অহল্যাবাইয়ের পথে হিন্দু ধর্মস্থান পুনরুদ্ধারের কাণ্ডারী নরেন্দ্র মোদী

0
717

বঙ্গদেশ ডেস্ক:-বুধবার ৭ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি সরকারের প্রধানের পদে ১৯ বছর পূর্ণ করেছেন, যার মধ্যে তিনি ১২ বছরেরও বেশি সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। যদিও তিনি সরকারের বিভিন্ন পদে নেতৃত্ব দেওয়ার সময়ে তার উপরে প্রচুর কালি ছেটানো হয়েছে, গুজরাট এবং কেন্দ্র উভয় জায়গাতেই, তবে তাঁর উত্তরাধিকারেরও একটি দিক রয়েছে যে সম্পর্কে কেউ কথা বলছে না।

প্রধানমন্ত্রী মোদী নিঃশব্দে ১৮ তম শতাব্দীর মালওয়ার কিংবদন্তী হিন্দু রানী দেবী অহল্যাবাই হোলকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন, এনাদের দু’জনই দরিদ্র ও অতিসাধারণ পটভূমি থেকে সরকারের সর্বোচ্চ পদে উঠেছেন।

হোলকার ধনগর সম্প্রদায়ের এক রাখাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যা বর্তমানে মহারাষ্ট্রের বিমুক্ত জাত ও যাযাবর উপজাতির তালিকায় রয়েছে। একইভাবে, মোদী মোদ-ঘাঞ্চি-তেলি (তেলী পেশার) জাতের, যা কেন্দ্রের অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণীর তালিকাভুক্ত।

উভয় নেতার প্রশাসনিক গুণাবলী এবং কাজের ফোকাসের মধ্যেও মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তবে এই লেখাটির উদ্দেশ্য আলাদা। দেবী অহল্যাবাই হোলকারের অধীনে নরেন্দ্র মোদী কীভাবে জাতীয় পর্যায়ে হিন্দু পবিত্র স্থানগুলির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করছেন তা তুলে ধরা হল।

“অহল্যাবাইয়ের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অবদান, তিনি তার ৩০ বছরের শাসনকালে বেশ কয়েকটি হিন্দু তীর্থর সংরক্ষণ, পুনর্নির্মাণ এবং স্থাপন করেছিলেন। গঙ্গোত্রী থেকে রামেশ্বরম এবং দ্বারকা থেকে গয়া পর্যন্ত তিনি মুঘল শাসনের সময়ে ধ্বংস হওয়া মন্দিরগুলি পুনর্নির্মাণে, পবিত্র স্থানগুলির অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে, নতুন মন্দির নির্মাণে এবং ঘাট তৈরিতে বহু অর্থ ব্যয় করেছিলেন ভারতবর্ষব্যাপী,” আশিষ চান্দোরকর তাঁর ২২৪ তম জন্মবার্ষিকীতে গত বছর ‘স্বরাজ্যে’ এটি লিখেছিলেন।

চান্দোরকর বলেছিলেন, “আধুনিক যুগে অন্য কোনও ব্যক্তিই অহল্যাবাইয়ের মত হিন্দুদের পবিত্র স্থানগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্যে কাজ করেন নি। যদি বর্তমান সময়ে হিন্দুরা ধর্মের প্রাচীন ইতিহাস এবং বিবর্তনের সাথে অবিচ্ছেদ্য কেন্দ্রগুলির পরিদর্শন করতে এবং তাদের পুনরুদ্ধার করতে পারে, তবে তা একটি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের কাজ হবে।”

রানী হোলকার বারাণসীতে বর্তমান কাশী বিশ্বনাথ মন্দির পুনরায় নির্মাণ করেছিলেন। ১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেব মন্দিরের মূল কাঠামোটি ধ্বংস করে সেই জায়গার উপরে জ্ঞানব্যাপী মসজিদ তৈরি করেছিলেন। বারাণসীর সর্বাধিক বিখ্যাত ঘাট দশাশ্বমেধ, যেখানে গঙ্গা আরতি হয় এবং মণিকর্ণিকা যেখানে শ্মশানকাজ হয়, সেগুলিও মালওয়ার রানী পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। এমনকি অযোধ্যায় সরয়ূ ঘাটেরও সংস্কার করেছিলেন।

তিনি ১৭৮৩ সালে সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণে ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন, যেটি মূল মন্দিরের জায়গা থেকে কিছুটা দূরে ছিল যা বহু শতাব্দী ধরে বহুবার ইসলামিক হানাদার বাহিনীরা ধ্বংস করেছিল। এর আসল স্থাপত্যটি স্বাধীনতার পরে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল এবং এখানেই বর্তমান মহামন্দির রয়েছে।

মোদী সরকারের অধীনে, অযোধ্যাতে একটি ভব্য রাম মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, যার ভিত্তি প্রস্তর এই বছরের আগস্টে ভূমিপূজা অনুষ্ঠানের পরে স্থাপন করা হয়েছিল যেখানে যজমান হিসাবে মোদীজি নিজেও উপস্থিত ছিলেন।

মোদী বিরোধীরাও সর্বসম্মতিক্রমে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এই রায়ের জন্য তাঁকে কৃতিত্ব দিতে চায় না। তবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, অন্য কোন ব্যক্তির শাসনে আদালতের বিচারে এই রায় না’ও আসতে পারত।

এক লক্ষ করসেবক থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকের হিন্দুত্ববাদী নেতারা যারা ১৯৯০এ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, অন্যান্য সমস্ত রামভক্তদের অবদানকেও স্বীকার করতে হবে যাদের আত্মত্যাগেই আমরা মোদীযুগ পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি।

নরেন্দ্র মোদী নিজেও আগের মতো কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরটি পুনর্নির্মাণ করতে উদ্যোগী হয়েছেন।

তিনি গত বছর বিশ্বধাম প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন যেখানে মন্দির থেকে গঙ্গা নদী পর্যন্ত প্রসারিত করিডোর তৈরি হবে। সমগ্র প্রকল্পটি পরের বছর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

করিডোর ছাড়াও সরকার বারাণসীর বেশ কয়েকটি ঘাটে সংস্কার কাজ করছে এবং কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এটির লেখক শ্রী চান্দোরকর এ শহরটি পরিদর্শন করার পরে ২০১৮ সালে এটিকে বিস্তারিতভাবে কভার করেছিলেন। শহরের কেন্দ্রস্থলে গঠিত ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাটিও অনেক বদলে গেছে।

মোদী সরকার কেদারনাথ ধামের পুনর্নির্মাণের কাজও করছে যা ২০১৩ সালের বন্যায় ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছিল।

২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী পাহাড়ের মন্দিরেও পাঁচটি বড় পুনর্গঠন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

ধর্ম ও প্রতিরোধের প্রতীক সোমনাথ মন্দিরটি বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পুনরুন্নয়নের জন্যে চিহ্নিত হয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণটিও সম্পূর্ণরুপে বদলে যেতে চলেছে, স্বরাজ্য ম্যাগাজিনের খবরে প্রকাশ।

অন্যদিকে ইন-ডিজাইন স্টুডিওর বক্তব্য অনুসারে, প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির লক্ষ্য “বর্ধিত সুবিধা এবং সংযোগ প্রদান; মন্দিরের পুনর্নির্মাণ”,। অন্যান্য জিনিসের মধ্যে সোমনাথের বিদ্যমান ঐতিহ্য সম্ভাবনাকে পুঁজি করেই এগিয়ে যাওয়ার ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে।

বর্তমানে, মন্দিরটির চারপাশে এখানে, সেখানে বিল্ডিং তোলা হয়ে আছে। দর্শনার্থীরা দূর থেকে মন্দিরের চূড়া দেখতে পাবেন না। এই অঞ্চলের নন্দনতত্ব দুর্দান্ত, তীর্থস্থান হিসেবে এর আশেপাশের অঞ্চল উপযুক্ত নয়। তাই এখানেও উন্নয়নের কাজ চলছে।

মন্দির ও তীর্থস্থানের পুনর্নির্মাণের কাজে নরেন্দ্র মোদী দেবী অহল্যাবাই হোলকারকে ছাড়িয়ে যেতে হয়ত পারবেন না, রানী হওয়ার কারণে যে স্বাধীনতা তিনি পেয়েছিলেন, একজন নির্বাচিত শাসক হিসেবে মোদীর অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে তাঁর কাজ সম্পন্ন হলে তিনি অবশ্যই অহল্যাবাইয়ের পরে এমন এক ব্যক্তি হিসাবে গণ্য হবেন যিনি তাঁর পরে হিন্দু পবিত্র স্থানগুলির জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন।