কাশ্মীরী পণ্ডিত গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বাঙ্গালী হিন্দুদের সতর্ক করলেন গবেষক ড. রজত মিত্র

0
822

বঙ্গদেশ ডেস্ক: ১৯শে জানুয়ারি কাশ্মীরি পণ্ডিত গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বিশিষ্ট গবেষক, মনোবিজ্ঞানী, মানবাধিকার কর্মী ও লেখক রজত মিত্র বর্তমান অস্তিত্ব সংকটের প্রেক্ষিতে বাঙ্গালী হিন্দুদের সতর্ক হতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ১৯৯০ এর দশকে কাশ্মীরে যা হয়েছে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পূর্ববঙ্গে ঠিক তাই হয়েছে। বাঙ্গালী হিন্দুরা যদি সতর্ক না হয়, এমন জাতীয় বিপর্যয় আবারও হতে পারে। বস্তুতঃ, হিন্দুদের উপর ঘটে যাওয়া গণহত্যা নিয়ে সরব না হলে এবং সতর্ক না থাকলে কাশ্মীরের মত ঘটনা ভারতের যে কোনো স্থানে হতে পারে।

১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে কাশ্মীর হয়ে ওঠে পাকিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির মুক্তাঞ্চল। তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল। কাশ্মীর থেকে হিন্দু সভ্যতার অস্তিত্বকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে, কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করা। তারা একে একে খুন করতে শুরু করে কাশ্মীরি পণ্ডিত সমাজের নেতৃস্থানীয় বিশিষ্ট মানুষদের। টিকালাল টাপলু, নীলকণ্ঠ গানজু। তারপর হঠাৎ এক শীতের সকালে ডাক দেওয়া হয়, “রালিভ, গালিভ ইয়া সালিভ।” অর্থাৎ, হয় ইসলাম স্বীকার করো, নয়তো মরো, নতুবা কাশ্মীর ত্যাগ করো। পাঁচ লক্ষ কাশ্মীরি হিন্দুকে একরাত্রে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করে তারা। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঠাই হয় জম্মু ও দিল্লীর শরণার্থী শিবিরে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে উষ্ণ আবহাওয়ায় নানান রোগব্যাধিতে ও সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় বহু কাশ্মীরি পণ্ডিতের।

সাম্প্রদায়িক ও জাতি দাঙ্গা শিকার যারা, তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন মনোবিজ্ঞানী ও মানবাধিকার কর্মী ড. রজত মিত্র। দিল্লীর শরণার্থী শিবিরের কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারগুলির মধ্যে কাজ করেছেন তিনি। অন্তরঙ্গভাবে মিশেছেন, রাত কাটিয়েছেন তাদের সঙ্গে। দেখেছেন তাদের উদ্বাস্তু জীবন। কীভাবে তাদের ‘ক্যাম্পওয়ালা’ হিসেবে ব্যঙ্গ করা হয়। কীভাবে তাদের প্রতিনিয়ত উপেক্ষা, অবজ্ঞা ও হয়রানির শিকার হতে হয়। তাদের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছেন কেমন ছিল সেই দিনগুলো। কী হয়েছিল ১৯শে জানুয়ারি ১৯৯০। তাদের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একটি উপন্যাস লিখেছেন ইংরাজিতে – ‘দ্য ইনফিডেল নেক্সট ডোর’।

ড. মিত্র জানান, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দেশত্যাগে বাধ্য শুধু সন্ত্রাসবাদীরাই করেনি। কাশ্মীরের সাধারণ মুসলমানরাও সেদিন সক্রিয় হয়েছিলেন কাশ্মীরের ভূমিপুত্র কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিতাড়নে। মসজিদগুলো থেকে মাইকিং করে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল উপত্যকা ত্যাগ করতে। পণ্ডিত পরিবারগুলোর প্রতিবেশী মুসলমানরাও একই সুরে শ্লোগান দিয়েছিলেন। তাদের কাছে দিনটি ছিল বিজয় উৎসবের মতো। রীতিমত সেজেগুজে তারা রাস্তায় নেমেছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিতাড়িত করে ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে।