মেয়েদের বিয়ে বিষয়ক কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া আইন হিন্দু সমাজের কাছে এক অশনি সংকেত

0
705

বঙ্গদেশ ডেস্ক: ১৫ ই ডিসেম্বর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মেয়েদের বিবাহের বৈধ বয়স ১৮ বছর থেকে ২১ বছর করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। 2020 সালের আগস্টে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই একই ঘোষণা করেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, যে সরকার এ বিষয়ে আইন সংশোধন করার পরিকল্পনা করছে। তিনি ২০২০ সালের অক্টোবরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে আবারও একই কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন যে সরকার শীঘ্রই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এই আইনটি সংশোধিত হলে, নারী ও পুরুষ উভয়ের বৈধ বিবাহযোগ্য বয়স একই হবে, অর্থাৎ ২১ বছর।

সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই, জল্পনা শুরু হয়েছিল যে এই সিদ্ধান্তের বোঝা কেবলমাত্র হিন্দুদের উপরই বর্তাবে কারণ ব্যক্তিগত আইন সংশোধন করা হবে কিনা তা স্পষ্ট করে উল্লেখ ছিল না। মেয়েদের জন্য বিয়ের ন্যূনতম বয়স, যা বর্তমানে ১৮ বছর, তা সংশোধন করতে মুসলিম ব্যক্তিগত আইনে কোনও পরিবর্তন করা হবে কিনা তা অস্পষ্ট ছিল। বিশেষ বিবাহ আইন সহ ভারতের অন্যান্য সমস্ত ব্যক্তিগত আইনের জন্য, মেয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর এবং বরের জন্য ২১ বছর বয়স ছিল।

প্রথম থেকেই অনুমান ছিল, যে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী মেয়েদের ১৫ বছর বয়সে বিয়ে করার অধিকার দেবে, এবং হিন্দুরা শুধুমাত্র আইনটি অনুসরণ করবে, যার ফলে প্রজনন হার প্রভাবিত হবে এবং জনসংখ্যার অগ্রগতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

বাল্যবিবাহ নিষেধাজ্ঞা (সংশোধন) বিল, ২০২১’ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য বিবাহের বয়স সমান সমান অর্থাৎ ২১ বছর করার জন্য ‘বাল্য বিবাহ নিষেধাজ্ঞা আইন, ২০০৬ (PCMA)’ সংশোধন করার প্রস্তাব পেশ করেছে, যা বর্তমানে ২১ বছর। পুরুষদের জন্য ২১বছর এবং মহিলাদের জন্য ১৮ বছর এবং বিবাহের বয়স সম্পর্কিত আইনে ফলস্বরূপ সংশোধনী অর্থাৎ ‘ভারতীয় খ্রিস্টান বিবাহ আইন, ১৮৭২’; ‘পার্সি বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৬’; ‘মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) আবেদন আইন, ১৯৩৭’; ‘বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪’; ‘হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫’; এবং ‘বিদেশী বিবাহ আইন, ১৯৬৯’। এছাড়াও আইন যেমন ‘হিন্দু সংখ্যালঘু ও অভিভাবকত্ব আইন, ১৯৫৬’; এবং ‘হিন্দু দত্তক ও রক্ষণাবেক্ষণ আইন,১৯৫৬’ এই প্রসঙ্গের সাথে সম্পর্কিত।

কিন্তু নয়া এই আইন প্রণয়নের সাথে সাথে কিছু জ্বলন্ত সমস্যা আলোচনায় উঠে এসেছে। হিন্দু সংহতির সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য তাঁর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মুসলমানদের জন্য ১৫+ বয়সের মেয়েদের বিয়ে বৈধ। কাজির দরবারে গেলেই নিকাহ সম্ভব। কিন্তু কোর্ট ম্যারেজের ক্ষেত্রে মেয়েদের ন্যূনতম বয়স ১৮+ হতে হয়। ওনার অভিজ্ঞতা থেকে উনি বলেছেন যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে অনেক হিন্দু মেয়েদের প্রথমে কলমা পড়িয়ে ধর্মান্তরিত করে তারপরে কাজির কাছে নিয়ে গিয়ে নিকাহ করার একটা প্রচলন আছে। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেছেন, যে সব মুসলমান মেয়েরা কোনও হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করে সনাতনী সমাজে ফিরে আসতে চায়, তাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ১৮+ হওয়া বাধ্যতামূলক।

এই বৈষম্য হিন্দু সমাজে ভাঙন ধরানোর জন্য যথেষ্ট। ফলস্বরূপ, ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’- এ কোনোরূপ পরিবর্তন না করে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ২১+ করে দিলে হিন্দু মেয়েদের মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে বাধাদান সম্ভব নয়। অপরদিকে, মুসলমান মেয়েদের হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে একটা চরম আইনী প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সরকার মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর করার যে বিল পাশ করেছে, ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ সেটা কার্যকর না করলে হিন্দু সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।তিনি তাঁর পোস্টে সরাসরি উল্লেখ করেছেন, এই নয়া আইন ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য সমানভাবে যদি চালু করা যায় হিন্দু সংহতি এই আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।