কোচবিহার রাস মেলায় মাছি তাড়াচ্ছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা; নেপথ্যে রয়েছে কোন কারণ?

0
680

বঙ্গদেশ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের অসহযোগ আন্দোলন দেখা গিয়েছে কোচবিহারের রাস মেলায়। বাংলাদেশে বাঙালি হিন্দুদের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচারের প্রতিবাদস্বরূপ পশ্চিমবঙ্গবাসী হিন্দুরা নীরবে তাদের বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফলস্বরূপ বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

প্রতি বছরের ন্যায়, এবছরও ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের কোচবিহার জেলায় আয়োজিত বার্ষিক রাস মেলায় তাদের পণ্য বিক্রির জন্য হাজির ছিল। কিন্তু তাদের পণ্যবিক্রির‌ হার ছিল শূন্য। ফলত, মাথায় হাত পড়েছে তাদের।

পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দুরা মেলায় বাংলাদেশি বিক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো পণ্য কিনতে চায়নি। রাইজিং বেঙ্গলে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা মেলার সময় কার্যত মাছি তাড়াচ্ছিল কারণ সাম্প্রতিক দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সংঘটিত নিপীড়নের প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে বাঙালি হিন্দুরা তাদের বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

স্থানীয় হিন্দুদের বক্তব্য অনুসারে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ধর্না ও বিক্ষোভের আয়োজন তাদের বিকল্প পথ ছিল। শহুরে-অভিজাত বুদ্ধিজীবী শ্রেণী এবং ধর্মনিরপেক্ষ শ্রেণীর অবশ্য নিপীড়িত হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিডিয়ায় সরব ছিল না। এই অঞ্চলের হিন্দুরা মুসলমানদের থেকে পণ্য না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রচারের আওতায় মেলায় বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনো পণ্য না কেনার জন্য স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় তাদের ঐক্যবদ্ধতার প্রমাণ দিয়েছে। হিন্দুরা প্রতিজ্ঞা করেছিল, যে এ বছর বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলের বার্ষিক উৎসব থেকে খালি হাতে ফিরবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাস মেলা হল ২০০ বছরের পুরনো উৎসব, প্রতি বছর কোচবিহার জেলা প্রশাসন দ্বারা এই মেলা আয়োজিত হয়। এবিএন সিল কলেজের কাছে রাস মেলার মাঠে কোচবিহার পৌরসভার তত্ত্বাবধানে এই মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র ও বাংলার একটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।বছরের পর বছর ধরে, এই মেলা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপকারে সহায়তা করে।

তবে ইদানিং যাবত রাস মেলায় বাংলাদেশীদের প্রাধান্য কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাপটের সম্পূর্ণ বিপরীতে হাঁটতে শুরু করেছে। ব্রিটিশ আমলে, কোচবিহারের শাসকদের ভগবান শিবের বংশধর বলে মনে করা হত। এই জেলা জয়পুরের মহারানি গায়ত্রী দেবীর মাতৃভূমি। আওরঙ্গজেবের আক্রমণের সময়কালীন অল্প ব্যবধান বাদে, এই জেলার পিছনে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো হিন্দু ইতিহাস।

সাম্প্রতিক কালে বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের পাশাপাশি কোচবিহারেঝও ধর্মনিরপেক্ষ মোড় নিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত লোকেরা (যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম) এই জেলায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে এবং সময়ের সাথে সাথে, তাদের বাস্তুচ্যুত পরিচয়কে ভারতের আনুষ্ঠানিক নাগরিকত্ব দিয়ে প্রতিস্থাপন করার জন্য বিভিন্ন সরকার তাদের স্থানীয় নথি প্রদান করেছে। গ্রামীণ প্রাচীন হিন্দুরা যারা এই নীরব বয়কট শুরু করেছে তারা ছদ্ম-বুদ্ধিজীবী, উদারপন্থী, বামপন্থী এবং ইসলামপন্থীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে তারা কোনও ধর্মনিরপেক্ষ বার্তার কাছে মাথা নত করবে না।