন্দোলন মূলত ধনী ও মধ্যবিত্ত কৃষকদের আন্দোলনেই পর্যবসিত হয়।

সকল কৃষক কৃষিকাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করলেও তাদের স্বার্থ এক নয়। আসলে কৃষক কোনো একক শ্রেণী নয়। আর কৃষক মাত্রেই যে সে দরিদ্র এবং শোষিত হবে এমনটাও নয়। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক হলেন তারা যাদের জমির পরিমান খুবই স্বল্প (২ হেক্টর এর কম)। ভারতের ৮৬ শতাংশ কৃষক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী। তাদের জমির আয়তন কম বলে তাদের উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণও স্বল্প। তাই তাদের নিজেদের জমি থেকে অর্জিত আয় পর্যাপ্ত হয় না। সেজন্য তাদের বেশিরভাগ সময়ই বৃহৎ , ধনী চাষীদের জমিতে মজুরির বিনিময়ে কাজ করতে হয়। সুতরাং ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন চাষীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পর্যাপ্ত মজুরি। কিন্তু কৃষক আন্দোলন ধনী চাষীদের স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হবার ফলে পর্যাপ্ত মজুরির দাবি প্রাধান্য পায়নি।

উত্তরভারতের কৃষি আন্দোলনের জাতি চরিত্র নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। চরণ সিং একটি জাতিজোট গড়ে তুলেছিলেন যা আজগার (আ- আহির/ যাদব, জ- জাঠ, গ- গুজ্জার, র – রাজপুত) নামে পরিচিত। উত্তরপ্রদেশে ভূমিসমপন্ন কৃষকশ্রেণী এই চারটি জাতিভুক্ত ছিল। সমাজবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফ জাফ্রেলোটের মতে যেহেতু জাঠ সম্প্রদায়ের ( চরণ সিং নিজে জাঠ ছিলেন) জনসংখ্যা উত্তরপ্রদেশের মোট জনসংখ্যার ১.২ শতাংশ মাত্র, তাই কৃষক স্বার্থ রক্ষার নামে চাষাবাদে নিযুক্ত জাতিগুলিকে একজোট করে আসলে জাঠদের রাজনৈতিক আধিপত্য বৃদ্ধি করাই ছিল চরণ সিং-এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

শুধু উত্তরভারতে নয় প্রাক্তন বামপন্থী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও কৃষক আন্দোলনের নামে ধনী ও মধ্যবিত্ত চাষীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা মুখে ক্ষুদ্র , প্রান্তিক এবং ভূমিহীন চাষীদের কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে ধনী ও মধ্যবিত্ত চাষীদের স্বার্থ রক্ষাতেই সচেষ্ট ছিলেন। অনেক সিপিএম নেতা পার্টির রাজনৈতিক পরিকল্পনায় ধনী ও মধ্যে চাষীদের গুরুত্ব প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। বামপন্থী নেতা হরেকৃষ্ণ কোনার ১৯৬৯ সালে অধ্যাপকদের একটি সভাতে বলেছিলেন –

‘As the combination of monopoly capital and feudalism aided by imperialism is a formidable force, the number of enemies must be kept to the minimum as far as practicable. So the middle peasants must be made a close ally, otherwise our strength will sag.’

একদা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হরকিশন সিং সুরজিৎ ১৯৮২ সালে কিষান সভার ২৪তম সম্মেলনে বলেন- ‘ Without raising the demands of the peasantry as a whole, including the rich and the middle peasants, and without merging the different currents into one, we can neither advance towards the agrarian revolution nor will be able to raise movement to the level of land occupation’.

এই হরকিশন সিং সুরজিৎই আবার The CPI(M) Programme: Updated in Tune with Changing Times এ লিখেছেন-

‘‘the poor peasants are the most trustworthy ally of the working class in the people’s democratic revolution while the middle peasants too have an important role to play in this revolution. Then there remains the strata of rich peasants who, because of their position in the system of production, are inclined to gravitate towards the class of landlords. Yet, to write off the rich peasants would be a mistake and against the interests of the revolution. Our Party, the CPI(M), has thoroughly debated this question and come to the correct conclusion that the rich peasants, though they remain a vacillating section, can be won over to the side of the working class at certain junctures.’

১৯৮২ সালে সিপিএম দ্বিতীয় বার পশ্চিবঙ্গে নির্বাচনে জয় লাভ করবার পর সিপিএমের কৃষক সংগঠন কৃষক সভা খোলাখুলিভাবে তাদের জাতীয় সম্মেলনে স্বীকার করে নেয় যে এই জয় সম্ভবপর হয়েছে প্রভাবশালী মধ্য চাষীগোষ্ঠীর সমর্থন পাওয়ার ফলে।

গ্রামীণস্তরে পার্টি ও কৃষক সভার নেতৃত্ব যে মূলত ধনী ও মধ্য কৃষকদের হাতে ছিল তা একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে। এর ফলে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষকদের স্বার্থ অবহেলিত হয়েছে। টেনেন্সি বা ভাড়া ভিত্তিক চাষের অবলুপ্তি বামপন্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। ১৯৭৩ সালে সিপিএম পার্টির Resolution on Certain Agrarian Issues- এ ‘land to tiller’ বা জমির উপর ভাড়াটিয়া চাষীর (যারা অন্যদের জমিতে মেয়াদভিত্তিতে চাষ করেন যেমন বর্গাদার ) স্থায়ী মালিকানার কথা বলা হয়- ‘Right of the tenant to the ownership of the land he is cultivating is to be guaranteed except to those who are lease-holders from small owners’. কিন্তু সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসবার পর অপারেশন বর্গার মাধ্যমে শুধুমাত্র বর্গাদারদের জমিতে স্থায়ী চাষের অধিকারকে সুরক্ষিত করেছিল। বর্গাদারদের জমির মালিকানা প্রদান করা হয়নি । এর কারণ ছিল রাজনৈতিক। নির্বাচন বৈতরণী পার হওয়ার জন্য পার্টির প্রভাবশালী ধনী ও মধ্যকৃষকদের দাক্ষিণ্য প্রয়োজন ছিল। বিভিন্ন গবেষণাপত্রে এই বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। বর্গাদারদের জমির মালিকানা দিতে হলে অধিক পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হতো এবং তার জন্য ল্যান্ড সিলিং বা ভূমির উচ্চ মাত্রা কম করতে হতো । কিন্তু ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরে বামপন্থী সরকার পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকার দ্বারা ধার্য ল্যান্ড সিলিং কম করেনি। কারণ তা করলে ধনী ও মধ্য কৃষকদের জমিতে টান পড়তো।

একইরকম ভাবে ধনী ও মধ্যকৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকরা চরম অবহেলার স্বীকার হয়েছে। ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকরা মজুরির বিনিময়ে চাষ করতো ধনী ও মধ্যকৃষকদের। অনেকসময়ই তাদের মজুরি আইনস্বীকৃত সর্বনিম্ন মজুরির চেয়ে কম ছিল।কিন্তু এই বিষয়ে যথেষ্ট দৃষ্টিপাত করা হয়নি। ১৯৮৬ সালে কিষাণসভার General Secretary’s Report and Statement of Policy তে বলা হয়- ‘ It may be necessary to settle for a wage, which is lower than the basic demand to win over the rich and middle peasants’। এমনকি বারংবার দাবি জানানো সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে কৃষিশ্রমিকদের জন্য কোনো পৃথক সংগঠন কৃষকসভা গড়ে তোলেনি।

অন্যদিকে ল্যান্ড সিলিং উচ্চ থাকার ফলে এর ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। যেসমস্ত ভূমিহীন পরিবার জমি বন্টনের ফলে উপ্যকৃত হয় তাদের জমির পরিমান ছিল যৎসামান্য। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯০ সাল পর্যন্ত্য ৩.৬৪ লক্ষ হেক্টর জমি ১৮.৯১ লক্ষ পরিবারের মধ্যে বিলি করা হয় । পরিবারপ্রতি বন্টিত জমির গড় পরিমান ছিল 0.১৯২ হেক্টর। জমির পরিমান কম হবার ফলে জমি থেকে কৃষকদের প্রাপ্ত উপার্জন পর্যাপ্ত ছিল না। তার ফলে কৃষিকাজ অনেক কৃষক পরিবারের পক্ষে ধীরে ধীরে মুনাফাহীন হয়ে পরে। অন্যদিকে উপার্জন অপ্রতুল হওয়ার ফলে কৃষকেরা ক্রমাগত ঋণ ও বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জামের জন্য পঞ্চায়েত ও পার্টির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরে। এই নির্ভরশীলতার উপর ভিত্তি করে গ্রামবাংলায় একধরণের patron –client politics বা পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রিতের রাজনীতির আবির্ভাব ঘটে। প্রণব বর্ধন ও দিলীপ মুখার্জী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় একটি সমীক্ষার মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছেন যে বামপন্থীদের নির্বাচনী সাফল্যের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল স্বল্পমেয়াদি ক্ষুদ্র সাহায্যের জন্য গ্রামীণ জনগণের পার্টির উপর নির্ভরশীলতা, যা পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রিতের মধ্যে এক রাজনৈতিক অন্তর্জাল তৈরি করেছিল । এই পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রিতের রাজনীতির ধারা বাংলা ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আজও অব্যাহত। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কৃষি আইন কৃষকের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে গড়ে ওঠা এই পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রিতের রাজনীতির উপর তীব্র আঘাত হানবে।

 

নতুন কৃষিআইনের প্রভাব

কৃষি বিপণন রাজ্যের বিষয়। তাই আন্তঃরাজ্য কৃষি বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আইন দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। এই আইনগুলি এপিএমসি (Agricultural Marketing Produce Committee) আইন বলে পরিচিত।কয়েকটি রাজ্য ছাড়া সব রাজ্যেই এপিএমসি রয়েছে। প্রত্যেক এপিএমসির অধীনে একটি বাজার বা মান্ডি থাকে যা এপিএমসি মান্ডি বলে পরিচিত। প্রতিটি মান্ডির নিৰ্দিষ্ট অঞ্চল থাকে। একটি অঞ্চলের কৃষক কিছু নিৰ্দিষ্ট ফসল তার অঞ্চলের মান্ডিতেই বিক্রি করতে পারে। মান্ডিতে লাইসেন্সধারক ব্যবসায়ীরাই কেবল কৃষকদের থেকে ফসল কিনতে পার। কেনাবেচা হয় আবার লাইসেন্সপ্রাপ্ত মধ্যস্থতাকারীদের (যাদের উত্তর ভারতে আরহাতিয়াস বলা হয়) মাধ্যমে, যারা কৃষকের পণ্য বিক্রি করবার জন্য নিলাম পরিচালনা করে। কৃষকদের মান্ডিতে লেনদেন করবার জন্য এপিএমসিকে শুল্ক এবং মধ্যস্থতাকারীদের কমিশন দিতে হয় । সেইসঙ্গে মান্ডি পর্যন্ত ফসল বয়ে আনার জন্য পরিবহন খরচাও বহন করতে হয়।

এই ব্যবস্থায় বহু দশক ধরে কৃষকরা নানাভাবে প্রতারিত ও বঞ্চিত হচ্ছেন। এই ব্যবস্থায় কৃষি ব্যবসায়ী, মধ্যস্থতাকারী, বৃহৎ কৃষক এবং এপিএমসি পরিচালনাকারীদের মধ্যে প্রায়শই আঁতাত গড়ে ওঠে। পুরোনো এবং ক্ষমতাশালী ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নতুন ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স অনেকসময়ই প্রত্যাখ্যান করা হয়। তার ফলে স্বল্পসংখ্যক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের সাথেই কৃষকদের বাবারবার লেনদেন করতে হয় এবং এই ব্যবসায়ীদের সাথে মধ্যস্থতাকারীদের যোগসাযোশ থাকে। তার ফলে কৃষকরা তাদের পণ্যের সঠিক মূল্য পায় না।

উত্তর ভারতে বিশেষত পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতে আরহাতিয়াসরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। একজন আরহাতিয়াস ২০ থেকে ২০০ জন পর্যন্ত কৃষকের ফসল বিক্রি করার দায়িত্ব পালন করে। এরা মহাজনী কারবারও চালায় এবং কৃষকদের উচ্চ সুদে ঋণ দেয়। উত্তর ভারতের জটিল কৃষিকাঠামোতে অনেক সময়ই ধনী বৃহৎ কৃষকেরা মহাজন ও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। তারা তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানাভাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের বঞ্চনা করে। সঠিক সময়ে বিক্রিত ফসলের মূল্য না দেওয়া এবং অতিরিক্ত সুদ আদায়ের মতো অভিযোগ বারবার ওঠে আরহাতিয়াসদের বিরুদ্ধে। এমনও অভিযোগ করা হয় যে আরহাতিয়াসরা অনেকসময় কৃষকদের বিক্রয় সংক্রান্ত নথি বা স্লিপ দিতে অস্বীকার করে। বিক্রয় নথির অভাবে কৃষকরা তাদের আয়ের প্রমাণ ব্যাঙ্ককে দিতে পারে না এবং তার ফলে ব্যাঙ্ক তাদের ঋণ দিতে অস্বীকার করে। ব্যাঙ্ক ঋণ এর সুবিধে থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে ক্ষুদ্র কৃষকের আরহাতিয়াস ও ধনী কৃষকের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এর ফলে ক্ষুদ্র কৃষকদের আরহাতিয়াস ও ধনী কৃষকদের ওপর স্থায়ী নির্ভরতা গড়ে ওঠে।

এমত অবস্থায় নতুন কৃষি আইন ক্ষুদ্র চাষীদের মধ্যস্থতাকারী ও কিছু স্বল্প সংখ্যক ক্রেতাদের উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দেবে। তারা এখন এমপিএমসি মান্ডির বাইরে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী যে কোনো ক্রেতাকে যে কোনো মূল্যে কৃষি সামগ্রী বিক্রি করতে পারবে। নতুন আইন এমপিএমসি মান্ডিকে অবলুপ্ত করছে না, শুধু কৃষকদের সামনে মুক্ত বাজারের দরজা খুলে দিচ্ছে। যদি চাষী এমপিএমসি মান্ডিতে বিক্রি করতে চায় তাহলে আগের পদ্ধতিতে সে তা করতে পারবে। এবং যেহেতু এখন চাষীর কাছে মুক্ত বাজারে বিক্রয় করার বিকল্প থাকবে, তাই এমপিএমসি মান্ডিতেও তার দরকষাকষি করার ক্ষমতা বাড়বে। যার ফলে এমপিএমসি মান্ডিতেও এখন কৃষকের আগের চাইতে বেশি মূল্য পাবার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

উপরন্তু নতুন কৃষি আইন শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নয়। এটি গ্রামীণ সমাজের গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করবে। দেশের জিডিপিএর মাত্র ১৫ শতাংশ কৃষি থেকে এলেও, দেশের শ্রমজীবী জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। যদি শ্রমজীবী জনসংখ্যার অর্ধেকাংশের কাছে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা না থাকে যে তারা নিজেদের উৎপাদিত সামগ্রীকে কোথায় আর কার কাছে বিক্রি করবে তাহলে কি আমরা আমাদের ব্যাবস্থাকে প্রকৃত গণতন্ত্র বলে দাবি করতে পারি? সুতরাং এই বিষয়টি শুধু অর্থনৈতিক নয়, এর সাথে স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের মতো বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্নও জড়িয়ে রয়েছে।

সেইসঙ্গে নতুন আইন কৃষকদের সামনে চুক্তিভিত্তিক চাষের দরজাও খুলে দিচ্ছে। চুক্তি চাষ কিছু রাজ্যে এখনো চলছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আইন অনুযায়ী।। নতুন কেন্দ্রীয় আইন চুক্তি চাষকে নিয়ন্ত্রণ করবার জন্য একটি অভিন্ন আইনি কাঠামো পেশ করেছে যার উদ্দেশ্য চুক্তি চাষের প্রতি উৎসাহ বৃদ্ধি করা ও বেসরকারি কৃষিপণ্য বিক্রয়কারী সংস্থাগুলোর হাতে চাষীদের বঞ্চনার সম্ভাবনা হ্রাস করা।। নতুন আইন অনুযায়ী চুক্তি চাষ চাষীদের পক্ষে লাভজনক হবে । কৃষকরা বেসরকারি কৃষিপণ্য বিক্রয়কারী সংস্থাগুলোর সাথে সরাসরি লেনদেন করতে পারবে, মধ্যস্থকারীদের কমিশন এবং এপিএমসিকে শুল্ক দিতে হবে না। ফসলের মূল্য ও বিক্রির পরিমাণ চুক্তি তৈরির সময়েই স্থির করা হবে । তার ফলে কৃষক তার উপার্জন উৎপাদনের অনেক আগেই আগাম সুরক্ষিত করতে পারবে। বাজারে দামের তারতম্যের ফলে সৃষ্টি হওয়া অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে সে মুক্তি পাবে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে বেসরকারি সংস্থাগুলিও একসাথে বিপুল পরিমাণ ফসল ক্রয় করতে চাইবে, এবং কৃষকদের বেসরকারি সংস্থাগুলির সাথে কারবার করবার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হবে। সরকার এই বিষয় সমন্ধে সম্পূর্ণ অবগত। তাই ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতায়নের জন্য আগামী তিন বছরে ১০,০০০ Farmer Producer Organisation (এফপিও) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এফপিওর সর্বাধিক পরিচিত উদাহরণ হ’ল আমুল যা ৩০ লাখেরও বেশি বেশি সদস্য নিয়ে গড়ে ওঠা দুগ্ধ সমবায়। এই মডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট কৃষি খামারগুলিকে সংহত করবে। এর ফলে একদিকে কৃষকদের লেনদেন এবং পরিবহন সংক্রান্ত ব্যয় হ্রাস হবে এবং তারা economy of scale এর সুবিধে পাবে। অন্যদিকে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর কাছ থেকে লাভজনক শর্তাবলী আদায় করে করে নেবার মতো অনুকূল পরিস্থিতি কৃষকদের পক্ষে তৈরি হবে।

সর্বোপরি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও বাড়বে। বেসরকারি সংস্থাগুলি এখন উৎপাদন বৃদ্ধিতে আগ্রহী হবে এবং উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তারা কৃষি পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ করবে। ভারতের কৃষকদের একটি অন্যতম সমস্যা হলো অপ্রতুল মজুদ পরিকাঠামো। যার ফলে উৎপাদনের পরে ক্ষুদ্র কৃষকের পক্ষে বেশি ফসল মজুদ করে রাখা সম্ভব হয় না। উৎপাদনের অবিলম্বে তারা ফসল বেচতে বাধ্য হয়। তার ফলে তারা ফসলের ন্যায্য দাম পান না। উৎপাদনের মরসুম চলে গেলে চাহিদার তুলনায় যোগান কমে যায় ও ফসলের মূল্য বৃদ্ধি হয়। গ্রাহক আগের চেয়ে বেশি দামে খাদ্য কেনে কিন্তু কৃষক খাদ্যের বর্ধিত দাম পায় না। এই সমস্যার সমাধান হলো উপযুক্ত মজুদ পরিকাঠামো তৈরি করা। কিন্তু তা করে তোলা সম্ভব হয়নি কারণ অত্যাবশ্যক পণ্য আইন হোর্ডিং বা অতিরিক্ত মজুদ ঠেকানোর জন্য অত্যাবশ্যক পণ্য মজুদের ওপর সীমা বেঁধে দিয়েছে। তার ফলে মজুদ পরিকাঠামোতে বেসরকারি বিনিয়োগের রাস্তা বন্ধ হয় যায়। আজ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল ও গম উৎপাদনকারী দেশ। আমাদের শস্যাগার উপচে পড়ছে। এই অবস্থা বিচার করে সরকার অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন করে কিছু বিশেষ পরিস্থিতি বাদে কৃষি পণ্যের মজুতের উপর নিষেধাজ্ঞা বিলোপ করলো। এর ফলে মজুদ পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ হবে। গ্রাহক ও কৃষক দুই পক্ষই উপকৃত হবে।

বিরোধী দলগুলি দাবি করছে যে নতুন কৃষি আইনের ফলে Minimum Support Price (এমএসপি) ও সরকারি ফসল ক্রয়ের সমাপ্তি ঘটবে। এই অভিযোগ অসত্য। সরকার এমএসপিতে ফসল সংগ্রহ চালিয়ে যাবে। নইলে রেশন ব্যবস্থার জন্য সরকার আর কীভাবে শস্য পাবে? এক্ষত্রে কিছু তথ্য পরিবেশন করা প্রয়োজন। কেবল ২২ টি ফসলের জন্য এমএসপি ঘোষণা করা হয় এবং সরকার মূলত চাল এবং গম সংগ্রহ করে খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ।এমএসপি ঘোষিত ২২ টি ফসল ক্রয় করবার মতো সামর্থ্য সরকারের নেই। এবং উত্পাদিত মোট ধান ও গমের শুধু এক- তৃতীয়াংশ সরকার ক্রয় করে থাকে। তবে সরকারি ফসল ক্রয়ের সিংহভাগ আসে মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও অন্ধ্র প্রদেশ এর মতো গুটিকয়েক রাজ্য থেকে।

এমএসপি দরে ধান ও গমের সরকারি ক্রয়ে মূলত ধনী ও বৃহৎ চাষীরাই উপকৃত হন। যেহেতু সরকারি ক্রয়ে নিযুক্ত সংস্থাগুলি একসাথে বিপুল পরিমাণ ফসল সংগ্রহ করতে চায়, তাই পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদনকারী এবং পরিবহন, মজুদ ও বাকি পরিকাঠামোগত সুযোগ ভোগকারী ধনী ও বৃহৎ চাষীরাই এমএসপির সুবিধে নিতে সক্ষম হন। জেএম ফিনান্সিয়াল দেশের ১৫ টি জেলায় একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে ১০ হেক্টরের চেয়ে অধিক জমির মালিক মূলত বৃহৎ ও ধনী কৃষকরাই চাল ও গম চাষ করে এবং তার ফলে তারাই প্রধানত এমএসপির সুবিধে লাভ করে। ক্ষুদ্র কৃষকদের বেশিরভাগই ফলমূল, শাকসব্জী এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদনে নিযুক্ত থাকার ফলে তারা এমএসপির সুবিধে পায় না। অর্থাৎ তাদের প্রয়োজন উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম। নতুন কৃষিআইন প্রণয়ন করে সরকার কৃষিক্ষেত্রে সেইসমস্ত সংস্কার আনার চেষ্টা করেছে যার ফলে ক্ষুদ্র কৃষকদের পক্ষে মুক্ত বাজারে ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে সরকার ডাইরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফার করে এমএসপিএর সুবিধে না পাওয়া ক্ষুদ্র কৃষকদের সাহায্য করবার চেষ্টা করছে । এমএসপি নয়, বরং ডাইরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফারই হলো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। কেন্দ্রীয় সরকারের পিএম কিষাণ পরিকল্পনা, তেলেঙ্গানা সরকারের রাইথু বনধু পরিকল্পনা এবং ওড়িশা সরকারের কালিয়া পরিকল্পনা ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের বেশি ফায়দা দেবে।

 

পরিশেষের বক্তব্য

পরিশেষে বলা যায় যে নতুন কৃষি আইন কৃষকদের স্বনির্ভর, স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভর করে তুলবে। ক্ষুদ্র কৃষক এর নির্ভরশীলতা কমবে ধনী কৃষক, মহাজন ও মধ্যস্থতাকারীদের উপর। এর ফলে গ্রামীণ সমাজে পৃষ্টপোষক – আশ্রিতের রাজনীতির ধারা আঘাতপ্রাপ্ত হবে। ভারতের কৃষি কাঠামো যে আধা সামন্ততান্ত্রিক এই বিষয়ে বামপন্থী ও অবামপন্থীদের মধ্যে খুব একটা বিরোধ নেই। তবে বামপন্থীরা কথায় কথায় সামন্তবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। কিন্তু তারা নতুন কৃষি আইনের বিরোধিতা করছে যা নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় কৃষিকাঠামোয় সামন্ত্রত্রান্তিক শক্তিগুলির (মহাজন, মধ্যস্থতাকারী ইত্যাদি) কতৃত্বকে চরম আঘাত করবে।

বামমনস্ক সমাজবিজ্ঞানীদের মতে স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে পুঁজির সম্পূর্ণ একাধিপত্য কায়েম করা সম্ভব হয়নি। পুঁজিপতিরা তাদের আধিপত্য বিস্তার করবার জন্য বাকি ক্ষমতাশালী শ্রেণীর সাথে জোটগঠন করে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হয়। এর ফলে পুঁজিপতি, ভূসম্পত্তির অধিকারী গ্রামীণশ্রেণী ও উচ্চ আমলাদের মধ্যে একধরণের আঁতাত গড়ে ওঠে। পুঁজিকে আধা সামন্ততন্ত্রের সাথে আপোষের পথ বেঁচে নিতে হয়। কিছু সমাজবিজ্ঞানী একে পুঁজির Passive Revolution (নিষ্ক্রিয় বিপ্লব) বলে ব্যাখ্যা করেছেন। এর ফলে স্বাধীনতার পরে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো স্থাপিত হলেও সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রভাব গ্রামীণ সমাজে ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে বজায় থাকে। এই শক্তিগুলির ক্রমাগত বাধার ফলে স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে নেহেরুভিয়ান আদর্শে উদবুদ্ধ কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কারমুখী প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা কৃষি ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করেনি। আঞ্চলিক রাজনীতির স্বার্থ অগ্রাধিকার পাওয়ার ফলে আধা সামন্ত্রতন্তের মুলে আঘাত করা সম্ভব হয়নি। অর্থনীতির বাকি ক্ষেত্রে উদারীকরণ হলেও কৃষি ক্ষেত্রে মুক্ত বাজার গড়ে ওঠেনি।

বর্তমানের নরেন্দ্র মোদী পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ভারতের কৃষিব্যাবস্থার পশ্চাদ্গামী আধাসামন্ত্রতান্ত্রিক শক্তি কাঠামোর মূলে আঘাত করার সৎসাহস দেখিয়েছে । তাই এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে বাহবা পাওয়ার য়োগ্য। যে বামপন্থীরা সরকারের সমালোচনায় মেতেছে সেই বামপন্থী রাজনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীরা চিরকাল সামন্ততন্ত্র বিলোপ ও কৃষি সংস্কারের দাবি জানিয়ে এসেছে । জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কানহাইয়া কুমার এর মতো যে বামপন্থী নেতারা সামন্তবাদ থেকে আজাদীর স্লোগান তোলে তারাই আবার এখন নানা অপযুক্তির মাধ্যমে সামন্তবাদ বিরোধী নতুন কৃষি আইনকে সমালোচনা করছে। বামপন্থীদের ভণ্ডামি ও দ্বিচারিতা আরো একবার দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

লেখক অধ্যাপক। মতামত লেখকের ব্যক্তিগত। বঙ্গদেশ পত্রিকা দায়ী নয়।