বাঙ্গালী বিজ্ঞানীর আবিষ্কারে গর্বিত ভারত, মিটবে জ্বালানীর অপ্রতুলতা

0
617

বঙ্গদেশ ডেস্ক:সমুদ্রের জলের অভাব নেই পৃথিবীতে। সমুদ্রের (Sea) নিচেও কার্যত রয়েছে আলাদা এক জলজগৎ। সেই জগতের বহু বস্তু এখনও অনাবিষ্কৃত। বিভিন্ন প্রাণীর উপস্থিতির পাশাপাশি সমুদ্রের নীচে রয়েছে বিপুল খনিজ সম্পদ। এছাড়াও, সমুদ্রের ঢেউতেও রয়েছে তাদের প্রবল উপস্থিতি। যা দূর করে দিতে পারে ভবিষ্যতের চিন্তা।

শুধু তাই নয়, এর ফলে মিটে যেতে পারে জ্বালানি সংকট। কারণ সমুদ্রের নোনা জলে থাকে তেজস্ক্রিয় ধাতু ইউরেনিয়াম(Uranium)। কিন্তু সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে ওই ধাতুকে বের করাটা জটিল একটি বিষয়। যদিও, সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন বাঙ্গালার এক বিজ্ঞানী। সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার বাসিন্দা সুজিত কুমার ঘোষের(Sujit Kumar Ghosh) এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে রয়্যাল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির একটি পত্রিকায়।

এই আবিষ্কারের পর হইচই পড়ে গিয়েছে। মূলত, পুণের ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)-এর রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সুজিতবাবুর তত্ত্বাবধানে পিএইচডিরত আরেক বাঙ্গালী সমরাজ মল্লিক গবেষণাপত্রটি লিখেছেন। তবে, গবেষণার নেপথ্যে রয়েছেন সুজিতবাবুই। তিনি বলেছেন, ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম থেকে খুব বেশি হলে ১০০ বছর জ্বালানির সঙ্কট মেটানো যেতে পারে। পাশাপাশি, কয়লার অপ্রতুলতাও ক্রমশ স্পষ্ট। ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে পারমাণবিক বিদ্যুতের উপর নির্ভরতা। ফলে টানাটানি শুরু হবে ইউরেনিয়ামের ভাঁড়ারে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ধাতব জৈব যৌগ তৈরিতে সুজিতবাবুর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক তথা কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমুমু কিতাগাওয়া বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। তাঁর কাছেই এই গবেষণার মূল ধারণা পেয়েছেন তিনি। পরবর্তীকালে নিজের মতো করে সুজিত বাবু নতুন ধরনের যৌগ প্রস্তুত করেছেন। ওই যৌগকে কিছু উপায় অনুযায়ী অ্যাসিডে ফেললে তৈরি হয় ইউরেনিয়াম দ্রবণ,যার ধর্ম খনিতে পাওয়া ধাতুর মতোই।

অপরদিকে পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সমুদ্রের জলে প্রায় ৪৫০ কোটি মেট্রিক টন ইউরেনিয়াম। জলে মিশে থাকা অবস্থায় সেটির ঘনত্ব খুবই কম। এই প্রসঙ্গে সুজিতবাবু বলেছেন, ক্যালশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো মৌল থেকেই ইউরেনিয়ামকে পৃথক করা সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার। তবে সুজিতবাবুর তৈরি যৌগটি ইউরেনিয়াম আহরণের পথ দেখিয়েছে।

ওই ধাতুর সঙ্গে জৈব যৌগ মিশিয়ে মেটাল অর্গ্যানিক ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত হয়। সেখানে থাকা মাইক্রোপোরস দিয়েই প্রবেশ করে এই তেজস্ক্রিয় ধাতু। দু’ঘণ্টার মধ্যে জলের ৯৫ শতাংশ ইউরেনিয়াম শোষণ করেছে এই যৌগ। দীর্ঘ ২৫ দিন ধরে চলেছে গবেষণাটি। কিন্তু দু’দিনের মধ্যেই ব্যবহারের উপযোগী তেজস্ক্রিয় ধাতু সঞ্চয় করা সম্ভব হয়েছে। এই যৌগকে নির্দিষ্ট উপায়ে অ্যাসিডে ফেললে তৈরি হয় ইউরেনিয়াম দ্রবণ। তা শুকিয়ে নিলে যে গুঁড়ো মেলে, সেটির ধর্ম খনিতে পাওয়া ধাতুটির মতোই। আর এই ধাতু দিয়েই সাগরের জল থেকে ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করে তা থেকে জ্বালানীর অপ্রতুলতা মেটানো সম্ভব।