বাঙালি হিন্দু গণহত্যা স্মরণে প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা, উদ্যোক্তা ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’

0
954

বঙ্গদেশ ডেস্ক: চলতি বছরে দুর্গাপূজার সময় একটি ভুয়ো ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর যে জঘন্য ও বর্বরোচিত নৃশংসতা চালানো হয়েছে তা ভাষায় অবর্ণনীয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দৌলতে সকলেই কমবেশি সেই নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেছে।

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে, এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। আজ থেকে ঠিক ৭৫ বছর আগে নোয়াখালী এক‌ইরকমভাবে ধারাবাহিক রক্তক্ষয়ী গণহত্যা এবং গণহত্যামূলক ধর্ষণ প্রত্যক্ষ করেছিল বাংলাদেশের হিন্দুরা এবং যার রেশ এখনও পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বজায় রয়েছে।

১৯৪৬ সালে আনুমানিক ৫,০০০ বাঙালি হিন্দুকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল এবং কয়েক লক্ষ হিন্দুকে জোরজবরদস্তি করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আনুমানিক ২.৪ মিলিয়ন বাঙালি হিন্দুকে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছিল। এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রফেসর আবুল বারকাত বলেছেন যে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬৩২ জন বাঙালি হিন্দু বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। তাঁর ধারণা অনুযায়ী, নোয়াখালী গণহত্যার ঠিক এক শতাব্দী পর ২০৪৬ সালে বাঙালী হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

গণহত্যা সংক্রান্ত ১৯৪৬ সালের জাতিসংঘের কনভেনশন – এই গণহত্যাকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে একটি জাতীয়/জাতিগত/জাতিগত/ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে হত্যা এবং শারীরিক/মানসিক ক্ষতি বলে অভিহিত করেছেন। একটি বিশেষ জাতিগত ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসাবে, ১৯৭১ সালে বাঙালি হিন্দুরা অতি নৃশংসভাবে নির্যাতিত হয়েছিল। এই ঘটনাগুলি ধীরে ধীরে কয়েক দশকের নীরবতার ফলে জনসাধারণের স্মৃতির পাতা থেকে মুছে গিয়েছে। তবে মানবতার ইতিহাসের লজ্জাজনক ও ধূলায়িত পাতাগুলোকে আবার নয়া আঙ্গিকে উন্মোচিত করে দেখার সময় এসেছে।

নোয়াখালী হিন্দু গণহত্যার ৫০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে ১১-১২ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে যামিনী রায় গ্যালারী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন্দ্র, ICCR কলকাতায় বাঙালি হিন্দু গণহত্যার উপর একটি প্রদর্শনী ও সেমিনারের আয়োজন করেছে। কলকাতা-ভিত্তিক বাঙালি হিন্দু জাতির শুভচিন্তক সংস্থা “পশ্চিমবঙ্গের জন্য” দ্বারা এই সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। এই ধরনের প্রথম ইভেন্ট এই প্রথম, ১৯৪৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত, বিশেষত ১৯৭১ সালের উপর নজর রেখেই এই ইভেন্ট, তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর‌ও উল্লেখ থাকবে। এই বিষয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের আলোচনা ছাড়াও, একটি তথ্যচিত্রের স্ক্রিনিং, একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং প্রস্তাবিত গণহত্যার স্মৃতিসৌধের একটি ক্ষুদ্র মডেলের উন্মোচন করা হবে। অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এছাড়া দু’দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে অতিথির পদ অলংকৃত করবেন প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়, অধ্যাপিকা মধু কিশোর, মানস ঘোষ, জয়দীপ মজুমদার, রন্তিদেব সেনগুপ্ত ও মোহিত রায় মহাশয়।

হিন্দু গণহত্যা প্রসঙ্গে মোহিত রায় বলেছেন, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বক্তিয়ার খলজির আগমনের পর থেকেই এই ভূখণ্ডে হিন্দু নিধন যজ্ঞ শুরু হয়ে যায়। যুদ্ধবাজ সূফীদের সেকুলার ঐতিহাসিকরা আধ্যাত্মিক তকমা দিয়ে আসল ঘটনাকে উপেক্ষা করে গিয়েছেন। বাংলায় স্থাপিত তাদের প্রথম খানকাটির(ধর্মীয় আস্তানা) পরিচয়স্বরূপ লেখা শিলালিপির আড়ালে রয়েছে হিন্দু মন্দিরের বিবরণ। অর্থাৎ হিন্দু মন্দির ধ্বংসের মধ্য দিয়ে তাদের হিন্দু নিধন যজ্ঞ সূত্রপাত ঘটেছিল।

সূত্রের খবর, টিম “পশ্চিমবঙ্গের জন্য”, বাঙালি হিন্দু গণহত্যার উপর প্রদর্শনী করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করার ভাবনা চিন্তা করেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করার পর, তারা নয়াদিল্লিতে একটি জমকালো অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীর আয়োজন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ তারপর সারা ভারত জুড়ে অন্যান্য বড় বড় শহরেও তারা পরিভ্রমণ করবে। ভবিষ্যতে বাঙালি হিন্দু গণহত্যা মেমোরিয়াল সেন্টার নির্মাণের জন্য এটিই হবে তাদের ভিত্তিপ্রস্তর।