কুরুক্ষেত্র ও সংশপ্তক – অন্তিম ভাগ

0
863

(প্রথম ভাগের পর)

না মশাই, আমি দৃষ্টিভঙ্গী বলতে শুধু “বেটী বঁচাও বেটী পঢ়াও” বলে হাওয়ায় ভাসানো উপদেশ দিচ্ছি না। বলছি সোজাসাপটা আত্মরক্ষার কথা। সেটা এবার শিখে নেওয়ার ও অভ্যাস করার পালা। সৃষ্টি অনেক কষ্টের, অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ধ্বংস তাৎক্ষণিক ও অব্যর্থ যার জন্য মেধা মনন ধৈর্য কিস্যু লাগে না। কিন্তু সৃষ্টিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে গেলেও আগ্রাসী হতে হয়। দেখেননি, সামান্য বিড়াল-জননীও তার ছানাদের দিকে সন্দেহভাজন কাউকে আসতে দেখলে বাঘিনী হয়ে ওঠে। মেয়েকে পণ দিয়ে পাত্রস্থ করতে হবে এমন ‘পরের ধন’ মনে না করে জেহাদী অসুর দমনে দশভূজার অবতার করে গড়ে তুলতে পারেন তো। সত্তর দশকের বাণিজ্যিক হিন্দি সিনেমার মতো “বঁচাও বঁচাও” বলে নায়িকা চেঁচাবে, আর নায়ক এসে ঢিসুম ঢিসুম করে উদ্ধার করবে – এই থিম খুব পুরোনো ও বহু ব্যবহারে ক্লীশে। আর সোজা কথা – আপনাদের মর্দানিও এখন রূপোলী পর্দার নায়কদের বদলে নীল ছবির জন্তুদের দ্বারা বেশি প্রভাবিত। কিন্তু ঐ পুরুষত্ব নিয়ে দলবদ্ধভাবে মাল খাওয়া যায়, নেশাভাঙ করা যায়, চুরি ডাকাতি জালিয়াতি চলতে পারে, আর স্বধর্মের হিন্দু মেয়েদেরকেই গণধর্ষণ করা যেতে পারে: কিন্তু নিজেদের প্রাণ মান ইজ্জত জমি সম্পত্তি কোনওটাই রক্ষা করা যায় না। আপনারা সরকার কি প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়ে ‘তারিখ পে তারিখ পে তারিখ’-এর তামাশা দেখার বদলে অসংখ্য জ্যোতি সিং (নির্ভয়া), শিপ্রা ঘোষ, প্রমীলা বর্মণ, প্রিয়াঙ্কা রেড্ডিদের ধর্ষক ঘাতকদের শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব নিজেরা নিতে পারেন না? নিজের বৌকে ‘ভাত বেড়ে দাও’ বলার আগে দেখে নেবেন সেই হাত ভাত বাড়ার পাশাপাশি গুলতি ছুঁড়তে কতটা পারঙ্গম।

শুধু পারলেই হবে না। দরকার মানসিক শিক্ষানবিশীরও। ভাত আপনি নিজেও বেড়ে নিতে পারেন, কিন্তু আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী পুত্র কন্যা স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি সবকিছু রক্ষার জন্য এই শারীরিক ও মানসিক শিক্ষানবিশীই কাজে লাগবে। এই যে দিল্লী, ভদ্রেশ্বর, মালদহ – সর্বত্র দেখেননি ওরা অস্ত্রশস্ত্র ইট পাথর, অ্যাসিড, পেট্রল, বোমা ইত্যাদি মজুদ করে পূর্ব প্রস্ততি নিয়েই গায়ে পড়ে ঝামেলা বাধিয়েছে? বিনা প্রস্তুতি ও সরঞ্জামেই যদি তেলেনিপাড়ার হিন্দু মেয়ে বৌরা মরিয়া হয়ে বঁটি কাটারি সম্বল করে রাস্তায় নেমে দুষ্কৃতীদের আটকে দেওয়ার হিম্মত দেখাতে পারে, তাহলে ভেবে দেখুন সপরিবারে বিপর্যয় মোকাবিলার সামান্য তালিম ও মানসিক প্রস্তুতির ফলাফল কতটা ইতিবাচক হতে পারে? কথাগুলো হিন্দু পুরুষদের উদ্দেশ্যেই বললাম, কারণ দুর্বৃত্ত দমনের উকরণ বাড়ির মেয়েদের বশে রাখার কাজেও ব্যবহার করা আপনাদের পক্ষে সহজ কিনা, তাই জন্য। যদি সপরিবারে পরস্পরকে রক্ষা ও অধার্মিক শত্রুকে নাশের সংকল্প নিতে পারেন, তাহলেই প্রতিদিন তুলসীমঞ্চে প্রদীপ আর ফলস্‌ সীলিং-এর আলো দুটোই জ্বালাতে পারবেন, তাহলেই পুজোয় ঢাক থেকে থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া সবই বজায় থাকবে। নতুবা স্ত্রীর হাতের শাঁখা-পলা-নোয়া, মাথায় সিঁদুর আপনার পরমায়ুর কোনও কম্মে লাগবে না।

প্ররোচনা মনে হচ্ছে? একদম না। এ হল বাঁচার অনুপ্রেরণা। প্রাণ বাঁচানোর জৈবিক তাগিদ তো সামান্য পিঁপড়েরও থাকে। আর আমরা তো সুদীর্ঘ পথ চলা এক মহান কৃষ্টি সভ্যতার স্রষ্টা, ধারক ও বাহক। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অস্ত্রধারণ কি পাপ? সারা বিশ্বে মার্শাল আর্ট বলে যেগুলো পরিচিত, তার মধ্যে ক্যারাটে ও কুংফুর বিকাশ চীন জাপান এইসব পূর্ব এশীয় দেশে হলেও এইগুলির স্রষ্টা ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুরা, এবং অনেক গবেষকের মতে ভারতেই এসবের জন্ম। বৌদ্ধধর্ম তো সনাতন আধারে সৃষ্ট একটি অহিংস ভারতীয় ধর্ম। তাহলে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের যুদ্ধবিদ্যা রপ্ত করার প্রয়োজন হল কেন? কেনই বা সম্রাট অশোক থেকে বাংলার পাল রাজারা পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়েও রাজ্য শাসন, ক্ষাত্রধর্ম সবই বজায় রেখেছিলেন? শ্রীচৈতন্য যতই কৃষ্ণপ্রেম, বিনয় ও শান্তির বাণী প্রচার করুন, যখন বাংলার মুসলিম শাসক আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কীর্তন নিষিদ্ধ করেছিলেন, তখন বিশাল দল নিয়ে নগর সংকীর্তন করে তিনি আসলে নিজেদের গোষ্ঠীর শক্তি প্রদর্শনই করেছিলেন। কোটি কোটি বঙ্গীয় ভূমিসন্তানদের ধর্মান্তরিত হওয়া থেকে রক্ষা করার কাজটা ‘ন্যাকা চৈতন্য’ সেজে থেকে করেননি, করেছিলেন দৃঢ়চেতা সংগঠক হিসাবে। আমরা ঐ কীর্তন, ভক্তিগদগদ অশ্রু, তৃণাদপি বিনয়কেই আঁকড়ে বসে আছি, প্রেম বিতরণের সঙ্গে সঙ্গে ঘৃণা দূরীকরণের কৌশল গ্রহণ করিনি। রামকৃষ্ণ পরমহংসের মতো মানুষও বলেছিলেন, না কামড়ালেও ‘ফোঁস করতে হয়’।

আজ আমরা নিশ্চয়ই চাই না গণতন্ত্র নষ্ট হয়ে মধ্যযুগ ফিরে আসুক। কিন্তু মধ্যযুগীয় বর্বরতা যখন অবাধে চলেছে, তখন রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে তার মোকাবিলা করা যাবে না। বরং রবীন্দ্রনাথ মুসলিমদের সম্পর্কে কী বলেছিলেন সেটাই স্মরণে রাখা দরকার:

মুসলিম সৌভ্রাতৃত্ব সবার জন্য নয়, শুধু মুসলিমদের জন্য। এই জন্যই তারা কোনও নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের জাতীয়তা মানতে নারাজ।….

তাদের পয়গম্বর তলোয়ার হাতেই ধর্মপ্রচার করেছিলেন। কমিউনিস্ট রাহুল সাংকৃত্যায়ন তাঁর আর্যরা বহিরাগত তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করে ও হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদকে তুলোধোনা করে লেখা ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’ বইটিতেও মুসলিম শাসকদের হিংস্রতা ও নীতিহীন রণকৌশলের যে বর্ণনা দিয়েছেন সে কথা মনে রাখা উচিত: মুসলমানরা শুধু ছলেবলে যুদ্ধ জয় করে না, বিজিতদের মধ্যে থেকেই নিজেদের অনুগামী তৈরি করে নেয়। বাবাসাহব আম্বেদকর হিন্দু সমাজের জাতপাতের ঘোর বিরোধী হয়েও মুসলিমদের মনোবৃত্তির যে নিখুঁত ছবি এঁকেছেন সেখান থেকেই শিক্ষা নেওয়া দরকার: মুসলিম ভ্রাতৃত্বে অমুসলিমদের জায়গা নেই।… কুরবানি দেওয়ার জন্য গরু জবাই করার চল কোনও মুসলিম দেশে না থাকলেও শুধু হিন্দুদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্যই তারা ভারতে নিষ্ঠুরভাবে গোহত্যা করে।

আর এই সম্মিলিত শিক্ষা প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে আমাদের যে কর্তব্য ইঙ্গিত করে, তা ‘এক গালে চড় মারলে অন্য গালটি বাড়ি দেওয়া’র গান্ধীবাদী ভাঁওতা নয়, শেখায় ‘লোহা লোহে কো কাটতা হ্যায়’। জানি না কোন শাস্ত্রে লেখা আছে ‘ক্ষমা পরম ধর্ম’। আমি অস্বীকার করছি না। তবে “ক্ষমা যেথা হীন দুর্বলতা/হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা তোমার আদেশে/…..অন্যায় যে করে ও অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে” এও কিন্তু আমাদের শান্তিপ্রিয় বিশ্বকবিরই বাণী। মহম্মদ ঘোরীকে ১৬ না ১৭ বার যুদ্ধে পরাজিত করেও ক্ষমা করার উদারতার পরিণাম কী হয়েছিল, পৃথ্বীরাজ চৌহানের জীবন তার নির্মম উদাহরণ। জয়চাঁদের জামাতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার পরিণামে তাঁরই কন্যা সংযুক্তাকে ঘোরী ও তার সেনাপতিদের সম্মিলিত লালসা ও হিংস্রতার শিকার হতে হয়েছিল, আর তিনি নিজেও রক্ষা পাননি। তাঁর পুত্র বাপের জীবন ও বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ঘোরীর হাতের পুতুল রাজা হিসাবে সিংহাসনে বসতে পেরেছিলেন মাত্র। এত ইতিহাস, এত উদ্ধৃতি, এত তত্ত্বের কচকচির কী দরকার? আমাদের ইংরেজ প্রভুরা তো সহজ কথাটা শিখিয়েই গেছেন, “attack is the best defence”। আমার চেয়ে যে বেশি আগ্রাসী রণকুশল, সে মারলে পাল্টা দেওয়ার কথা ভাবব, এই নীতি নিয়ে চললে প্রত্যাঘাতের জন্য জীবিতই থাকব না। আঘাত তাকে আগে থেকে এবং অপ্রস্তুত অবস্থায় করতে হবে। বিষধর সাপ ছোবল মারলে তখন লাঠি ধরবেন?

আব্রাহামিক শয়তানি মতবাদকে যুঝতে হলে সূত্র ধার করতে হবে  আর এক আব্রাহামিক মতবাদের দেশ ইজরায়েল থেকে। ইজরায়েল কিন্তু প্রথমে আরব দেশ প্যালেস্টাইন কেটেই তৈরি হয়েছিল Mandatory Palestine হিসাবে। বলা বাহুল্য প্যালেস্টাইন তো বটেই, সমগ্র আরব দেশগুলোর কেউই ওল্ড টেস্টামেন্টের মতো বইকে রেফারেন্স খাড়া করে চিরশত্রু ইহুদিদের হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসাকে মেনে নিতে পারেনি। এমনিতেই তারা নিজেরাই পরের দেশ দখল করতে উৎসুক। প্রতিক্রিয়া তাই স্বাভাবিক ছিল। আত্মরক্ষার্থে ইজরায়েলে প্রথম যে সামরিক সংগঠনটি তৈরি হয়, তার নাম ‘হাগানা’ (Haganah) যা ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় Jewish Parliamentary Organization হিসাবে। এর কাজ ছিল আরবদের আক্রমণ প্রতিহত করা। এদের নীতি ছিল ‘হাভলাগাগ’ (Havlagag or Self Restraint) অর্থাৎ মেরুকরণ রোখা ও আরব আক্রমণ দ্বারা উত্তেজিত না হয়ে সংযম বজায় রাখা। তাতে ইজরায়েলি জনক্ষয় আটকানো যাচ্ছিল না। ফলে হাগানা থেকে ভেঙে ১৯৩১ সালে তৈরি হয় কিছুটা চরমপন্থী ইরগুন (Irgun) বা National Military Organization of Israel যার আর এক নাম এৎজেল (Etzel) এবং ১৯৪০ সালে গড়ে ওঠে আরও আক্রমণাত্মক সংগঠন লেহি (Lehi)। ১৯৩৬-৩৯, ইজরাইলে প্যালেস্টাইনিরা প্রচন্ড বিদ্রোহ করে। সমগ্র আরব দেশ তাদের সবরকম মদত দিচ্ছিল। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন (David Ben-Gurion) প্রথমে হাগানা-র ‘হাভলাগাগ’ নীতি প্রয়োগ করে বিদ্রোহ মোকাবিলায় কোনও সুফল পাননি। ইহুদিরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খাচ্ছিল। এরই জেরে হাগানা থেকে বেরিয়ে আসা চরমপন্থী ‘এৎজেল’ এবং ‘লেহি-রা সক্রিয় হয়ে ওঠে। শেষে আরব দেশগুলির সম্মিলিত আক্রমণকে ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী বেন গুরিয়ন দায়িত্ব দেন Hagana প্রধান ইয়াগেল ইয়াদিনকে (Yigael Yadin)। ইয়াগিন দিলেন ‘প্ল্যান ডালেট’ (Plan Dalet), যার নীতি হলো ‘আত্মরক্ষার চেয়ে আক্রমণই সেরা’ – পুরোনো ইংরেজী প্রবাদেরই অনুরণন।

১৯৪৮-র ১৪ মে ইজরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষিত হলে ‘হাগানা’-ই ‘জাতীয় সুরক্ষা বাহিনী’ হিসাবে স্বীকৃতি পায়।  কিন্তু তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হওয়া সত্ত্বেও কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ইসরায়েলে মুসলমানরা যে সেভাবে মাথা চাড়া দিতে পারেনি, তা তাদের কঠোর প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য, যা গড়ে ওঠার নেপথ্যে ‘এৎজেল’ এবং ‘লেহি’-র মতো উগ্রবাদী ইহুদি সংগঠনেরও দরকার ছিল। মুসলমানরা বার বার ইহুদি হত্যা চালানোর প্রতিক্রিয়ায় হাগানা, এৎজেল ও লেহি মিলিতভাবে ডেরা ইয়াসিন গ্রাম চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরে হত্যাকাণ্ড চালায়। দশ হাজার শিশু, নারী, পুরুষ – নির্বিচারে হত্যা করে খবর গোপন রাখে। রাষ্ট্র সঙ্ঘের উদ্ধারকারী দল প্রথমে সেখানে দুর্গন্ধ ঢুকতেই পারেনি। দশ হাজার মানুষের একজনও জীবিত ছিল না। খুবই অবাঞ্ছিত নিন্দনীয় সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই প্রথম আরব মুসলমানদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল – ইসলামি নৃশংসতার চাইতে আরও বেশি নৃশংসতা সম্ভব! অধিকাংশ ইসরায়েলি নারীর দিকে হাত বাড়ানো সহজ নয়, তারা রীতিমতো কম্যান্ডো প্রশিক্ষিত। তাই এখন চলেছে ইহুদি শিশুকে পণবন্দি করা, তবু ওরা এঁটে উঠতে পারছে না।

অনেক তো হল ওদের শিক্ষিত করে সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর চেষ্টা। লাভ কী হয়েছে? শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি – যত বেশি উন্নয়ন ভোগ করছে, আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তত মারমুখী হয়ে উঠছে। বরং নিজেদের কুসংস্কার আঁকড়ে ওরা পিছিয়েই থাক। ঠিক যেভাবে করোনা আক্রান্ত হয়েও ওরা চিকিৎসা করাতে চাইছে না বলে জামাই আদর করে ডাক্তার, চিকিৎসা কর্মীদের জীবন, সম্ভ্রম, চিকিৎসা সরঞ্জাম অপচয় করার দরকার নেই, বরং ওদের ধর্মস্থানগুলোকেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানিয়ে কড়া প্রহরায় ঘিরে ফেলা হোক। শঠের সঙ্গে শঠতাই বিধেয়। দুর্দমনীয় হিংস্র লম্পট মুঘল সেনাকে টক্কর দিতে গিয়ে শিবাজী মহাভারতের যুগের যুদ্ধনীতিতে আবদ্ধ থাকেননি, ক্ষাত্রবীর পৃথ্বীরাজ চৌহানের মতো মহান বীরত্বও বা শিভালরিও দেখাতে যাননি, নিজের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে গেরিলা যুদ্ধ করে আওরঙ্গজেবের মতো যুদ্ধবাজকে তুরুক নাচন নাচিয়ে ছিলেন। শিবাজীর চৌথ আদায় করার প্রশংসা করতে না পারি, কিন্তু এই চতুর রণকৌশলকে সমর্থন না করে উপায় নেই। বিষধর সাপকে মাথা তুলতেই দেওয়া উচিৎ নয়। ওদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে না পারলে আমরা নির্ভয়ে থাকতে পারব না, কখন কার সন্তান নির্ভয়া কিংবা অঙ্কিত শর্মা হবে, সেই ভয়ের সঙ্গেই সহবাস করতে হবে!

ভারতীয় জনতা পার্টি “সব কা সাথ সবকা বিকাশ” স্লোগানে ভর করে ‘রাজনৈতিকভাবে সঠিক’ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে চাইছে, যা ‘হাগানা’র ‘হাভলাগাগ’ নীতির চেয়েও দুর্বল। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদও মূলত সচেতনতা ও সেবামূলক সংগঠন। বহু হিন্দু সংগঠন হিন্দু স্বার্থে আইনি পথে লড়ে বড়জোর আংশিক সফল নিজেদের অস্তিত্ব হারানো বিলম্বিত করতে পারায়। তারপরেও জাতীয়তাবাদী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আরএসএস সমান আইসিস নরপিশাচ সংগঠন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা! এই হতাশা ও ক্ষোভ থেকে যদি ‘লেহি’ বা ‘এৎজেল’-এর সমতুল্য হিন্দু চরমপন্থী গোষ্ঠীর জন্ম নেয়, তাহলে তার দায় কার? মালেগাঁও বিস্ফোরণের মিথ্যে মামলায় সাধ্বী প্রজ্ঞাকে ফাঁসিয়ে ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ তত্ত্ব খাড়া করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল না? আজ সেই মিথ্যে তত্ত্বকে সত্য করে দিয়ে ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেওয়ার সময় কি আসেনি?  আইনের ভরসায় বসে থাকার প্রবণতাই আমাদের মেরুদণ্ডহীন করে রেখেছে। জনজীবন সুসংহত রাখতেই আইন পালন করব, কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে তা অমান্য করাও জরুরি। কারণ অপরাধীরা অপরাধ আইন মেনে করে না, তাদের ধরপাকড়ে শৈথিল্যও আইন মেনে হয় না, আর শাস্তিদানে ব্যর্থতা তো আইনের ফাঁক ফোকর খুঁজেই চলে আসছে। আর আরবান নকশালরা তো আইন অমান্য করে অরাজকতাকেই গণতন্ত্র হিসাবে দাবি করছে। দিনের পর দিন এই অনাচার দেখে জনতা আইন তুলে নিলে আর কিছু করার থাকবে না। সেই অরাজকতা রুখতেই গোপাল মুখার্জীদের দরকার, নতুবা রক্ত স্রোত শুকোবে না। আর গোপাল মুখার্জীদের উত্থান হলেই সরকার তোষণ ছেড়ে প্ল্যান ডালেট অবলম্বনে বাধ্য হবে। ইজরায়েলের কথা না হয় বাদই দিলাম। সারা বিশ্বের বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছে ঐ কটি জনসংখ্যার মানুষগুলো। বাড়ির পাশে মায়ানমার রোহিঙ্গাদের বেয়াদপি ও হিংস্রতা কীভাবে দমন করেছে? রাষ্ট্রসঙ্ঘ আন সান সু চী-র খোঁপা থেকে ফুলখানাও কি ঝরাতে পেরেছে? আর ভারত তো সুবিশাল উৎপাদক আবার বাজারও।

মুসলমানরা যখন কংগ্রেস, কমিউনিস্ট, তৃণমূল – যে কোনও দলে যোগ দিয়েও মুসলমান থাকতে পারে, তখন হিন্দুদেরও বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ সরিয়ে প্রাথমিক কর্তব্য হিন্দু হওয়া। আর সেই কর্তব্য শুধু বিজেপি-কে ভোটে জিতিয়ে সমাধা হয়ে যায় না, দলটিকে হিন্দুদের স্বার্থে ও জেহাদ দমনে সক্রিয় কাজ করতে বাধ্য করাও আমাদের কর্তব্য। শুধু হিন্দুদের অসহায়তাকে মূলধন করে তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে ‘ওরা সবাই একরকম নয়’, ‘কিছু মানুষকে দিয়ে পুরো সম্প্রদায়কে বিচার করবেন না’, কিংবা ‘রোগের সঙ্গে লড়ুন রোগীর সঙ্গে নয়, ওদের মধ্যে ভেদাভেদ করবেন না’ – এইসব নীতিজ্ঞান আওড়ালে দরকারে আমাদের প্রতিটি হিন্দু বাড়ি থেকে ‘সংশপ্তক’ বাহিনী বেরিয়ে আসবে।

(সমাপ্ত)

লিখেছেন শ্রীমতী দর্পণা রায়।