আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্দীপ্ত আহ্বান: ভারতের পুনরুত্থানশীল ভবিষ্যতের জন্য যা খেলা পরিবর্তনকারী

0
1266

লেখক: পখিকৃৎ পাইন

১২ই মে, ২০২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতিকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখেন এবং আত্মনির্ভর ভারতের নতুন কল্পনার বিস্তৃত নীলনকশার সাথেই ২০ লাখ কোটি টাকার একটি আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে তাঁর সরকার শুধুমাত্র ঘরোয়া কোম্পানিগুলির থেকে ক্রয়েই প্রধানত জোর দেবে তা নয়, তিনি দেশের কাছে স্থানীয় পণ্যের সমর্থন এবং সেগুলি বর্ধিত করার দরখাস্তও করেন। তিনি “ভোকাল ফর লোকাল”( স্থানীয়ের জন্য আওয়াজ) শব্দবন্ধের প্রচলন করেন এবং এবং আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার তাঁর সরকারের পরিকল্পনা পেশ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক আগামী দিনে একগুচ্ছ আর্থিক সংস্কারের কথা ঘোষণা করে, যেগুলি বিবিধ ক্ষেত্রকে অতীতের বাধাদায়ক নীতির শৃঙ্খল থেকে মুক্তির নীলনকশা বর্ণনা করে, এরপর একটি নতুন সরকারী নীতি ঘোষণা করা হয় যার অনুযায়ী কেবলমাত্র ঘরোয়া কোম্পানির জন্য সরকারী সঞ্চিতির পরিমাণ ২০০ কোটি পর্যন্ত বাড়ানো হয় এবং ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের সম্ভাব্য ক্ষমতা অবারিত করার জন্য এবং কর্মক্ষমতা প্রসারণের মাধ্যমে শুধু বড়ই নয় আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে প্রতিযোগী হয়ে ওঠার জন্য তাদের সাহায্য করার দিকে একটি নয়া দৃষ্টির দেওয়া হবে।

কিছু সংস্কার ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের সংজ্ঞা পরিবর্তনের সাথে সাথে এপিএমসি (APMC) অ্যাক্ট এর সংশোধন ঘটিয়ে কৃষকদের রাজ্য নিয়ন্ত্রিত কমিশনভোগী দালাল এবং ক্ষমতাশালী মধ্যস্থতাকারীদের প্রভাবের শৃঙ্খলমুক্ত করে তাদের ফসল যেকোন স্থানে এবং যেকোন জায়গায় বিক্রি করার প্রস্তাবও রেখেছে, যা ১৯৯১ এর পরে প্রচলিত ধারণাবিরোধী এবং সবচেয়ে সাহসী সংস্কারগুলির একটি।

সঙ্কটের সময়ে দেশের জন্য একটি সুযোগের জাল বোনা

যেকোন সমাজের জন্য একটি সংকট নতুন জ্ঞান এবং উপলব্ধির লহর নিয়ে আসে। সংক্রামক কোভিড ১৯ এর কারণে শুরু হওয়া অভূতপূর্ব অতিমারী এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশের এমন একটি নতুন ধারণার প্রয়োজন ছিল যা শুধুমাত্র এই বিশৃঙ্খল অবস্থা পেরিয়ে যাওয়া বা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্যই কার্যকরী হবে না, বরং দেশের উদ্যোগপতি, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা এবং কৃষকদের মধ্যে একটি “জান্তব তেজের” সঞ্চার এবং প্রসার ঘটাবে। এখান থেকে ভারতের পুনরায় স্বাভাবিকতার দিকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ফিরে যাওয়ার জন্য বৃদ্ধিজনিত সংস্কারের পরিবর্তে ভবিষ্যত স্থিতিস্থাপকতার জন্য একটি গঠনমূলক রূপান্তরের প্রয়োজন।

আগামী সময়েই মানুষের কাছে এটা প্রমাণ হয়ে যাবে যে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তার গুরুত্ব কী এবং তা কীভাবে একটি নতুন ভারত অবারিত করবে। তিনি যে দৃষ্টিভঙ্গির অর্থনীতির দিকে উদ্দীপ্ত আহ্বান দিয়েছেন তা অনেকেই এখনো বুঝে উঠতে পারেননি। তিনি “বৃদ্ধিজনিত পরিবর্তনের” জায়গায় “পরিমাণগত পরিবর্তনের” কথা উল্লেখ করেছেন, ঠিক যা এই মুহূর্তে ভারতের প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, “যখন বিশ্ব সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে, তখন আমাদের অঙ্গীকার করা উচিত- এমন একটি অঙ্গীকার যা এই সঙ্কটের থেকেও বড়। একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী বানিয়ে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই চেষ্টা চালানো উচিত। এবং সেটি সফল করার রাস্তাটি হল আত্মনির্ভরতার।”

প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, “যখন বিশ্ব সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে, তখন আমাদের অঙ্গীকার করা উচিত- এমন একটি অঙ্গীকার যা এই সঙ্কটের থেকেও বড়। একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী বানিয়ে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই চেষ্টা চালানো উচিত। এবং সেটি সফল করার রাস্তাটি হল আত্মনির্ভরতার।” তাঁর বক্তব্যে তিনি এই বিষয়েও কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন যে কীভাবে ভারত তার পিপিই এবং এন ৯৫ মাস্কের উৎপাদন ক্ষমতা আমুল রূপান্তরিত করেছে এই সংকটকালীন পরিস্থিতির মধ্যেই। “যখন এই আপদ শুরু হয়েছিল, একটিও পিপিই ভারতে তৈরি হত না। এন ৯৫ মাস্কও অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণে বানানো হত। আজ অবস্থা এমনই যে ভারত প্রতিদিন দুই লক্ষ পিপিই কিট এবং এন ৯৫ মাস্ক তৈরি করছে। আমরা এটা করতে সক্ষম হয়েছি কারণ ভারত আপদকে একটি সুযোগে পরিণত করতে পেরেছে। আমরা আরো আত্মনির্ভর হয়ে উঠলে আপদকে সুযোগে পরিণত করার ভারতের এই দৃষ্টিভঙ্গি বেশ প্রভাবশালী প্রমাণিত হবে।”, প্রধানমন্ত্রী বলেন।

অতীতের পূর্ববর্তিতা: ধ্বংস থেকে বিশ্বমান পর্যন্ত

চারদিকে অপরিমেয় ধ্বংসলীলার চিহ্ন রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। শুধু জার্মানি না জাপানই নয়, বিজয়ী পক্ষেও, যেমন গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স এমনকী সোভিয়েত রাশিয়াতেও যুদ্ধের মূল্য হিসাবে ধ্বংসস্তূপ এবং প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের বহুল রিক্ততা পরিলক্ষিত হয়, এবং এই ভেঙ্গে পড়া দেশগুলির পুনরুদ্ধারের জন্য যথেষ্ট টাকাও হাতে ছিল না কোন পক্ষেরই। জাপান এবং জার্মানির ক্ষেত্রে শারীরিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়াও গভীর মানসিক ক্ষয়ক্ষতিও সাধিত হয়েছিল।

কিন্তু তবুও, পরবর্তী চার দশক ধরে জাপান এবং জার্মানি উভয়ই এইরূপে কারিগরি দক্ষতার শৃঙ্গে পৌঁছে গেছে যেভাবে রূপকথার কোন ফিনিক্স পাখি তার ভস্ম থেকে পুনরায় জন্মলাভ করে। নবধারা এবং উৎকর্ষতার সঙ্গে এই দুটি দেশ যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। জাপানি এবং জার্মান ব্র্যান্ডগুলি ঘরে ঘরে পরিচিত। বিশ্বাসযোগ্যতার এমন একটি জায়গা তৈরি করেছে কয়েকটি জাপানি ব্র্যান্ড, যেমন সোনি, হিতাচি, সুজুকি, মিৎসুবিশি বা টয়োটা, যার সাথে কেবল এদের জার্মান সমকক্ষ ব্র্যান্ডের তুলনা চলতে পারে, যেমন সিয়েমেনস, ভক্সওয়াগন, ডায়েমলার, বিএমডাব্লিউ, বায়ের বা ব্রাউন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালীন পরিস্থিতিতে এই অনুমান খুব কমই ছিল যে জাপান বা জার্মানিতে তৈরি কোন জিনিসের মালিকানার কারণে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের জনৈক ব্যক্তি গর্ববোধ করবে।

কেন অতীতে ভুল করেও ভারত জাপান এবং জার্মানির মত সমৃদ্ধিলাভ করল

ঘটনাক্রমে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির মাত্র দুই বছর বাদে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তিলাভ করে। নিঃসন্দেহে একে দরিদ্র ও নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু কোনরূপ ধ্বংসকৃত পরিকাঠামোর সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হয়নি। ইঁট পাথরের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া দেশগুলির তালিকায় ভারতের নাম ছিল না। এটা সত্যি যে শুরুটা প্রাথমিক শিল্পোন্নয়ন দিয়েই হয়েছিল কিন্তু এখানে একটি প্রাথমিক পরিকাঠামো ছিলই। তবুও, ১৯৪৭ এর পরবর্তী চার দশক সময়কালেও শিল্পদক্ষতার ক্ষেত্রে জাপান বা জার্মানির ধারেকাছে পৌঁছানো যায়নি।

বরং এর বিপরীতে, নেহেরুর সংরক্ষক নীতিগুলির ফলে শিল্পোদ্যোগ যথেষ্ট জায়গার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এবং বাধাদায়ক শিল্প অনুমতি নীতি (লাইসেন্স পলিসি) এবং পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) রাজ যুগ্মভাবে তার শ্বাসরোধ করে দেয়।

বরং এর বিপরীতে, নেহেরুর সংরক্ষক নীতিগুলির ফলে শিল্পোদ্যোগ যথেষ্ট জায়গার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এবং বাধাদায়ক শিল্প অনুমতি নীতি (লাইসেন্স পলিসি) এবং পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) রাজ যুগ্মভাবে তার শ্বাসরোধ করে দেয়। সমাজতান্ত্রিক প্রবণতার কারণে একমাত্র ক্ষুদ্র শিল্পের দ্বারা অসংখ্য জিনিস তৈরি করার সংরক্ষণ নীতি এবং পুঁজি প্রতি একটি চিরাচরিত অবজ্ঞা ভারতীয় শিল্পকে কর্মক্ষমতা প্রসারণ বা বড় মাত্রায় উৎপাদনের ব্যয়-সংকোচনের সুবিধা নিতে দেয়নি, এবং ফলাফলস্বরূপ গুণগত এবং পরিমাণগত উভয়ক্ষেত্রেই বিশ্ববাজারে তার কোন উপস্থিতি দেখা যায়নি।

এপিএমসি (APMC) অ্যাক্টের মত কৃষিআইন ভারতীয় কৃষকের দামদর করেছে এবং ক্রয়ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। ফলে অনেককাল পর্যন্ত দেশীয় চাহিদা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায়নি। তাই ভারত একটি চিরস্থায়ী বিদেশী মুদ্রা সঞ্চিতি সংকট এবং টলমল অর্থনীতির পাশাপাশি খুঁড়িয়ে হেঁটে গেছে এবং নবধারা বা উচ্চাকাঙ্খার জন্য যথেষ্ট উৎসাহ মেলেনি।

দুঃখজনক ভাবে স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের নীতি সর্বদাই বৃদ্ধিজনিত এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে

সম্ভবত ভারতের কখনোই জাপান বা জার্মানির কাছাকাছি পৌঁছনো সম্ভব হয়নি এই কারণে যে জাপান বা জার্মানি ১৯৪৫ থেকেই সংখ্যাগত পরিবর্তনের কথা ভাবছিল যেখানে ভারতের নীতি নির্ধারকরা বৃদ্ধিজনিত পরিবর্তনের কথা ভাবছিলেন ১৯৪৭ থেকে। এমনকী ১৯৯১ সালে হঠাৎই উদ্ভুত পাওনা দেনের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) সংকটের কারণে অর্থনৈতিক উদারীকরণের সময়েও সংস্কারগুলি গঠনগত সংখ্যাজনক না হয়ে বৃদ্ধিজনিত ছিল।

সম্ভবত নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি প্রকাশ্যে সংখ্যাগত ভিত্তিতে, গঠনমূলক সংস্কারের মাধ্যমে এবং বিবিধ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্যোগের প্রবেশ নিষিদ্ধকারী নীতিগুলি বাতিল করার মাধ্যমে ভারতের ক্ষমতা অবারিত করার কথা বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে, জিএসটি এবং ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাংকরাপসি কোড অ্যাক্ট হল প্রধানমন্ত্রী মোদী দ্বারা লাগু করা গঠনমূলক সংস্কারগুলির কয়েকটি, যা পূর্ববর্তী সরকার বাস্তবায়িত করতে ইতস্তত করেছে।

ইতিহাসে প্রথমবার একজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতীয়দের একবিংশ শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী করে তুলতে অঙ্গীকার করতে বলেছেন, এবং ভারতকে আর তৃতীয় বিশ্বের একটি অর্থনীতি যা শুধু নাগাল পেতে চেষ্টারত এরূপ মনে করতে বন্ধ করতে বলেছেন। প্রথমবার কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক পরিষদে ভারতীয় শিল্পের প্রবেশ এবং আন্তর্জাতিক যোগানের অংশ করে তোলার অঙ্গীকার করার সঙ্কল্প করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে সমাজতন্ত্রের তকমা হারাবার ভয়ে প্রত্যেক রাজনীতিবিদই ভারতীয় শিল্পকে অন্ত্যজ শ্রেণীর রূপে দেখে এসেছেন, যদিও বাস্তবে জাতির দারিদ্র্য লাঘব করার ক্ষেত্রে সেই দেশের শৈল্পিক পরিকাঠামো একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য নয়া পথের একটি রেখাচিত্র: বৃহত্তর হয়ে ওঠার আকাঙ্খা

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বক্তব্যে যোগান শৃঙ্খলার প্রত্যেক দাবীদার ব্যক্তির কথা খেয়াল রাখার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এই দৃষ্টিভঙ্গিতে যে সহায়ক উদ্যোগ এবং সাহায্যকারী উৎপাদক, যার অধিকাংশই ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পের আওতায় আসে, পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করার আগে সেগুলির যেন যথেষ্ট প্রতিপালন বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের সংজ্ঞায় প্রাথমিক একটি পরিবর্তন এনে এবং তার মাধ্যমে তাদের বেড়ে ওঠার একটি যথেষ্ট জায়গা দিয়ে, মোদী সরকার ৬৩৪ লক্ষ শিল্পের ক্ষমতা অবারিত করছে, যা ভারতের জিডিপির প্রায় ৩০% তুলে দিলেও এখনো তার সর্বোচ্চ শক্তি লাভ করেনি।

মূলত, এর ফলে যা নিশ্চিত হবে তা হল ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পের পক্ষীরাজ ঘোড়াগুলির মধ্যে ক্ষুদ্রই থেকে যাওয়ার পরিবর্তে বৃহত্তর হয়ে ওঠার আকাঙ্খা জন্ম নেবে। তাদের নিজস্ব বৃদ্ধির কাহিনী এবং আন্তর্জাতিক যোগান শৃঙ্খলার অংশ হওয়ার যুগ্ম আকাঙ্খা ভারতকে কেবলমাত্র শিল্প বিপ্লবের একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেই দেবে না, উপরন্তু দেশজুড়ে কর্মক্ষেত্রে একটি বড় বিন্যাস তৈরি করবে যা শ্রমশক্তির বাড়ন্ত জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটাতে অপরিহার্য।

প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক বৃহৎ সংস্থাই একদা ক্ষুদ্র ছিল এবং তারপর এটি জলহস্তীর মত বড় হয়ে ওঠে

অনেক সময় ধরেই ক্ষুদ্র শিল্পকে রক্ষা করার নামে ভারত ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বাধামূলক নীতি প্রণয়ন করে এসেছে। কাউকেই আরো বড় হয়ে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

ক্ষুদ্র শিল্পের সহায়তাগুলি আর না পাওয়ার ভয়ে কোন শিল্পই বৃদ্ধির রাস্তায় হাঁটেনি। এর ফলে ক্ষুদ্র শিল্পের খিদে, বৃদ্ধি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যাহত হয়। ফলত, বহুক্ষেত্রেই ভারতের ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং অতি ক্ষুদ্র শিল্প চীনের শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারেনি কারণ ভারতের ক্ষুদ্র শিল্প বেশি মাত্রায় উৎপাদন করে ব্যয় কমানোর জন্য মাত্রাগত লাভ তুলতে পারেনি কারণ ভারতের নীতি এই পথে একটি বাধা ছিল। মোদী সরকারের ইচ্ছা হল ভারতীয় ক্ষুদ্র শিল্পকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় ওড়ার জন্য সক্ষম ডানা প্রদান করা।

এটা মনে রাখতে হবে যে জাপানি, জার্মান, আমেরিকান অথবা কোরিয়ান যেকোন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডই শুরুর দিকে ক্ষুদ্র একটি স্থানীয় প্রতিযোগী ছিল, যেমন ভারতের ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং অতি ক্ষুদ্র শিল্প, এবং তারপর তারা আঞ্চলিক বা দেশীয় ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করেছে, এবং অবশেষে তারা তাদের আন্তর্জাতিক যাত্রা এবং সুখ্যাতি, সম্মান এবং স্বীকৃতির দিকে লাফটি দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সরকার তাদের দেশের স্থানীয় কোম্পানিগুলিকে বিভিন্ন উপায়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উঠে আসার জন্য নিরন্তর সাহায্য করে গেছে। ব্যতিক্রম নয়, বরং চিন, রাশিয়া বা আমেরিকার ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক, যেখানে স্থানীয় কোম্পানি কম সুদে টাকা এবং সরকারি সাহায্য পেয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপে প্রবেশ করে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে এই প্রথম কোন ভারত সরকার এই একই সমাধানের দিকে এগোচ্ছে কারণ আজকের যুগে কোন দেশের প্রভাবশালী ক্ষমতা শুধু তার সামরিক শক্তি নয়, অর্থনৈতিক শক্তি দ্বারাও বিচার্য্য, যে শক্তি তার শিল্পের সামর্থ্য থেকে আসে। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকা তার স্থানীয় উৎপাদকদের সাহায্য করতে এবং দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে নিরন্তর একটি রক্ষণশীল স্থাপত্যের রেখাচিত্র এঁকে চলেছে এবং চেষ্টা করে চলেছে অনুকূল বাণিজ্য চুক্তিগুলির ব্যাপারে কথাবার্তা চালানোর। আন্তর্জাতিক সুরক্ষার বাজারে বেশ কিছু মুখ্য ব্যক্তিগত মালিকানার প্রতিযোগী আছে যাদের তাদের নিজের নিজের দেশের সরকারের দ্বারা আন্তর্জাতিক বাজারে সাহায্যপ্রাপ্ত।

১৯৪৭ থেকে যা পরম্পরাগত ভাবে চলে এসেছে: আমদানীকৃত দ্রব্যের অলীক কল্পনাপ্রসূত অভিলাষা এবং ভারতীয় নবধারার ক্ষয়

জাপানি বা জার্মান এমনকি ফ্রেঞ্চ বা কোরিয়ান বৃদ্ধির কাহিনীগুলিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির একটি হল যে এই দেশগুলির জনসাধারণ সর্বদাই নিজের নিজের দেশের দ্রব্যসামগ্রী কিনতে গর্ব অনুভব করে এসেছে। যদিও ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন থেকে উদ্ভুত অন্য একপ্রকারের সংস্কৃতি ভারতীয় মানসে গেঁথে গেছে যা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও একইভাবে উপস্থিত।

ভারতের স্থানীয় শিল্পগুলিকে ধ্বংস করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ব্রিটেন থেকে আমদানীকৃত দ্রব্যে দেশকে পর্যুদস্ত করে দিয়েছিল। যাঁদের এই দ্রব্য কেনার ক্ষমতা ছিল তাঁরা এই দ্রব্যগুলির মালিকানার মাধ্যমে সমাজের একটি উচ্চতর স্তরের অংশ হওয়ার অনুভূতি পেতেন। স্বাধীনতার পরে, দূরদৃষ্টিহীন রক্ষণশীল নীতি এবং ব্যক্তিগত মালিকানার শিল্পোদ্যোগের প্রতি একটি সন্দেহ ও সাধারণ অনীহার মিশ্রণ, সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থার জন্য সুরক্ষিত ক্ষেত্রগুলিতে ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্যোগের প্রবেশ এবং প্রতিযোগিতা নিষিদ্ধকরণ এটা নিশ্চিত করে যে নেহেরু-ইন্দিরার সমাজতান্ত্রিক যুগে উৎপাদিত দ্রব্য কখনোই বিশ্বমানের ছিল না কারণ সরকার কখনোই নবধারার প্রতিযোগিতামূলক প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বমানের দ্রব্য তৈরিতে উৎসাহ দেয়নি। ১৯৯১ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক উদারীকরণের পরেও কিছু ক্ষেত্রে এই ধারা চলতে থাকে। বাজারের সম্বন্ধ…

এইভাবে, যখন শাসকদলের অভিজাতরা বিদেশ থেকে আমদানি করা দ্রব্য ভোগ করে যাচ্ছিল, বেশিরভাগ জনসাধারণের স্বভাবতই একদিন বিদেশি দ্রব্য ভোগ করার ইচ্ছে থাকলেও তাদের সাধারণ মানের যেমনই জিনিস দেশীয় বাজারে তৈরি হত তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হত। এমনকি ভারতের সমাজতান্ত্রিক যুগে বিদেশি সাবান বা সুগন্ধির মত একেবারে প্রাথমিক জিনিস হাতে পাওয়াকেও গর্বের ব্যাপারে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়িত মনে করা হত।

১৯৯১ থেকে শুরু যাত্রা: প্রশংসনীয় হলেও এখনো ভারতীয় সংস্থার তার প্রকৃত ক্ষমতায় পৌঁছনো বাকি

১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারীকরণের পরবর্তী শৃঙ্খলামুক্ত পরিবেশে ভারতীয় শিল্পের নিঃসন্দেহে বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছিল এবং শেষ তিন দশকে ভারত ৩ লক্ষ কোটি ডলারের পরিশোধের হিসাবের সঙ্কটের তটবর্তী অবস্থা থেকে প্রায় ৪৮০

৪৮ হাজার কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রা সঞ্চিতির জায়গায় পৌঁছেছে। ২০১৮ সালে ফরচুন গ্লোবাল তালিকায় সাতটি ভারতীয় কোম্পানির নাম ছিল। অন্যান্য আন্তর্জাতিক তালিকাতেও নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ভারতীয় কোম্পানির নাম শামিল থাকে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গাড়ি শিল্প থেকে শুরু করে বিবিধ ওষুধ তৈরি বা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জগতে ভারতীয় কোম্পানিগুলি নিজেদের যুক্তিপূর্ণভাবে বেশ বিখ্যাত করে তুলেছে। বিগত দুই দশক ধরে ছোট বড় কয়েকশো বিদেশি কোম্পানি তাদের অনুরূপ ভারতীয় সংস্থার কিনে নিয়েছে যার ফলে ভারতের পদক্ষেপ পড়েছে আন্তর্জাতিক জগতে।

তবুও এখনো ভারতের প্রকৃত ক্ষমতা অবারিত হওয়া বাকি।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর আহ্বান শুধু স্থানীয় জিনিস আপন করে নেওয়ার জন্যই নয়, তিনি এদের জন্য আওয়াজ তুলতে অর্থাৎ এদের একপ্রকারের বানিজ্যিক মুখপাত্র হয়ে উঠতে বলেছেন, এবং ভারতের কোন সরকারি ব্যক্তির তরফে সম্ভবত এটাই আন্তর্জাতিক বানিজ্য জগতে ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে বৃহত্তর একটি অংশ অধিকার করতে সহায়তা করার সর্বপ্রথম কোন সমবেত প্রচেষ্টা।

সমস্ত ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত মালিকানার সংস্থার প্রবেশাধিকার এবং ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত টেন্ডারের ক্ষেত্রে শুধু ভারতীয় কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়ার মোদী সরকারের নির্ণয় অবশ্যই প্রভূত প্রশংসনীয়। এযাবৎ কেবল সরকারি সংস্থার জন্য সুরক্ষিত ক্ষেত্রগুলিতে ব্যক্তিগত মালিকানার জন্য খুলে দেওয়ায় একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা গড়ে উঠতে সাহায্য হবে এবং আমদানি হ্রাস করতে উচ্চতর গুণমানের দ্রব্য তৈরির জন্য নবধারা প্রণয়ন উৎসাহিত হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য বিশ্বমানের স্বদেশী দ্রব্য

আত্মনির্ভর ভারতের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর উৎসাহ দান এবং “স্থানীয়ের জন্য আওয়াজ” স্লোগান সাধারন স্বদেশী আন্দোলনের থেকে আরো বেশি কিছু যেটা, প্রকৃতপক্ষে মহৎ হলেও, আসলে চারিত্রিকভাবে আরো স্বাতন্ত্র্যবাদী ছিল। আসলে,

প্রধানমন্ত্রী মোদীর আহ্বান শুধুমাত্র ভারতীয় দ্রব্যকে ভারতে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য নয়, বরং এটাও সুনিশ্চিত করার জন্য যে এক সময় ভারতীয় দ্রব্য উচ্চ গুণমানের সমার্থক হয়ে ওঠে এবং বিশ্বজুড়ে ঘরে ঘরে সেগুলির নাম উচ্চারিত হয়। অন্য কথায়, বিশ্বায়নের অর্থ ভারতে বিদেশী লগ্নি আসাই শুধু হতে পারে না, বরং এটাও যে ভারতীয় কোম্পানিগুলি আন্তর্জাতিক হয়ে উঠুক এবং অন্যত্র বাজার ও পুঁজিতে বিনিয়োগ করে ভারতীয় পদক্ষেপ বিস্তৃত করুক।

যদিও এটা বহু বছর ধরে হয়ে আসছে তবে ভারতীয় সরকারের সহায়তায় এই প্রচেষ্টার প্রাতিষ্ঠানিকরণ প্রয়োজন।

বহু সময় ধরে জাপান বা জার্মানির আন্তর্জাতিক ক্ষমতা আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ওপর তাদের দখলের ওপর নির্ভরশীল, যেটা সাম্প্রতিক অতীতে চিনও অনুকরণ করেছে। গোল্ডম্যান স্যাক্স এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ২০৫০ এর মধ্যে তিন ট্রিলিয়ন থেকে ৩৮ ট্রিলিয়নের অর্থনীতির দিকে দীর্ঘ পরিমাণে লাফ যদি ভারতকে দিতে হয় তবে তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় কোম্পানির বড়সড় উপস্থিতি কালেভদ্রের ব্যতিক্রম না হয়ে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় রূপান্তরিত হতে হবে। আবার এরই সাথে “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতকে আন্তর্জাতিক উৎপাদনের একটি মুখ্য কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। সাম্প্রতিক অতীতে বহু আন্তর্জাতিক কোম্পানি তাদের আন্তর্জাতিক উৎপাদন কেন্দ্র ভারতে স্থানান্তরিত করার সুস্পষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে। এরই সাথে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে ভারতীয় কোম্পানিগুলি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি চিরস্থায়ী করতে গবেষণা ও উন্নয়নে আরো অর্থ ব্যয় করে, এবং নবধারা প্রণয়নকে নিয়মিত করে তোলে।

যোগান শৃঙ্খল এবং ভবিষ্যৎ বাজার উপাদান

কোভিড ১৯ সঙ্কট চলাকালীন ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল একটি ব্যাপক আকারের স্থানীয় যোগান শৃঙ্খল তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা, যার ফলে এই নিরন্তর মহামারীর মত আন্তর্জাতিক বাধাবিপত্তির সময়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন যেন বাধাপ্রাপ্ত না হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদীর জোর দেওয়া যোগান শৃঙ্খলার প্রত্যেকটি অংশীদার এবং যন্ত্রাংশ উৎপাদকদের যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ভারত দক্ষতা অর্জন করে ফেললে ভবিষ্যতে যোগান বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা দূর হবে। এটাও মনে রাখতে হবে যে ভারতে যন্ত্রাংশ তৈরি সেই যন্ত্রাংশগুলি জুড়ে সম্পূর্ণ যন্ত্র বানানোর মতই গুরুত্বের দাবীদার।

এটাও বাস্তব যে কোভিড ১৯ পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাজারের জগৎ বেশ বাধাদায়ক হবে। বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে করা লকডাউনের ফলে পুরো বিশ্বকে পঙ্গু করে দিয়ে একটি ব্যাপক গতিহীনতার করাল গ্রাস ছড়িয়ে পড়ছে। দ্রব্য এবং সেবার আন্তর্জাতিক চাহিদা নতুন নিম্নসীমার দিকে ধাবমান। তেলের দামের অভূতপূর্ব পতন এবং তেল রপ্তানিকারক অর্থনীতির ওপর তার প্রভাব এটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে শুধুমাত্র রপ্তানির ওপর নির্ভর করা একটি অর্থনীতি কতটা অসুরক্ষিত।

ভবিষ্যত উন্নতি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি আরো গভীর করে তোলার ওপর

অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির দিগন্ত আরো বিস্তৃত করার মধ্যে দিয়ে এটা নিশ্চিত হবে যে আন্তর্জাতিক বিপদের সময়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা দেশকে সুরক্ষিত করবে। এর সাথেই সম্পর্কিত হল এপিএমসি অ্যাক্টের সংশোধনসহ কৃষিক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি দৃঢ় পদক্ষেপ যা কৃষকদের শৃঙ্খলামুক্ত করে তাদের নিজেদের ইচ্ছামত ক্রেতাকে নিজেদের ফসল বিক্রি করার স্বাধীনতা দেবে। এর ফলে আশা করা যাচ্ছে যে কৃষকদের দরদাম করার ক্ষমতা ও ব্যয়যোগ্য আয় বৃদ্ধি পাবে এবং তার ফলস্বরূপ গ্রামীণ এবং আধাশহুরে ভারতে দ্রব্য ও সেবার চাহিদা বাড়বে, যা অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকেই আরো মজবুত করে তুলবে।

ভারতে সবে স্থিতিস্থাপকতা এবং পুনরুত্থানের একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছে

কোভিড ১৯ মহামারীর সবচেয়ে কঠিন সময় ভারত পেরিয়ে এসেছে এবং জগদ্বিখ্যাত পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় ভারতের কর্যসম্পাদন অনেকটাই ভালো। লকডাউন চলাকালীন আমেরিকার প্রায় চারগুণ জনসংখ্যার আমাদের দেশ যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণ নিয়মানুবর্তিতা পালন করেছে। নানারকম বাধাবিপত্তি থাকা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক স্বার্থে জনতাকে উত্তেজিত করা লোকজন থাকলেও, বিভিন্ন ধরণের লুক্কায়িত উদ্দেশ্য নিয়ে পরিবেশকে দূষিত করার চেষ্টা করা হলেও, জনগণ সম্মিলিতভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর লকডাউনকালীন অনুরোধ রক্ষা করেছে।

কোভিড ১৯ মহামারীর সবচেয়ে কঠিন সময় ভারত পেরিয়ে এসেছে এবং জগদ্বিখ্যাত পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় ভারতের কর্যসম্পাদন অনেকটাই ভালো। লকডাউন চলাকালীন আমেরিকার প্রায় চারগুণ জনসংখ্যার আমাদের দেশ যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণ নিয়মানুবর্তিতা পালন করেছে।

ব্যাপক বাধা পেরিয়েও ভারতীয় শিল্প শুধু টিকে থাকার ক্ষেত্রেই স্থিতিশীলতা দেখায়নি, বরং পিপিই, ভেন্টিলেটর এবং দরকারি ওষুধ উৎপাদন শুরু করার মাধ্যমে বিরাট পরিবর্তনও সাধিত করেছে। জনগণই একে অপরকে সাহায্য করেছে এবং সঙ্কট প্রতিরোধ করার জন্য কোন বাহ্যিক মদতের প্রয়োজন হয়নি। ভারত সবকিছু নিজেই সম্পাদিত করেছে এবং অন্যের দিকে সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছে।

স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামোসহ এবং ব্যবসা করার আরো সুবিধাজনক পরিস্থিতি গড়ে তুলে যদি প্রধানমন্ত্রী মোদীর আত্মনির্ভর ভারতের ধারণাটি যদি বাস্তবায়িত করা যায় তাহলে শুধুমাত্র একটি স্থিতিশীল দেশই নয়, কোটি কোটি মানুষের কঠিন পরিশ্রম, নবধারা প্রণয়ন এবং উদ্যোগের প্রচেষ্টার দ্বারা ভারত আন্তর্জাতিক জগতে অবদানের শ্রেষ্ঠ স্থানে আসীন হবে। তখন ২০২৫ এর মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, ২০৩২ এর মধ্যে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০৫০ এর মধ্যে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ( গোল্ডম্যান স্যাক্স এর দৃষ্টিভঙ্গিতে) হয়ে ওঠার যাত্রাটি অনন্য হবে এবং তখন জনগণ ২০২০ সালের ১২ই মে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আত্মনির্ভর ভারত সম্পর্কে দৃষ্ঠিভঙ্গীর প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করবে।

লেখক একজন দিল্লিতে বসবাসকারী নীতি বিশ্লেষক। মতামত ব্যক্তিগত। মূল লেখা থেকে অনুবাদ করেছেন শুভম ক্ষত্রী।