বঙ্গদেশ ডেস্ক:- বিজেপির নবান্ন অভিযানে শিখ সম্প্রদায়ের এক জনের পাগড়ি খোলা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। অভিযোগ, জোর করে পাগড়ি টেনে খুলে দিয়েছে কর্তব্যরত পুলিশ। রাজ্য পুলিশ এ নিয়ে সাফাই দিলেও, এই ঘটনার নিন্দা করে জন্য তাঁদের একহাত নিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
সোমবার পরপর দু-দু’টি টুইট করেন রাজ্যপাল।
১)
Concerned at adversarial stance @WBPolice @HomeBengal with all out effort to garner and manipulate support for inhuman treatment meted out #BalvinderSingh.
Time @MamataOfficial for healing touch rather than be in justification mode.
Law allows capping of such wrongs. (1/2)
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) October 12, 2020
২)
Apex Court dictum in D K Basu was outraged @MamataOfficial
Recall Kabiguru felt pain of Jallianawala Bagh massacre thousand Kms away here & renounced his title.
Time to vindicate Tagore so that we hold our ‘head high’ and not ‘in shame’
Time to be in rectification mode.(2/2)
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) October 12, 2020
রাজ্য পুলিশ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করে ওই টুইটে বলবিন্দর সিংয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন তিনি। এক্স কমান্ডোর সঙ্গে কার্যত পাশবিক আচরণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন ধনকড়। রাজ্যপালের বক্তব্য, এব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা না করে অন্যায় কাজের সমর্থনে বিবৃতি দিচ্ছেন।
এছাড়াও আরেকটি টুইটে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাইট উপাধি ত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। টুইটে রাজ্যপাল বলেছেন, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে, হাজার কিমি দূরে থেকেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজদের প্রদত্ত ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের মাথা যেন উঁচু থাকে সেই পথেই হাঁটতে হবে, কোনোমতে যেন লজ্জায় মাথা নোয়াতে না হয়। যে অপরাধ করা হয়েছে তা অবিলম্বে সংশোধন করার সময় এসেছে বলেও টুইটে খোঁচা দিয়েছেন জগদীপ ধনকড়।
বিতর্কের সূত্রপাত ৮ ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিজেপির ‘নবান্ন চলো’ অভিযানে। সেদিন সাতদফা দাবিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। ওই কর্মসূচি চলাকালীন কলকাতা ও হাওড়া থেকে চারটি মিছিল করে যখন নবান্নের দিকে কর্মী-সমর্থকরা যাচ্ছিল তখন পুলিশের বচসা বাধে। কোথাও কোথাও তা ধস্তাধস্তির চেহারা নেয় বলে খবর। গেরুয়াশিবিরের অভিযোগ, দলের কর্মীদের ওপর অমানবিকতা দেখিয়েছে পুলিশ। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা, লাঠিচার্জ কিছুই বাদ দেয়নি। রীতিমতো রণক্ষেত্রে চেহারা নিয়েছিল সাঁতরাগাছি, হাওড়া ময়দান, হাওড়া ব্রিজ ও হেস্টিংস চত্বর।
আরও অভিযোগ, হাওড়া ময়দান এলাকায় বিজেপির মিছিল ধাওয়া করে পুলিশ। পাকড়াও করা হয় বলবিন্দর সিং নামের এক ব্যক্তিকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই বলবিন্দর সিং? আর কেনই বা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তিনি মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন? বিজেপির তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি বিজেপির যুব মোর্চার নেতা প্রিয়াঙ্কুর পাণ্ডের নিরাপত্তারক্ষী। ফলে তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। হাওড়া সিটি পুলিশ পাল্টা দাবি করেছে, আগ্নেয়াস্ত্রটি জম্বু-কাশ্মীরের রাজৌরি থেকে ইস্যু করা হয়েছে। ভিন রাজ্য থেকে কার্যত বেআইনি অস্ত্র আনা হয়েছে বাংলায়। এই নিয়েই বাকবিতণ্ডার সূত্রপাত ঘটে।
সেদিন সন্ধে থেকেই একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় এক শিখ যুবককে আটক করছে পুলিশ। জোর টানাহ্যাঁচড়ায় তাঁর পাগড়িটি খুলে যাচ্ছে। সেই পাগড়ি খোলার ঘটনা ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শিখ সম্প্রদায়ের একাংশ। খোদ হরভজন সিং এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন কর্তব্যরত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
এদিকে, রবিবার পাগড়ি ইস্যুতে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন দিল্লি শিখ গুরুদোয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মনজিন্দর সিং সিরসা।এদিন রাজ্যপালের হাতে দুই পাতার একটি চিঠিও তুলে দেন শিখ সম্প্রদায়ের ওই শীর্ষ ধর্মীয় সংগঠন। তাঁদের মূল দাবি, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। দোষী পুলিশদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। ওই শিখ সংগঠনের অভিযোগ, “পাগড়ি খুলে নেওয়ার মতো জঘন্য অপরাধ পুলিশকর্মীরা করেছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বলবিন্দর সিংকে গ্রেফতার করা হল। যারা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হেনেছে তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ২৯৫ ধারায় মামলা হওয়া উচিত।”
উল্লেখ্য, রাজ্য পুলিশ একটি টুইটে দাবি করেছে, আমাদের আধিকারিক কখনওই পাগড়ি খুলে নেওয়ার অহেতুক চেষ্টা করেননি। কোনও সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করাটা আমাদের অভিপ্রায় ছিল না। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সব ধর্মকে অন্তর থেকে সম্মান করে। আমাদের আধিকারিক গ্রেফতারির আগে বারবার ওই ব্যক্তিকে নিজের পাগড়িটি ঠিক করে নিতে অনুরোধ করেছিলেন। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।” পাশাপাশি রবিবারই এ ঘটনা নিয়ে টুইট করে বিবৃতি দিয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর।