“পাকিস্তানী মাদ্রাসায় হিন্দু, ইহুদী হত্যার পাঠ দেওয়া হচ্ছে”; UN-এ সরব বালোচ সমাজকর্মী

0
931

বঙ্গদেশ ডেস্ক – একজন বালোচ রাজনৈতিক কর্মী জাতিসংঘর বক্তৃতায় বলেছেন যে, পাকিস্তানের স্কুলগুলি শিক্ষার্থীদেরকে হিন্দু এবং ইহুদীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও প্রতিশোধপরায়ণতার শিক্ষা দেয়।

জেনেভাতে ‘ডারবান ডিক্লারেশন অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ সম্পর্কিত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপে বক্তৃতা দেওয়ার সময়, ‘বালোচ ভয়েস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মুনির মেনগাল বলেছিলেন, “আমি প্রথমে ক্যাডেট কলেজ নামক একটি অত্যন্ত উচ্চমানের রাষ্ট্র পরিচালিত সেনা বিদ্যালয়ে পড়তাম। আমাদের সেখানে শিক্ষা দেওয়া হত যে হিন্দুরা কাফির, ইহুদিরা ইসলামের শত্রু, উভয়কেই উপরোক্ত যেকোনও কারণে হত্যা করা যেতে পারে”।

তিনি আরও বলেছিলেন, “আজও ইউনিফর্ম পরিহিত সেনা শিক্ষকদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক বার্তাটি হল, আমাদের বন্দুক এবং বোমার প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে। কারণ, হিন্দু মায়েদের বিরুদ্ধে আমাদের এগুলি ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় তারা কাফের হিন্দু সন্তানের জন্ম দেবে”, টাইমস অফ ইন্ডিয়া এই বক্তব্য পেশ করেছে।

পাকিস্তানি স্কুল, মাদ্রাসায় আজও প্রতিটি স্তরে এই ধরণের ঘৃণা শেখানো হচ্ছে। এবং এটি শিক্ষা তথা সিলেবাসের একটি প্রাথমিক অংশ। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ধর্মান্ধ ও সন্ত্রাসবাদী দলকে রাষ্ট্রীয় কৌশলগত সম্পদ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, মুনি জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে বলেছিলেন।

“একইভাবে, ব্লাসফেমি আইনটি সমাজের অত্যন্ত দুর্বল সম্প্রদায়গুলি, বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ‘ইন্সটিটিউশনগতভাবে’ ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রদায় বিশেষের বিরুদ্ধে বৈষম্যের ক্ষেত্রে এটি একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কাউকে নিন্দা করার জন্যে, পুরো সম্প্রদায়কে শাস্তি প্রদান এবং বিচারক বিচার বহির্ভূত হত্যার বিচার করায় এই আইনের অপব্যবহার করা হয়ে থাকে। অভিযুক্ত ব্যক্তি বা আর যে কেউ ব্লাসফেমি আইনের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তাদেরকে হত্যা করা পাকিস্তানে বীরত্বের কাজ হিসেবে গণ্য হয়”, এই বালোচ কর্মী বলেছেন।

“যতক্ষণ এই ওয়ার্কিং গ্রুপ স্বীকার না করে, যে তাদের কৌশলগত নীতির আওতাভুক্ত রাষ্ট্রগুলি মানুষকে দমন করছে, ততদিন আমরা কোনও প্রকার বৈষম্য থেকে মানবকে রক্ষার জন্য কার্যকর নীতিমালা করতে সক্ষম হব না”, তিনি ইউএনকে এই বিষয়ে নজর দিতে অনুরোধ করেছেন।

মুনির আরও যোগ করেছেন, “আমি আবার বেলুচিস্তানের উদাহরণ দিচ্ছি, যেটি পাকিস্তান ইসলামিক স্টেট দ্বারা, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে পাকিস্তানের সংযুক্ত হয়েছিল কালাত চুক্তির দ্বারা। এখন তথাকথিত মেগা প্রকল্পসমূহ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ, বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প সমূহের মত সমস্ত শব্দ শুনতে খুব আকর্ষণীয় লাগে, তবে বাস্তবে তা কেবল কৌশলগত ক্ষমতা অর্জনের কৌশল, স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে আধিপত্য বিস্তার করা এবং সম্প্রসারণবাদের নকশা। পূর্বনির্ধারিত পদ্ধতিগতভাবে আদিবাসী বালোচদের নির্মূল করার সরঞ্জাম তৈরী এবং মানুষের উপরে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়”।

রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের রাষ্ট্র স্পন্সরকৃত নৃশংসতার শিকার হওয়া বালুচ কর্মী জাতিসংঘকে বলেছিলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় সিপিসি-র (চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর) অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছে। চীন আরও দাবি করেছে যে, সিপিইসি হ’ল তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রধান প্রকল্প। তবে বাস্তবে, এটি নিও-উপনিবেশকরণ এবং সম্প্রসারণবাদের একটি সর্বোচ্চ চিহ্ন। প্রথমত, এই সমস্ত কিছু মানুষের সম্মতি ছাড়াই করা হচ্ছে। প্রচুর লোককে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল। স্থানীয় বালুচদের জন্য কোনও চাকরি নেই। এমনকি স্থানীয়দের জন্য পানীয় জল নেই তবে চাইনিজদের জন্য অকল্পনীয় সুযোগগুলি দেখতে পাচ্ছেন”। বালোচ মুক্তিকামীরা অনেকদিন ধরেই লড়ছে তাদের স্বাধীনতার জন্যে। বহু মানুষ নিখোঁজও হয়েছেন। এদিন ইউনাইটেড নেশানে বলবার সুযোগ পেয়ে মুনীর ক্ষোভে ফেটে পড়েন।