হিন্দুহত্যা ভুলো না

বেদনার সিন্ধুদ্বারে গাঁথা,
ভুলো না, ভুলো না।
ভুলো না ১৯৪৬-এর ১৬ই আগস্ট,
‘দি গ্রেট্ ক্যালকাটা কিলিং’।
ভুলে যেও না ১৯৫০-এ বাঙলাদেশে
হিন্দু হত্যার কাহিনী।
ভুলো না কখনও সেই দশই
ফেব্রুয়ারি।ভুলো না, ভুলো না,
যদি কেউ বলে ভুলতে,
বোলো তাকে, পৃথিবীর বিখ্যাত
সব হত্যাকাণ্ডের কাহিনী।
শুনিয়ো তাকে, হিটলারের গ্যাস
চেম্বারে ইহুদী হত্যার ঘটনা।

জিজ্ঞাসা কোরো, ’কেউ কি কখনও
ভুলে গেছে বা ভুলিয়ে দিতে চেয়েছে
এ ঘটনা?’
আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি,
তার উত্তর হবে ‘না’।
তবে আমি তো এ প্রশ্ন রাখতেই
পারি, ’যে কেন আমরা ভুলে
যাবো সেই অত্যাচারের কথা?’
তোমরা তাকে প্রশ্ন কোরো,
জানতে চেয়ো তার কাছে,
’কেন তবে আমরা ভুলে যাবো
সেইসব অত্যাচারের কাহিনী?’
তাই আমি সবাইকে উচ্চকণ্ঠে বলতে
চাই, তোমরা কখনও ভুলো না
সেইসব অত্যাচারের কাহিনী।

তোমরা প্রতিবছর পালন কর
একুশে ফেব্রুআরি,
রাস্তায় সভা কর,
মিছিল বার করে উচ্চকণ্ঠে গাও,
’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুআরি, আমি কী
ভুলিতে পারি।’
না, আমি কখনও তোমাদের
সেই আন্দোলনের কথা
ভুলে যেতে বলি না।
কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবি,
তোমরা কেন অসমের ভাষা-আন্দোলনে
শহীদদের মনে রাখনি?
তাঁদের একমাত্র দোষ কী যে তাঁরা
হিন্দু?
আর বাঙলাদেশে ভাষা আন্দোলনে
শহীদদের মনে রাখার
কারণটা কী তাঁরা মুসলিম?
সেই কারণেই কী
তাঁদের মনে রাখা হয়েছে?
আমি আশা করি, অবশ্যই
তোমরা ভুলে যাবে না
অসমের ভাষা-আন্দোলনে শহীদদের।

তেমনই তোমাদের কখনও ভোলা
উচিত নয় বাঙলাদেশের হিন্দুদের
উপর ১৯৬৫ সালের অত্যাচারকে,
তোমরা কখনও ভুলো না
১৯৭১-এর অত্যাচারকেও।
যে অত্যাচারের এক কুখ্যাত দৃষ্টান্ত
হল ‘জগন্নাথ হলের হত্যাকাণ্ড’;
দোতলায় বসানো কল খুলে দিলে
সিঁড়ি বেয়ে জলের ধারা যেমন
শব্দ করে একতলায় নামে,
সিঁড়ি দিয়ে ঠিক সেরকম শব্দে
রক্ত পড়েছিল যেখানে।
তোমরা কখনও ভুলো না
বাঙলাদেশের হিন্দুদের উপর
১৯৯২ সালের অত্যাচারকেও,
ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ফলে
হিন্দুদের উপর বাঙলাদেশে যে
অত্যাচার সংঘটিত হয়েছিল।
আশা করি, তোমরা ভুলবে না
বাঙলাদেশি হিন্দুদের উপর
১৯৯৯ ও ২০০১ সালের অত্যাচারকেও,
নির্বাচনে বি. এন্.পি.-জামাত্-এ-
ইসলামি জোট জেতার পর
বাঙলাদেশে হিন্দুদের উপর যে
নারকীয় অত্যাচার সংঘটিত হয়েছিল।
ভুলো না সেই অত্যাচারকে।

একইসঙ্গে তোমরা ভুলো না
আরবদের সিন্ধু আক্রমণ,
সুলতান মামুদের ১৭ বার
ভারত আক্রমণ, সোমনাথ
মন্দির লুণ্ঠন।এরইসঙ্গে তোমরা
মনে রেখো, ঔরঙ্গজেব, ফিলোজ্-
শাহ্-তুঘলকের হিন্দুদের উপর
আক্রমণ, নারকীয় অত্যাচারগুলোকে।

একইসঙ্গে তোমরা ভুলো না
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কাহিনী,
ভুলো না ১৯৮২-তে বিজন সেতুর
উপর ১৮ জন হিন্দু সন্ন্যাসীকে
পুড়িয়ে মারার কাহিনী।
তেমনই ভুলো না,
মরিচঝাঁপির হত্যাকাণ্ড।
যদি কেউ বলেন,
’আসুন, এবার আমরা সমস্ত
বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হই,
ভুলে যাই পুরোনো সব
অত্যাচার।’;
বোলো তাকে, কেউ কখনও কোন
অত্যাচারকে ভুলতে পারে না,
ভোলার চেষ্টা করলেও
ভোলা যায় না কখনো।
আমার এ আবেদন
শুধু তোমাদের প্রতি,
যারা কখনও সেকুলার
হওনি বা কমিউনিস্ট,
শুধু তাদের প্রতি আমার এ আহ্বান।
তাই আমি সবাইকে বলি,
কেউ কখনো বাঙলাদেশে
বা ভারতে বা অন্যত্র
হিন্দুদের উপর কোন অত্যাচারকে
ভুলো না;
নিজের পরের প্রজন্মকেও
জানিও,
কখনো বোলো না
এমন কথা,
’ওসব পুরোনো জিনিস,
এখন ওসব ভুলে যাওয়াই
উচিত।’,
ভুলো না, ভুলো না
কখনো।