ইউপিএসসি জিহাদ সম্প্রচারে স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের

0
565

বঙ্গদেশ ডেস্ক: সুদর্শন নিউজ চ্যানেলে সম্প্রচারিত ‘ইউপিএসসি জিহাদ’ অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, ইন্দু মালহোত্রা এবং বিচারপতি কে এম জোসেফের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই নির্দেশ জারি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের কথায়, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে।

ক’দিন আগে প্রোগ্রামের আচরণবিধি লঙ্ঘন না করার শর্তে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক অনুষ্ঠানের চারটি পর্ব সম্প্রচারের আদেশ দিয়েছিল। আদালত এর আগে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পূর্বে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং সেই মতো ‘দ্য প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য নিউজ ব্রডকাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-কে নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, নিষিদ্ধ পর্ব দু’টি সম্প্রচারিত হলে মুসলিম সমাজের মর্যাদাহানি হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার।

অনুষ্ঠানটি ইউপিএসসি পরীক্ষার দ্বারা মুসলিমদের প্রশাসনে ‘ঢুকিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র’ ফাঁস করবে বলে দাবি করেছিল চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ ওঠে, ওই দু’টি পর্বকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আশঙ্কা করা হয় ওই দুই পর্ব প্রকাশ পেলে মুসলিমদের কোনও উপযুক্ত কারণ ছাড়াই কাঠগড়ায় তোলা হবে। তাই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি ইন্দু মলহোত্রা এবং বিচারপতি কে এম জোসেফের বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়েছে। আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী গৌতম ভাটিয়া, সাদন পরাশর, আনাস তনভির আদালতে সওয়াল করেন। গৌতম ভাটিয়া বলেন, ‘‘ঘৃণা ছড়ানোর উদ্দেশ্য‌ই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা মুক্ত চিন্তার গতি রুদ্ধ করে।’’ সর্বোচ্চ আদালতে সুদর্শন টিভির তরফে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থ মাথায় রেখেই ওই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে। ওই চ্যানেলের আইনজীবী শ্যাম দিওয়ান শীর্ষ আদালতে জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানটি সমস্ত রকম নিয়ম ও বিধি মেনেই টেলিকাস্ট হচ্ছে।

উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ওই অনুষ্ঠানে এমন কিছু দেখানো হয়েছে, যা মুসলিম সমাজের প্রতি অবমাননাকর। পাঁচ জন বিশিষ্ট নাগরিককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হোক, যারা বৈদ্যুতিন মাধ্যমের জন্য একটি নির্দিষ্ট মান তৈরি করে দিতে পারবে।’’

বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, “কম্পিউটারের যুগে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার বাড়বাড়ন্ত অনেকখানি। যে কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড। ‌ইউপিএসসি-জিহাদ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক অভিযোগ করছেন একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের লোকজনকে বেআইনিভাবে সিভিল সার্ভিসে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ইউপিএসসি পরীক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠেছে। কোনওরকম সত্যতার ভিত্তি ছাড়াই এই ধরনের অভিযোগ কীভাবে করা সম্ভব? ভারতের মতো একটি দেশে এই ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি কীভাবে দেওয়া যেতে পারে?”

সুদর্শন নিউজের আইনজীবী শ‍্যাম দিওয়ানকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বলেন, “আপনার‌ ক্লায়েন্ট দেশের ক্ষতিসাধন করতে চাইছেন। ভারতবর্ষ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য বজায় রেখেছে চিরকাল, আপনার ক্লায়েন্ট সেটা মেনে নিতে পারছেন না। আপনার ক্লায়েন্টকে নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও বাক্ স্বাধীনতা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।” অনুষ্ঠানটির দ্বারা হেট স্পিচ ছড়ানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয় আদালতে। যদিও শ‍্যাম দিওয়ানার দাবি, এটি একটি তদন্তমূলক অনুষ্ঠান।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সুদর্শন নিউজের এডিটর-ইন-চিফ সুরেশ চওহানকে। তিনি নিজের টুইটারে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন। সেখানে বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ। চার ঘণ্টার অনুষ্ঠানের কয়েক সেকেন্ড ক্লিপিং মাত্র আদালতে দেখানো হয়েছে। জনস্বার্থ মাথায় রেখে অনুসন্ধান চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি আমরা। তাই আমরা আমাদের বক্তব্য থেকে কোনওভাবেই সরছি না।”