তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বিধায়কের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন দলেরই এক দাপুটে নেতা

0
435

মালদা: নেতার সঙ্গে বিধায়কের দ্বন্দে অস্বস্তিতে তৃণমূল।দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন ওই নেতা। অভিযোগ তার লোকপ্রিয়তায় ভয় পেয়েছেন বিধায়ক।আর তাই দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তৃণমূল নেতা মোহাম্মদ ইয়াসিন বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন।

প্রমাণস্বরূপ তিনি বিধায়কের বেফাঁস মন্তব্যের ফোন রেকর্ডিং পেশ করেছেন । পাশাপাশি যে মহিলার মাধ্যমে তৃণমূল নেতা ইয়াসিনকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে, ঘটনাচক্রে ওই মহিলাও বিধায়কের বিরুদ্ধে এহেন দ্বিচারিতার এবং চক্রান্তের কথা বলে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।

বুধবার পুরো ঘটনাটি নিয়ে তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইয়াসিন রতুয়া ১ ব্লকের বাহারাল এলাকার দলীয় কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন । সেখানে দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে তাঁকে ফাঁসানোর যে পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করা হয়েছে তা প্রমাণ স্বরূপ কিছু নথিও সাংবাদিক বৈঠকে তুলে ধরেন।

পাশাপাশি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে যে চক্রান্তের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারেও পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া , জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র এবং দলের জেলা সভাপতি তথা সাংসদ মৌসম নূরের কাছেও সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছেন।

এদিকে বিধায়কের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করে দলের তৃণমূল নেতাকে গুলি করে মারার বিষয়টি নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। শাসকদলের বিধায়কের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলেছেন তৃণমূল নেতা মহাম্মদ ইয়াসিন।

উল্লেখ্য, রতুয়া তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইয়াসিনের স্ত্রী পায়েল খাতুন বর্তমানে মালদা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের কর্মধ্যক্ষ পদে রয়েছেন । গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত দখলের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইয়াসিনের।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইয়াসিন বলেন, ”  আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জেলে পুরে গুলি করে খুন করার পরিকল্পনা করেছে স্থানীয় বিধায়ক সমর মুখার্জি। এমনকি তার বিরুদ্ধে এলাকার এক মহিলাকে নানান প্রলোভন এবং হুমকি দেখিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা দায়ের করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে৷

সম্প্রতি এই ঘটনার বিষয়ে আমার কাছে একটি বিধায়কের ষড়যন্ত্রমূলক কথোপকথনের রেকর্ডিং মোবাইলে আছে। এছাড়াও যে মহিলাকে মিথ্যাভাবে মামলা করার জন্য প্ররোচিত করা হয়েছিল, সেই মহিলাও পুরো ঘটনার বিষয়টি জানিয়ে আমার দ্বারস্থ হয়েছেন। এরপরই সমস্ত ঘটনার ব্যাপারে দলের জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি আমি।” তিনি আরোও বলেন , ” আমি সসময় মানুষের পাশে থাকি।তাই আমার জনপ্রিয়তায় ভয় পাচ্ছেন উনি। বিধায়ক হিসেবে উনি মানুষের পাশে থাকেন না। ”

সাথেই তিনি বলেন,” যেহেতু আমি সক্রিয়ভাবে রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্রে দলের হয়ে কাজ করে চলেছি, তাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো চেষ্টা চলছে। মিথ্যা মামলায় আমাকে পুলিশকে টাকা খাইয়ে লকআপে পুড়ে গুলি করে মারার হুমকি দিয়েছে । এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। একজন বিধায়ক কিভাবে এই ধরনের কথা বলতে পারে তা ভেবেই আমি এদিন সাংবাদিক বৈঠক করেছি। দীর্ঘদিন ধরেই আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন উনি।”

এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই রতুয়া তৃণমূল বিধায়ক সমর মুখার্জী জানিয়েছেন, “এই ধরনের অবাঞ্ছিত কথাবাত্রা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না । রাজ্য নেতৃত্ব জানে আমি এলাকায় কিভাবে কাজ করছি।আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবন | আমার একটা স্টেটাস আছে | ওই তৃণমূল নেতার এগুলো সব সাজানো গল্প।  বিগত দিনে দলের কাছে জায়গা পাওয়ার জন্য এরকম অবাঞ্ছত কিছু মিথ্যা কথা বলে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্ব তাতে কোন আমল দেয় নি । এরকম অবাঞ্চিত কথাবার্তা বলে নিজেকে সাধু জাহির করতে চাইছে। হিম্মত থাকলে প্রমাণ করে দেখাক মোবাইলের ভয়েজ রেকর্ডিং আমার। ”

এদিকে রতুয়ার তৃনমূলের বিধায়ক এবং দোর্দন্ড প্রতাপ নেতার বাকবিতণ্ডায় অস্বস্তিতে পড়েছে গিয়েছে দল‌। জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ মৌসুম নূর জানিয়েছেন, সমস্ত ঘটনার কথা শুনেছি। এটা দলের একান্তই আভ্যন্তরীণ বিষয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে ঘটনা যাই ঘটুক না কেন দলের পক্ষে যে তা স্বস্তিদায়ক নয় এ কথা বলাই বাহুল্য দলের হাইকমান্ড এখন এই দ্বন্দ্ব কিভাবে মেটাবে না দ্বন্দ্ব আরোও বাড়বে সেই দিকেই তাকিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহল।