“শ্রী”-হীন বাংলাদেশ, সংখ্যালঘু হিন্দুদের পক্ষে গর্জে উঠলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তী

0
781

বঙ্গদেশ ডেস্ক:-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচার নতুন কিছু নয়। বিগত বছরে দুর্গাপুজোয় হামলার রেশ এখনও স্মৃতিতে জীবন্ত। তবে শুধুমাত্র শারীরিক নির্যাতন‌ই নয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে হিন্দুদের কোনঠাসা করার জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে বহুদিন ধরে ধীরে ধীরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নামের আগে ব্যবহৃত “শ্রী” ও “শ্রীমতী” শব্দ অলিখিতভাবে অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এবার তার‌ই বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তী।

সম্প্রতি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড বিবৃতি জারি করেছে, সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা নামের পূর্বে শ্রী এবং শ্রীমতী শব্দদ্বয় ব্যবহার করতে পারবে না। বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তী ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “এক দেশে এভাবে দুই নিয়ম থাকতে পারে না। একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের শিশু তার ধর্মীয় বিশ্বাসবাচক শব্দ ব্যবহার করতে পারবে ; পক্ষান্তরে সেই শিশুটির সহপাঠী তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাসবাচক শব্দ ‘শ্রী’ ব্যবহার করতে পারবে না। অথচ বাংলাদেশে সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার অংশে সুস্পষ্টভাবে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থান নির্বিশেষে সকল নাগরিকদের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।”

উৎপতিগতভাবে শ্রী শব্দটি সংস্কৃত জাত শব্দ। সনাতন ধর্মে নামের পূর্বে “শ্রী” ব্যবহার করা হয়।হিন্দু ধর্মমতে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী দেবীকে “শ্রী” সম্বোধন করা হয়। এছাড়াও বাংলাতে ঐশ্বর্য, সেীভাগ্য, সৌন্দর্য এবং রূপ লাবণ্যকেও “শ্রী” বলে।

তবে এই প্রথমবার নয়, এর আগেও হুসেন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনকালে আশির দশকে “শ্রী” শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে নামের আগে শ্রী শব্দটি বাদ দেওয়ার অলিখিত সরকারি নির্দেশনা ছিল। বৃহত্তর বাঙালি মুসলিমরা ১৯৪৭ সালের ভারতভাগের পরেই শ্রীশব্দটি হিন্দুয়ানী বলে বাদ দিতে শুরু করে। পরবর্তী কালে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক প্রচারণার ফলে শ্রীশব্দটি শুধুমাত্র হিন্দুর পরিচয় হয়ে উঠেছে। আশির দশকে পৌঁছে দেশের শিক্ষা বোর্ড শ্রী শব্দটি হিন্দু সম্প্রদায়ের নাম থেকে বাদ দেয়। নির্দেশ মেনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় প্রাণ বাঁচাতে নিজেরাই সন্তানদের নামের সাথে শ্রী শব্দটিকে পরিহার করে।

অথচ বাংলাদেশের পুরানো পরচা, দলিলপত্রে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলের নামের সাথে আজও শ্রী শব্দটিকে পাওয়া যায়। এমনকি আশি থেকে নব্বই বছর আগেও মুসলিম মাওলানা এবং পুঁথি লেখকদের নামের সাথে অবাদে শ্রী শব্দটি ব্যবহৃত হত। এরকম অনেক পুঁথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিয়ামেও সংরক্ষিত আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহীত অসংখ্য ইসলামি পুঁথিতেও বিষয়টি দেখা যায়।

তবে শুধুমাত্র বাংলাদেশে‌ই নয়, এর আগে ১৯৪০ সাল নাগাদ অবিভক্ত বাংলার শাসন ক্ষমতা যখন মুসলিম লীগের হাতে ছিল তখন মুসলমান নেতাদের উদ্যোগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো থেকে “শ্রী” কথাটা অপসারণ করা হয়।সেই ট্রাডিশন বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ এর আগে সরকারিভাবে চিটাগাংএর নাম ও বানান চট্টগ্রাম করেছে।