বিধাতার হাতে লেখা গান – ৩৮

 অভীক মুখোপাধ্যায়

(সপ্তত্রিংশত্তম পর্বের পর)

পর্ব – ৩৮ 

কেনেডির সঙ্গে মনরোর পুরোনো সম্পর্ক ছিল। রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগেই জন মনরোর সঙ্গে ম্যানহাটন আর লস এঞ্জেলস-এ রাত কাটিয়েছিলেন। কিন্তু মনরোর ব্যক্তিত্ব মনরোকে আর পাঁচজন মেয়ের মতো শুধুই জন এফ কেনেডির গার্লফ্রেন্ড কিংবা শয্যাসঙ্গিনী তকমায় আটকে থাকতে দেয়নি। তাঁদের সম্পর্ক তাঁদের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারত। যদি মনরো আর কেনেডির সম্পর্ক আরও বেশিদিন, আরও গভীরে গড়াত, তাহলে হয়তো কেনেডির বিয়েটাই ভেঙে যেত। তাই কেনেডি এই সম্পর্ক থেকে সরে আসেন। আরও একটি কথা শোনা যায় — ববি কেনেডির সঙ্গেও মেরিলিনের শারীরিক সম্পর্ক ছিল। এই খবর নাকি গোটা কেনেডি পরিবারই জানত।

১৯৬২ সালের ৪ঠা আগস্ট মনরোর মৃত্যু হয়। লস এঞ্জেলস-এর বাড়ি থেকে নগ্নাবস্থায় উদ্ধার হয় তাঁর মরদেহ। হাতে টেলিফোনের রিসিভার ধরা ছিল। বিছানা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ছিল অবসাদ কাটানোর বড়ি। মেরিলিনের মৃত্যুর প্রায় দুই দশক পরে তাঁর মেইড সারভেন্ট বলেন, শেষ রাতে মেরিলিনের সঙ্গে দেখা করতে ববি কেনেডি এসেছিলেন। দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। এই ঘটনার পরেই মেরিলিন অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। সরকারি রেকর্ড বলছে, ওই সময়ে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল ববি কেনেডি সত্যিই লস এঞ্জেলস-এ ছিলেন।

এডগার হুবারের জীবনী থেকে জানা যায় যে, মেরিলিন মনরোর সমস্ত টেলিফোন কল গোপন ভাবে রেকর্ড করা হতো। কিন্তু তাঁর কোনও কলরেকর্ড থেকে এমন কোনও তথ্য মেলেনি যাতে মনরোর মৃত্যুকে হত্যা প্রমাণিত করা যেতে পারে। যদি সত্যিই হত্যার কোনও ধরণের সূত্র হুবার পেতেন, তাহলে সেটাকে কাজে লাগাতে পিছপা হতেন না। কেনেডির ভ্রার্তৃদ্বয়ের নাম এখানে জড়িয়ে গেলে তাঁদের ব্ল্যাকমেইল করতে কোনও কসুর বাকী রাখতেন না হুবার।

সম্ভবত মেরিলিন মনরোর সঙ্গে জনের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আগে অবধি জ্যাকি কেনেডি কখনও প্রমাদ গণেননি। কিন্তু যেদিন মেরিলিনের সঙ্গে নিজের স্বামীকে দেখলেন, সেদিন ভয় পেলেন। সেদিন তাঁর মনে হয়েছিল, এই মেয়ে আমার কাছ থেকে জনকে কেড়ে নিতে পারে। তিনি মেরিলিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এবং সম্ভবত এই কোথাও বলেছিলেন যে জনের জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নাও। হতে পারে জনের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি ঘটতে চলেছে দেখে মেরিলিন অবসাদে আত্মহত্যা করেন।

বড় – বড় রাজনায়কদের জীবনে এমন প্রেম কমবেশি আসতেই থাকে, আমরা বরং রাজনীতিতে ফিরি, বিশ্বের রাজনীতি। তখন বিশ্বজুড়ে সাম্যবাদের জয়জয়কার। দিকে – দিকে কমিউনিস্টরাই হিরো। যেখানে তখনও কমিউনিজম নায়ক হয়ে উঠতে পারেনি, সেখানে ধীরে –ধীরে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াচ্ছিল। সৈন্যসামন্ত লাগছিল না, যুদ্ধাস্ত্র দরকার পড়ছিল না, ট্যাঙ্ক লাগেনি, বিমান লাগেনি, শুধু থিওরির মাধ্যমে সাম্যবাদীদের বিশ্বজয় চলছিল।

নিকিতা ক্রুশ্চেভ মস্কোতে দাঁড়িয়ে, নিজের লোকদের মধ্যেই রাশিয়ান ভাষাতে ভাষণ দিতে লাগলেন — ‘জনগণের কণ্ঠ কেউ রোধ করতে পারবে না। এই কণ্ঠ আজ নয় তো কাল বিপ্লবের আকার নেবে।’

ক্রুশ্চেভের ভাষণ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। নানা প্রান্তে একাধিক শিক্ষিত ব্যক্তির নেতৃত্বে অনেক মানুষ সংগঠিত হতে শুরু করেন। ক্রান্তির সূত্রপাত হয়। ভ্রষ্ট শাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় বিপ্লবী কণ্ঠেরা। তাঁরা এক হন সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে। বিদেশী শাসনের বিরোধ করে ঐক্যের প্রাচীর গড়ে উঠতে থাকে। বর্ণবিদ্বেষের বিপক্ষে গলা চড়তে থাকে আরও। যেখানেই অসাম্যের উষ্মা প্রকাশিত হতো দেখা যেত, সেখানেই ধেয়ে আসত সাম্যবাদের শীতল হাওয়া।

সাম্যবাদ — কমিউনিজম — সবাইকে সমান চোখে দেখার এই মডেল চটজলদি সাফল্য পেল। স্বাভাবিক নিয়মেই এমনটা ঘটছিল। বিশ্বের এমন কোনও দেশ, এমন কোনও প্রদেশ নেই যেখানে সবকিছুকে, সবাইকে একই চোখে দেখা হয়। সাম্যের অভাব সর্বত্র। তাই লোকে খেয়েও গেল এই থিওরির টোপ। কিন্তু মজার ব্যাপার ছিল, ক্রুশ্চেভ সাহেবের ভাষণে বলা ‘জনগণের কণ্ঠ কেউ রোধ করতে পারবে না’ মহাবাণীটিকে সোভিয়েত রাশিয়াতেই পালন করা হচ্ছিল না। সেখানে তখনও তানাশাহী চলছে।

ভিয়েতনাম আমেরিকান সৈন্যদের কবরস্তানে পরিণত হয়েছিল, তা-ও সেক্ষেত্রে সোভিয়েতের সেনাদের নামতেই হয়নি। মহাশক্তি আমেরিকাকে ভিয়েতনামিদের ঐক্য যেভাবে হারিয়ে দিল, তাতে ডেভিড আর গোলিয়াথের গল্প মনে পড়ে যায়। ইন্দো – চায়নার যুদ্ধে সোভিয়েতদের কোনও ভূমিকাই গ্রহণ করতে হয়নি। এই একী অবস্থা কিছু বছর পরে বিশ্বের আরেকটি দেশে দেখা যাবে। ইথিওপিয়াতে।

তাহলে, এবার কেনেডির সামনে বিকল্প কী ছিল?

কেনেডি কমিউনিস্টদের মেনে নেবেন? সাম্যবাদকে মেনে নেবেন?

উত্তর ভিয়েতনামে যখন কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটে, তখন সেখানকার সব জমিদারদের জমি কেড়ে নিয়ে তাঁদের ভাগিয়ে দেওয়া হয় অথবা হত্যা করা হয়। বিতাড়িত মানুষজন চলে আসেন দক্ষিণ ভিয়েতনামে। সেই সময়ে দক্ষিণ ভিয়েতনামে কী দশা চলছিল জানেন নিশ্চয়ই। উত্তরের একদম বিপরীত অবস্থা। এক অত্যাচারী, স্বৈরাচারী শাসক নো ডিন জিয়েম সেখানে চাবুক চালিয়ে চলেছিল। সামন্ত আর জমিদারের দল গরিবের রক্ত চুষে চলেছিল সমানে। কেনেডির পাঠানো আমেরিকান বাহিনী দক্ষিণ ভিয়েতনামে পা –রাখতেই জিয়েম-এর গদির রক্ষাকারী হয়ে দাঁড়াল। স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপরে তারাও ইচ্ছেমতো অত্যাচার শুরু করে দিল।

সেই বৈষম্যের গল্প। আর বৈষম্য মানেই বিপ্লব আসবে। ভিয়েত কং নাম দিয়ে তৈরি হচ্ছিল গেরিলা বাহিনী। তারা চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালিয়ে জিয়েম-এর দলের লোকদের মেরে ফেলতে লাগল। গরিবেরা দলে – দলে ভিয়েত কং বাহিনীতে যোগ দিচ্ছিল। তাদের চোখে তখন আমেরিকানদের জন্যে শুধুই ক্ষোভ আর ঘেন্না। যদি কোনও জায়গার ভূমিপুত্ররা বিদ্রোহ করে, তখন বিদেশী সৈন্য দিয়ে কি আর তাদের আটকানো যায়? চাবুক যত চলবে, পিঠ ততই শক্ত হবে। গরিব মানুষদের কণ্ঠ রোধ করার জন্যে যত চেষ্টা চলছিল, ততই উগ্র হচ্ছিল তাদের আন্দোলন। সোভিয়েত কিংবা চিন তখন নেপথ্য থেকে প্রম্প্ট করছিল মাত্র, যুদ্ধটা চলছিল আমেরিকান আর ভিয়েতনামিদের মধ্যেই।

কেনেডি কিউবায় লড়ে হেরেছিলেন। এবার ভিয়েতনামেও পর্যুদস্ত হতে চলেছিলেন। তবে যুদ্ধের বাইরেও তিনি চেষ্টা করেছেন। চেষ্টা করেছেন যাতে ভিয়েতনামে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানকার মানুষদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করেছেন। উপরাষ্ট্রপতি লিন্ডন জনসন ভিয়েতনামে গিয়ে সেখানকার অনেক লোককে কলম উপহার দিয়ে এসেছিলেন। সেই কলমে তাঁর নামও লেখা ছিল। অবশ্য এই কাজ তিনি কঙ্গোতেও করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, যেখানে লোকে খেতে পাচ্ছে না, সেখানে তারা পেন নিয়ে কী করবে? সাধে কি কবি সুকান্ত লিখে গিয়েছেন—

 

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী – গদ্যময়ঃ

পূর্ণিমা –চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি

ছাত্র থেকে শুরু করে সরকারি কর্মী সকলেই পথে দাঁড়িয়ে বিপ্লব করছিল। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অনেকেই ধার্মিক অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আত্মদাহ করছিলেন। প্রত্যেক নাগরিক তখন জিয়েম আর আমেরিকান সৈন্যদের বিপক্ষে কথা বলছিল। নাগরিকদের নিজস্ব বাহিনী তৈরি হল। রাষ্ট্রপতি ভবনে আক্রমণ করে উড়িয়ে দেওয়া হল ভবনটাকেই। তানাশাহ জিয়েমকে গুলি করে মারল লোকে। দক্ষিণ ভিয়েতনাম স্বাধীন হল। মুক্তি এল বিপ্লবের হাত ধরে।

জিয়েম রইল না। তাহলে আমেরিকান সৈন্যরা এবার কার জন্যে লড়ছিল? কারো জন্যে নয়য়। তাদের প্রতিপক্ষ তখন দক্ষিণ ভিয়েতনামের জনগণ। আমেরিকা বনাম দক্ষিণ ভিয়েতনাম। আমেরিকা বলছিল, এই লড়াই সাম্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই; আর দক্ষিণ ভিয়েতনামের বাসিন্দারা বলছিল, এই যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সেনার মুখোমুখি তখন জনগণ। জনতাই জনার্দন। কে, কবে জিততে পেরেছে জনতার বিরুদ্ধে লড়ে?

দক্ষিণ ভিয়েতনামের কথা নাহয় বাদই দিলাম, আমেরিকার পাশের ব্রিটিশ উপনিবেশ গায়ানাতেই তখন অন্যরকম চিত্র ধরা পড়ছিল। সেখানে ভারতীয় বংশজ ছেদি জগন ক্ষমতায় এলেন। ছেদি জগন, একজন গিরমিটিয়া ভারতীয়, যার পূর্বপুরুষ ভারত থেকে ব্রিটিশদের দাস হিসেবে ওদেশে গিয়েছিলেন। গিরমিটিয়া শব্দটির মূলে গেলেই সংজ্ঞা পাওয়া যায়। গিরমিটিয়া হল তাঁরা, যাদের অন্য দেশে যাওয়া –আসার জন্যে টিকিট খরচটা নিজেদের করতে হতো না। এবং যারা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মজদুরি করার জন্যে একটি বিশেষ জায়গায় যেতেন। হিসেব মতো তখন শুধু শ্রমসাধ্য কাজ করানোর জন্য গিরমিটিয়াদের নিয়ে যাওয়া হলেও উকিল, ডাক্তার, বৈজ্ঞানিক, এঞ্জিনিয়ার যিনি যে পেশার স্পেশালিষ্ট রূপেই যান না কেন, তিনিই গিরমিটিয়া। বারবার গিরমিটিয়া – গিরমিটিয়া করছি, আর আপনারাও ভাবছেন কী লিখেছে রে বাবা! অদ্ভুত একটা শব্দ। আসল শব্দটা হল এগ্রিমেন্ট। তা লোকের মুখে ভ্রষ্ট হয়ে পরিণত হয়েছে ‘গিরমেন্ট’ শব্দে। পরে সেই থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘গিরমিট’। এগ্রিমেন্ট বা চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিক হয়ে ব্রিটিশ সরকারের ছত্রছায়াতে প্রতিপালিত হয়ে রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির দ্বারা কাজ পাওয়ার ফলে ওইসব শ্রমিকদের গিরমিটিয়া বলা শুরু হয়। বেশিরভাগই অশিক্ষিত মানুষ ছিলেন। এগ্রিমেন্ট বুঝতেন না, গিরমিটিয়ার মানে না – বুঝেই শব্দটা তাঁরা নিজেদের কোথায় চালু করে দেন। কন্ত্রাকি-ও বলা হতো। কন্ট্রাক্ট যেহেতু চুক্তির অপর নাম, সেই থেকেই কন্ত্রাকি এসে গিয়েছিল। যাক গে, আমরা ছেদি জগনে ফিরে আসি। ছেদি জগন ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা। গিরমিটিয়াদের বংশধর। কেনেডি ভয় পেলেন। তিনি ভাবলেন আরেকটা কিউবা জন্ম নিতে চলেছে, আরেকজন ফিদেল কাস্ত্রো আসতে চলেছে। কিন্তু মোটেই এমন কিছু ছিল না। ছেদি জগন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসন করাতেই বিশ্বাসী ছিলেন। ভোটেও জিতলেন। তিনি কেনেডিকে চিঠি লিখলেন — আপনি এখানে আপনার প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে পরিস্থিতি দেখে বুঝে নিতে পারেন। কিন্তু সি আই এ ছেদি জগনকে সরানোর চক্রান্ত করছিল। জর্জটাউনে দাঙ্গা হল। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল। তাতে অবশ্য ছেদি জগনকে সরানো যায়নি। তিনি তখন জনগণের এক নাম্বার নেতা।

আগেই লিখেছি যে, কেনেডির শান্তি বাহিনী পরবর্তীতে বেশ সফল হয়েছে। সাম্যবাদীদের মাত দেওয়ার এই একটা পদ্ধতিকে পাস মার্কস দিতেই হয়। মানুষের মন জয় করা। কিন্তু সোভিয়েত  শান্তিতে বসতে দিলে তবে তো আমেরিকা মানুষের মন জয় করবে। ১৯৬১ সালের অক্টোবর মাস। বিশ্বের ভয়ঙ্করতম পরমাণু বোমাটির পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটাল সোভিয়েত রাশিয়া। বোমার নাম ‘ৎজার বম্বা’। আজ পর্যন্ত ঘটানো সকল পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের মধ্যে এটাই বৃহত্তম বিস্ফোরণ ছিল। বিস্ফোরণের ধোঁয়া মেঘের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল ৬৫ কিলোমিটার রেডিয়াস জুড়ে। ১৫০ কিমি দূরত্ব থেকেও বিস্ফোরণ দেখা গিয়েছিল।

এবার আমেরিকার পক্ষ থেকে শক্তি প্রদর্শন করার পালা। কেনেডি পরমাণু – পরীক্ষায় নেমে পড়লেন। ভারত – পাক যুদ্ধের মতোই কেনেডির সামনে চ্যালেঞ্জ তখন সোভিয়েত। সোভিয়েতের কাছে পিছিয়ে পড়ার মানে পরবর্তী ইলেকশনে নিশ্চিত পরাজয়। কত সমস্যা! কিন্তু সুধী পাঠক, এখনো সমস্যার কোথায় কী? আরও অনেক বড় সব সমস্যা আসতে চলেছিল। কেনেডির পুরোনো শত্রু ফিদেল কাস্ত্রো নিজেকে মারক্সবাদী কমিউনিস্ট রূপে ঘোষণা করে সোভিয়েতকে বললেন, আপনারা চাইলে আপনাদের পরমাণু অস্ত্র রাখার জন্যে আমাদের দেশের মাটিকে ব্যবহার করতেই পারেন। কিউবাতে রাশিয়ার মিসাইল রাখার মানে কোনও ট্রিগার হ্যাপির মুহূর্তের ইচ্ছেতে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে হোয়াইট হাউজ থেকে নিউইয়র্ক সবকিছুই। পরমাণু – প্রলয় আসছিল। এবং আসছিল জন এফ কেনেডির অন্তিম অগ্নিপরীক্ষা।

ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী একবার নিকিতা ক্রুশ্চেভকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আচ্ছা, আপনার কখনও এই কথা ভেবে ভয় করে না যে যদি বিশ্বের সবকটা পরমাণু বোমা একসঙ্গে ফাটে তাহলে কী হবে? একটাও মানুষ অবশিষ্ট থাকবে তখন?’

ক্রুশ্চেভ হাসিমুখে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘হ্যাঁ, আফ্রিকা তো টিকে যাবে। চিনেগুলোও অত সহজে মরবে না। আমরা শেষ হলেও দুনিয়া চলতে থাকবে।’

 

 

(ক্রমশ)