কলকাতার সভ্যতা আড়াই হাজার বছরের, প্রমাণ পেয়েছে এএসআই

বঙ্গদেশ ডেস্ক:ভারতবর্ষের একসময়ের রাজধানীর প্রাচীনত্ব নিয়ে নতুন ইতিহাস সামনে এনেছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)। তাদের দাবি অনুযায়ী, ৩০০ নয়, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে কলকাতায় অস্তিত্ব ছিল মানুষের। যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগেও এই তিলোত্তমায় মানুষ বাস করত। এএসআই কর্তৃপক্ষ বলেছে, দমদম ক্লাইভ হাউসে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে অসংখ্য প্রাচীন সামগ্রী মিলেছে যা ইঙ্গিত দিয়েছে মহানগরীর সুপ্রাচীন অস্তিত্বের।

এএসআই কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, ইতিহাসের ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। অনেক অনেক দেশে প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা থেকেই নতুন ইতিহাস লেখা শুরু হয়েছে। কলকাতার প্রাচীনত্ব নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু করেছিলেন ব্রিটিশ গবেষকরা। তাদের দাবি ছিল, সমুদ্রের কাছে এই ভূখণ্ডের ইতিহাস খুব বেশি দিনের পুরনো নয়। ইউরোপীয়রা আসার আগে কলকাতা ছিল জল-জঙ্গলে ঘেরা জায়গা। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে একদল বাঙালি গবেষক মতামত দিয়েছিলেন, আদি-মধ্য যুগের শেষ দিক থেকেই কলকাতায় মানুষের অস্তিত্ব ছিল। তবে জোরালো প্রমাণ না মেলায় সেই মতামত গৃহীত হয়নি।

১৯৯৭-৯৮ সালে কলকাতার বেথুন কলেজে মাটির নীচে থেকে বেশ কিছু প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী উদ্ধার হয়। সেগুলি বিশ্লেষণ করে জানা গিয়েছে, এখানে ষষ্ঠ-সপ্তম শতকেও মানুষের বসবাস ছিল।দমদম ক্লাইভ হাউসের ঢিপি থেকে ২০০১ সালে বেশ কিছু প্রত্নতত্ত্ব সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে। সেগুলির গুরুত্ব বুঝে ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত খননকার্য চালিয়েছে এএসআই। দেখা গিয়েছে, মাটির নীচে পরপর সাতটি স্তরে মানুষের জীবনযাত্রার প্রমাণ মিলেছে। স্তরগুলি থেকে বিভিন্ন রঙ ও আকৃতির মৃৎপাত্র, ঘর ও স্থাপত্যের অবশেষ মিলেছে। তা পরীক্ষা করেই আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের খোঁজ পাওয়া যায়। দু’মাস আগে ফের ক্লাইভ হাউসে খননকার্য শুরু করে এএসআই। এবারও উদ্ধার হয় মৃৎপাত্র সহ নানা রকমের সামগ্রী, যেগুলি খ্রিস্টপূর্ব সময়ের সভ্যতার নিদর্শন বহন করে।

এছাড়াও ওই স্থান থেকে কয়েকশো বছরের প্রাচীন একাধিক মূর্তি, খেলনা, অলঙ্কার, ধাতব বস্তু, মুদ্রা, সিলমোহর সহ নানা জিনিস মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে নরকঙ্কালও। সেগুলি নিয়ে নৃতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বিভাগ গবেষণাও শুরু করছে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কলকাতা সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট শুভ মজুমদার বলেছেন,এর আগে খনন করে সাতটি স্তর পাওয়া গিয়েছিল। এবার ১২টি স্তর মিলেছে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয়-দ্বিতীয় শতাব্দীতেও কলকাতায় মানুষ ছিল। এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে যাবতীয় নমুনার বিজ্ঞানসম্মত ‘ডেটিং’ করা শুরু হয়েছে।