শবরীমালার উপর রায় অন্য যাই হোক নারীদের সাম্যের পক্ষে কোন রায় নয়

0
640

সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ের মাধ্যমে শবরীমালা মন্দিরের দরজা সব বয়সের মহিলাদের জন্য খুলে দিয়েছে। এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা আয়াপ্পা চির ব্রহ্মচারী। তাই রীতি ছিল যে কোন ঋতুমতী নারী এই মন্দিরে ঢুকবেন না। মন্দিরের কোন ভক্ত নন, এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন কিছু মহিলা। তাঁরা কারা একটু পরেই জানাচ্ছি। তাঁদের আপত্তি কেন আয়াপ্পার ভক্ত মহিলারা এই মন্দিরটিতে  ঋতুমতী হয়ে ঢোকেন না!

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুরুষ এবং মহিলা সবাই মন্দিরের রীতি মেনে চলেছেন। তাঁরা আয়াপ্পার ভক্ত তাই দেবতাকে দর্শন করার সময় দেবতার অপ্রিয় কিছু করতে নারাজ। তাই মন্দিরে ঢোকার সময় পুরুষ-মহিলা সবাই ব্রহ্মচারী থাকেন। মহিলারা ঋতুমতী হয়ে ঢোকেন না। মহিলারা ৫০ বছরের বেশী বয়সেই এই মন্দিরটিতে যান, তার আগে নয়। নাস্তিক মহিলারা যাঁরা আয়াপ্পার ভক্ত নন, যাঁরা এই রীতিতে বিশ্বাস করেন না, তাঁদের তো মন্দিরে যাবার কোন প্রয়োজন নেই, নয় কি? যদি তাঁদের কেউ এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ওখানে যানও, তবে নিশ্চয়ই এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে তাঁরা রাতারাতি ভক্ত হয়ে গেছেন, বরং এটা মনে করার সম্যক কারণ আছে যে তাঁদের উদ্দেশ্য হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাসের উপর আঘাত হানা, আর কিছুই নয়।

মন্দিরই হোক বা কোন উপাসনার স্থান, তার রীতি নীতি নিশ্চয়ই সেকুলার কোন কোর্ট স্থির করতে পারে না। তার নিয়ম ধর্মদর্শন এবং ঐ দেবতার উপাসনার রীতিমাফিকই হবে। সেকুলাররা নিজেরাই বলেন যে তাঁরা ধর্মের নীতিতে বিশ্বাসী নন।  তাহলে তাঁরা ধর্মের ব্যাপারে কথা বলতে আসেন কেন যখন কোন ভক্ত তাঁদের কাছে যান নি। মন্দির তো কোন ট্যুরিষ্টদের জায়গা নয় যে তাঁরা ফটো তোলার জন্য সেখানে যাবেন। আর এঁরা সব চান একটাই জিনিস, তাঁরা চান হিন্দুদের মন্দিরকে মিউজিয়ামে পরিণত করতে। মৃত বা নাস্তিক হিন্দুরাই তাঁদের চোখে একমাত্র ভালো হিন্দু।

শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ হিন্দু মন্দিরেই কোনরকম কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ব্যতিক্রম শবরীমালা বা শনি শিংজ্ঞাপুর মন্দির। এক্ষেত্রগুলিতেও সমস্ত মহিলার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বরং মন্দিরটির দর্শনের উপর ভিত্তি করে দর্শন মোতাবেক কিছু বিধি। সব সময় যে মহিলাদের উপরই নিষেধ তাও নয়। আট্টুকাল  বা চাক্কুলাতুকাবু বলে কেরালার দুটি মন্দিরে পুরুষদের ঢোকা নিষেধ। দুই মূল আবেদনকারীর একজন হলেন ইণ্ডিয়ান ইয়ং লইয়ারস্ এসোশিয়েশনের সভাপতি নৌশাদ আহমদ খান, যিনি না হিন্দু না মহিলা। তিনি কেন এই রীতিনীতিকে নারীদের প্রতি বৈষম্যের ঘটনা হিসাবে দেখেছেন তা অস্পষ্ট। এটা হয়ত হিন্দুবিদ্বেষের নমুনা মাত্র। তাঁর চোখে ইসলামের কেবল পুরুষদের বহুবিবাহ হয়ত বৈষম্য হিসাবে লাগে না, তাই তা নিয়ে পীটিশনে যান নি।

কোন হিন্দু মহিলাদের তাঁরা প্রতিনিধিত্ব করছেন? যাঁরা নিজেদের বৈঠকখানায় বসে নাস্তিক বলে নিজেদের নামে সোস্যাল মীডিয়া একাউণ্ট বানান আর  সুফী সঙ্গীতের চর্চা করেন নাকি  যাঁরা উপযুক্ত বয়সের প্রতীক্ষা করে ঐস্থানে তীর্থযাত্রা করেন বিধিবদ্ধ রীতিতে? কতজন ঐরকম ভক্তিমতী মহিলার সাথে তাঁরা কথা বলেছেন আর তাঁদের অনুমতি নিয়েছেন? নাকি এটি এক লিবারেলদের খবরদারি?

মনে পড়ে তৃপ্তি দেশাইকে? ইনি সেই তথাকথিত নারীবাদী কর্মী কিন্তু যাঁর আচরণে মনে হয় এক হিন্দুবিদ্বেষী কর্মী? ইনিই শনি শিংজ্ঞাপুর মন্দিরে স্থানীয় মহিলাদের আপত্তি সত্ত্বেও ঐ মন্দিরে ঢুকেছিলেন। এই অত্যুৎসাহী মহিলা এখন কোথায়? কবার তিনি গেছেন সেই মন্দিরে? সেইরকম কয়েকজন “সমানাধিকার প্রাপ্ত” মহিলা এবার শবরীমালায় যাবেন, ফটো তুলতে। তারপর তাঁরা শবরীমালাকে অপবিত্র করার পর তাকে ভুলে যাবেন।

এঁরা সব  হাই সোসাইটির মহিলা যাঁরা ঠিক করে দেন নারীবাদ কি হওয়া উচিৎ? তাঁদের কথা না শুনলে নারীবিরোধী বলে প্রতিপন্ন হতে হয়। একই অবস্থা হয়েছে সুপ্রীম কোর্টের এই রায়ের বেঞ্চে উপস্থিত একমাত্র মহিলা বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রার ক্ষেত্রে। যিনি শবরীমালাকে সবার জন্য খুলে দেবার এই রায়ের বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেছেন, কোর্টের অধিকার নেই নিজেদের সমানতার ধারণা কোন ধর্মীয় ব্যাপারে ফলানোর যদি না তা সতীদাহের মত কিছু হানিকারক না হয়।

এই সব লিঙ্গভিত্তিক সমানতার কর্মীরা কি করছেন অন্য ধর্মীয় মতবাদের উপাসনাস্থন নিয়ে, কি করছেন তাঁরা মসজিদের নারীদের নমাজ নিয়ে, এইসব প্রশ্নের মধ্যে আমি আর গেলাম না। বরং প্রশ্ন করছি এঁরা কি নারীদের বাস্তব সমস্যাগুলি নিয়ে চিন্তিত? শবরীমালার একটি মন্দিরের হিন্দু আচার নারীদের সমস্যা নয়। চার্চে সন্ন্যাসিনীদের বিশপের দ্বারা নিয়মিত ধর্ষণ নারীদের সমস্যা। মাদ্রাসায় ধর্ষণ নারীদের সমস্যা। চার্চের ধর্ষণে অভিযুক্ত এক বিশপ দিনের পর দিন সসম্মানে কিভাবে ঘুরে বেড়াতে পারেন, তা নিয়ে এঁরা চিন্তিত নন।

আমি এক হিন্দু মহিলা এবং আমি শবরীমালায় ঢোকার জন্য উপযুক্ত সময়ের প্রতীক্ষা করতে রাজী। আমি না হয় বাঙালী, কিন্তু আমি একা নই। তামাম কেরালার সমস্ত মহিলাই একথা বলছেন। আমাদের #ReadyToWait  আন্দোলনের মূল ব্যক্তিই এক মালয়ালি নারী, অঞ্জলি জর্জ। আমাকে ঠকিয়েছে এই নারীবাদী আবেদনকারীরা আমার তীর্থস্থান অপবিত্র করে। আমাকে পরাজিত করেছে এক পক্ষপাতী বিচারব্যবস্থা হিন্দু তীর্থস্থান নিয়ে হিন্দুবিদ্বেষী পীটিশনকে গ্রহণ করে। আমি এখন ক্রুদ্ধ….ভীষণ ক্রুদ্ধ।