ইসলামপুর দাড়িভিট – সদ্যপ্রাপ্ত কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য

0
968

উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিটে ২০ সেপ্টেম্বর বাংলা শিক্ষকের দাবিতে আন্দোলনে নামে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে রাজেশ সরকার গুলি লেগে ঘটনাস্থলে মারা যায়। আর এক ছাত্র তাপস বর্মণ মারা যায় হাসপাতালে। ঘটনায় গুলিতে আহত হওয়া ছাত্রদের মধ্যে তৃতীয়জন, যার নাম বিপ্লব সরকার, বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছেন।

এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, হচ্ছে। সাংবাদিকতার সূত্রে এই ঘটনা সম্পর্কে যা জানতে পেরেছি তা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। নীচে লেখা এই রিপোর্টের পুরোটাই নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রছাত্রী এবং দাড়িভিট স্কুলের শিক্ষকদের দেওয়া বিবরণ মাত্র। এখানে লেখক অর্থাৎ আমার কোনও নিজস্ব অভিমত নেই।

প্রথমেই চোখ রাখব ১১-১২ শিক্ষক নিয়োগে। কারণ ইসলামপুরের ঘটনাটির সূত্রপাত ১১-১২ শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে WBCSSC 1ST SLST-র নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এরপর viva voce  র জন্য ডাকা হয় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ফাইনাল রেজাল্ট বেরোয়।

আগস্ট, ২০১৮ তে WBCSSC 1ST SLST-র সফল পরীক্ষার্থীদের স্কুল বাছাই করার জন্য কাউন্সিলিংয়ে ডাকা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতার সল্টলেক সেক্টর-২ এর ডিরোজিও ভবনে WBCSSC 1ST SLST-র সফল প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়া শুরু হয়। এরপর নিয়োগপত্র পাওয়া নতুন শিক্ষকদের বেশ কয়েকজন নির্দিষ্ট স্কুলে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শূন্যপদ নেই। বরং সেই স্কুলে রয়েছে নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য শিক্ষকের শূন্যপদ অর্থাৎ নরম্যাল সেকশন। এই সমস্যার সম্মুখীন সবচেয়ে বেশী হতে হয় উত্তর দিনাজপুরের স্কুলগুলিকে।(এই খবর বেশ কয়েকদিন আগেই সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তার লিঙ্ক দিলাম)

দাড়িভিট স্কুলেও একই সমস্যা ছিল। এই স্কুলে উর্দু এবং সংস্কৃত শিক্ষকের যে পোস্ট ছিল, তা ছিল নরম্যাল সেকশন অর্থাৎ নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য। কিন্তু ২০১৮ অাগস্টে WBCSSC 1ST SLST-র সফল পরীক্ষার্থী মোহাঃ সানাউল্লাহ রাহমানী ২০১৮ আগস্ট মাসে হওয়া কাউন্সিলিং-এ দাড়িভিট স্কুল নির্বাচন করেন। এখানে অবশ্যই সানাউল্লাহ মহাশয়ের কোন ভুল নেই। ভুল হয়েছে SSC কর্তৃপক্ষের, যে তারা দাড়িভিট স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষক পদগুলি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পোস্ট বলে দেখিয়েছিলেন। সানাউল্লাহ মহাশয়ের শিক্ষক পদ যে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য, তার স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে সানাউল্লাহ মহাশয়ের নিয়োগপত্রে চোখ রাখব। (যদিও এটার প্রয়োজন নেই কারণ সবাই জানেন দাড়িভিট স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ঝামেলা হয়েছে।)

নিয়োগপত্র: WBBSE/App./UDJ/URDU-(PG)/AT-0223

 

 

 

 

 

 

 

 

মোহাঃ সানাউল্লাহ রাহমানী একজন গরীব সংখ্যালঘু। তার কি দোষ? তিনি যে স্কুলে চাকরি পেয়েছেন সেই স্কুলে করতে যাবেন। কেন তিনি পরিশ্রম করে পাওয়া চাকরি ছাড়বেন? আচ্ছা, স্কুলে যোগ দেওয়া ছাড়া কি মোহাঃ সানাউল্লাহ রাহমানীর কাছে আর কোন উপায় ছিল না? আসি এর উত্তরে – ছিল, অবশ্যই ছিল। এই নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষকের পোস্টগুলোকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পোস্টে কনভার্ট করার সিদ্ধান্ত কিন্তু পরের দিকে নেন ডিআইরা। তার আগে এসএসসি এবং ডিআই (স্কুল পরিদর্শক)দের সর্ব সম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যার কথা সবাই চেপে যাচ্ছেন। কী সেই সিদ্ধান্ত?

যে সমস্ত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষকরা অর্থাৎ WBCSSC 1ST SLST-র সফল পরীক্ষার্থীরা ভুল স্কুল (অর্থাৎ যেখানে ৯-১০ শ্রেণীর শূন্যপদ রয়েছে, দাড়িভিট স্কুলের মতো) নির্বাচন করে ফেলেছেন তারা ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি রিফিউজাল লেটার লিখিয়ে নিয়ে সেই জেলার ডিআই অফিসে যাবেন এবং সেখানে প্রধান শিক্ষকের রিফিউজাল লেটার দেখিয়ে আরও একটি লেটার (ডিআই কর্তৃক দেওয়া) নিয়ে, WBCSSC -এর কেন্দ্রীয় অফিসে জমা করবেন এবং একটি কপি জমা করবেন বিকাশভবনে বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরে। এবার WBCSSC কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য নতুন স্কুল (যেখানে ১১-১২ শ্রেণীর শূন্যপদ রয়েছে) নির্বাচন করে দেবেন। এই পদ্ধতি অনেক হবু শিক্ষকই ফলো করেছেন। এটা মোহাঃ সানাউল্লাহ রাহমানীও ফলো করতে পারতেন, বা তাকে এই ফলো করার নির্দেশ দেওয়া যেত। এতে কোনভাবেই ওনার চাকরি যেত না। দাড়িভিট স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষকের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম খাটে।

এরপর হঠাৎ করে উত্তর দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার ডিআই অফিস সিদ্ধান্ত নেয়, না এসব করতে হবে না বরং এই নবম-দশম শ্রেণীর পোস্টগুলিকেই একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে কনভার্ট করে দেওয়া যাক এবং ওনারা তাই করেন। যারা বলছেন ডিআই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দাড়িভিট স্কুলে উর্দু-সংস্কৃত শিক্ষক নিয়োগ হবে না কিন্তু ডিআই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কে? তাদের জানাই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে ডিআইদের ক্ষমতা অনেকটাই।

এরপর আসে দাড়িভিট স্কুলে ছাত্রদের দাবি,  “জোর করে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে উর্দু এবং সংস্কৃত শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না!” এটা কতটা ঠিক, কতটা ভুল!

আগেই বলেছি দাড়িভিট স্কুলে শিক্ষকের যে শূন্যপদ ছিল তা নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য। কিন্তু দাড়িভিট স্কুলে উর্দু এবং সংস্কৃত শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছিল একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য। বিষয়টিকে জোর করে বলা যায়? কি মনে হচ্ছে এবার ছাত্রছাত্রীদের দাবি ভুল না ঠিক?

প্রসঙ্গত,  ইসলামপুরের দাড়িভিটসহ যে কোন স্কুলে নবম-দশম শ্রেণী থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে শিক্ষকের শূন্যপদগুলি কনভার্ট করার ব্যাপারে সর্বময় ক্ষমতা কিন্তু ডিআইদের হাতে। তাই দাড়িভিট স্কুলে দেওয়া ডিআই-এর লিখিত প্রতিশ্রুতি, “এই স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে উর্দু এবং সংস্কৃতের শিক্ষক নিয়োগ হবে না” শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, অর্থবহও বটে। যে প্রতিশ্রুতি রাতারাতি কেন পরিবর্তন হল তা আমরা পরে বোঝার চেষ্টা করব। এখানে বলে রাখি সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু ডিআইদের দ্বারা কনভার্ট করা সমস্ত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পদগুলিকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

এখন আমি আমার বক্তব্যের স্বপক্ষে একটি প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব। ইসলামপুরের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পরের দিন থেকেই এই চিঠিটা সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর অনেকেই নিজের মতো এটার মানে করে নিচ্ছেন, ” আমাদের স্কুলে সংস্কৃত ও উর্দু বিষয়ের কোন শিক্ষকের দরকার নেই” এই মর্মেই নাকি চিঠিটা লেখা হয়েছে। কিন্তু আসলে কি তাই? এখানে কি লেখা রয়েছে চলুন দেখে নিই আমরা।

  “…the Urdu PG teacher and Sanskrit PG teacher that has been appointed for this school be withdrawn as there is no post in H.S section. “এর বাংলা মানে করলে দাঁড়ায়, ” এই স্কুলে যে উর্দু পিজি শিক্ষক ও সংস্কৃত পিজি শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছে তাদের অপসারিত করা হল কারণ এই স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের কোন পদ নেই।” অর্থাৎ এই চিঠিটির কোন অংশে দাড়িভিট স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দাবি করেননি যে আমাদের এখান থেকে উর্দু শিক্ষককে তাড়িয়ে দাও। বরং এই চিঠি প্রমাণ দেয় যে দাড়িভিট স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর উর্দু এবং সংস্কৃতের শূন্যপদই ছিল না।

শ্রী তপনকুমার মজুমদার, বর্তমানে যিনি দাড়িভিট স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্য, নামক এক ব্যক্তির বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সেটায় চোখ বোলানো যাক। ” ১৮ ই সেপ্টেম্বর (ডিআই এবং বিডিওর উপস্থিতিতে) দাড়িভিট হাইস্কুল পরিচালন সমিতির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, উর্দু ও সংস্কৃতের শিক্ষককে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু এরপর পরিচালন সমিতির অধিকাংশ সদস্যদের অন্ধকারে রেখে রাতারাতি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে ওই দুই শিক্ষককে জয়েন করানো হয়। এজন্য আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহ-প্রধান শিক্ষক এবং ডিআই-এর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ইসলামপুর থানা সেই অভিযোগ নেয়নি।” (সূত্র – আনন্দবাজার পত্রিকা – link – https://www.anandabazar.com/state/islampur-shooting-fingers-at-tmc-feud-for-school-fiasco-1.869602?ref=archive-new-stry)

২০০৮ সালে উচ্চবিদ্যালয়টিতে একজন উর্দু শিক্ষক নিযুক্ত হন। নাম মোহঃ সাজ্জাদ হোসেন। ২০১৪ পর্যন্ত তিনি স্কুলে উর্দু পড়ান। ২০১৪ সালে ইনি অসুস্থ হওয়াতে প্রায় তিনমাস স্কুলে আসতে পারেননি। সেকারণে উর্দু পঠনপাঠন বিঘ্নিত হয়, এবং উর্দুর ছাত্রছাত্রীরা অন্য স্কুলে চলে যান। যে স্কুলের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উর্দুবিদ্বেষী এবং সাম্প্রদায়িক ট্যাগ লাগানো হচ্ছে, তারা ২০০৮ থেকে ২০১৪, এই ছ-বছরে উর্দু শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেনি কিন্তু!

তাহলে দাড়িভিটের ছাত্রছাত্রীরা কি উর্দুর বিরোধিতার জন্য এই আন্দোলন করছিল? নাকি সত্যিই ওদের বাংলাসহ অন্য বিষয়ের শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল? কারণ ইসলামপুরের মতো বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে যেখানকার ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বঞ্চিত হন, তাদের কাছে শিক্ষা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনও সন্দেহ নেই। আর এটাও ঠিক পশ্চিমবঙ্গে চাকরিসহ একাধিক পরীক্ষায় উর্দু অপেক্ষা মাতৃভাষা বাংলা এবং সরকারি ভাষা ইংরেজীর প্রয়োজনীয়তা বেশি।

এরপর আসি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাড়িভিট স্কুলের একজন ছাত্রীর কথায়।

আসলে কী হয়েছিল ২০ সেপ্টেম্বর?

” আমরা ১৮ তারিখে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করি জোর করে (পড়ুন নবম-দশম থেকে একাদশ-দ্বাদশে কনভার্ট) উর্দু এবং সংস্কৃত শিক্ষকের নিয়োগের বিরুদ্ধে। পুলিশ আসে, ডিআই এবং বিডিও আসেন এবং আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিশ্রুতি দেন এখানকার পদগুলি কনভার্ট করে উর্দু শিক্ষক নিয়োগ হবে না। উনি লিখিতও দেন। এরপর রাতারাতি কেমনভাবে যেন এই সিদ্ধান্ত বদলে যায়। ২০ তারিখ আমরা স্কুলে গিয়ে জানতে পারি উর্দু এবং সংস্কৃতের শিক্ষকরা এসেছেন স্কুলে যোগ দিতে। আমরা আবার রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করি। পুলিশ আসে। আমাদের নানা রকম ভয় দেখানো হয়। বলা হয় দেখ না তোদের সঙ্গে কাবাডি খেলব। আমরা তাও আন্দোলন করতে থাকি। এরপর আমাদের মধ্যে কেউ কেউ গিয়ে স্কুলের মেইন গেট বন্ধ করে সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে থাকে। পু্লিশ লাঠি চার্জ শুরু করে। এরপর ঝামেলা বাড়তে শুরু করে। আমাদের বাড়ির দাদা দিদিরাও আসে। তারাও মার খায়। আমাদের মধ্যে থেকেও এক দুজন মারে ওদের। এরপর পুলিশ স্কুল থেকে উর্দু স্যার ও সংস্কৃত স্যারকে গাড়িতে করে বের করে নিয়ে যায়। আমরা গাড়ির সামনে এগিয়ে গেলে পুলিশের গাড়ি থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়। মৌ সরকারের (রাজেশ সরকার) দাদার গায়ে গুলি লাগে। রক্ত বেরোচ্ছিল খুব। আমরা ওখান থেকে সরে আসি। আমরা ঠিক করেছি আর স্কুলে যাব না। ওরা আমাদের গুলি করে মারবে, স্কুলে গিয়ে কি লাভ?”

একটা অভিযোগ উঠেছে, দাড়িভিটের ছাত্রছাত্রীরা নাকি দরজা বন্ধ করে স্কুলের শিক্ষকদের (নতুন যোগ দেওয়া উর্দু এবং সংস্কৃত শিক্ষক সহ) শাবল, গাঁইতি নিয়ে আক্রমণ করেছিল। এ বিষয়ে দাড়িভিট স্কুলের এক শিক্ষিকাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ” মিথ্যে কথা, একেবারে মিথ্যে কথা। আমরা দেখলাম নতুন শিক্ষকরা স্কুলে এসেছেন। কমন রুমে রয়েছেন। আস্তে আস্তে ছাত্রছাত্রীরাও খবর পায় এবং বাইরে বেরিয়ে আন্দোলন করতে থাকে। আমাদের উপর কোনও রকম আক্রমণ ওরা করেনি। আমরা শুনতে পাই পুলিশ আসবে। তাই টিফিনের সময় বাড়ি চলে আসি। এরপরই পুলিশ আসে। তারপর এই ঘটনা। যেখানে ওই উর্দু এবং সংস্কৃত শিক্ষক জানতেন ১৮ তারিখ কি সিদ্ধান্ত হয়েছে সেখানে চুপিসারে ওনাদের জয়েন করতে আসাটা একেবারেই ঠিক হয়নি।”

আচ্ছা আপনাদের দাড়িভিট স্কুলে তো একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর উর্দু শেখার ছাত্রছাত্রী নেই। তাহলে কেন এত জোর করে এই নিয়োগ? এর উত্তর এড়িয়ে গিয়ে শিক্ষিকা বলেন, ” এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। তবে আমরা ইসলামপুরের বাসিন্দা কিনা, আপনি এই প্রশ্ন যাকেই করবেন সেই বলে দেবে কি কারণ।” দাড়িভিট স্কুলের ওই শিক্ষিকা যে বিষয়ে ইঙ্গিত করতে চাইলেন তা নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই। কারণ, কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু এরপরই আমি আপনাদের দুটি সংবাদপত্রে বেরনো রিপোর্টের কথা বলব, অবশ্যই লিঙ্ক সহ।

১) Kolkata24x7

https://kolkata24x7.com/urdu-teacher-has-been-appointed-in-darivit-school-by-the-pressure-of-rabbani-investigation-report.html

২) আনন্দবাজার

https://www.anandabazar.com/state/islampur-shooting-fingers-at-tmc-feud-for-school-fiasco-1.869602?ref=archive-new-stry 

এই দুই সংবাদমাধ্যমেই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কথা বলা হয়েছে। এখন এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাদের মধ্যে?

ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক কানাইলাল অগরওয়ালের এবং গোয়ালপোখরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী গোলাম রব্বানির মধ্যে বলেই খবর।

ইংরেজদের আমল থেকে আমরা দেখে আসছি সাম্রাজ্যবিস্তার করতে গেলে ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইংরেজরাও কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করার জন্য ইংরেজী ভাষা চাপাতে শুরু করেছিল ভারতীয়দের উপর। বাংলাদেশের সীমান্তে থাকা মুসলিমঅধ্যুষিত ইসলামপুর অঞ্চলের দাড়িভিটে কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে আসা বাংলাদেশী হিন্দুদের বসবাস বেশি। যারা বাংলাকেই প্রাধান্য দেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা রব্বানি সাহেব খুব স্বাভাবিকভাবেই উর্দু শিক্ষার বিস্তার চাইবেন। অন্তত দুটি খবরের রিপোর্ট সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। না হলে দূরদেশ থেকে বয়ে নিয়ে গিয়ে দাড়িভিটে উর্দু শিক্ষক নিয়োগের আর কী কারণ থাকতে পারে? বিশেষ করে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে ইসলামপুর এবং ওই সন্নিহিত বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চল থেকে কিন্তু মাঝেমাঝেই “বাংলাভাগের” ডাক ওঠে।

একজন হিন্দু হিসেবে কানাইলাল অগরওয়াল হয়ত এসবের বিরোধিতা করতে গিয়েছিলেন, হয়ত। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত এ রকম বেশকিছু “হয়ত”র উপরেই নির্ভর করে থাকতে হবে সাধারণ মানুষকে।