কেরলের প্রথম নন-হালাল রেস্তোরাঁর কর্ণধার আক্রান্ত, রেস্তোরাঁর দ্বিতীয় শাখা উদ্বোধনের আগেই ইসলামপন্থীদের থেকে পেয়েছিলেন হুমকি

0
656

বঙ্গদেশ ডেস্ক: শ্রীমতী থুশারা ২০২১ সালের ১৫ই জানুয়ারি কেরালার এরনাকুলামে ইসলামী শাস্ত্র অনুসারে নিষিদ্ধ খাবারের রেস্তোরাঁর উদ্বোধন করেন। তিনিই ২৫শে অক্টোবর সোমবার নির্মম হেনস্থার শিকার হন। ভদ্রমহিলা নিজে হাসপাতালে শয্যাশায়ী অবস্থায় ফেসবুক লাইভে এসে নিজের ওপর হওয়া হামলার কথা সকলকে জানান।

শ্রীমতী থুশারা পালারিভাট্টমে নিজের রেস্তোরাঁ ‘নন্দুর রান্নাঘর’ এ শুধুমাত্র ইসলামী শাস্ত্রমতে নিষিদ্ধ খাবারই পরিবেশন করতেন। নিজের রেস্তোরাঁর উদ্বোধনের সময় সে নিজের রেস্তোরাঁর বাইরে একটি ব্যানার লাগিয়ে ছিলেন যাতে স্পষ্ট লেখা ছিল, ‘এখানে হালাল ব্যতীত খাবার উপলব্ধ। হালাল এখানে নিষিদ্ধ’। সে পরে জানান যে, শুরু থেকেই মুসলিমরা তার ওপর ইসলামী শাস্ত্রমতে নিষিদ্ধ খাবার বিক্রির জন্য ক্ষিপ্ত হয়েছিল।

শ্রীমতী থুশারার মেয়ে তার মাকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিও করে সকলকে জানায় কীভাবে তার মাকে কিছু অসভ্য লোকেরা হেনস্থা করে।

স্থানীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রীমতী থুশারার ওপর টেকনো পার্কে তার নিজস্ব রেস্তোরাঁর সামনে আক্রমণ করা হয়। সেদিনই তার নিজের রেস্তোরাঁর আরেকটি শাখা উদ্বোধন করার কথা ছিল।

সংবাদপত্রের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, থুশারা তার রেস্তোরাঁর দ্বিতীয় শাখা উদ্বোধন করার জন্য বিভিন্ন ইসলামপন্থীর কাছ থেকে নানা হুমকি পাচ্ছিলেন ঠিক যেমন প্রথম রেস্তোরাঁ উদ্বোধনের সময় পেয়েছিলেন। ইসলামপন্থীরা তাকে নিজের রেস্তোরাঁর সামনে শাস্ত্রমতে নিষিদ্ধ খাবারের ব্যানার লাগানোর জন্য হুমকি দিচ্ছিল।

শ্রীমতী থুশারা দাবি করেন যে তার ওপর আক্রমণের অন্যতম কারণ রেস্তোরাঁয় শাস্ত্রমতে নিষিদ্ধ খাবার পরিবেশন ও রেস্তোরাঁর বাইরে সেই নিয়ে পোস্টার প্রদর্শন।

এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করে কেরালার বিজেপি রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন ট্যুইট করে লেখেন, ‘শ্রীমতী থুশারা অজিথের ওপর ঘটে যাওয়া আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই। কয়েকজন মুসলিম অন্ধবিশ্বাসী একজন মহিলা ব্যবসায়ীর ওপর আক্রমণ করে কারণ সে তার রেস্তোরাঁয় হালাল খাদ্য পরিবেশনে অসম্মতি প্রকাশ করে। কাক্কানদে যা ঘটেছে তা তালেবানবাদের চেয়ে কিছু কম নয়। আমি কেরালাবাসীদের কাছে হালাল আক্রমণকে রুখতে আহ্বান জানাচ্ছি’।

লোকোফ্যাগাস নামের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টের অধিকারী লেখেন, ‘থুশারা অজিথ প্রথম ব্যক্তি যে কেরালায় হালাল ব্যতীত খাবারের এক রেস্তোরাঁ খোলেন। আজ সে রেস্তোরাঁর দ্বিতীয় শাখা খোলার অপরাধে জিহাদীদের হাতে আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তি’। এই ট্যুইটার ব্যবহারকারীর মতে, কেরালা পুলিশ শ্রীমতী থুশারাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চালাচ্ছে কারণ রেস্তোরাঁর কর্মীরা আত্মরক্ষার জন্য আক্রমণকারীদের ওপর হামলে পড়েছিল।

লোকোফ্যাগাস তার পরবর্তী ট্যুইটে বলেন, ‘তাকে বলা হয়েছিল যে রেস্তোরাঁর বাইরে হালাল বিরোধী ব্যানার লাগানো বা রেস্তোরাঁয় শূকরের মাংস পরিবেশন করা তার একেবারেই উচিত হয়নি কারণ কাক্কানদ তাদের এলাকা। পুলিশ তাকে ও তার কর্মীদের দোষারোপ করছে এমন সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে ছেলেখেলা করার জন্য’।

হালাল খাদ্য নিয়ে কেরলে বিতর্ক

কেরালা রাজ্যটি হালাল খাদ্য নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে শেষ হয়ে গেল। এই বছরের জানুয়ারি মাসে, কেরালার ‘মোডি’ নামক এক বেকারি হিন্দু ঐক্য বেদীর কর্মীদের বিরোধিতায় হালাল খাদ্যের লভ্যতা জানান দেওয়ার হালাল স্টিকার তুলে দিতে বাধ্য হয়। এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন এই সংস্থার পরক্কাদাভু ইউনিটের সভাপতি অরুণ অরবিন্দ এবং আরও কয়েকজন বেকারিতে খেতে যান এবং হালাল ব্যতীত খাবার দাবি করেন। তাদের জানানো হয় যে সেখানে শুধু হালাল খাদ্যই পাওয়া যায়।

এই নোটিশ সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তারা অরবিন্দ ও আরও তিনজনকে গ্রেফতার করে। এই চারজনের বিরুদ্ধে কেস করা হয় এবং পরে এরা জামিনে ছাড়া পায়।

গতবছরে ক্রিসমাসের আগে, কেরালার খ্রিস্টানরা হালাল খাদ্য বয়কটের দাবি তোলে। কোচির খ্রিস্টান দল চার্চস অক্সিলারি ফর সোশ্যাল অ্যাকশন( সিএএসএ) খ্রিস্টানদের হালাল খাদ্য না কেনার জন্য অনুরোধ করে। হিন্দুরাও এই বয়কটের সমর্থন জানিয়ে বলে যে রাজ্যে হালাল খাদ্য বিক্রয়ের জন্য তাদের বাধ্য করা হয়েছে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: অপ ইন্ডিয়া