রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলেছে সৌদি আরব, রোহিঙ্গাদের বৈধ কাগজ প্রদানের জন্য চাপ

0
581

বঙ্গদেশ ডেস্ক:আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন যে ঢাকা কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবে বসবাসরত কিছু রোহিঙ্গাকে আইনী দলিল সরবরাহ করতে পারে। মুসলিম রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি জাতিগত সংখ্যালঘু। তবে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমের জন্য তাদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করায় কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গারা অন্য দেশে প্রবেশ করছে যাদের বেশিরভাগই প্রতিবেশী বাংলাদেশে চলে গিয়েছে।

প্রায় ৪০ বছর আগে সৌদি আরব প্রায় দশ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়েছিল যারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। সৌদি সরকার ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকাকে জানায় যে তাদের রাজ্য “রাষ্ট্রহীন মানুষ রাখে না”, আর তাই বাংলাদেশ শরণার্থীদেরকে পাসপোর্ট প্রদান করলে তা “সহায়ক” হবে। সৌদি আরবের রোহিঙ্গাদের কোনও দেশের পাসপোর্ট নেই। এমনকি যেসব রোহিঙ্গা সন্তান সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আরবী ভাষায় কথা বলে তাদেরও সৌদি আরবের নাগরিকত্ব দেওয়া হয় না যদিও সৌদি মুসলিমদের মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে বাংলাদেশও রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মোমেনের বক্তব্য এই যে, ঢাকা সৌদিতে বসবাসরত কিছু রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এর ফলে মিয়ানমারের সাথে প্রত্যাবাসন আলোচনায় সৌদি আরব দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেবে। 

আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমকে মোমেন জানান, “আমরা এই বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি এবং তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছি যে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব ভ্রমণকারী রোহিঙ্গাদের পাসপোর্টগুলো আমরা নবায়ন করবো।” বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আরও জানান যে, “অনেক রোহিঙ্গা দেশটির পাসপোর্ট পেতে বাংলাদেশী কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছে। ২০০১, ২০০২ এবং ২০০৬ সালে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব ভ্রমণ করেছিল। কিছু দুর্নীতিগ্রস্থ বাংলাদেশী কর্মকর্তা তাদেরকে এই দলিলগুলো সরবরাহ করেছে।” বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী অবশ্য এটাও জানিয়েছেন এই রোহিঙ্গাদের জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের জন্য ঢাকা দায়বদ্ধ থাকবে না।

বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আরও বলেন, “এই রোহিঙ্গারা সত্তরের দশক থেকে বাংলাদেশে বাস করছে না। তাদের সন্তানরা অন্যান্য দেশে জন্মগ্রহণ করেছে ও বেড়ে উঠেছে। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাদের আরব হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে। সৌদি সরকার সমস্ত রোহিঙ্গাকে নির্বাসন দিতে চায় না। যারা ইতিমধ্যে সৌদি নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন তারা সেখানেই থাকবেন।” প্রায় ৩,০০,০০০ রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে সৌদি আরবে ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন। রিয়াদ যে ৫৪,০০০ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে চায় তারা সৌদি আরব ভ্রমণ করার সময় হয় তাদের অনেকের কাছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ছিল বা তারা মধ্য প্রাচ্যের দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশী কনস্যুলেট থেকে তা পেয়েছিল।

ঢাকা ভিত্তিক শরণার্থী ও অভিবাসী আন্দোলনের নির্বাহী পরিচালক সিআর আবরার ওই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেছেন যে এই লোকদের যদি বাংলাদেশের নথি থাকে তবে ঢাকা অবশ্যই তাদের দায়িত্ব নেবে। তবে তিনি প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়ার জন্য রিয়াদের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি খুব বেশি শক্তিশালী নয়, এই লোকদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনেক সাহস দেখিয়েছে। সৌদি আরবের উচিত নয় যে এই দেশটির উপর আরও চাপ সৃষ্টি করা।” বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে বাংলাদেশ যদি সৌদি আরব থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে গ্রহণ করে তবে মায়ানমার প্রত্যাবাসন মামলাটি দুর্বল করে দেবে। মিয়ানমার তাদের সুবিধার্থে এটি ব্যবহারের চেষ্টা করতে পারে এবং বাংলাদেশকে আরও রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করতে পারে। ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশিষ্ট অধ্যাপক অলি রিয়াজ বলেছেন যে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি জটিল পরিস্থিতি। তিনি অবশ্য বিশ্বাস করেন যে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের আলোচনায় সৌদি ইস্যুটির প্রভাব পড়বে না। রিয়াজ আরও বলেছেন যে এগুলো আলাদা বিষয়। কিছু রোহিঙ্গাকে নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ এই নয় যে বাংলাদেশ পুরো জাতিগোষ্ঠীকে তাদের নিজস্ব লোক হিসেবে গ্রহণ করবে।