কুরুক্ষেত্র ও সংশপ্তক – প্রথম ভাগ

0
1714

শ্রীমতী দর্পণা রায় 

কিছুদিন আগে চন্দননগরে সরকারি সূত্রানুযায়ী স্থানীয় মুসলিম তৃণমূল কাউন্সিলারসহ ২৭ জন এবং সমর্থিত সূত্রানুসারে প্রায় জনা ৫০ – যারা প্রায় সিংহভাগ মুলসমান হলেও কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যেতে তেমন গোলমাল বাধেনি। পার্টির ভাবমূর্তির কথা মাথায় রাখার বিরল সুবুদ্ধি কিংবা ‘আলতাকিয়া’ কিছু একটা হবে। কিন্তু ১০ই মে তেলেনীপাড়ায় সেই চেষ্টা করতে ও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার প্রস্তাব জানাতেই অগ্নিতে পেট্রোলাহূতি হল। হিন্দুরা সংক্রমণ এড়াতে নিজেদের পাড়ায় ব্যারিকেড করে দিতেই শান্তি বাহিনী সব তছনছ শুরু করে দেয়। হঠাৎ বৃষ্টি ও ১২ই মে থেকে ১৪৪ ধারা জারির ফলে ৪৮ ঘণ্টা বিরতি। তারপর ফের এসে বোমাবাজি শুরু করে মুসলিম মহল্লার বসিন্দারাই। এবারে চটকল শ্রমিক বস্তির হিন্দুরাও প্রত্যাঘাতে নামে। দু একটি সিএন ও দু একটি স্বল্পখ্যাত সংবাদমাধ্যম ছাড়া এবিপি থেকে বিবিসি কেউ সত্যটা জানায়নি, জানাবেও না।

বিগত কিছু বছরে ভারতবর্ষের সব ঘটনারই একটা সাম্প্রদায়িক রং হয় থাকছে, নয় লাগানো হচ্ছে; এবং সেটা সোজাসুজি রাখঢাক না করে হিন্দুবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে।

বিশ্বের দরবারে সেই বিকৃত ছবি বা উপস্থাপনাই পৌঁছে যাচ্ছে, তা যতই প্রধানমন্ত্রী মোদী করোনা আক্রান্ত দেশগুলোকে সে হিন্দু নিকেশী মুসলিম রাষ্ট্র হলেও, ওষুধপত্র চিকিৎসা সামগ্রী রপ্তানি করুন বা দানই করুন। সম্প্রতি হুগলি জেলার ভদ্রেশ্বরের তেলেনীপাড়ার এই দাঙ্গাও বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী মুসলিমদের করোনা ছড়ানো নিয়ে হিন্দুরা টিটকিরি দেওয়াতেই বেধেছে। প্রতিবেদকের মতে হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগ, আজমীর শরিক থেকে ফিরে আসা কয়েকজনের মধ্যে করোনা থাকায় তাদের কোয়ান্টাইনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা ব্যারিকেড ভেঙে অশান্তি শুরু করে দেয়। এই অভিযোগ নাকি ভিত্তিহীন, কারণ কোয়ান্টাইন সেন্টার মুসলিম প্রধান এলাকায় হওয়ার কারণে সেখানকার অধিকাংশ কোভিড পজিটিভ মুসলিম। আর সেই থেকেই নাকি টিটকিরিসহ মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর সূত্রপাত!

মালদহ মুর্শিদাবাদে হিন্দুরা যেহেতু বাংলাদেশের হিন্দুদের মতোই আতঙ্কে থাকে, তাই এই আবহে সেখানকার গোলমালের কথা আপাতত উল্লেখ করছি না, লিখতে গেলে আলাদা পর্ব হয়ে যাবে।

কিন্তু জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত চন্দননগরের নিকট প্রতিবেশেও যখন জন্য সেনা চাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়, তাও আবার হিন্দু নির্মূলীকরণের ব্রত নেওয়া তৃণমূল সরকার দ্বারা, তখন পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক মানচিত্র নিয়ে রোজই নতুন করে বসতে হবে।

কতগুলো বিষয় মাথায় রাখা দরকার। এখন চলেছে মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস। পবিত্র বা ধর্মাচারণ বলতে হিন্দুরা যা বুঝি, সেইসব মানবতাবাদী কর্মকাণ্ড নয়। ইসলামবাদীদের পবিত্র রমজানের পবিত্রতা রক্ষিত হয় মারাত্মক হিংসার মাধ্যমে – যুদ্ধ করে কাফের নিধন, দাস ও যৌনদাসী বানানো, আবার নিগৃহীতদেরকেই মতান্তরিত (ধর্মান্তরিত) করে নিজেদের দল ভারি করে নেওয়া। ১৯৪৬-এর কলকাতা গণহত্যা বা Great Calcutta Killing-এর জন্য বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সোহ্‌রাবর্দি মুসলিমদের কাফের নিধনে প্রেরণ করেছিলেন এই রমজান মাসেই। জুম্মার নমাজ করেই মৌলানাদের ডাকে কলকাতা শহর ছেয়ে গিয়েছিল ঘাতক ও ধর্ষকে। তেলেনীপাড়ায় যা শুরু হয়েছে, তাও আসলে রমজানের হালালাইজেশন। যারা শুরু করেছে তারা আবার আজমীর শরীফ দরগা ফেরত ধর্মপ্রাণ মুসলিম। প্রসঙ্গত ‘ধর্ম শব্দটার এই অপব্যবহার করতে নিজের ধর্মে মানে বিবেকে বাধে। তবু রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার গোলকধাঁধায় ধর্ম, পরিত্র এই শব্দগুলোকে একটি সম্প্রদায়ের জন্য বারবার বলাৎকার করা হয়, আমিও বাধ্য হয়ে এই অনাচার মেনে নিয়েই শব্দগুলো প্রয়োগ করছি।

আচ্ছা ধরেই নিচ্ছি, বিবিসির জেহাদি এজেন্ট সেই জন্মসূত্রে হিন্দু সাংবাদিকের ভাষ্যমতো, টিটকিরির কারণেই যত অশান্তি। তাহলেও প্রশ্ন, শুধু এই কারণেই কি এলাকা জুড়ে হিন্দু বাড়িঘর দোকান ভাঙচুর, সোনার দোকান লুঠ, মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা (এখনও কতদূর সফল খবর পাইনি), পাড়া ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে এলাকা দখল করা– এই আচরণগুলো বৈধ হয়ে গেল? প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও হিন্দু মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরিত করা, নারকীয় ধর্ষণের পর নৃশংস থেকে নৃশংসতর উপায়ে খুন করা — এগুলো দাঙ্গা বাধার কারণ হতে পারে না?

যাইহোক একদল মজহব পালনের জন্য যখন তখন রক্তপাত করবে, আর অন্য দল শুধুই মার খাবে, জীবন দেবে, ইজ্জত দেবে, সম্পত্তি খোয়াবে, বাস্তু হারাবে – এই অসাম্যই কতদিন চলতে পারে? এর পৌনপুনিকতা থেকে মুক্তি কোথায়? মুক্তি আমাদের হাতেই আছে। সেজন্য সর্বপ্রথম সাপকে সাপ বলে সনাক্ত করা দরকার, যেমন দরকার কোভিড-৭৮৬-দের চিনে নেওয়া।

বাম জমানায় ৩৪ বছর না হয় বানতলা ধানতলা বা সীমান্তে সাম্প্রদায়িক হামলা গণধর্ষণগুলোর কখনও রাজনৈতিক গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, কখনও অজানা দুষ্কৃতী দ্বারা ডাকাতি ইত্যাদি ব্যাখ্যা শুনে এসেছি।

কিন্তু এখন তো মহতরমার জমানায় সেই শব্দ চাতুর্যের আড়ালটা ঘুচে গেছে। আমরা স্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানতে পারছি মুসলিম পুরুষরা হিন্দু মেয়েদের কী বেপরোয়া হিংস্রতার সঙ্গে অপমান অত্যাচার করে খুন করছে, ভিডিওতে পরিষ্কার দেখতে পারছি উন্মত্ত মুসলিম জনতা হিন্দুদের বাড়ি ঘর দোকানপাট লুঠ করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে, খবর পাচ্ছি মুসলিমদের আক্রমণে হিন্দুরা গ্রামছাড়া পাড়া-ছাড়া। সেই জানানোগুলোকে জেহাদি শক্তি ও তাদের সমর্থকরা ‘হেট স্পীচ’ বলে প্রচার করতেই পারে, কিন্তু ঐ জানাগুলো কি প্রতিশোধ স্পৃহা জন্ম দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়? তাতেও তো হিন্দুরা ‘অমুকের ইয়ের জন্য অপরাধীদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই’ জাতীয় প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে বা নিছক মুখপুস্তিকার দেওয়ালে পোস্ট করে দায় সারছে। আর ওদিকে বিকৃত দগ্ধ লাশের পাহাড় জমছে।

আরে বিচার বা গ্রেফতারি চাইছে কোন প্রশাসনের কাছে, যারা মুসলিমদের লাথি খেয়ে তাদেরই বাড়িতে বছর খানেকের রেশন পৌঁছে দেয়, আর প্রাণভয়ে পুলিসের কাছে আশ্রয় ভিক্ষা করা নিরীহ সাধুদের হাত ধরে ঘাতকদের সামনে এনে ছেড়ে দেয়? সেই পুলিস যে ধর্ষিতা এফআইআর করতে গেলে তাকে পুনরায় ধর্ষণের সুযোগ নেয়? সেই প্রশাসন যে হামলাবাজদের রক্ষা ও সাহায্যার্থে আক্রান্তদের মারে গ্রেফতার করে? এগুলোও যদি প্রত্যাঘাত করার যথেষ্ট কারণ না হয়ে থাকে, তাহলে নিজেদের জন্য দড়ি কলসীর খোঁজ করুক হিন্দুরা। রোজ আয়নায় মুখ দেখে টেরি বাগাতে একটুও বিকার হয় না আপনাদের? এতটুকু ভয় করে না নিজের স্কুল কলেজ পড়ুয়া কন্যার দিকে তাকিয়ে?

হত্যা, হনন, নিধন খুব ছোট্ট শব্দ। খুন, রেপ তো আরও পুঁচকি– মাত্র একটি সিলেবল!

ভারতীয় ভাষায় ধর্ষণ, বলাৎকার ধ্বনিগত দিক দিয়ে সামান্য দীর্ঘ হলেও বানানও কঠিন নয়, উচ্চারণও নয়। কথাগুলো দিনরাত শুনে শুনে জলভাত হয়ে গেছে বলেই শিকার হওয়া মানুষগুলোর ঘৃণাবোধ লাঞ্ছনা যন্ত্রণা কমে যায় না। ধরুন আপনার গালে সপাটে একটা জুতোর বাড়ি মারলাম। কেমন লাগবে? কোনও মেয়ের তার চেয়েও অনেক বেশি অপমানিত ও রাগ লাগে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপিচিত বা অপছন্দের কেউ স্পর্শ করলে। আর ধর্ষিতা যদি জীবিতও থাকে, সে শরীরে মনে কী গ্নানি বহন করে, তা তার বাবা ভাই বর বা পুত্রদেরও বলে বোঝানো যাবে না। তার সঙ্গে সামাজিক চোখ রাঙানি মটকানি তো আছেই।

ধর্ষণেরও রকমফের আছে। কারও প্রেমিক আবেগের আতিশয্যে বাধা অগ্রাহ্য করে আদর করতে গিয়ে চূড়ান্ত কাণ্ড বাধিয়ে ফেললে সেটাকেও হয়তো ফৌজদারি আইনে ধর্ষণের আওতায় আনা যায়। কিন্তু প্রেমিক বা জীবনসঙ্গীর সেই জবরদস্তি আদর, আর সাত-আট-নয়-দশ-জন মিলে এলোপাথাড়ি স্বাভাবিক বা বিকৃত যেভাবে খুশি একটি নারী বা বাচ্চা মেয়ের আপাদমস্তক দেহ ও মনটাকে হিংস্র যৌন উল্লাসে ফালাফালা করা — এক জিনিস নয়। এখন তো আবার থুতু মুতুও যুক্ত হয়েছে। গণধর্ষণের ভয়াবহতা বোধহয় এভাবেও বোঝাতে পারলাম না। থাক, কারণ ভাষার ব্যবহারে সিডনী শেলডনদের পর্যায়ে নামা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার নামলেও বিপদ, হিতে বিপরীত হতে পারে – রাগের বদলে হয়তো উত্তেজনা সঞ্চার হল! কিন্তু শিকারকে দোষ দেওয়ার সময় এই কথাগুলো মাথায় রাখবেন মেয়ে, বোন, বৌদের শাসনকর্তারা। নিজেদের প্রতিবাদের সাহস, প্রতিরোধের শক্তি কিংবা প্রতিশোধের সংকল্প না থাকার অপরাধ নিজের কন্যা বা ভগ্নীর ওপর চাপাবেন না বীর হিন্দু পুংগবগণ। না পারলে সায়ানাইডের অ্যাম্প্যুল যোগাড় করে তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিন। তবে জওহর ব্রত মহিমান্বিত করার আগে হিন্দুত্ববাদী পুরুষরা নিজেরাই চিতায় ঝাঁপ দিয়ে দৃষ্টান্ত রাখুন।

আপনারা লাভ জেহাদে ফাঁসা মেয়েদের দোষ দেন? আমিও দিই। দেবই তো। এতশত নৃশংসতা নোংরামোর নিদর্শন থাকতেও কিছু হিন্দু ঘরের মেয়েরা কোন দুরারোগ্য মানসিক ব্যধির জেরে সাক্ষাৎ নরকের দূতদের বিশ্বাস করে, ভালোবাসে, শরীরী সম্পর্কেও রাজি হয়ে যায়? তার পরিণামে মৃত্যু নিয়ে আপনারা “বেশ হয়েছে, উচিত শিক্ষা” বলে দায় সারেন। কিন্তু প্রত্যাখ্যান ও বাধার ফলশ্রুতি কি অন্যরকম হওয়ার উদাহরণ দেখাতে পারেন? প্রতিনিয়ত অ্যাসিড দগ্ধ, বিকৃত নারীদেহের লাশ কি সবই লাভ জেহাদের পরিণতি? আর বিধর্মীকে ‘লাভ’ অর্থাৎ প্রেম যদি এতটাই ঘৃণ্য হবে, তাহলে ভিন্ন সম্প্রদায়ের মেয়েদের বিয়ে করে নিজেদের সম্প্রদায়ের দলভারি করার স্ট্রাটেজিই বা নিচ্ছেন কী করে? যদি দৈবাৎ হিন্দু পুরুষটি সুমন চাটুজ্জে থেকে কবীর সুমন হয়ে পাক্কা মুমীনে পরিণত হয়, কিংবা সৃজিৎ মুখুজ্জের মতো শাশুড়ির রান্না গোমংসের তারিফে অট্ট অট্ট হয়ে যায়, তাহলে তো নিজেরাই ছিছিক্কার করতে বসবেন! মানে তো একটাই – নারীকে লাইসেন্স ছাড়া ধর্ষণই করুন বা লাইসেন্স নিয়ে ভোগ, মনে ‘লাভ’ নয় দখলদারির মনোবৃত্তিই কাজ করে।

যাক গে। এসব বললে আবার নারীবাদের মেয়েলি গন্ধ পাবেন। তাহলে আপনাদের ভাষাতেই বলি। কোনও সম্প্রদায়ের কোনও প্রজাতির জন্মদাত্রী, ধাত্রী ও বংশগতির বাহক হয় মেয়েরাই। আধুনিক জেনেটিকস্‌এর বহু আগে সাংখ্য দর্শনেই বলা আছে এ কথা। গর্ভসঞ্চারের পর ভ্রূণের বাপ মরে গেলেও প্রকৃতির নিয়মে তার কোনও ক্ষতি হয় না, মাতৃজঠরই তার পৃথিবীর আলো দেখার পক্ষে যথেষ্ট। তাই মেয়েরা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া বা মরে যাওয়া মানে সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর সামুহিক ক্ষতি। আর এটা সব সম্প্রদায়ের পুরুষরা ভালোমতো জানে বলেই গোষ্ঠী সংঘর্ষে তাদের প্রথম লক্ষ্য থাকে অপর পক্ষের স্ত্রীলিঙ্গধারীদের বিনাশ।

মেয়েদের সাততাড়াতড়ি বিয়ে দিয়ে, পণের জন্য অত্যাচার করে, ঘরে বন্দী রেখে কিন্তু এই লোকসান আটকাতে পারবেন না। তাদের শক্তিশালী করে সমগ্র সম্প্রদায়ের স্তম্ভে পরিণত করতে পারলে তবেই নিজেরাও রক্ষা পেতে পারেন। পারলে ইজ়রায়েলের নারী বাহিনী দেখে শিক্ষা নিতে পারেন।

ঐ মুসলমানরা তো মেয়েদের বোরখায় ঢেকে গৃহাভ্যন্তরে নানাভাবে অত্যাচার করে, একাধিক পুরুষ মিলে ভোগ করে। কিন্তু সেই মেয়েদেরকেই আবর পাথর, অ্যাসিড বাল্ব, পেট্রল বোমা ইত্যাদি ছোঁড়ানোর তালিম দিয়ে রেখেছে। সেই মেয়েরা কেউ কেউ ভালো বাগ্মী বা মেধাবী হলেও আদতে পরাধীন, জেহাদের সেবাদাসী। করুণার পাত্রী। মুসলিমরা রাজিয়া সুলতানকে শত যোগ্যতা সত্ত্বেও রাজত্ব করতে দেয়নি। বিদ্রোহীকে বিবাহ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তাঁকে শওহর সহ হত্যা করে। অথচ তারা জাহাঙ্গীরকে ওড়নায় বেঁধে রাখা নূরজাহান, কিংবা আওরঙ্গজেবের কুকর্মে সাথ দেওয়া রোশেনারা, অথবা সিরাজ উদ্দৌল্লার কুচক্রী পিসি ঘসেটি বেগমদের পর্দার পেছনে থেকে নেপথ্যে কলকাঠি নাড়া মেনে নিয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়াও আদতে জিয়া উর রহমানের প্রতিনিধিত্ব করেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষে জল সিঞ্চন করে গেছেন। শেখ হাসিনাও বাপের বেটী হয়ে পুরুষতান্ত্রিক লালসায় দেশের লক্ষ লক্ষ হিন্দু মেয়েকে হালাল করেই ক্ষমতায় আছেন। মজার ব্যাপার বিমানবাহিনীতে যুদ্ধবিমানের মহিলা পাইলটের সংখ্যায় পাকিস্তান ভারতের চেয়ে এগিয়ে।

কিন্তু হিন্দুদের ব্যবহারিক সমাজজীবন যেমনই হোক, চেতনার আধার কিন্তু ভিন্ন। বৌকে পেটালেও মাকে ‘স্বর্গাদপী গরিয়সী’ ভাবার শিক্ষা পেয়েছে আমাদের পুরুষরা। নারীকে অবলা মনে করলেও শক্তির আধার বলে মাদুর্গার মাকালীর চরণেই প্রণত হয়। এক সময় নিজের কন্যাকে বিদ্যাশিক্ষা না দিলেও পুত্রসন্তানের হাতেখড়ি দিত বাগদেবীর পাদপদ্মেই। এই বিরোধগুলো ভণ্ডামি মনে হলেও আমরা কিন্তু আসলে নারীর অধীনতা নিয়ে ছুৎমার্গে ভুগি না। নাহলে গোণ্ডের রানী দুর্গাবতী, ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাইয়ের নেতৃত্ব মাথা পেতে নিতে পারতাম না। তাঁদের নেতৃত্বে যুদ্ধ করতে কোনও সেনাপতির পৌরুষে বাধেনি। তাই তো হিন্দুদের সর্বনাশ করার উদ্দেশ্যে ইন্দিরা নেহেরু খান শ্রীমতী গান্ধী সেজে গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ঝুলিয়ে রাজত্ব করেছিলেন, কারণ তিনি জানতেন পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো মজ্জাগত হলেও সনাতন ভারতীয় চেতনায় মাতৃমূর্তি পূজিতা হন। কোটি কোটি ভারতীয়ের সঙ্গে বেইমানি করতে হলে খান সহেবের বিধবা নয়, পণ্ডিজীর কন্যা পরিচয়টাই বেশি কার্যকরী! এখনও আমরা সুষমা স্বরাজ, নির্মলা সীতারামাইয়াদের নেতৃত্ব নিয়ে গর্ববোধ করি। বেনজির ভুট্টোর মতো ‘বিবি ঘর রহো’ নারা দিই না। শুধু নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দেখুন, নিজেদের বাড়িগুলোকেই পাওয়ার হাউস মনে হবে।

(ক্রমশ)

লিখেছেন শ্রীমতী দর্পণা রায়।