নোয়াখালী গণহত্যা আজও ভোলেনি বাঙ্গালী

0
872

বঙ্গদেশ ডেস্ক:১৯৪৬ সালে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন নোয়াখালীতে হিন্দুদের ওপর যে নারকীয় অত্যাচার চালানো হয়েছিল তা আজ‌‌ও শিহরিত করে আমাদের। গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় নোয়াখালী দিবস পালনের বিভিন্ন চিত্র চোখে পড়েছে। নোয়াখালী হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী রবীন্দ্রনাথ দত্ত জানিয়েছেন, নোয়াখালী হত্যায় প্রায় ৫০০০ হিন্দুকে হত্যা, অগণিত হিন্দু মা বোনকে ধর্ষণ ও হাজার হাজার হিন্দুকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়েছিল।

নোয়াখালী দাঙ্গা ছিল স্থানীয় মুসলিমদের দ্বারা সংঘটিত এক ধারাবাহিক হত্যাযজ্ঞ, হিন্দু নারী ধর্ষণ, নারী ও অল্প বয়স্ক মেয়েদের অপহরণ,‌ হিন্দু সম্পদ লুট-ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ। প্রায় ২০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলে এই তাণ্ডব।রামগঞ্জ,বেগমগঞ্জ,রাইপুর,লক্ষ্মীপুর, ছাগলনাইয়া,নোয়াখালী জেলার সন্দ্বীপ পুলিশ স্টেশন এবং হাজিগঞ্জ,ফরিদ্গঞ্জ,ত্রিপুরা জেলার চাঁদপুর,লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম পুলিশ স্টেশন এবং আরও অন্যান্য এলাকা।

আনুমানিক ৫০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ বেঁচে থাকা হতভাগ্যকে কুমিল্লা,চাঁদপুর,আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গুলোতে আশ্রয় দেওয়া হয়। হিন্দুদের‌ স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিয়ে চলা ফেরা করতে হত।ওই সময় মুসলিম লীগকে চাঁদা দিতে হতো যাকে বলা হত জিজিয়া।গ্রামের মৌলবিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইসলামিক শিক্ষা নিতে বাধ্য করতে থাকে।হিন্দু পুরুষদের মুসলিমরা জোর করে মসজিদে নিয়ে নামাজ পড়াত।হিন্দুদের জোর করে গরুর মাংস খেতে বাধ্য করা হতো।

বঙ্গীয় আইন সভার নোয়াখালী থেকে একমাত্র হিন্দু প্রতিনিধি হারান চন্দ্র ঘোষ চৌধুরী এই দাঙ্গাকে হিন্দুদের প্রতি মুসলিমদের প্রচণ্ড আক্রোশের প্রকাশ বলে বর্ণনা করেন। বাংলার সাবেক অর্থ মন্ত্রী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নোয়াখালী দাঙ্গাকে একটি সাধারণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে দেখানোর বিতর্ককে প্রত্যাখান করেছিলেন।তিনি এ ঘটনাকে একটি সংখ্যা লঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সংখ্যাগুরু মুসলিমদের সুপরিকল্পিত এবং সুসংঘটিত আক্রমন বলে বর্ণনা করেছেন।

নোয়াখালি দাঙ্গার সেই বিভীষিকা এম. এস. কৃপালনি তাঁর “Gandhi: His thought and Life” গ্রন্থে লিখে গেছেন। নোয়াখালি নিধন কৃতিত্বের প্রধান দাবিদার মুসলিম লীগ নেতা গুলাম সরওয়ার ও কাসেম যাদের নিজস্ব বাহিনী – যথাক্রমে ‘মিঞার ফৌজ’ ও ‘কাসেমের ফৌজ’ নামে সুবিদিত ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বোস ও নোয়াখালি বারে অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সভাপতি ও হিন্দু মহাসভার নেতা রাজেন্দ্রলাল রায়চৌধুরী।১১ই অক্টোবর সরোয়ারের ব্যক্তিগত বাহিনী রাজেন্দ্রলাল রায়চৌধুরীর বাড়ি আক্রমণ করে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী স্বামী ত্র্যম্বকানন্দকে নিজের বাড়িতে আতিথ্য এবং সেই বাড়ি আক্রান্ত হলে নিজে বন্দুক হাতে সুরক্ষা দেওয়ার অপরাধে। সেই রাতটা তিনি গুণ্ডাদের প্রতিহত করে স্বামীজীকে নিরাপদ স্থানে পাঠাতে পারলে পরের দিন তাঁর মাথা গোলাম সরওয়ারকে থালায় সাজিয়ে উপহার দেওয়া হয়, আর তাঁর দুই কন্যাকে বিছানায় উপহার পায় সরওয়ারের দুই সেনাপতি।

সুচেতা কৃপালিনীর মতে রাজেন্দ্রলাল নিজের ধর্ম ও পরিবারের মর্যাদা রক্ষার জন্য শিবাজী ও গুরু গোবিন্দ সিং-এর মতো আত্মবলি দেন।তবে তিনি বীরাত্মা হলেও তাঁর দুই কন্যার দুর্গতি আটকানো যায়নি। তৎকালীন গভর্নর ফ্রেডরিক বিউরোজ় (Frederick Burrows) এই পৈশাচিকতার পরিপ্রেক্ষিতেও বেশ সরস মন্তব্য করেছিলেন – হিন্দু মেয়রা মুসলিম মেয়েদের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় বলে ধর্ষিতা হয়েছে, সেটাই স্বাভাবিক।

কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার নজর এসেছেন লক্ষ্মীর পাঁচালীতে নোয়াখালীর উল্লেখ। সেই পাঁচালীতে বর্ণিত হয়েছে সেই রাতে ঘটে যাওয়া নারকীয় কাহিনী। নোয়াখালী দিবস নিয়ে পোস্ট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এছাড়াও এছাড়া অনেকে নোয়াখালী দিবস স্মরণ করে পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে বাড়িতে প্রদীপ জ্বালিয়েছে। এমনকি ৭৬ তম নোয়াখালী দিবস স্মরণ করে মা লক্ষ্মীর কাছে আলপনাও দিয়েছে।।