ধর্ষণ এবং অসম্মতিমূলক সহবাসের পার্থক্যের দাবী

পিটিআই, ইউএনআই, ৩১ শে জুন ২০১৮; আজ ভারতের বিশিষ্ট ১১৮ জন নাগরিক প্রধানমন্ত্রী শ্রী মহেন্দ্র নদীর উদ্দেশ্যে লেখা এক খোলা চিঠিতে ধর্ষণ এবং অসম্মতিমূলক সহবাসকে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে পৃথক করার দাবী জানিয়েছেন। বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষে সাহিত্যিক চয়নতারা মেহগাল জানিয়েছেন যে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র নদীর শপথ গ্রহণের পর থেকে ভারতে অসহিষ্ণুতা ক্রমবর্ধমান। পয়গম্বর নেহেরুর পবিত্র দেশ ভারতে সংখ্যালঘুরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। মান্দাসোরে এক সংখ্যালঘু পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হচ্ছে। অসহায় সংখ্যালঘুরা কখনো ধর্ষণের মত ঘৃণ্য কাজ করতে পারেন না। যদি তাদের বিরুদ্ধে কোন মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ আনেন তা অসম্মতি মূলক সহবাস হিসাবে গণ্য করা উচিত এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ধর্ষণের ধারাগুলির আওতা থেকে বাতিল করা উচিত। তিনি আরও জানান যে এ ব্যাপারে কেরালার ক্যাথলিক চার্চ পথিকৃতের ভূমিকা নিয়েছেন কারণ তাঁরা যাজকদের কৃত ধর্ষণকে সেক্স স্ক্যাণ্ডেল বলার সৎসাহস দেখিয়েছেন। তিনি টয়লেট পেপার অফ ইণ্ডিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই ব্যাপারে ক্যাথলিক চার্চের বক্তব্যকে অনুসরণ করে ধর্ষিতাকে সেক্স স্ক্যাণ্ডেলের পার্টনার হিসেবে বর্ণনা করার জন্য।   

এডিটর্স গিল্ডের সভাপতি প্রখ্যাত সাংবাদিক শ্রী শিখর লুপ্ত জানান যে নিরপেক্ষ সাংবাদিক হিসাবে তিনি এই দাবীর পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন। সাংবাদিকদের স্টাইল গাইড হিসাবে বরাবর শেখানো হত যে, ধর্ষক সংখ্যালঘু হলে তার নাম সংবাদপত্রে প্রকাশ না করার অঙ্গীকারের কথা। কিন্তু ধর্ষক যদি হিন্দু হয় তবে তার নাম প্রকাশ তো করতেই হবে উপরন্তু তার ধর্ষণের দায় হিন্দু ধর্মের উপর ন্যস্ত করতে হবে। এই স্টাইল গাইড সাধীনোত্তর ভারতে বরাবর চলে এসেছে। মুশকিল হল স্যোসাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তের ফলে। এই স্টাইল গাইড না জানা সাধারণ জনতাকে কিছু দক্ষিণ পন্থী ঘৃণ্য ট্রোল বলতে থাকল যে মিডিয়া নিরপেক্ষ নয়,  তারা সংখ্যালঘুদের কৃত অপরাধকে গোপন করে চলে।

“এক তো এতে আমার বিশিষ্ট বন্ধু সাংবাদিকদের বিশ্বাস যোগ্যতা কমে গেছে। যেমন আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু নাচদীপ করদেশাইকে লোকে আজ ম্যাডিশনের স্কোয়ারের গুণ্ডা বলে ডাকে। দ্বিতীয়ত আমাদের ন্যারেটিভ এতে পদে পদে বিপর্যস্ত হচ্ছে। আমরা কাটুয়ায় এক মুসলিম পালক পিতার কন্যার ধর্ষণের সাথে এক হিন্দু মন্দিরকে জুড়ে দিতে সক্ষম হয়ে ছিলাম। এতে সংখ্যালঘুদের উপর অসহিষ্ণুতাকে বাস্তব মনে হচ্ছিল। কিন্তু মান্দাসোরের ঘটনা, কোলকাতার মেটিয়াবুরুজে গীতা নাম্নী হিন্দু কিশোরীর উপর যৌন নির্যাতন আমাদের এই ন্যারেটিভকে অবাস্তব করে দিচ্ছে,”  ভারী গলায় বিষণ্ণ শ্রী লুপ্ত জানান। তিনি বলেন যে যদি আইন পরিবর্তন করে ধর্ষণ এবং অসম্মতিমূলক সহবাসকে পৃথক করা হয়, তবে তাঁরা নিরপেক্ষ সাংবাদিক হিসেবেই এই প্রচলিত স্টাইল গাইড অনুসরণ করতে পারবেন।

অপর একজন স্বাক্ষরকারী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ শ্রী মর্ত্য সেন বলেন যে, তাঁর অর্থনীতির তত্ত্ব অনুযায়ী কোন দেশের উন্নতি দারিদ্র্য দূরীকরণে বা দুর্নীতি নিবারণে হয় না। দেশের দরিদ্র মানুষের কাছে বিদ্যুৎ, গ্যাস, প্রকৃষ্ট রাস্তা, ব্যাঙ্কিংয়ের সুব্যবস্থা ইত্যাদি পৌঁছে দিলে ঐ দেশের অর্থনীতির কোন লাভই হয় না। তাই প্রধান মন্ত্রী শ্রী মহেন্দ্র নদীর সমস্ত কাজই ব্যর্থ। বিশেষ প্রয়োজন সংখ্যালঘুদের অপরাধী বলে হয়রান না করা। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মহেন্দ্র নদী সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষার একমাত্র উপায় ধর্ষণের অভিযোগ থেকে সমস্ত সংখ্যালঘুকে মুক্তি দেওয়া। শ্রী সেনের জটীল তত্ত্বের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে সংখ্যালঘুদের ধর্ষণের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলে দেশে নথিভুক্ত ধর্ষণের সংখ্যা কমবে। তাতে বিশ্বের দরবারে ভারতের সুনাম ফিরে আসবে।

বিশিষ্ট সমাজতত্ত্ববিদ শ্রী আমিষ ফন্দীও এই পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি বলেন যে সমাজতত্ত্বের গবেষণা অনুযায়ী সংখ্যালঘুরা সর্বদা নিপীড়িত কাজেই তাঁরা নিপীড়ণকারী হতে পারেন না। তিনি সংখ্যালঘুদের ধর্ষণের আইনের আওতায় আনাকে ভারতীয সংস্কৃতির পরিপন্থী এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভ্রান্ত উত্তরাধিকার বলে বর্ণনা করেন। 

বিশিষ্ট টংগ্রেস নেতা হাসি ঠরুর জানান যে ২০১৪ সালে মহেন্দ্র নদী ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ বহু সংখ্যালঘুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। এবং আদালতে পুলিশের তৎপরতায় বহু ধর্ষণে অভিযুক্ত সংখ্যালঘুকে বিচারকরা দণ্ডিত করেছেন। এই সমস্ত কিছুই প্রমাণ করে যে ভারত হিন্দু পাকিস্তান হবার পথে। তিনি জানান যে পরবর্তী নির্বাচনে রাজপুত্র সিংহাসন ফিরে এলেই সংখ্যালঘুদের শুধু ধর্ষণ নয় সমস্ত রকম অপরাধের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে দেবেন।

নিউইয়র্ক টাইমসে এক প্রবন্ধে এই পিটিশনকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়েছে যে ভারতের আপন দেশের হিন্দু ধর্মজাত অসহিষ্ণুতা দূরীকরণের সেরা উপায় দেশের আইন ব্যবস্থার সংশোধন।

হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত সংখ্যালঘু নেতা আপদ-উদ্দিন হোয়াইসি এই পিটিশনকে ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য জরুরী বলেন। তিনি বলেন যে সরিয়ত আইন লাগু না হওয়া অবধি ধর্মনিরপেক্ষতা অসম্পূর্ণ থাকবে। তাই এই পিটিশন যদিও জরুরী তবু তা ধর্মনিরপেক্ষতার শেষ কথা নয়।

বিঃ দ্রঃ:সব চরিত্র কাল্পনিক। দয়া করে বাস্তবের সঙ্গে কোন সাদৃশ্য খুঁজবেন না।

ফীচার:  The Asian; ছবি প্রতীকী।