ইন্টারনেট আরও সহজলভ্য! ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামেও মিলবে সস্তায় Wi-Fi নেটওয়ার্ক

0
635

বঙ্গদেশ ডেস্ক: টাইম মেশিনে চেপে ফিরে যাওয়া যাক ৩০ বছর আগে। যখন স্মার্টফোনের কথা মানুষ ভাবতেও পারতেও না, এমনকি পাতি মোবাইলও ছিল কল্পনাতীত! কয়েন বুথে কয়েন ফেলে ফোনে কথা বলতো দেশের মানুষজন। এবার কিছুটা সেই ধরনের পরিষেবাই ফিরতে চলেছে দেশে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলেছে ডিভাইস। তাই এবার টেলিফোনের জায়গায় ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জগুলিতে বসবে ফ্রি Wi-Fi নেটওয়ার্ক।

মূলত ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে মুদির দোকানে বসানো হবে Wi-Fi যন্ত্র। গ্রামবাসীরা মুদির দোকানের কাছাকাছি এলেই ফ্রীতে পেয়ে যাবেন Wi-Fi সিগন্যাল। খুবই সামান্য খরচে গ্রামীণ ভারতের মানুষজন ইন্টারনেট পরিষেবা উপভোগ করতে পারবেন। শুধু তাই নয়। কেউ চাইলে আবার ঠেলা গাড়িতে করে Wi-Fi যন্ত্র চাপিয়েও ডেটা বিক্রি করতে পারেন।

বছর দুয়েক আগেই তৎকালীন কেন্দ্রীয় টেলিকমিউনিকেশনস মন্ত্রী মনোজ সিনহা জণগণের সুবিধার্থে ‘পাবলিক ডেটা অফিস’ (Public data office) চালু করেছিলেন। সেটাই এবার নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে সাজিয়ে গুছিয়ে ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার। বুধবারই নতুন এই প্রকল্পে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রের মন্ত্রীসভা। দেশের বর্তমান টেলিকমিউনিকেশনস মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ আশার কথা শুনিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের হাত ধরে ভারবর্ষে ‘Wi-Fi বিল্পব’-এর সূচনা হবে। নতুন এই প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে পিএম-ওয়ানি (PM-WANI: Prime Minister Wi-Fi Access Network Interface)

রবিশঙ্কর প্রসাদের ভাষায়, ‘যে সকল টেলিকম সংস্থা এই ধরনের Wi-Fi যন্ত্রের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবার বন্দোবস্ত করবে, তাদের কোনও রকম লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, এমনকি এক টাকা চার্জও দিতে হবে না। গোটা দেশেই চালু করা হবে এই ধরনের ইন্টারনেট পরিষেবা। বহু দূরের প্রত্যন্ত কোনও গ্রাম থেকেই নিমেষে ইন্টারনেটের সাহায্যে ডিজিটাল ট্রান্জাকশন করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।’

পাশাপশিই রবিশঙ্কর প্রসাদ আরও যোগ করেছেন, ‘করোনা মহামারী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, হাইস্পিড ইন্টারনেট দেশবাসীর জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। কোভিডের কারণে বহু মানুষ ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন। অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনাও করতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। পিএম-ওয়ানি একবার চালু হয়ে গেলে গ্রামে বসেই ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনাও করতে পারবেন, পাশাপাশি আবার চাকুরিজীবীরা গ্রাম থেকেই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করার সুবিধা পাবেন।’

বুধবার ইউনিয়ন ক্যাবিনেটের পক্ষ থেকে অনুমোদন পেয়েছে এই পাবলিক ওয়াই-ফাই অ্যাকসেস ইন্টারফেস (WANI)প্রজেক্ট। ইউনিয়ন ক্যাবিনেটের নেওয়া এই পদক্ষেপ ১৯৯০-এর পিসিও মুভমেন্টের অনুরূপ একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৯০ সালের এই পিসিও মুভমেন্ট, অসংখ্য মানুষের সাহায্যে কাজে লেগেছিল এবং ন্যূনতম ব্যয়ে পাবলিক-ফোন সংযোগের অ্যাকসেস পাওয়া গিয়েছিল।

এই সরকারি অনুমোদনের ফলে, ডব্লিউএএনআই-অনুমোদিত অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি আপনার মোবাইল ফোনে ওয়াই-ফাই কানেক্ট করতে পারবেন।

পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের জন্য খরচ হবে খুব সামান্য। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে খরচ হবে ১০ টাকারও কম আর এই টাকা কেটে নেওয়া হবে ইনস্টলড অ্যাপের ওয়ালেট থেকে।

এর বহু আগে, গুগল এবং ফেসবুকের মতো সংস্থারাও উদ্যোগ নিয়েছিল ভারতে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবসা চালু করতে।

পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে, যে কোনও ওয়াই-ফাই প্রোভাইডারের সঙ্গে একবার মাত্র রেজিস্ট্রেশনই যথেষ্ট। এরপর আপনি যে কোনও সময়, দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে ইন্টারনেট কানেক্ট করে ব্যবহার করতে পারবেন পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের দরকার নেই।

আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, গ্রামে-গ্রামে এহেন Wi-Fi নেটওয়ার্কের জন্য খরচ কত হতে পারে? টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সাফ জানিয়েছেন যে, খরচের বিষয়টা পুরোপুরি ভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে টেলিকম সংস্থাগুলির উপরে। দেশের সমস্ত গ্রামে যখন টেলিকম সংস্থাগুলি Wi-Fi বসানোর প্রতিযোগিতায় নামবে, তখন খরচও খুব কম হবে বলে আরও জানালেন রবিশঙ্কর প্রসাদ।

বুধবারই ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে লক্ষদ্বীপ অবধি সমুদ্রের নীচ দিয়ে অপ্টিক্যাল ফাইবার কেবল বসানোর জন্য ১,০৭২ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার তরফে। এছাড়াও অসমের কার্বি আংলং, ডিমা হাসাও জেলা, অরুণাচল প্রদেশ ইত্যাদি জায়গায় 4G পরিষেবা চালু করার জন্য ২,০২৯ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।