পশ্চিমবঙ্গের তেলিনিপাড়ায় হিন্দুরা ভয়াবহতা স্মরণ করে বললেন: তারা আমাদের বাড়িঘর আর মন্দির জ্বালিয়ে দিল এবং পরিবর্তে পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নিল

0
778

তারা আমাদের বাড়িঘর আর মন্দির জ্বালিয়ে দিল এবং পরিবর্তে পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নিল: পশ্চিমবঙ্গের তেলিনিপাড়ায় হিন্দুরা ভয়াবহতা স্মরণ করে বললেন

রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন স্থানীয় হিন্দুরা জনসাধারণের গতিবিধি থামানোর জন্য বেড়া (ব্যারিকেড) দেওয়া শুরু করে, মুসলিমরা রেগে যায়

 

পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার তেলিনিপাড়ার একজন স্থানীয় পুরুষ বাসিন্দা এই অভিযোগ করেছেন কে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে এবং তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িক হিংসার কারণে এই অঞ্চল এখন খবরে আসছে।

অনেক বিজেপি নেতাই এই একই অভিযোগ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বে থাকা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় একের পর এক ভিডিও বিতরণ করে মমতা ব্যানার্জীর সমালোচনা করেছেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে তেলিনিপাড়ার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন যে উর্দি বাজারে করোনা ভাইরাসের একটি পজিটিভ কেস পাওয়া গেছে, যেখানে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। উক্ত স্বামী-স্ত্রীর এখন কলকাতায় চিকিৎসা চলছে। এই জায়গাটি ভিক্টোরিয়া জুট মিলের কাছে অবস্থিত। উর্দি বাজারে করোনা ভাইরাসের কিছু পজিটিভ কেস পাওয়া যায়, যদি মধ্যে একজন স্বামী স্ত্রী ছিলেন। তাদের কলকাতায় চিকিৎসা চলছে।

এই কেসগুলি শনাক্ত করার পর তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকা ২০ জন ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টেইনে পাঠানো হয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে এলাকাগুলিতে পরীক্ষা বেড়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দাটি জানায় যে মিষ্টির দোকানের দোকানদারের পজিটিভ মিলেছিল এবং তারপর তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। এলাকাটিকে একটি কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়। তারপর পুলিশ বেড়া দিয়ে যায় এবং অন্য মানুষদের সতর্কবিধি পালন করতে অনুরোধ করে। কিন্তু স্থানীয় এক যুবক জানায় যে রমজান মাস চলাকালীন মুসলিমরা ক্রমাগত লকডাউন অবজ্ঞা করে যাচ্ছে।

হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষের কারণে এই অঞ্চল আগেও খবরে উঠে এসেছে। আগে এই এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের একটি কারখানা সিল করা হয়েছিল। এটা জানা যে সেই এলাকায় মুসলিমদের প্রভাব রয়েছে এবং ক্রমাগত অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, যখন স্থানীয় হিন্দুরা জনসাধারণের গতিবিধি থামানোর জন্য বেড়া (ব্যারিকেড) দেওয়া শুরু করে, মুসলিমরা রেগে যায়। রমজানের কথা উল্লেখ করে তারা বলে যে তারা “এখান” থেকেই আসবে আর যাবে। স্থানীয় লোকটি আরো জানায় যে, “সম্প্রতি, পুলিশের বেড়া দেওয়ার প্রতিবাদ মুসলিমরাই প্রথম করে। এরপর, যখন হিন্দুরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য বেড়া দেওয়া শুরু করে তখন তারা যারপরনাই রেগে আগুন হয়ে যায়। তিন দিন আগে এই অঞ্চলে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই একদল মুসলিম তরোয়াল ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। বৃষ্টি চলাকালীন হিন্দুদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাদের বাড়িঘর আক্রমণ করে ধ্বংস করা হয়। কমিশনার হুমায়ূন কবীর পীড়িত হিন্দুদের কথা শুনতে অস্বীকার করেন। হিন্দুদের দোকান লুটে নেওয়া হয়। সুরজ সাউয়ের বাসনের দোকান লুঠ করা হয়।”

বাস্তবে, সুরজ সাউয়ের দোকান লুঠ হওয়ার পর, সে দোকান খালি করার অনুমতি চায় যেহেতু তার কাছে আয়ের কোন উপায় আর ছিল না এবং আবার কিছু হলে সে কীভাবে তার ক্ষতিপূরণ করত। পুলিশ তাকে দোকান খালি করার অনুমতি দেয়নি এবং পরে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

অপইন্ডিয়া তাকে যোগাযোগ করলে সে এই খবর সত্য বলে জানায়।

সুরজ সাউয়ের দোকানের পাশে একটি গয়নার দোকান ছিল যেটিও পুড়িয়ে ফেলা হয়। হিন্দুদের ওপর এই একতরফা আক্রমণ দেখে স্থানীয় বিজেপি লোকসভা সদস্য লকেট চ্যাটার্জী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন এবং কলকাতা থেকে এই হিংসা আক্রান্ত অঞ্চল পরিদর্শনে আসেন যদিও পুলিশ তাকে এলাকায় ঢোকার অনুমতি দেয়নি।

লকেট চ্যাটার্জী এই বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমেও জানান। স্থানীয় লোকটি বলেছিল যে তেলিনিপাড়ার কাউন্সিলর একজন মুসলিম এবং বেশ প্রভাবশালীও, সেই কারণেই পুলিশের সাথে এই যোগসাজশ। এই অভিযোগও করা হয়েছে যে মুসলিমদের করা প্রতিটি কুকর্মের জন্য এখানে হিন্দুরা শাস্তি পায়।

হঠাৎ রাতে পুলিশ ফিরে আসে এবং কিছু হিন্দুদের নিয়ে গিয়ে জেলে ভরে দেয়। স্থানীয় লোকটি জানায় যে তার একজন বন্ধুকেও এইভাবে পুলিশ নিয়ে গেছে। যেসব হিন্দুরা মুসলিমদের তাড়িয়ে দিয়েছিল, মুসলিমদের জায়গায় তাদেরও নিশানা বানানো হচ্ছে। সে বলে যে আবহাওয়ায় একটি ভয়ের পরিবেশ রয়েছে।

যদিও যা হচ্ছে তা বাংলার জন্য নতুন কিছু নয়। লকেট চ্যাটার্জী পুলিশকে ক্রমাগত ফোন করে গেলেও কমিশনার ফোন তোলেননি। তিনি বলেন যে যারা দীর্ঘকাল চুপচাপ বসে আছে, যে সম্প্রদায় কোন অন্যায় করেনি, তারাই আজ আক্রমণের সম্মুখীন। তিনি অভিযোগ করেন যে এই আক্রমণ কেবল একদিক থেকেই করা হচ্ছে। এই লোকসভা সদস্য জানান যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর মুসলিম তোষণ নীতির কারণে মালদার মত ঘটনার বারে বারে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ও ভিডিও দিয়ে এই দাবী করেন যে হিন্দুদের এই একই সম্প্রদায়ের তরফ থেকে নিশানা বানানো হচ্ছে। পুরো ভিডিওতে ধোঁয়া আর ধোঁয়া দেখা গেছে। জনসাধারণ অনেক দূর থেকেও তাদের বাড়ির ছাদ থেকে এই ঘটনা দেখতে পেয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ১৭ই মে পর্যন্ত এই এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অপইন্ডিয়াও এমন অনেক ভিডিও খুঁজে পেয়েছে যা সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমদের দ্বারা করা অত্যাচারের বর্ণনা হিসেবে। এই একই ঘটনা দিল্লির ক্ষেত্রেও দেখা গেছিল। হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছিল কিন্তু সংবাদ মাধ্যমগুলি মুসলিমদের নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যস্ত ছিল। একইভাবে, ইউটিউব থেকে টুইটারে আপনি বাংলা সম্বন্ধীয় এমন অনেক ভিডিও পাবেন যেখানে মুসলিমরা পীড়িত সেজে রয়েছে। এটা সংবাদমাধ্যমের একটা বিশেষ অংশের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য করা হয়েছে।

স্থানীয়রা এই দাবী করেছে যে শীতলা মাতা মন্দির নামের একটি স্থানীয় মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় যার ছবি অপইন্ডিয়া তুলেছে। যদিও এই ঘটনার বিষয়ে কোন ভিডিও এখন সামনে আসেনি। হিন্দুদের একটি ক্লাব পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং তাদের বাড়ি ধ্বংস করা হয়।

স্থানীয় লোকসভা সদস্য লকেট চ্যাটার্জীকে পুলিশ বলে যে তাঁকে পীড়িতদের সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হবে না কারণ তিনি সেখানে গিয়ে পলিটিক্স করবেন। তারা বলে যে তাঁর যাওয়ার পরেই সেখানকার অবস্থার অবনতি হতে থাকবে। জনসাধারণ মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে পক্ষাপাতের অভিযোগ এনেছে এবং বলেছে যে এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যম কোন কৌতূহল দেখাচ্ছে না।

এটা বলা হচ্ছে যে এখানে মুসলিমরা কোনরূপ “সোশ্যাল ডিস্টানসিং” এ বিশ্বাস করে না এবং সেই কারণেই হিন্দুদের মধ্যে করোনার ভয় আছে। যখনই তারা কোন প্রতিষেধক উপায় নিতে যায়, মুসলিমরা তার বিরোধিতা করে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও বলেছেন যে মানুষজন যেন বাড়িতে থাকে এবং হসপিটালে ভিড় না করে, যা দর্শায় যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। এই অবস্থায়, মহামারীর ছড়িয়ে পড়ার ভয় খুবই স্পষ্ট। একদিকে, মহামারী ছড়িয়ে পড়ার ভয় আর অন্যদিকে যারা ছড়াচ্ছে তাদের নিয়ে ভয়।

অত্যাচার চলাকালীন অনেক মানুষই ভিডিও করেছেন। একজন ভিডিও করে সাহায্য প্রার্থনা করে এই বলে যে মুসলিমরা ইঁট, পাথর আর বোমা ছুড়ছে তার দিকে।

আরেকজন ভিডিও বানিয়ে বলে যে হিন্দুদের পুরোপুরি জোরজবরদস্তি করা হচ্ছে এবং মুসলিমদের অত্যাচার থামানোর জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, এমনকি হিন্দুদের কথা শোনা পর্যন্ত হচ্ছে না। অন্য ব্যক্তিরাও ভিডিও বানিয়ে দেখান যে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে আর ভিড়কে সাহায্য করছে। গুলি চলার গুজবও শোনা গেছে।

অসহায় মানুষরা ভিডিও বানিয়ে জনসাধরণকে জানায় যে যদি হিন্দুরা এখনো এই স্থান ত্যাগ না করে তাহলে হয় তাদের হত্যা করা হবে নাহলে তাদের আত্মহত্যা করতে হবে। মমতা ব্যানার্জির সমালোচনা করে তারা বলে যে, “মমতা ব্যানার্জি আমদের খুব সাহায্য করছেন! বাহ, পশ্চিমবঙ্গের সরকার।” তারা পরিষ্কার বলে যে পুলিশ বাংলা ক্ষয় করছে এবং মুসলিমরা গুলি চালাচ্ছে।

আরেকটি ভিডিওতে গুলি লাগা এক হিন্দুকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে গুলি করার অভিযোগ। তার চিকিৎসারও কোন ব্যবস্থা করা হয়নি এবং তাকে তার হালে ছেড়ে দেওয়া হয়, যার পরে স্থানীয়রা তার দেখভাল করছে। এই ভিডিওগুলোতে তাদের মুসলিম এবং পুলিশের সাক্ষাতের কথা বলতেও দেখা গেছে।

একজন হিন্দুর হাত কেটে ফেলা হয়েছিল, সে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। প্রশাসন তার চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা করেনি। এই ঘটনার তিনদিন পর, মমতা ব্যানার্জির চোখ খোলে এবং তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদেক্ষপ নিতে বলেন।

এখন পর্যন্ত তেলিনিপাড়া হিংসার ঘটনায় ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে যার পর কিছু অতিরিক্ত সেনা সেখানে থেকে টহল দিচ্ছে। একই সময়ে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব রাজনীতি করার থেকে বিরত থাকেননি এবং দাবী করেছেন যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এখানে ঝামেলা সৃষ্টি করছেন এবং প্রধান মন্ত্রীকে এই ব্যাপারে জানানো হয়েছে।

মূল লেখাটি অপইণ্ডিয়ায় প্রকাশিত। অনুবাদক শুভম ক্ষত্রী।